ইংলিশ ফুটবলে ম্যানচেস্টার সিটি’র দাপট এবং ক্রমবর্ধমান একেচেটিয়া আধিপত্য কি কেউ থামাতে পারবে? বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি এমন একটি প্রশ্ন যার উত্তর কেউই সহযে দিতে পারবে বলে মনে হয় না। বাস্তবে অবশ্য এই প্রশ্নটির উত্তর হল ‘হ্যাঁ’, কিন্তু যদিও তেমনটি করা সম্ভব, তবুও সেটি অর্জন করা কিন্তু বেশ কঠিন একটি ব্যাপার হতে চলেছে।
গত বেশ কিছু বছর ধরেই একটি বিষয় খুবই সাধারণ হয়ে দাড়িয়েছে, এবং সেটি হল ইউরোপ জুড়ে বিভিন্ন দেশের ফুটবল লীগকে “কৃষক লীগ” বলে আখ্যায়িত করা। এই শব্দটি একটি ব্যাঙ্গাত্মক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যার মানে হল এই যে, সেই লীগটিতে মোটেও কোন প্রতিযোগিতামূলকে খেলা দেখতে পাওয়া যায় না, বরং সেখানে কেবলমাত্র একটি দলই দাপটের সাথে খেলে থাকে, এবং বছরের পর বছর শিরোপা জিততে থাকে। এই শব্দটি আবিষ্কার হওয়ার পেছনে অনেক বড় অবদান রয়েছে জার্মান বুন্দেসলিগা, ফরাসি লিগা উন এবং ইতালিয়ান সিরি আ’র, কারণ সেসকল লীগে যথাক্রমে বায়ার্ন মিউনিখ, প্যারিস সেইন্ট জার্মেই এবং জুভেন্টাসের অনেকটা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার পেয়েছে।
প্রিমিয়ার লীগের ভক্তরা অন্যান্য লীগের ক্ষেত্রে এই “কৃষক লীগ” শব্দটি বেশি ব্যবহার করে থাকেন, কারণ তাদের মতে সেসকল লীগের চেয়ে প্রিমিয়ার লীগ একটু হলেও শ্রেয় এই অর্থে যে অন্তত সেইসব লীগের মত প্রিমিয়ার লীগে মৌসুম শুরুর আগেই চ্যাম্পিয়ন যে হবে তা জেনে যাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে আসলেও কোন সন্দেহ একদমই নেই যে প্রিমিয়ার লীগই হল বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক এবং তারকাবহুল ফুটবল লীগ। এই লীগে যেমন আছেন সেরা সেরা সব খেলোয়াড়, তেমনি এই লীগেই বর্তমানে রয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা কোচ বা ম্যানেজাররাও।
প্রত্যেক বছর প্রিমিয়ার লীগের মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্বে এমন চার-পাঁচটি দল নিয়ে খুব আলোচনা হয় যারা প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা জয়ের জন্য সমান ফেভারিট বলে গণ্য হবে। এমন আলোচনার ফলেই তৈরি হয়েছে প্রিমিয়ার লীগের “বিগ ৬” গোষ্ঠীটির। বাস্তব অর্থে বলতে গেলে, এই ছয় দলের সকলেই প্রতি বছর সমান ফেভারিট না হলেও বেশির ভাগ মৌসুম শেষে লীগ টেবিলের শীর্ষ ৬ এ এই দলগুলিই থাকে। অন্য দিকে, অন্যান্য লীগে এমনটি আসলেও সত্য যে প্রতিযোগিতা অনেক কম হয়, এবং বেশির ভাগ মৌসুমেই বোঝা যায় যে কোন দল চ্যাম্পিয়ন হবে।
তবে, গত পাঁচটি প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমের মধ্যে চারটিতেই শিরোপা অর্জন করেছে ম্যানচেস্টার সিটি, এবং যেকোন ফুটবল ভক্ত এবার এটি নিয়েও চিন্তিত যে প্রিমিয়ার লীগও বুঝি তেমনি এক “কৃষক লীগ” এ পরিণত হতে চলেছে। সদ্য সমাপ্ত মৌসুমটিতে এক লিভারপুলই এমন একটি দল ছিল যারা পেপ গার্দিওলার দলকে শেষ পর্যন্ত চিন্তিত রাখতে পেরেছিল। এছাড়া, তৃতীয় স্থানে অবস্থান করা চেলসি ম্যানচেস্টার সিটি’র থেকে ১৯ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে মৌসুম শেষ করেছিল, যা একটি বিশাল বড় ব্যবধান।
২০১৬ সালে পেপ গার্দিওলা ম্যান সিটি’র দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্লাবটি আরো শক্তিশালী এবং ধারাবাহিক হয়ে উঠেছে, এবং ইংলিশ ফুটবলে রাজ করতে শুরু করেছে, যার ফলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ক্ষেত্রেও এখন অনেকেই মৌসুম শুরুর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করে দিতে পারে যে, মৌসুম শেষে চ্যাম্পিয়ন রূপে ম্যান সিটিকেই দেখা যাবে। সিটিজেনরা অবশ্য এক দিনের মাথায় এমন অবস্থানে পৌঁছায়নি, বরং সেখানে তারা পৌঁছিয়েছে বেশ বড়সড় একটি পথ পাড়ি দেবার পরেই। এখন আমরা দেখব কিভাবে প্রিমিয়ার লীগের অন্যান্য পরাশক্তিরা সিটিজেনদের সাথে তাদের ব্যবধানটি ঘুঁচাতে পারে, এবং গত প্রায় ১০ বছর ধরে ম্যানচেস্টার সিটি ইংল্যান্ডে যে একটি একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করেছে তার সমাপ্তি তারা কিভাবে টানতে পারে।
অর্থ যার জোর তার, এবং জোর যার মুল্লুক তার (Money to contend with)
অবশ্যই পেপ গার্দিওলা প্রচুর প্রশংসা কুড়ান এই জন্য যে তিনি একটি অসাধারণ দল তৈরি করেছেন এবং তার দলকে হারানো খুবই কঠিন একটি বিষয়, তবে এ ব্যাপারটি আমরা প্রায়ই অবলোকন করতে ব্যর্থ হই যে, কয়টি দলের ম্যানচেস্টার সিটি’র মত অর্থনৈতিক সক্ষমতা রয়েছে? কোন খেলোয়াড়কে টার্গেট করলেই তাকে পেয়ে যাবেন দলে, এমন সুযোগ বিশ্ব ফুটবলে কয়জন ম্যানেজার পান? ২০০৩ সালে যখন চেলসি’র মালিকানা দখল করেন রাশিয়ান কোটিপতি রোমান আব্রামোভিচ, তখন চেলসি যেমন অর্থনৈতিক সক্ষমতার মুখ দেখেছিল এবং অনেক অনেক সাফল্যও অর্জন করেছিল, সিটি’র ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটিই হয়েছে, কিন্তু তারা সেই সাফল্যকে ধারাবাহিকতায় রূপও দিতে পেরেছে।
যখনই ম্যানচেস্টার সিটি’র সফলতার বিষয়টি উঠে আসে, তখনই তাদের মালিকানা এবং অঢেল সম্পদের কথাটিও উঠে আসবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। সবচেয়ে সম্পদশালী ক্লাবগুলিই সবচেয়ে সফল ক্লাব হিসেবে বহিঃপ্রকাশ করে, এবং আধুনিক ফুটবল বিশ্বে এ ব্যাপারটি দিনে দিনে আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে ম্যানচেস্টার সিটি’র চেয়েও বড় উদাহরণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ফ্রান্সের ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই।
সিটিও প্যারিসের চেয়ে কোন অংশেই কম যায়নি, কারণ ২০০৮ সালে আরব আমিরাতের রাজ পরিবারের সন্তান শেখ মনসুর ক্লাবটির মালিকানা নেওয়ার পর থেকে তারা প্রচুর টাকা খরচ করে অনেক ভালো ভালো খেলোয়াড় কিনেছেন। দলটিকে একটি সাফল্যের মেশিন বানানোর উদ্দেশ্যে গার্দিওলাকে কোচ বানিয়ে তাকে লাইসেন্সও দিয়ে দিয়েছেন যাকে খুশি তাকে কেনার।
যদি অর্থ সম্পদের দিক থেকেই দেখা হয়, তাহলে প্রিমিয়ার লীগে ম্যানচেস্টার সিটি’র ধারে কাছে ভিড়তে পারে এমন কোন দল থেকে থাকলে তা হল তাদেরই প্রতিবেশী দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। চেলসি’র আর্থিক ক্ষমতা অনেকটাই সিটি’র কাছাকাছি ছিল, কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের রেশ ধরে রোমান আব্রামোভিচ এর বিদায় এবং নতুন মালিক টড বোহলি’র আগমণের ফলে ক্লাবটি এখন একটি ক্রান্তিকালীন সময় পার করছে, যার মানে হল তারা হয়তো খেলোয়াড়দের পেছনে আগের মত ওত বেশি খরচ এখন আর নাও করতে পারেন।
প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ ৬ দলের মধ্যে সম্পদের দিক থেকে ম্যানচেস্টার সিটিই সবচেয়ে এগিয়ে, এবং সেটিকে কাজে লাগিয়েই তারা এমন একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে যেখানে মৌসুম শুরুর আগেই বোঝা যায় যে তারাই লীগটির চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আবির্ভূত হবে। অবশ্য, এই দিক থেকে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আরেকটি নতুন দল আবির্ভুত হয়েছে, এবং সেটি হল নিউক্যাসেল ইউনাইটেড। সৌদি আরবের পাব্লিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড নামক একটি সংস্থা সম্প্রতি ক্লাবটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মালিকানা কিনে নিয়েছে। তবে, তাদের ব্যবসাটি বুঝতে, গঠনমূলক একটি কাঠামো তৈরি করতে এবং ম্যানচেস্টার সিটি’র পর্যায়ে যেতে এখনো অনেক সময় লাগবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এই কারণেই ধারণা করা হচ্ছে যে ম্যানচেস্টার সিটি বেশ কিছু বছরের জন্য প্রিমিয়ার লীগে রাজ করে বেড়াবে। তবে, যেই মুহূর্তে তাদের সাথে অন্যান্য দলগুলির সম্পদগত ব্যবধান কমে আসবে, তখনই প্রিমিয়ার লীগে তাদের আধিপত্য বা একচেটিয়া দাপটও অনেকটা কমে আসবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
একটি স্থিতিশীল ক্রীড়াকৌশলের যথাযথ প্রয়োগ (Having and implementing a steady gameplan)
টাকা-পয়সা বা অর্থ-সম্পদ একটি ক্লাবের ভাগ্য অনেকটাই পরিবর্তন করে দিতে পারে, তবে তেমনটা অবশ্যই সম্ভব হবে না যদি না ক্লাবটিতে যথাযথ ম্যানেজমেন্ট থাকে। একটি সুযোগ্য প্রশাসন না থাকলে যেকোন ক্লাবই মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য, যতই সেই ক্লাবের পকেটে বিলিয়ন ডলারের চেক থাক না কেন। যেখানে ম্যানচেস্টার সিটি তাদের অর্থের খনি শেখ মনসুরের কাছ থেকে সবসময়ই আর্থিক নিশ্চয়তা পেয়ে এসেছে, সেখানে ক্লাবটি খেলার মাঠে সবকিছু সুন্দরভাবে ম্যানেজ করার জন্য পেপ গার্দিওলার মত একজন জাদুকরকেও দলে রেখেছে।
সাবেক এই বার্সেলোনা কোচ কাতালুনিয়ায় তার সময়কালে ‘তিকি-তাকা’ নামক খেলার স্টাইলটিকে বিখ্যাত করে তোলেন, এবং ম্যানচেস্টার সিটিতে আসার পর এখানেও তিনি একটি সাদৃশ্যপূর্ণ খেলার ধরণই বাস্তবায়ন করেছেন। তবে, যেহেতু এবার তিনি প্রিমিয়ার লীগে রয়েছেন, তাই তাকে সেই ধরণটিতে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে, এবং কিছু শক্তিশালী খেলোয়াড় দলে রাখার পাশাপাশি পাসিং এর গতিও অনেকটা বাড়াতে হয়েছে। গার্দিওলা’র অধীনে ম্যানচেস্টার সিটি এখন তাদের হাই-রেঞ্জ পাসিং এবং ফ্লুইড ফুটবল এর জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এই প্রক্রিয়াটি তাদের দলে শুরু হয় একদম তাদের রক্ষণভাগ থেকে, যার মধ্যে তাদের গোলকিপারও সামিল থাকেন।
ম্যানচেস্টার সিটি ব্যতীত প্রিমিয়ার লীগে আর মাত্র একটি দলই আছে যাদের একটি নির্দিষ্ট খেলার স্টাইল রয়েছে, এবং রয়েছে পাসিং ও প্রেসিং এর একটি নির্দিষ্ট গতি। এসকল কারণেই এ ব্যাপারটিতে কোনই সন্দেহ নেই যে, অন্তত গত ৫ বছরের মধ্যে অল রেডস’রাই প্রিমিয়ার লীগের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ দল।
একটি স্থিতিশীল ক্রীড়া কৌশল থাকার ফলেই পেপ গার্দিওলা’র দলে একই খেলোয়াড় ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে খেলতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন। তারা একদমই হকচকিয়ে না ওঠার প্রধান কারণই হল যে, তাদের কেবল গেমপ্ল্যানটিই অনুসরণ করতে হয়। এটি তাদের একটি অনবদ্য দলগত ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছে, যার ফলে গার্দিওলা’র অধীনে ম্যানচেস্টার সিটি তাদের ৮০% ম্যাচেই সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ম্যান সিটি’র আধিপত্য ঠেকাতে হলে এখন তাই প্রিমিয়ার লীগের অন্যান্য পরাশক্তিকেও নিজেদের খেলার একেকটি নতুন নতুন ফর্মুলা বা নিজস্ব আঙ্গিক তৈরি করে নিতে হবে, এবং সেটিতেই লেগে থাকতে হবে। এভাবেই তারা নিজেদের দলগত একনিষ্ঠতা তৈরি করে নিতে পারবে, যা অন্যান্য দলের পক্ষে ভেঙে ফেলা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে।
দলের প্রত্যেকটি পজিশনে একাধিক মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের উপস্থিতি (Proper squad depth in all areas of the pitch)
স্মৃতির পাতায় কিছু সময় পার করলেই আমরা এমন অনেক ঘটনাই খুঁজে পাব যেখানে এক বা একাধিক তারকা খেলোয়াড় একসাথে ইঞ্জুরিতে পড়ার কারণে কোন একটি দল পুরোপুরিভাবে ফর্মের বাইরে চলে গিয়েছিল এবং তার ফলে তাদের সম্পূর্ণ মৌসুমই ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, ম্যানচেস্টার সিটি’র ক্ষেত্রে এমনটি হয় না বললেই চলে, কারণ তাদের মূল একাদশের সকলে তো তারকা খেলোয়াড়ই, তাছাড়া সেসকল খেলোয়াড়ের বদলি হিসেবে যারা পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াডে থাকেন, তারাও একেক জন তারকা খেলোয়াড়।
ম্যান সিটি একটি বৈশিষ্ট্য বেশ কিছু মৌসুম থেকেই ধারণ করে আসছে, এবং সেটি হল যে তাদের খেলা কখনোই একজন বা দুইজন খেলোয়াড়কে কেন্দ্র করে সংগঠিত হয় না। শুধুমাত্র ২০২১-২২ মৌসুমটিই যদি আমরা আমলে নেই তাহলেই দেখা যাবে যে, প্রিমিয়ার ম্যানচেস্টার সিটি’র হয়ে সর্বমোট ১৫ জন খেলোয়াড় এক বা একাধিক বার গোল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। গত মৌসুমে সিটিজেনদের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন আলজেরিয়ান সুপারস্টার রিয়াদ মাহরেজ, সকল প্রতিযোগিতায় যার মোট গোলসংখ্যা ছিল ২৪। তবে, তিনি ছাড়াও সিটি দলের কমপক্ষে আরো ৫ জন খেলোয়াড় ১০ গোলের কোঠা পার করতে সমর্থ্য হয়েছিলেন।
আবারো যদি আমরা সেই ২০২১-২২ মৌসুমেই ফিরে যাই, তবে আরো দেখতে পাব যে, মৌসুমের এক পর্যায়ে ম্যান সিটিকে প্রায় ১০টি ম্যাচ ধরে তাদের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট খেলোয়াড় কেভিন ডি ব্রুয়নাকে ছাড়াই খেলতে হয়েছিল। কিন্তু, তাতে তাদের দলের উপর বা দলের ফলাফলের উপর কোনই বিরূপ প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। তার অনুপস্থিতিতে দলের আরেক কান্ডারী জার্মান মিডফিল্ডার ইল্কাই গুন্দোগান পেপ গার্দিওলা’র দলের মিডফিল্ড সামলানোর দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নেন এবং প্রমাণ করে দেন যে, তার বুটজোড়ায়ও এখনো কম জাদু বাকি নেই। তাদের নিকট বার্নার্দো সিলভা এবং ইল্কাই গুন্দোগান থাকায় এই ব্যাপারে ম্যান সিটি সবসময় নিশ্চিত থাকতে পারে যে, তাদের তারকা বেলজিয়ান ইঞ্জুরিতে থাকলেও তাদের মিডফিল্ডে বুদ্ধিদীপ্ততার কোনই অভাব পরিলক্ষিত হবে না।
এবার যদি আমরা সিটিজেনদের উইং অপশনগুলি নিয়ে কথা বলি, তাহলে এটি আশ্চর্যজনক হলেও মানতে হবে যে, রহিম স্টার্লিং, রিয়াদ মাহরেজ বা গ্যাব্রিয়েল জেসুস এর মত তারকা খেলোয়াড়দেরকেও অনেক সময় দলটির বেঞ্চে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিতে দেখা যায়। এমনি তাদের স্কোয়াডের গভীরতা, এমনি তাদের শক্তিমত্তা। হয়তো মূল একাদশে ধারাবাহিকভাবে সুযোগ না পাওয়ার কারণে এই মৌসুমে এসেই গ্যাব্রিয়েল জেসুস সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তিনি ম্যান সিটি ছেড়ে লন্ডনের ক্লাব আর্সেনালে যোগ দিবেন, যেখানে তিনি প্রতি সপ্তাহেই মূল একাদশে খেলার সুযোগ পাবেন।
যদি বাকি দলগুলিও এমনভাবে খেলোয়াড় বাছাই এবং ক্রয় করতে পারে যেন তাদের বদলি খেলোয়াড়ের তালিকায়ও একেক জন তারকার নাম থাকে, তবেই হয়তো ম্যানচেস্টার সিটি’র মত শক্তিমত্তা তারা অর্জন করতে পারবে, তার আগে নয়। সেভাবেই একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই ব্যাপারটিও একটি ক্লাবের আর্থিক সক্ষমতার উপরেই নির্ভরশীল। এর ফলে বার বার এটিই প্রমাণিত হচ্ছে যে আধুনিক ফুটবল কতটা লভ্যাংশ এবং বাণিজ্যিকীকরণ এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তবে, যেহেতু খেলাধুলায়, এবং বিশেষ করে ফুটবলে এখন আর অর্থের সংকট নেই বললেই চলে, সেহেতু ম্যানচেস্টার সিটিকে রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সেই অর্থেরই ব্যবহার করতে হবে, তবে সেটিও করতে হবে যথাযথ বুদ্ধিদীপ্ততার সাথে এবং একটি গঠনমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।