ভূমিকা (Intro)
আমরা যদি গত বেশ কিছু মৌসুমের দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে বোঝা যায় যে, ম্যানচেস্টার সিটি একটি ক্রমশ উন্নতির ধারায় বহাল রয়েছে। তারা এমন একটি দল তৈরি করতে পেরেছে যার মধ্যে ব্যক্তিগত নয় বরং দলগত প্রয়াস খুবই লক্ষণীয়, এবং তা বর্তমান যুগের ফুটবলে অর্জন করা খুবই কষ্টসাধ্য। আমরা যদি প্রিমিয়ার লীগে ম্যানচেস্টার সিটি’র এই ক্রমবর্ধমান একনায়কতন্ত্রের পেছনের কারণগুলোর দিকে নজর দেই, তাহলে একটি নাম এবং একটি কারণ সবার আগে আমাদের মাথায় আসবে, এবং সেটি হল — পেপ গার্দিওলা! এই মানুষটি যে দলকেই কোচ করেছেন, সে দলকেই পৌঁছিয়ে দিয়েছেন উন্নতির ও সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে। তার সকল দলই ছিল দলগত নৈপুণ্যের এক একটি সাফল্যগাঁথা।
আবার, যদিও পেপ গার্দিওলার অসাধারণ কোচিং দক্ষতার দার না দিলেই নয়, কিন্তু এ বিষয়টিও স্বীকার করতেই হবে যে, ম্যানচেস্টার সিটি’র সাফল্যের পেছনে তাদের মালিকদের অগাধ সম্পদও অনেকটাই দায়ী। মূলত এই তিনটি বিষয়ের উপর (দলগত নৈপুণ্য, অসাধারণ কোচ এবং মালিকদের অগাধ ধনদৌলত) ভর করেই ম্যানচেস্টার সিটি গত পাঁচ বছর ধরে প্রিমিয়ার লীগে একচেটিয়া রাজত্ব করে আসছে। তাদের সেই অর্থনৈতিক সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে তারা এবার সাইন করেছে বর্তমান যুগের সবচেয়ে নামকরা যুবা স্ট্রাইকারকে, যাঁর নাম আর্লিং ব্রাউট হাল্যান্ড।
আমাদের মনে হয়েছে যে, ম্যানচেস্টার সিটি’র অসাধারণ ২০২১-২২ মৌসুম নিয়ে তো কথা বলা দরকারই, পাশাপাশি তাদের সেসকল দিক নিয়েও কথা বলা দরকার যেসব দিক মাথায় রেখে পৃথিবীর সবচেয়ে ইন-ডিমান্ড যুবা গোলস্কোরার তার হাতে থাকা অসংখ্য অফার ও অসংখ্য অপশনকে উপেক্ষা করে ম্যানচেস্টার সিটিকে বেছে নিয়েছেন। এই আর্টিকেলটি আপনি কোনক্রমেই মিস করতে চাইবেন না! তাই আমাদের সঙ্গেই থাকুন!
ম্যানচেস্টার সিটি এবং প্রিমিয়ার লীগঃ বর্তমান সময়ের সেরা প্রেম কাহিণী (Man City and the Premier League: A love story these days)
এটি এখন খুবই জানাশোনা একটি বিষয় যে, প্রিমিয়ার লীগ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং সেরা ফুটবল লীগ, তা আপনি যে দিক থেকেই দেখুন না কেন। তবে, অন্যান্য লীগের অনেক সমর্থকই এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কে জড়াতে এক পায়ে খাড়া থাকবেন সেটিও আমরা জানি, এবং তাদের সাথে সুস্থ্য বিতর্কে জড়াতে আমরাও পিছপা হব না, যদিও সেটি অন্য কোন দিনের জন্যই আমরা বাঁচিয়ে রাখছি। ইংল্যান্ডের এই প্রানপ্রিয় লীগে বিশ্বের সব সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে সাজানো সব উচ্চমানের দলগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে শুধুমাত্র মৌসুমশেষে প্রিমিয়ার লীগের সেই প্রজ্জ্বলিত শিরোপাটি জেতার উদ্দেশ্যে। কিন্তু, যখন আপনি উপলব্ধি করেন যে এই চরম প্রতিযোগিতাময় এবং হিংস্র লীগে একটি দল রয়েছে যারা গত ৫টি প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমের মধ্যে ৪টিতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে, তখন কি আপনি একটুও অবাক হোন না? হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা ম্যানচেস্টার সিটির সাফল্যগাথার কথাই বলছি!
ঘটনাক্রমে দেখা যায় যে, পেপ গার্দিওলার আগমণের সাথে সাথে প্রিমিয়ার লীগে ম্যানচেস্টার সিটির এই দাপুটে আবির্ভাব শুরু হয়েছে, কারণ সদ্য সমাপ্ত মৌসুমটিই ছিল সিটির কোচ হিসেবে তার ৫ম ফুল সিজন। চলুন দেখে নেওয়া যাক তারা একসাথে কিভাবে এই অসম্ববকে সম্ভব করেছে!
৫ বছরে ৪টি প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা! (4 Premier League titles in 5 years!)
চলুন ৫ বছর আগে ফিরে যাওয়া যাক! ২০১৭-১৮ সালের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুম ছিল ম্যানচেস্টার সিটি’র জন্য এক অসীম সাফল্যগাথা, কারণ তারা সেবার শুধু তাদের চমৎকার পারফর্মেন্স দিয়ে সবার মনই জয় করেননি, বরং একটি প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমে ১০০ পয়েন্ট হাসিল করার দূর্গম রেকর্ড তৈরি করে লীগ শিরোপা জেতার নৈপূণ্য অর্জন করেছিল। তার ঠিক পরের বছরেও তারা নিজেদের অসাধারণ ক্রীড়াশৈলি এবং সাফল্যের ধারা বজায় রেখে আবারো প্রিমিয়ার লীগের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর এক বছর বিরতি দিয়ে ম্যানচেস্টারের আকাশী নীল বাহিণী আবারো ২০২০/২১ সালে লীগের শিরোপাটি লিভারপুলের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করে। সেই সিজনে তারা ২য় স্থানে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চেয়ে ১২ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে সিজন শেষ করে। সেটি ছিল চার বছরে তাদের তৃতীয় লীগ শিরোপা জয়। এখন আসুন আরেকটু কাছে থেকে দেখা যাক সর্বশেষ লীগ সিজনে তারা কি কি কৃতিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেঃ
ম্যানচেস্টার সিটি’র ২০২১-২২ মৌসুমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ (A brief look at the 2021-22 campaign)
সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ মৌসুমটিতে প্রিমিয়ার লীগে ম্যানচেস্টার সিটি এবং লিভারপুলের মধ্যে অকল্পনীয় একটি প্রতিযোগিতা অবলোকন করেছে পুরো পৃথিবী। মৌসুমের প্রায় পুরো শেষভাগ জুড়েই তাদের মধ্যে শুধুমাত্র একটি পয়েন্টের ব্যবধান ছিল, এবং শেষ পর্যন্ত সেই এক পয়েন্টের ব্যবধানেই সিটি শিরোপা অর্জন করে নেয়, যে জয় ছিল সর্বশেষ ৫ বছরে ম্যান সিটির ৪র্থ লীগ শিরোপা জয় — একদম চরম পর্যায়ের আধিপত্যের একটি অমায়িক উদাহরণ! ৯৯টি গোল করে তারাই হয়েছিল লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতা, এবং শুধু তাই নয়, পুরো মৌসুমজুড়ে তারা মাত্র ২৬টি গোল হজম করেছিল, যা লিভারপুলের সাথে সম্মিলিতভাবে লীগের সর্বনিম্ন। এরকম ভারসাম্য ফুটবলে অর্জন করা খুবই দূর্বিসহ একটি ব্যাপার, কিন্তু ম্যান সিটি সেটি করে দেখিয়েছে।
ইংলিশ ফুটবলে গার্দিওলার চমৎকার আধিপত্য (Guardiola’s brilliant dominance in English football)
আমরা সিটিজেনদের অগাধ সম্পদ বা অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে পূর্বেও সংক্ষেপে বলেছি, কিন্তু যে ব্যাপার নিয়ে মোটেও যথেষ্ট বলা হয়নি তা হচ্ছে তাদের একটানা ও ধারাবাহিক সাফল্যের পেছনের মূল চালিকাশক্তি, ওরফে স্প্যানিশ কিংবদন্তি কোচ পেপ গার্দিওলা।
গার্দিওলার নাম বিশ্বজুড়ে পরিচিত, কারণ তিনিই হচ্ছেন সাম্প্রতিক সময়ে এই সুন্দরতম খেলাটির সবচেয়ে বড় ধারক ও বাহক। পেপ গার্দিওলা পুরো পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে ২০১৬-১৭ মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেন। এর আগে তিনি স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনায় সবচেয়ে বেশি সাফল্যময় কয়েক বছর পার করেছেন, এবং তার পরে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের হয়েও কিছু অসাধারণ সময় পার করেছেন।
পেপ এর হাত ধরেই ম্যানচেস্টার সিটি প্রিমিয়ার লীগে অর্জন করেছে এক ধরণের আধিপত্য, যার শেষ এখনো লীগটি দেখেনি। এই আধিপত্যের জেরে তারা পেছনে ফেলেছে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মত বড় বড় নামকেও। এ নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে যথেষ্ট আলোচনা করেছি, কিন্তু তারপরও, সিটি’র আধিপত্য নিয়ে যতই বলা হোক তা যথেষ্ট নয়।
তবে, ঘরোয়া লীগ ও কাপে অসীম সাফল্য অর্জন করলেও “কাতালান মাইস্ট্রো” খ্যাত এই কোচিং লিজেন্ডের জন্য ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে একটি অর্জন এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গিয়েছে, এবং সেটি হচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা। চলুন পরবর্তী অংশে আমিরা সেটি নিয়েই আলোচনা করি।
চ্যাম্পিয়নস লীগঃ পেপ এবং তার বাহিণীর জন্য এক অধরা সাফল্য (Champions League: a failure for Pep & co.)
যদি বার্সেলোনা ত্যাগের পর থেকে কোন একটি অলংকার পেপ গার্দিওলার মুকুটে জায়গা করে নিতে অক্ষম হয়ে থাকে, তবে তা হচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপাটি। ব্লগরানাকে প্রায় এক দশক আগে ছাড়ার পর থেকে তিনি এই শিরোপাটি জয়ের স্বাদ আর পাননি। এছাড়া, ম্যানচেস্টার সিটিও এই শিরোপাটি তাদের ইতিহাসে কখনোই জেতার গৌরব অর্জন করতে পারেনি।
যখন ম্যানচেস্টার সিটির নিকট এমন সেরা একজন কোচ এবং পূর্ণ শক্তির একটি দল রয়েছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সবাই আশাই করবে যে তারা ক্লাব ফুটবলে বিশ্বের সেরা এই শিরোপাটি অদূর ভবিষ্যতে জিতবেই।
তবে, সত্যিটা একটু অন্যরকম। তারা সম্প্রতি কয়েকবার চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপাটি জেতার কাছাকাছি গেলেও শেষ পর্যন্ত দূর্ভাগ্যবশত আর এই বহুল প্রতীক্ষিত সিলভারওয়্যারটি তাদের জেতা হয়নি। ২০২০-২১ মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটি শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালে পদার্পণ করে, কিন্তু একটুর জন্য আবার তারা দ্বিতীয় স্থানেই থেকে যায়, এবং ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ চেলসি নিজেদের দ্বিতীয় ইউসিএল শিরোপাটি বাগিয়ে নেয়।
এবারের মৌসুমেও দূর্ভাগ্য তাদের পিছু ছাড়েনি। জেতার মত অবস্থা তৈরি করেও এবারের মৌসুমে সেমি ফাইনাল পর্যায়ে গিয়ে তারা স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের কাছে শেষ পর্যন্ত এগ্রিগেটে ৬-৫ গোলের ব্যবধানে নাটকীয়ভাবে পরাজয়ের শিকার হয়। এবং এই প্রশ্নটির উৎপত্তিও এখানেই হয়ঃ কেনই বা ইউরোপের সবচেয়ে টপ স্কোরিং দলটি এখনও চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপাটি নিজেদের নামে করতে পারল না? এর পেছনে শুধু একটি বোধগম্য কারণই দর্শানো যায় — দূর্ভাগ্য!
দ্য আর্লিং হাল্যান্ড ইফেক্ট (The Erling Haaland effect)
গত কয়েক বছরের মধ্যে মাথাচাড়া দেওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে আর্লিং হাল্যান্ডই হচ্ছেন এমন একজন যুবা তারকা যাকে দেখে সব ফুটবল বোদ্ধাই মনে করছেন যে অদূর ভবিষ্যতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং লিওনেল মেসিদের পাস করা মশাল হয়তো তার উপরেই বর্তাবে! হাল্যান্ড বুন্দেসলিগায় বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে যোগ দেওয়ার পর থেকেই লীগটি কাঁপিয়ে বেরিয়েছেন, এবং সকলকে দেখিয়েছেন কেন তাকে অনেক তরুণ বয়স থেকেই গোলস্কোরিং এর দিক থেকে “দ্য বিস্ট” বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে!
এবং এর পর থেকেই ইউরোপের সব বড় বড় ক্লাব তার সিগনেচার পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল রিয়াল মাদ্রিদ, পিএসজি এবং চেলসি। কিন্তু সবাইকে উপেক্ষা করে হাল্যান্ড ২০২২-২৩ মৌসুম থেকে যোগ দিচ্ছেন ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির দলে।
এমনটি বিস্তৃতভাবেই বিশ্বাস করা হয় যে, তাদের ধনী মালিকদের বদৌলতে ম্যান সিটিকে খেলোয়াড় কেনাবেচার বাজারে কখনোই আর্থিক সংকটে পড়তে হয়না, তা তাদের ট্রান্সফার টার্গেটের মূল্য যতই হোক না কেন। এবং এমনটিও মনে করা হয় যে, সেই ধনসম্পদের বদৌলতেই তারা পৃথিবীর যেকোন খেলোয়াড়কেই কিনে ফেলতে পারবে। তবে, হাল্যান্ডকে কেনার লড়াইয়ের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছে যে কোন ভালো খেলোয়াড়কে দলে ভিড়াতে হলে শুধু অগাধ ধনসম্পদ থাকাটাই যথেষ্ট নয়!
তবে, এই দানবাকার নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকারকে কেনার পর কি ম্যানচেস্টার সিটি দূর্ভেদ্য হউএ উঠবে? তবে কি এবার তাদের এবং চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপার মধ্যে কোন দূরত্বই আর থাকবে না? যেহেতু ফুটবল চরম অনিশ্চয়তার খেলা, তাই এ ব্যাপারে হলপ করে কিছু বলা না গেলেও, এটি মানতেই হবে যে, বিশ্বসেরা স্ট্রাইকারদের নিয়ে কাজ করার এবং তাদের উপর ভর করে সবচেয়ে বড় বড় প্রতিযোগিতাগুলি জেতার অভিজ্ঞতা কিন্তু গার্দিওলার রয়েছে।
বছরের পর বছর বিভিন্ন প্রতিভাবান স্ট্রাইকারদের সাথে পেপ গার্দিওলার যুগলবন্দী (Guardiola and attackers over the years)
আর্লিং হ্যালান্ড আসলেই পেপ গার্দিওলার সাথে কাজ করে অনেক আরাম বোধ করবেন, কারণ তার মত বিস্ফোরক প্রতিভাদের সাথে কাজ করার প্রচুর অভিজ্ঞতা তার ভবিষ্যৎ কোচ মহোদয়ের রয়েছে। গার্দিওলা তার কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুতেই কাজ করেছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি’র সাথে, যাকে তিনি পরিণত করেছিলেন বর্তমান সময়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ে, এমনকি অনেকে তাকে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। যখন প্রশ্ন আসে তার অধীনে থাকা সকল খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে তাদের সেরাটা নিঙড়ে বের করে আনার, তখন পেপ গার্দিওলার সাথে পৃথিবীর কোন কোচ বা ম্যানেজারেরই তুলনা হয়না। তিনি লিও মেসির সাথেও ঠিক সেটিই করেছিলেন। তাকে তিনি উইং থেকে এনে সেন্ট্রাল এটাকে ফলস নাইন হিসেবে খেলানো শুরু করেন, এবং এমন বুদ্ধিদীপ্ত ট্যাকটিকাল বাজিমাত প্রদর্শন করেই গার্দিওলা দ্রুততম সময়ে মেসিকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছিয়ে দেন। শুধু মেসিই নয়, স্যামুয়েল ইতো, রবার্ট লেওয়ান্ডোস্কি এবনহ সার্জিও আগুয়েরোর মত ফরোয়ার্ডদের সাথেও তিনি সফল সময় পার করেছেন।
এখন এমনটিই মনে হচ্ছে যে, আর্লিং হাল্যান্ডের জন্য ইংল্যান্ডে সুখের সময়ই অপেক্ষা করছে, কারণ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ লীগে ভালো করার জন্য সকল কিছুই তিনি পেতে যাচ্ছেন, যার মধ্যে অন্যতম হল গার্দিওলার পথ প্রদর্শন বা গাইডেন্স। এখন শুধু সময়ই বলে দিবে আমাদের ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হয় কি না।
হাল্যান্ড কি পারবেন শেষ পর্যন্ত সিটিকে চ্যাম্পিয়নস লীগে সাফল্য এনে দিতে? (Can Haaland finally help Manchester City win the Champions League?)
এই চূড়ান্ত প্রশ্নটির একটি সহজ উত্তর প্রয়োজন! আর্লিং হাল্যান্ড কি পারবেন ম্যানচেস্টার সিটিকে তাদের বহুল প্রতীক্ষিত চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপাটি এনে দিতে? আমরা বিশ্বাস করি এই প্রশ্নটির উত্তর ইতিবাচকই হতে চলেছে।
এমন নয় যে এই প্রতিভাবান নরওয়েজিয়ানকে কেনার পূর্বে ম্যানচেস্টার সিটির নিকট যথেষ্ট অ্যাটাকিং ট্যালেন্ট ছিল না, কিন্তু তাকে কেনার পর এখন সিটির নিকট সেই আত্মবিশ্বাসটি আবার নতুন করে ফিরে আসবে যে, তারা যেকোন দিন যেকোন ইউরোপীয় পরাশক্তির রক্ষণভাগকে সম্পূর্ণভাবে তছনছ করে রেখে দিতে পারবে।
ফুটবল বরাবতই খুবই অনিশ্চয়তার খেলা, তাই কখনোই এমনটি হলপ করে বলা যাবে না যে হাল্যান্ডকে কেনার ফলে তারা পৃথিবীর সকল প্রতিযোগিতায় নিমিশেই জয়লাভ করবে। এমন সুপারটিম বা গ্যালাক্টিকো খ্যাত দলগুলিও অতীতে সফলতা পেতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এটির সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ হল পিএসজি (প্যারিস সেন্ট জার্মেই) যাদের দলে বিগত মৌসুমে ছিল মেসি, নেইমার এবং এমবাপ্পের মত বিশ্ব কাঁপানো খেলোয়াড়েরা। তবুও তারা চরমভাবে আন্ডার-পারফর্ম করেছে, এবং সতর্ক না হলেও ম্যান সিটির ভাগ্যেও এমন পরিণতিই লেখা হতে পারে।
উপসংহার (Conclusion)
আমরা আজ বেশ কিছু ব্যাপার নিয়েই আলোচনা করে ফেলেছি! ম্যানচেস্টার সিটির ঘরোয়া আধিপত্য থেকে শুরু করে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় তাদের বরাবরের ব্যর্থতা পর্যন্ত সবকিছু নিয়েই আমরা কথা বলেছি।
সব কথার এক কথা হল, যখন আর্লিং হাল্যান্ডের নামটি চলে আসে, তখন বলাই যায় যে আগামী মৌসুমটি বা মৌসুমগুলি আকাশী নীল জার্সিধারী সিটিজেনদের জন্য এবং পুরো প্রিমিয়ার লীগের জন্যই খুবই উত্তেজনাপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
প্রিয় পাঠক, আজকে এই পর্যন্তই! শেষ অবধি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এমন অস্থির কন্টেন্ট আরো পাওয়ার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।