টটেনহ্যাম হটস্পার্স এখন ঐতিহ্যগত দিক থেকেই প্রিমিয়ার লীগের বিখ্যাত “শীর্ষ ৬” এর একটি অংশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগ ফুটবল বিশেষজ্ঞ ও বোদ্ধারাই যে ব্যাপারটি বার বার দর্শিয়ে থাকেন, তা হল টটেনহ্যাম গত এক দশক ধরে নিয়মিতভাবে অতি অনবদ্য ফুটবল উপহার দিয়ে আসলেও শুধুমাত্র কোন শিরোপাই জিতে আসতে পারেনি। এই শিরোপাহীনতার কারণে তাদের সম্পূর্ণ ক্রীড়ানৈপূণ্যকেই এড়িয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে?

প্রিমিয়ার লীগের সেই বিখ্যাত শীর্ষ ৬ ক্লাবের মধ্যে রয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল, চেলসি, টটেনহ্যাম হটস্পার্স, আর্সেনাল, এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। স্পার্স ভক্তদের জন্য দুঃখজনক হলেও এটি সত্য যে, এই ছয় দলের মধ্যে তাদের ক্লাবের সাফল্যের পরিমাণই সবচেয়ে কম। শিরোপা জয় তো দূরের কথা, বেশির ভাগ মৌসুমে শীর্ষ চারে জায়গা করে নিতেই তাদের বেগ পেতে হয়।

টটেনহ্যাম হটস্পার্স সর্বশেষ কোন শিরোপা জিতেছিল ২০০৮ সালে, এবং স্পার্স ভক্তরা সেটিকেও খুব একটা বড় করে দেখেন না, কারণ শিরোপাটি ছিল প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলির নিকট উপলব্ধ সবচেয়ে ছোট শিরোপা — ইংলিশ লীগ কাপ শিরোপা।

তার পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত স্পার্স বহু প্রতিযোগিতার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে সক্ষম হলেও সেগুলির শিরোপা জিততে অক্ষম হয়েছে। তাদের খেলা সর্বশেষ ফাইনালটিও ছিল দুই বছর আগের সেই ইংলিশ লীগ কাপের ফাইনালই। সেই ফাইনাল ম্যাচটি হারার পেছনে অবশ্য টটেনহ্যাম এর প্রশাসনেরও অনেক বড় দায় রয়েছে, কারণ সেই ম্যাচের দুইদিন আগে তারা তাদের তৎকালীন ম্যানেজার হোসে মোরিনহোকে চাকরিচ্যুত করেন। এর ফলে দলের ভাবমূর্তি ও মনযোগে বিশাল রকমের ব্যাঘাত ঘটে, যা মাঠে তাদের পারফর্মেন্সেও পরিলক্ষিত হয়।

অধিকন্তু, ক্লাবটি ২০১৮ সালে ইউরোপীয় শিরোপা ঘরে তোলার দ্বারপ্রান্তেও পৌঁছে গিয়েছিল, কিন্তু একটুর জন্য তারা সেই সুযোগটিও হাতছাড়া করে বসে। সে সময় তারা ছিল মৌরিসিও পচেত্তিনো’র অধীনে, যাকে ধরা হয় গত এক দশকের মধ্যে হ্যারি রেডন্যাপের পরে আসা সেরা স্পার্স কোচ হিসেবে। সেবার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনাল পর্যন্ত স্পার্সের যাত্রাটি সম্পন্ন হয়েছিল বেশ উত্থান পতনের মধ্য দিয়েই। সেমি ফাইনালের ২য় লেগে আমস্টারডামে আয়াক্সের বিরুদ্ধে তাদের অবাক করা কামব্যাক এর কাহিণী তো সবারই জানা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, ইউরোপের বিশাল মঞ্চে ক্লাবটির অভিজ্ঞতা একদমই কম, এবং মূলত সে কারণেই তাদের প্রিমিয়ার লীগের সতীর্থ লিভারপুল সেবার চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালে তাদেরকে একরকম হাতে কলমে শিক্ষাই দিয়েছিল। অল রেডস’রা সেবার টটেনহ্যাম হটস্পার্সকে হারিয়ে ১৪ বছর পর শিরোপাটি আবারো নিজেদের নামে করতে সক্ষম হয়েছিল।

কেন টটেনহ্যাম হটস্পার্সকে একটি বড় ক্লাব হিসেবে গণ্য করা উচিৎ? (Why Tottenham Hotspurs should be regarded as a big club)

যখন আমরা বড় ক্লাবদেরকে নিয়ে আলোচনা করি, তখন সেই আলোচনাটি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে করা হচ্ছে সেটিও অনেক মাইনে রাখে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় এস্টন ভিলার কথা। অনেকের দৃষ্টিকোণ থেকে ভিলেইনদেরকে একটি বড় ক্লাব বলে আখ্যায়িত করা উচিৎ, শুধুমাত্র এই কারণে যে, তাদের নামে একটি ইউরোপীয় শিরোপা রয়েছে। তবে, সাধারণ চোখ দিয়ে দেখলেই বোঝা যায় যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এস্টন ভিলা নয়, বরং স্পার্সকেই সেই বড় ক্লাবের তোকমাটি প্রদান করা উচিৎ, তা যে দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা হোক না কেন। যখন ইউরোপীয় সুপার লীগের ধ্যান ধারণা সামনে এসেছিল, তখন সবাই এ কথাটিই ভাবছিল যে, স্পার্সকে কেন সেই লীগটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তবে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয় যে, লীগটির সংগঠকরা না বুঝে অবশ্যই সেই সিদ্ধান্তটি নেননি। ইংলিশ ক্লাবগুলির অন্তর্গত সবচেয়ে বৃহৎ বেতন কাঠামোগুলির মধ্যে স্পার্সের বেতন কাঠামো রয়েছে ৬ষ্ঠ অবস্থানে। এছাড়া একজন ব্রিটিশ খেলোয়াড়কে বিক্রি করে সবচেয়ে বড় অঙ্কের ট্রান্সফার ফি পাওয়া দলটিও এই টটেনহ্যামই।

পড়ুন:  ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ বলের ইতিহাস

উপরে উল্লিখিত এতকিছু অর্জনের পরও, বহু ফুটবল সমর্থক এবং বিশেষজ্ঞরাই শুধুমাত্র শিরোপা না জেতার কারণেই স্পার্সের লক্ষ্য, অর্জন এবং ক্ষমতা নিয়ে বার বার প্রশ্ন তোলেন এবং তাদেরকে আখ্যা দেন “বড় স্টেডিয়ামে খেলা এক ছোট দল” হিসেবে। তাহলে, এখন প্রশ্ন উঠবে যে, এমন কি আছে স্পার্সের যার উপর ভিত্তি করে তাদেরকে একটি বড় দল হিসেবে গণ্য করা যায়? আসুন এমন কিছু কারণের দিকে নজর দেওয়া যাকঃ

১. সমর্থক গোষ্ঠী (1. Fan base)

একটি বড় ক্লাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হলে বা নিজেদেরকে শ্রেণীকরণ করতে হলে যেকোন ক্লাবেরই একটি বিশালাকার সমর্থক গোষ্ঠী থাকতে হয়, এবং তা শুধু ইংল্যান্ডে নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। ড্যানিয়েল লেভি’র মত একজন কার্যকরী স্পোর্টিং ডিরেক্টর থাকার ফলে টটেনহ্যাম একটি ফুটবলিং ব্র‍্যান্ড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, এবং সেই ব্র‍্যান্ডটি এখন সারা বিশ্বব্যাপী পরিচিত এবং বিপুলভাবে জনপ্রিয়।

এ ব্যাপারে একদমই কোন সন্দেহ নেই যে, সারা বিশ্বে স্পার্সের এই ব্র‍্যান্ডটি ছড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে, তা হল তাদের দলে সুযোগ পাওয়া বেশ কিছু বিশ্বমানের খেলোয়াড়। হোক তা তাদের একাডেমীর খেলোয়াড় (এরন লেনন, জার্মেইন ডেফো প্রমুখ), ইংলিশ ফুটবলের অন্যান্য ক্লাবের একাডেমীর খেলোয়াড় (কাইল ওয়াকার, গ্যারেথ বেইল প্রমুখ), অথবা অন্য দেশ থেকে আসা বিখ্যাত কোন খেলোয়াড় (ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন, সন হিউং মিন প্রমুখ), যুবা এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া এবং তাদের প্রতিভার উপর ভর করে অসাধারণ ফুটবল প্রদর্শন করাই টটেনহ্যাম এর ব্র‍্যান্ড ভ্যালু বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমান স্কোয়াড এর ফিকে তাকালেও আমরা এমন অনেককেই খুজে পাব। হ্যারি কেইন এর মত একজন গ্লোবাল সুপারস্টার এই স্পার্সের একাডেমী থেকেই শুরু করে এখনো সেখানেই খেলে চলেছেন, এবং প্রায় প্রতি মৌসুমেই কিছু না কিছু পুরষ্কার জিতে চলেছেন। আগামী প্রজন্মের ইংলিশ খেলোয়াড়দের জন্য হ্যারি কেইন একটি অনুপ্রেরণার নাম। তাদের দলের আরেকজন অবিসংবাদিত নায়ক হলেন সন হিউং মিন, যিনি কি না পুরো দক্ষিণ কোরিয়াকেই টটেনহ্যাম হটস্পার্স স্টেডিয়ামে নিয়ে চলে এসেছেন।

২. স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা (2. Stadium Capacity)

আপনার এই ব্যাপারটি যথাযথ মনে হোক বা না হোক, একটি ক্লাবের স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা সেই ক্লাবটির ক্ষমতা ও মর্যাদা প্রদর্শন করে থাকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও দামী ক্লাবগুলির একটি হিসেবে গণ্য করা হয়, এবং তার পেছনে একটি বড় কারণ হল তাদের নিকট রয়েছে ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়াম, যা কি না প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। স্পার্সের নতুন স্টেডিয়াম, দ্য টটেনহ্যাম হটস্পার্স স্টেডিয়াম, প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক স্টেডিয়ামগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে, যার ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৬২,০০০ জন। 

পড়ুন:  ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল রাজত্ব

একটি ক্লাবের নিজস্ব স্টেডিয়ামের বৃহত্তর ধারণ ক্ষমতা শুধুমাত্র যে ক্লাবটির আয়কে (টিকেট বিক্রি থেকে) বৃদ্ধি করে তাই নয়, বরং বেশি বেশি সমর্থকদের স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সুযোগও করে দেয়, যার ফলে প্রতিটি ম্যাচডেই একেকটি উৎসবে পরিণত হয়, এবং সেই সমর্থন থেকেই খেলোয়াড়েরা হোম অ্যাডভান্টেজ পান। এছাড়াও, আরেকটি কারণে বড় স্টেডিয়ামগুলি সুবিধাজনক হয়ে থাকে, তা হল এই যে, সেসকল স্টেডিয়ামকে আরো অনেক কাজে ব্যবহার করতে দিয়েও অনেক অর্থ কামানো যায়, যেমন কনসার্ট, ডিনার পার্টি, সভা-সমাবেশ ইত্যাদি।

৩. অর্থনৈতিক সক্ষমতা (3. Finances)

এটিই সম্ভবত সকল কারণের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে উল্লিখিত খাতগুলো থেকে টটেনহ্যাম হটস্পার্স একটি বিশাল বড় তহবিল তৈরি করতে পেরেছে, যা তাদের ক্লাবটি সচল রাখতে এবং ট্রান্সফার মার্কেটে নানান খেলোয়াড় কিনতে সাহায্য করে। ক্লাব হিসেবে টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর বাজার মূল্য এখন ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং তারা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্লাবগুলির তালিকায় ১০ম স্থানে অবস্থান করছেন।

কেন টটেনহ্যাম হটস্পার্সকে একটি বড় ক্লাব হিসেবে গণ্য করা উচিৎ নয়? (Why Tottenham Hotspurs should not be considered as a big club)

নিবন্ধটির এই অংশটি টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর কোন সমর্থকেরই পছন্দ হওয়ার কথা নয়। অবশ্যই, যেকোন গল্পেরই দুটো ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থাকে, এবং এই গল্পটিও সেদিক থেকে কোন অংশেই ভিন্ন নয়।

ইতিপূর্বেই প্রিমিয়ার লীগের যেই শীর্ষ ৬ দলের কথা বলা হয়েছে, টটেনহ্যাম ব্যতীত তাদের সকলেই এক বা একাধিক বার প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা অবশ্যই জিতেছেন (১৯৯২ সালে পুরনো ইংলিশ প্রথম বিভাগ ফুটবলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেওয়া হয় “দ্য ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ”)। আপনি প্রিমিয়ার লীগ বা ইংলিশ ফুটবলে তুমুল প্রতিযোগিতা বা দলগুলির শক্তিমত্তা নিয়ে যতকিছুই বলুন না কেন, একটি বড় ক্লাব হিসেবে গণ্য হতে গেলে লীগ শিরোপা নাই হোক, একটি ঘরোয়া কাপ অন্তত জিততেই হয়। এখানে আমরা এমন কিছু শক্ত কারণ তুলে ধরব যেগুলোর ভিত্তিতে টটেনহ্যামকে একটি বড় ক্লাব হিসেবে গণ্য করা উচিৎ হবে নাঃ

১. শিরোপার ঘাটতি (1. Lack of trophies)

এখানে যখন আমরা শিরোপার ঘাটতির কথা বলছি, তখন সেটিকে আরো একটু নির্দিষ্ট করে বলাই শ্রেয়। টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর ট্রফি ক্যাবিনেটটি মাকড়সার জালে ভরে গিয়েছে বললে ভুল হবে না। যদিও ক্লাবটির উৎপত্তির পর থেকে তারা সর্বমোট ২৬টি শিরোপা জিততে সমর্থ্য হয়েছে, তবুও এটি একটি লজ্জার বিষয়ই বটে যে ইংলিশ ফুটবলের নতুন যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে স্পার্স কোন প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি, এবং ২০০৮ সালের পর থেকে কোনপ্রকার শিরোপাই তারা জিততে পারেনি।

পড়ুন:  প্রিমিয়ার লিগে শেফিল্ড ইউনাইটেড থেকে কী আশা করা যায়

ক্লাব হিসেবে টটেনহ্যাম হটস্পার্স গত কয়েক বছরের মধ্যেই বেশ কিছু মাইলফলক অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, যেমন শীর্ষ চারে অবস্থান করে চ্যাম্পিয়নস লীগের জন্য কোয়ালিফাই করা, বিভিন্ন টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠা, তাদের খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বুট পুরষ্কার জেতা এবং আরো অনেক কিছু। কিন্তু, তারা সর্বশেষ যে বছর কোন শিরোপা জিতেছে, তখন থেকে আজ পর্যন্ত যে সময় অতিবাহিত হয়েছে, সেই সময়কালে লেস্টার সিটি ইংলিশ থার্ড ডিভিশন থেকে প্রিমিয়ার লীগে উঠে এসে সেটির শিরোপাও জিতে নিয়েছে, আবার এফএ কাপের শিরোপাও একবার জিততে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু, নর্থ লন্ডনের এই ক্লাবটিতে সমর্থকরা শুধুই তাদের খেলোয়াড়দের (হ্যারি কেইন ও সন হিউং মিন) প্রিমিয়ার লীগ গোল্ডেন বুট পুরষ্কার জয়ই উদযাপন করতে পেরেছেন। 

বর্তমান প্রেক্ষপটে অবশ্য আমরা এটিও দাবি করতে চাই না যে স্পার্স একটি বড় দল হিসেবে গণ্য হওয়া থেকে খুব দূরে অবস্থান করছে। শুধুমাত্র একটি শিরোপা যদি তারা তাদের ক্যাবিনেটে যুক্ত করতে পারে, তাহলেই তারা সেই তোকমাটির জন্য আরো শক্ত দাবিদার হয়ে উঠতে পারবেন।

২. চ্যাম্পিয়নস লীগ ফুটবলে যথেষ্ট পরিমাণে উপস্থিতি ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি (2. Lack of enough Champions League experience and presence)

বিষ্ময়কর হলেও এই ব্যাপারটি সত্য যে, গত দশ বছরের মধ্যে আর্সেনাল বা এমনকি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চেয়েও চ্যাম্পিয়নস লীগে অধিকতর নিয়মিত হারে বা ধারাবাহিকভাবে খেলার গৌরব অর্জন করেছে স্পার্স। কিন্তু, তারপরও, দল হিসেবে তারা ইউরোপীয় ফুটবলে তেমন কোন দাগই ছেড়ে যেতে পারেননি। তাছাড়া, চ্যাম্পিয়নস লীগে স্পার্স খুব ক্ষেত্রেই রাউন্ড অব ১৬ এর দায়রা পার করতে পেরেছে। লিভারপুল বা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মত ঐতিহ্যবাহী দলগুলি যখন তাদের সোনালী অতীতের দিকে তাকায়, তখন তারা দেখতে পায় ইউরোপীয় প্রতিযোগিতাগুলিতে অসংখ্য সেরা পারফর্মেন্স ও শিরোপা জয়। কিন্তু, টটেনহ্যাম হটস্পার্স ২০১০ সালে এসে সর্বপ্রথম চ্যাম্পিয়নস লীগে খেলার গৌরব অর্জন করে, কিন্তু প্রতিযোগিতাটিতে তারা নিজেদের ছাপ ছাড়তে একদমই ব্যর্থ হয়, যেমনটি একই সময়কালে করে দেখিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি।

৩. প্রয়োজনের চেয়ে বেশি “স্পার্সীয়” মুহূর্তের উপস্থিতি (3. Too many ‘Spursy’ moments)

এই আলোচ্য বিষয়টি পড়ে হয়তো আপনাদের কাছে হাস্যকর একটি ব্যাপার বা কমদামী কৌতুক এর মত লাগতে পারে, তবে বিশ্বাস করুন, এটিই সত্য। বছরের পর বছর ধরে স্পার্স নিজেদের এমন একটি ব্র‍্যান্ড তৈরি করেছে, যার উদ্দেশ্যই হল বিভিন্ন শিরোপা জেতার কাছাকছি যাওয়া, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সমর্থকদের হতাশা উপহার দেওয়া। আজকের ফুটবল দুনিয়ায় যেই ক্লাবই এমন কিছু করতে সক্ষম হয়, সেই ক্লাবকেই “স্পার্সীয়” ক্লাব বলে আখ্যায়িত করা হয়।

স্পার্সের পক্ষে ও বিপক্ষে এসকল যুক্তির উপর ভিত্তি করে আপনিই সিদ্ধান্ত নিন যে তাদেরকে একটি বড় ক্লাব বলা উচিৎ কি না। বিশ্ব ফুটবলের নানা বিষয় নিয়ে এমন অনবদ্য কন্টেন্ট আরো পেতে চাইলে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ।

Share.
Leave A Reply