এমন একটি সময় ছিল যখন সব ভালো ভালো ইউরোপীয় দলই আক্রমণভাগে দুইজন করে স্টাইকার খেলাতো। কিন্তু, ২০১০ এর দশকে এসে এই প্রবণতাটি একেবারেই কমে যায়, এবং সেইসব দলগুলিই মিডফিল্ডে জনবল বাড়ানো শুরু করে এবং একজন স্টাইকার বিসর্জন দেয়।

     

    খুব কমসংখ্যক বড় দলকেই দেখা যেত দুইজন স্টাইকার নামাতে, কিন্তু অনেকদিন বাদে এখন আবার দুইজন স্ট্রাইকার খেলানোর ঐতিহ্য ফুরে আসছে ধীরে ধীরে।

     

    দুইজন স্ট্রাইকার খেলানোর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, এই সিস্টেমে খেললে দলটির গোলের অভাব হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, এবং দুইজনই মানসম্পন্ন স্ট্রাইকার হলে নিয়মিত গোলের বন্যা বওয়াতে পারবে সেই দল। এছাড়া, দলের মিডফিল্ড বা ডিফেন্সে কোন বুদ্ধিদীপ্ত খেলোয়াড় থেকে থাকলে তাদের জন্য পাস খোঁজার কাজটিও সহজ হয়ে যায় আক্রমণভাগে দুইজন স্ট্রাইকার উপস্থিত থাকলে।

     

    এরই ফলস্বরূপ, গত কয়েক বছরে বেশ কিছু সফল স্ট্রাইকিং যুগল বের হয়ে হয়ে এসেছে এবং তাদের কৃতিত্বকে উদযাপন করা উচিৎ।

     

    তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক বর্তমান সময়ে বিশ্বের সেরা সকল স্ট্রাইকিং জুটিসমূহ সম্পর্কে এবং কেনো তারা সেরা সেই সম্পর্কে।

     

    রবার্ট লেওয়ান্ডোস্কি এবং থমাস মুলার (Robert Lewandowski and Thomas Mueller)

    এই জুটির মত অসাধারণ পরিসংখ্যান কি বিশ্বে অন্য কোন অ্যাটাকিং জুটির রয়েছে? আমরা বর্তমানে তেমন কোন জুটি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না।

     

    শুধুমাত্র মুলার ও লেওয়ান্ডোস্কির একক পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায় যে, অনেক বছর ধরেই বায়ার্ন মিউনিখ ভক্তদের তাদের আক্রমণভাগ এবং মূলত গোল করা নিয়ে কোনই দুশ্চিন্তা করতে হয়নি।

     

    গত বেশ কিছু বছর ধরে লেওয়ান্ডোস্কির একক পরিসংখ্যান বিশ্বের অন্য যেকোন স্ট্রাইকারের ধরাছোঁয়ার বাইরে, এবং এই কৃতিত্ব বর্ণণাতীত। শুধুমাত্র গত দুই মৌসুমে তিনি ৭৭টি ম্যাচ খেলে ৯৩টি গোল করেছেন। এছাড়া, তার ঠিক পূর্ববর্তী মৌসুমে তিনি করেছিলেন ৫৫টি গোল, যার উপর ভর করে বায়ার্ন মিউনিখ সেবছর জিতেছিল তাদের ঐতিহাসিক “সেক্সটাপল” (এক মৌসুমে ছয়টি শিরোপা জেতার গৌরব)।

     

    অন্যদিকে, থমাস মুলার নিজেকে প্রমাণ করেছেন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা বহুমূখী খেলোয়াড় হিসেবে। রাউমডিউটার খ্যাত মুলারই জার্মানীর হয়ে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপজয়ী  একমাত্র এমন খেলোয়াড় যিনি এখনো ইউরোপীয় প্রতিযোগিতাগুলোয় স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে যাচ্ছেন। এমনকি, তার পরিসংখ্যান দেখলে মনে হয় তার ক্রীড়ানৈপূণ্য যেন বয়সের সাথে সাথে আরো বাড়ছে।

     

    ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে এমন খেলোয়াড় খুব কমসংখ্যকই রয়েছেন যারা তাদের ক্যারিয়ারে একের অধিক ট্রেবল জিতেছেন। মুলার তাদের মধ্যেও একজন। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে তিনি দুইবার ট্রেবল জিতেছেন। তবে, বলাই বাহূল্য, এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, ২০১২/১৩ এবং ২০১৯/২০ মৌসুমে বায়ার্নের অর্জিত সেই ট্রেবলগুলিতে মুলার ছিলেন একদম মূখ্য ভূমিকায়।

     

    ছায়া স্ট্রাইকার, এমনকি অনেক সময় দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে খেলার তার যে সামর্থ্য তা বিশ্বব্যাপী জার্মান ভক্তদের, এবং বিশেষ করে বায়ার্ন ভক্তদের আজীবন মনে থাকবে।

     

    লেওয়ান্ডোস্কির সাথে, এবং সম্প্রতি লিরোয় সানে’র সাথে, তার চিরচেনা যুগলবন্দীই বায়ার্ন মিউনিখকে এখনো ইউরোপের সবচেয়ে ভয়ানক আক্রমণভাগগুলির একটি হিসেবে টিকিয়ে রেখেছে।

     

    লাউতারো মার্তিনেজ এবং এডিন জেকো (Lautaro Martinez and Edin Dzeko)

    গত ট্রান্সফার মৌসুমে যখন রমেলু লুকাকু ইন্টার মিলান ছেড়ে চেলসিতে পাড়ি জমালেন, তখন বহু ইতালিয়ান ভক্তরাই ভেবেছিলেন যে সিরি আ চ্যাম্পিয়নদের পারফর্মেন্সে সেটির বিরূপ প্রভাব পড়বে।

     

    *Lautaro and Dzeko celebrating together*

     

    বিশেষ করে আন্তোনিও কন্তেও যখন ক্লাব ছাড়লেন, তখন সবাই ধরেই নিয়েছিল যে ক্লাবটির মধ্যে অতিরিক্ত পরিবর্তন এসে গেছে, এবং তাদের শিরোপার আশা না করাই ভালো। এই মৌসুমকে অনেক ফুটবলবোদ্ধারাও আখ্যা দিয়েছিলেন ইন্টার মিলানের জন্য একটি পরিবর্তনসূচক ও ক্রান্তিকালীন মৌসুম হিসেবেই।

    পড়ুন:  জিয়ানলুইজি বুফন সৌদি প্রো লীগে যোগদানের জন্য £25 মিলিয়ন চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন

     

    অধিকন্তু, এই দুইজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিদায়ের পরেও ইন্টার মিলান তাদের পারফর্মেন্স লেভেল একদমই কমতে দেয়নি। লিভারপুলের বিপক্ষে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের নক আউট স্টেজ থেকে বিদায় নিলেও, ঘরোয়া লীগে তারা নিজেদের আধিপত্য এই সিজনেও বহাল রাখতে সক্ষম হয়েছে।

     

    এই ধারাবাহিকতার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন যে দুইজন তারা হলেন এডিন জেকো এবং লাউতারো মার্তিনেজ। ইন্টার সিইও-এর মতে গত মৌসুমে লুকাকু যে স্তরের পারফর্মেন্স দিয়েছিলেন ইন্টারের হয়ে, এই সিজনে এডিন জেকো ঠিক সেই স্তরের, এবং মাঝে মাঝে তার চেয়েও শ্রেয়, পারফর্মেন্স দিয়ে আসছেন। এ থেকে খুব ভালোভাবেই বোঝা যায় লুকাকুকে বিক্রয় করে ইন্টার মিলান কত বড় এবং সফল একটি ব্যবসা করেছে।

     

    সিরি আ চ্যাম্পিয়নদের সাথে যোগ দেওয়ার পর থেকে এডিন জেকো এই মৌসুমে সর্বমোট ৩৯টি ম্যাচ খেলে ১৬টি গোল করেছেন।

     

    অপর পক্ষে, জেকোর আর্জেন্টাইন স্ট্রাইক পার্টনার লাউতারো মার্তিনেজও কোন অংশে কম যান না। তিনিও জেকোর মতই বর্তমান সিজনে ইন্টারের হয়ে এখন পর্যন্ত ১৬টি গোল করেছেন।

     

    এ থেকে দেখা যায় যে, দুই খেলোয়াড়ই ইন্টারের হয়ে সমান দায়িত্ব নিয়ে খেলেন এবং তাদের দক্ষতা ও শক্তিসামর্থ্য কাজে লাগিয়ে সমান সমান গোলও করেন। তাদের মধ্যে এমন বোঝাপড়া না থাকলে এবং তাদের মধ্যে শুধুমাত্র একজনের থলেতে ১৬টি গোল থাকলে ইন্টার বর্তমানে সিরি আ টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করতো না।

     

    রিয়াদ মাহরেজ এবং রাহিম স্টার্লিং (Riyad Mahrez and Raheem Sterling)

    ক্লাব লিজেন্ড সার্জিও আগুয়েরো বিদায় নেওয়ার পর ম্যানচেস্টার সিটির দলে কোন পরিচিত স্ট্রাইকার না থাকলেও তাদের উইংগাররা এবং অ্যাটাকিং মিডফিল্ডাররা সেই ঘাটতি পূরণ করার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর।

     

    এক্ষেত্রে যে দু’টি নাম সবচেয়ে বেশি সামনে আসে সেগুলি হল রাহিম স্টার্লিং এবং রিয়াদ মাহরেজের। স্টার্লিং নতুন নতুন সিটিতে যোগ দেওয়ার পরে সিটি ভক্তদের মন পেতে তিনি যথেষ্ট বেগ পেয়েছেন। কিন্তু, পেপ গার্দিওলা আসার পর থেকে তিনি অসাধারণ ফর্মে রয়েছেন, এবং সেটি এই সিজনেও তিনি প্রদর্শন করে যাচ্ছেন। এছাড়া, ফেরান তোরেস দল ছাড়ার পর থেকে তার খেলার সময়সীমাও অনেকাংশে বেড়েছে।

     

    এই মৌসুমে ইতিমধ্যে এই সাবেক লিভারপুল তারকা ১৪টি গোল করে ফেলেছেন, যা তার গত মৌসুমের মোট গোলের সংখ্যা।

     

    অন্যদিকে, রিয়াদ মাহরেজ এই সিজনে তার অতীতের ফক্সেজ বা লেস্টার সিটির দিনগুলির মত ফর্ম প্রদর্শন করে চলেছেন। ইতিমধ্যে এই দলটির সাথে দু’টি প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জেতার পর এবং একবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল খেলার পর এসে তিনি এই মৌসুমে সিটির প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন।

     

    এই মৌসুমে মাহরেজ ইতিমধ্যে সর্বমোট ২২টি গোল করে ফেলেছেন, যা সিটির হয়ে তার পূর্বের যেকোন সিজনের গোল ট্যালির চেয়ে বেশি।

     

    যদিও সিটিতে বর্তমানে কোন নামকরা স্ট্রাইকার নেই, তবুও পেপ গার্দিওলা প্রায় কখনোই স্টার্লিং বা মাহরেজকে ফলস্ নাইন পজিশনে খেলান না। বরং, তাদের আসল পজিশন, অর্থাৎ উইং-এই তাদেরকে বেশির ভাগ সময় খেলিয়ে আসছেন, যেখান থেকে তারা প্রতিপক্ষের ডিফেন্সের মাঝ বরাবর ঢুকে পড়তে বেশ পারদর্শী। কখনো কখনো সেন্ট্রাল পজিশনে তারা চলে আসলেও যথেষ্ট উচ্চ নৈপূণ্য প্রদর্শন করেছেন তারা পুরো মৌসুমেই।

     

    সাদিও মানে এবং মোহাম্মদ সালাহ্ (Sadio Mane and Mohamed Salah)

    ঠিক বর্তমানের কথা বক্তে গেলে, আমরা সাদিও মানে এবং মোহাম্মদ সালাহ্-এর জুটির ব্যাপারে একদম হতভম্ব। এনফিল্ডে তাদের একটির পর একটি অসাধারণ পারফর্মেন্সের পরে এখন তাদেরকে ধরা হচ্ছে প্রিমিয়ার লীগ ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা দুইজন ফরোয়ার্ড হিসেবে।

    পড়ুন:  ম্যানচেস্টার সিটি বনাম আর্সেনাল প্রিভিউ এবং প্রেডিকশনঃ এফএ কাপের ম্যাচে বর্তমানে ইংল্যান্ডের দুই সেরা ক্লাবের মুখোমুখি সংঘর্ষ

     

    লিভারপুলের জার্সি গায়ে প্রিমিয়ার লীগে তার প্রথম মৌসুমের সালাহ্ রেকর্ড গড়ে বসেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পরে তিনিই এক সিজনে ৪০টির বেশি গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন সেই সিজনে।

     

    *INSERT MANE AND SALAH CELEBRATING WITH THE PREMIER LEAGUE OR CHAMPIONS LEAGUE TITLE*

     

    আরেক দিকে, সাদিও মানেও লিভারপুল জার্সিতে বেশ কিছু সিজন পার করেছেন সেরা ফর্মে। এই সিজনগুলির সবটিতেই তিনি ২০টি বা তর বেশি গোল কন্ট্রিবিউশন (গোল এবং এসিস্ট) করেছেন।

     

    সালাহ্ এবং মানে’র এই চমৎকার যুগলবন্দীর ফল লিভারপুল খুব দ্রুতই পেতে শুরু করে। এই জুটির উপর ভর করেই তারা ২০১৯ সালে তাদের ৬ষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপাটি জিতে নেয়, এবং তার ঠিক পরের বছরেই তারা তাদের ৩০ বছরের অপেক্ষার সমাপ্তি টেনে তাদের ১৯তম প্রিমিয়ার লীগ শিরোপাও জিতে নেয়। যদিও তারা ২০২০/২১ মৌসুমে তাদের সেরা খেলাটি উপহার দিতে পারেনি, বর্তমান মৌসুমে তারা আবার তাদের চিরাচরিত রূপে ফিরে এসেছেন।

     

    আপনি যদি দেখে থাকেন এই দুইজন মহারথী ওল্ড ট্রাফোর্ডে গিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে কিভাবে ধরাসয়ী করেছে, তাহলে আপনি ইতিমধ্যে জানেন তারা কতটা ধ্বংসাত্মক হিতে পারেন যেকোন দলের জন্য, যেকোন দিনে।

     

    এই জুটির সাফল্যের সাথে ডিয়োগো জতা’র অসামান্য ফর্ম যোগ করলে দেখা যায় যে, লিভারপুল এই মৌসুমেও প্রিমিয়ার লীগ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লীগ উভয় শিরোপা জেতার দৌড়েই অনেকটা এগিয়ে।

     

    হিউং মিন সন এবং হ্যারি কেইন (Heung Min Son and Harry Kane)

    আপনি হিউং মিন সন এবং হ্যারি কেইন এর চেয়ে শ্রেয় কোন অ্যাটাকিং জুটি পাবেন না যারা ক্লাব ফুটবলে কোন শিরোপাই জিততে পারেনি।

     

    *INSERT PICTURE OF SON AND KANE IN TRAINING TOGETHER*

     

    টটেনহ্যাম হটস্পার্সের হয়ে কোন শিরোপার স্বাদ না পেলেও তারা নর্থ লন্ডনে একসাথে বেশ কিছু অসাধারণ সিজন পার করেছেন, এবং স্মরনীয় অনেক পারফর্মেন্স তাদের ভক্তদের উপহার দিয়েছেন। হ্যারি কেইন ইতিমধ্যে ৩ বার প্রিমিয়ার লীগের গোল্ডেন বুট জেতার গৌরব অর্জন করেছেন, যার মধ্যে গত সিজনও রয়েছে।

     

    সন হিউং মিন হচ্ছেন একজন অন্যতম প্রধান কারণ যার জন্য স্পার্স গত কয়েক বছরে বেশ কিছু প্রতিযোগিতার ফাইনাল পর্যন্ত পৌছেছে। এর মধ্যে অন্যতম হল ২০১৯ সালে স্পার্সের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ খেলার অভিজ্ঞতা।

     

    কেইন বর্তমানে প্রিমিয়ার লীগের সর্বোচ্চ গোলস্কোরারদের অল-টাইম তালিকায় ১০ এর মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। আর সন হিউং মিন স্পার্সের হয়ে ইতিমধ্যে ১০০টিরও বেশি গোল করে ফেলেছেন, যা তাকে প্রিমিয়ার লীগে খেলা সবচেয়ে সফল দক্ষিণ কোরিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

     

    যদিও স্পার্সের জার্সিতে তাদের দুইজনের ভবিষ্যৎ নিয়েই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে, বর্তমানেও বড় দলগুলোর বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তগুলিতে তাদের খেলা এবং বোঝাপড়া সত্যিই দেখার মত হচ্ছে বটে।

     

    করিম বেঞ্জেমা এবং ভিনিসিয়াস জুনিয়র (Karim Benzema and Vinicius Jr.)

    এই ব্যাপারটি করিম বেঞ্জেমার অগাধ ট্যালেন্টেরই জানান দেয় যে, তিনি যে খেলোয়াড়ের সাথেই জুটি বাঁধেন, সেই জুটিই কিছুদিনের মধ্যে সুপারহিট হয়ে যায়।

     

    মাত্র কয়েক বছর আগেই এই ফরাসি স্ট্রাইকার অংশ ছিলেন বিশ্বের সেরা “ফরোয়ার্ড থ্রি” এর, যার বাঁকি দুইজন ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং গ্যারেথ বেইল।

     

    *INSERT PICTURE OF VINICIUS AND BENZEMA CELEBRATING A GOAL TOGETHER*

     

    বর্তমানে বেঞ্জেমা রিয়াল মাদ্রিদ এর আক্রমণভাগে খেলছেন উদীয়মান ব্রাজিলিয়ান উইংগার ভিনিসিয়াস জুনিয়রের পাশে। যদিও এই যুবা তারকা তার ক্যারিয়ারের শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদে বেশ খারাপ সময় কাটিয়েছেন এবং তার জন্য ভক্তদের ও মিডিয়ার কটাক্ষের স্বীকারও হয়েছেন, কার্লো অ্যানচেলোত্তি দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি যেন এক নতুন রূপে আবির্ভাব হয়েছেন।

    পড়ুন:  ম্যানচেস্টার সিটি বনাম বোর্নেমাউথ প্রিভিউ

     

    ভিনিসিয়াস তার প্রথম ৩ মৌসুমে রিয়ালের হয়ে ১১৮ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৫টি গোল করতে সক্ষম হোন। অধিকন্তু, বর্তমান মৌসুমে তিনি অসাধারণ ফর্ম ও ক্রীড়ানৈপূণ্য প্রদর্শন করে চলেছেন, এবং ইতিমধ্যে ৩৯ ম্যাচে ১৭টি গোল করেছেন। গোল করার সাথে সাথে তার বুদ্ধিদীপ্ততা এবং পাসিং রেঞ্জেও অনেকটা উন্নতি লক্ষণীয়।

     

    বেঞ্জেমা, অন্যদিকে, এই সিজনে এতই সুন্দর খেলা উপহার দিচ্ছেন যে, তাকে এবছরের ব্যালন ডি’অর জেতার দৌড়ে অনেক ফুটবল বোদ্ধাই এগিয়ে রাখছেন। এবং সেটি তার প্রাপ্যও বটে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ক্লাব ছাড়ার পর থেকে বলা যায় বেঞ্জেমা একরকম রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণভাগের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন।

     

    বর্তমান মৌসুমে বেঞ্জেমা ৩৪টি ম্যাচ খেলে মোটমাট ৩২টি গোল করেছেন। আপনি যদি শুধুমাত্র কিছুদিন আগেই করা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে পিএসজি-এর বিপক্ষে বেঞ্জেমার হ্যাট্রিকটি দেখে থাকেন, তবে আপনি অবশ্যই জানেন কি অসাধারণ ফর্মে রয়েছেন এই সাবেক লিওঁ ফরোয়ার্ড।

     

    উল্লেখযোগ্য প্রমুখ (Honorable Mentions)

    বেশ কয়েক বছর আগে ডর্টমুন্ডে একসাথে অসাধারণ সময় পার করেছিলেন উসমান দেম্বেলে এবং পিয়ের-এমরিক অবামেয়াং। তাদের সেই ভয়ানক জুটি আবার এক হয়েছে এত বছর পর, কিন্তু বার্সেলোনার জার্সি গায়ে। এবং, জুটি হিসেবে তাদের শুরুটাও হয়েছে মারাত্মক। ১১ ম্যাচ খেলে অবা গোল করেছেন ৮টি। আর দেম্বেলেও বার্সেলোনার জার্সি গায়ে তার সেরা সিজন পার করছেন, যেখানে তার এসিস্টের সংখ্যা ৯টি।

     

    যদিও সেই ৯টি এসিস্টের মধ্যে মাত্র ২টি এসিস্ট ছিল অবা’র গোলের জন্য, তবে এটি বলাই বাহুল্য যে, তাদের এই পুনর্মিলনী তাদের দু’জনের ক্যারিয়ারকেই পুনঃজ্জীবিত করে তুলেছে, এবং সেটি তাদের এবং বার্সেলোনা উভয়ের জন্যই বেশ সুখকর।

     

    আবার, আরেক দিকে, যদিও তারা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকে ইতিমধ্যে বাদ পড়ে গিয়েছে এবং দু’জনের মধ্যে একজন ক্লাব ছাড়তে চলেছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে, পিএসজি জুটি লিও মেসি এবং কিলিয়ান এমবাপ্পে’র কথা উল্লেখ না করলেই নয়। আর যাই হোক, যতদিন তারা খেলছেন একসাথে, ততদিনই অবাক দৃষ্টিতে পৃথিবী তাদেরকেই দেখতে চাইবে।

     

    দু’জন খেলোয়াড়ই একে অপরের প্রশংসায় আটখানা। একদিকে কিলিয়ান এমবাপ্পে জানান দিয়েছেন যে, লিও মেসির সাথে একদলে খেললে তার জন্য খেলাটাই অনেক সহজ হয়ে যায়। আবার মেসিও বলেছেন তিনি চান খেলার মাধ্যমে এমবাপ্পের সাথে তার যুগলবন্দী আরো জোরদার করতে, এবং মাঠের বাইরেও তাকে আরো ভালো করে জানতে এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে।

     

    শেষ কথা (Final Word)

    আক্রমণভাগে দুইজন স্ট্রাইকার খেলানোর প্রবণতা দিন দিন ফিরে আসা এবং বেড়ে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ৩ জন সেন্টার ব্যাক নিয়ে সাজানো ৩-৫-২ ফর্মেশনটির সাম্প্রতিক প্রচলন।

     

    এছাড়া, যারা এই ফর্মেশন বা ৩ জন সেন্টার ব্যাক সম্বলিত যেকোন ফর্মেশনের বিপক্ষে খেলতে নামেন, তখন তারাও ২ জন স্ট্রাইকার নিয়েই নামেন, কারণ এতে করে তারা এতগুলো ডিফেন্ডারের বিরুদ্ধে ভালোভাবেই কুলিয়ে উঠতে সক্ষম হোন।

     

    এটিও না বললেই নয় যে, আধুনিক ফুটবলাররা অনেক পরিশ্রমী হয়ে থাকেন, এবং ডিফেন্সিভ দায়িত্বও তারা খুব ভালোভাবেই বোঝেন এবং পালন করে থাকেন। অর্থাৎ, দুইজন স্ট্রাইকার খেলালেই যে ডিফেন্সে ঘাটতি তৈরি হবে, এটি ভাবাও ভুল। বরং, এতে করে একটি দলের আক্রমণভাগে একটি অসাধারণ যুগলবন্দীর সুযোগ তৈরি হয়, এবং তাছাড়া তাদের ডিফেন্সও শুরু হয় সেই দুইজনের ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্সিভ দেয়ালের উপর ভিত্তি করে।

    Share.
    Leave A Reply