প্রিমিয়ার লীগের নতুন মৌসুম এখন আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে, এবং আপনাদের মতই আমরাও বিশ্বের সেরা এই ফুটবল লীগের পুনঃআগমণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। বিনোদন ও শিহরণের এর চেয়ে ভালো উৎস আর কিই বা হতে পারে!
অনেকের মতেই ২০২২-২৩ প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমটি হতে চলেছে সর্বকালের সেরা মৌসুমগুলির একটি। সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে গত মৌসুমের নাটকীয়তাকে ছাপিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তবে তেমনটি যদি এই মৌসুমে আসলেও হয়, তাহলে সেই চরম পর্যায়ের বিনোদনের জন্য কেউই এখনো প্রস্তুত নয়। এমনটি ধারণা করার পেছনে মূল কারণ হল যে, লীগটির প্রায় প্রত্যেকটি দলই এবারের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে নিজেদের সেরা খেলোয়াড়দের ধরে রাখার পাশাপাশি অতি উচ্চ মানের সব নতুন সাইনিংও করিয়েছে। টাকা খরচের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি, নটিংহ্যাম ফরেস্ট, এবং চেলসি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যদিও এখনো তাদের প্রধান টার্গেটদেরকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়নি, তবুও তারা বেশ কিছু ভালো সাইনিং সম্পন্ন করতে পেরেছে।
লিভারপুল হয়তো তাদের দলের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন অর্থাৎ সাদিও মানেকে হারিয়েছে ঠিকই, তবে তারা সেই ক্ষতিটিকে লাঘব করার জন্য ভালো রিপ্লেসমেন্টও খুঁজে বের করেছে, এবং দলে ভিড়িয়েছে।
নটিংহ্যাম ফরেস্ট এর মত সদ্য প্রমোটেড একটি ক্লাবও পৃথিবীর কোণায় কোণায় ঘুরে প্রতিভাবান সব খেলোয়াড়দেরকে দলে নেওয়ার চেষ্টা করছে, এবং তাদের ভগ্নপ্রায় দলটিকে প্রিমিয়ার লীগের জন্য ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছে। তাদের জন্য সবচেয়ে বড় সাইনিং ছিলেন নিঃসন্দেহে তাইয়ো আওয়োনিয়ি এবং সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা জেসি লিংগার্ড। এবারের ট্রান্সফার উইন্ডো’র আরেকটি সচল ক্লাব হচ্ছে নর্থ লন্ডনের টটেনহ্যাম হটস্পার্স, যারা বেশ কিছু বিশ্বমানের সাইনিং ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছে।
এন্তোনিও কন্তে স্পার্স শিবিরে গত মৌসুমেই একধরনের নতুনত্বের জোয়ার এনেছেন, এবং সেই হাওয়া বদলকে কাজে লাগিয়ে ক্লাবটি এবারও অনেকগুলি প্রতিভাবান নতুন মুখকে দলে জায়গা করে দিয়েছে। ব্রাজিলিয়ান তারকা রিচার্লিসন, ক্রোয়েশিয়ান বিশ্বকাপ ফাইনালিস্ট ইভান পেরিসিচ, এবং ইংলিশ ওয়ান্ডারকিড জেড স্পেন্স হলেন তারই মধ্যে অন্যতম।
আমরা এই নিবন্ধটিতে প্রিমিয়ার লীগের সেসকল ট্রান্সফার নিয়ে আলোচনা করব যেগুলি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, এবং যেগুলি সকলের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। আমরা সকল ক্লাবের বর্তমান পরিস্থিতিকে মাথায় রেখেই এই তালিকাটি তৈরি করেছি, অর্থাৎ ট্রান্সফারগুলিকে বেছে নিয়েছি। তাহলে, চলুন জেনে নেওয়া যাক এবারের ট্রান্সফার উইন্ডো’র সবচেয়ে সেরা ১০টি সাইনিং সম্পর্কে।
১০. রাহিম স্টার্লিং (ম্যানচেস্টার সিটি থেকে চেলসি) [10. Raheem Sterling (Manchester City to Chelsea)]
গতিশীল ও কারুকার্যময় এই ইংলিশ উইংগারকে মানা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা লেফট উইংগারদের একজন হিসেবে। তার পজিশনের শীর্ষ একজন খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও রাহিম স্টার্লিংকে কেন পেপ গার্দিওলা ম্যান সিটি ছাড়তে দিলেন, তা বুঝে ওঠা আমাদের জন্য খুবই কঠিন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মৌসুমের শুরু থেকেই মনে হচ্ছিল যে, এই সাবেক লিভারপুল ফরোয়ার্ড তার তৎকালীন ম্যানেজার অর্থাৎ গার্দিওলা’র ভরসা হারাচ্ছেন। তাই, এখন তিনি এই ৪৫ মিলিয়ন পাউন্ডের ট্রান্সফারটির পর চেলসি’র হয়েই মাঠ মাতাবেন, এবং থ্রি লায়ন্স বা ইংল্যান্ড জাতীয় দলে নিজের জায়গাটি পুনরুদ্ধার করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
চেলসির জন্য এটি একটি অসাধারণ ট্রান্সফার ডিল, কারণ লেফট উইংগারের পজিশনটিতে ব্লুস’দের নিকট স্টার্লিং এর মত একজন গতিশীল ফুটবলার এরই দরকার ছিল। তিনি প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের পেছনে দৌড় দিতে পারেন, ভালো ভালো অ্যাটাকিং পজিশিন নিতে পারেন, এবং লেফট উইং থেকে কাট ইন করে দূর পাল্লার কার্ভিং শট নিতেও তিনি বেশ পারদর্শী। তাই রাহিম স্টার্লিংকে দলে ভিড়িয়ে চেলসি প্রমাণ করেছে যে, তারা এবারের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমে ভালো কিছু অর্জন করার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর।
৯. ফিলিপ্পে কুতিনহো (বার্সেলোনা থেকে এস্টন ভিলা) [9. Philippe Coutinho (Barcelona to Aston Villa)]
যদিও এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার গত মৌসুমটি মিডল্যান্ডস এর ক্লাব এস্টন ভিলাতে লোলে কাটিয়েছিলেন, তবে এবার ক্লাবটি তাকে একটি স্থায়ী চুক্তিতে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। একজন খেলোয়াড় হিসেবে ফিলিপ্পে কুতিনহো’র দক্ষতা ও পেডিগ্রি দেখলে বোঝা যায় যে, তার জন্য ভিলেইনরা বার্সেলোনাকে যে ১৭ মিকিয়ন ইউরোর ট্রান্সফার ফি দিয়েছে, তা মোটেও খুব বেশি নয়। এই ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট হয় যখন আমরা বুঝতে পারি যে, এই খেলোয়াড়কেই মাত্র কয়েক বছর আগে বার্সেলোনা লিভারপুলের নিকট হতে ১৫০ মিলিয়ন ইউরোর আশেপাশে ফি দিয়ে কিনেছিল।
গত মৌসুমে হারানো জ্যাক গ্রিলিশ এর আদর্শ রিপ্লেসমেন্ট হচ্ছেন এই ব্রাজিলিয়ান জাদুকর, এবং এস্টন ভিলাকে উন্নত করার ও ইউরোপীয় পর্যায়ে তাদেরকে ধাবিত করার উদ্দেশ্যে কুতিনহো’র অনেক অবদান থাকবে বলেই আশা করা যাচ্ছে।
৮. ইভস বিসুমা (ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়ন থেকে টটেনহ্যাম হটস্পার্স) [8. Yves Bissouma (Brighton & Hove Albion to Tottenham Hotspurs)]
বহুদিন অপেক্ষার পর মালিয়ান সুপারস্টার ইভস বিসুমা একটি চ্যাম্পিয়নস লীগ প্লেয়িং দলে তার বহুল প্রতিক্ষিত ট্রান্সফারটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন, এবং তার সেই স্বপ্নের ক্লাবটি হল টটেনহ্যাম হটস্পার্স। তাকে পাবার জন্য টটেনহ্যাম হটস্পার্সকে বহু ইউরোপীয় জায়ান্টদের সাথে লড়াই করতে হয়েছে, তবে শেষ পর্যন্ত ৩০ মিলিয়ন ইউরোর আশেপাশে একটি ফি এর বিনিময়ে তিনি ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়ন থেকে স্পার্সে যোগ দেন।
মাঠের মধ্যভাগে এই লম্বা মালিয়ান মিডফিল্ডারের খেলার বৈচিত্র্য, টেকনিক্যাল দক্ষতা এবং শারিরিক সক্ষমতা তাকে এন্তোনিও কন্তে’র জন্য একজন আদর্ষ খেলোয়াড়ে পরিণত করে। যদিও স্পার্সের নিকট আগে থেকেই বেশ কিছু প্রতিভাবান মিডফিল্ড খেলোয়াড় রয়েছে, তবুও তুলনামূলক সুলভ মূল্যে সম্পন্ন করা এই নতুন সাইনিংটি তাদেরকে আগামী মৌসুমে চরমভাবে সাহায্য করবে চ্যাম্পিয়নস লীগসহ সকল প্রতিযোগিতায় লড়াই করার ক্ষেত্রে।
৭. কালিদু কুলিবালি (নাপোলি থেকে চেলসি) [7. Kalidou Koulibaly (Napoli to Chelsea)]
নাপোলির কুখ্যাত স্পোর্টিং ডিরেক্টর ও প্রধান এক্সিকিউটিভ, এমিলিয়ানো ডি লরেন্টিস, ক্লাবটির সবচেয়ে বড় তারকা কালিদু কুলিবালিকে দলে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। তিনি এই সেনেগালিজ ডিফেন্ডারকে একটি উন্নত বেতনসহ একটি নতুন চুক্তিও অফার করেছিলেন। তবে, কুলিবালি, যিনি কি না বহুদিন ধরেই স্বপ্ন দেখছিলেন প্রিমিয়ার লীগে খেলার, ডি লরেন্টিস এর অফারকে প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে থমাস টুখেলের অধীনে চেলসিতে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন।
গত মৌসুমের শেষে এন্তোনিও রুডিগার ও আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন এর মত খেলোয়াড়দেরকে হারানোর পর চেলসি মরিয়া হয়ে কিছু নতুন ডিফেন্ডার এর খোঁজে লেগে পড়ে। বেশ কয়েক বছর ধরেই কালিদু কুলিবালিকে পৃথিবীর সেরা ডিফেন্ডারদের মধ্যে একজন হিসেবে মানা হয়ে আসছে। অনেকেই তাকে প্যানিক সাইনিং বলে আখ্যা দিলেও আমরা মনে করি যে, ৩১ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার থমাস টুখেল ও চেলসি’র ক্রীড়াকৌশল এর জন্য অত্যন্ত মানানসই এবং তিনি ক্লাবটির জন্য এবারের মৌসুমে একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হবেন।
৬. লিসান্দ্রো মার্তিনেজ (আয়াক্স থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড) [6. Lisandro Martinez (Ajax to Manchester United)]
ক্ষুদ্রকায় এবং গতিময় এই আর্জেন্টাইন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার এর সাইনিংটিকে ধরা হচ্ছে এবারের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডো’র সবচেয়ে আন্ডার-রেটেড সাইনিংগুলির একটি হিসেবে। তাকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে আনার অন্যতম প্রধান লক্ষ্যই ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিচ্ছিন্ন রক্ষণভাগটিতে কিছুটা হলেও স্থিতিশীলতা ও বৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনা। আয়াক্সে তার সাবেক কোচ এরিক তেন হাগের অতীত উপস্থিতি এবং তাদের মধ্যকার ভালো সম্পর্ক অবশ্যই ট্রান্সফারটি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অনুকূলে।
ট্রান্সফারটি সম্পন্ন করতে অবশ্য রেড ডেভিলদের প্রাথমিকভাবে খরচ করতে হয়েছে ৪৬ মিলিয়ন ইউরো, যা এড-অনসমূহ মিলিয়ে ৫২ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত বাড়তে পারে। বল পজিশন রাখা, বলের নিয়ন্ত্রণ রাখা, লং পাসে গোলের সুযোগ তৈরি করা, এবং প্রতিপক্ষের পা থেকে বল ছিনিয়ে নেওয়ার অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে এই আর্জেন্টাইন এর, এবং তারই সুবাদে তার পূর্ববর্তী সতীর্থরা তার নামকরণ করেছিল “দ্য বুচার”। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অতি পানশে ডিফেন্সে কিছুটা মসলা যুক্ত করার লক্ষ্যে তাই এই আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারের সাইনিংটির কোনই জুড়ি নেই।
৫. ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন (ব্রেন্টফোর্ড থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড) [5. Christian Eriksen (Brentford to Manchester United)]
মাত্র এক বছরেরও কম সময় আগে ইউরো ২০২১ এর একটি ম্যাচে হৃদরোগজনিত কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার পর থেকে অনেকেই ভেবেছিল যে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন এর ফুটবল ক্যারিয়ার বুঝি শেষ। অবসর নেওয়ার পরামর্শটি তাকে প্রায় সকলেই দিয়েছিল। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হোননি। লড়াকু এই স্পোর্টসম্যান ফুটবল খেলতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন, এবং গত মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব ব্রেন্টফোর্ড সেটির সুযোগ নিয়ে নেয়৷ তারা এই ড্যানিশ মিডফিল্ডারকে মুহূর্তেই দলে নিয়ে নেয়, এবং তাদেরকে সঠিক প্রমাণ করে তিনি একের পর এক অসাধারণ পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে যান।
তবে, গত মৌসুম শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ব্রেন্টফোর্ডের সাথে তার চুক্তিরও সমাপ্তি ঘটে যায়। তাই একজন ফ্রি এজেন্ট হিসেবেই তাকে টার্গেট করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, এবং ডিলটি সম্পন্ন করতেও তারা সক্ষম হয়। এখন যখন তিনি রেড ডেভিলস শিবিরে যোগ দিয়েই দিয়েছেন, তখন ইউনাইটেড সমর্থকরা আশা করতেই পারেন যে, মিডফিল্ডে তাদের শক্তিমত্তা আরেকটু বৃদ্ধি পাবে। মাঠের মধ্যভাগে তার বল পজিশন নিয়ন্ত্রণ, অনবদ্য ভিশন এবং দূর পাল্লার শট নেওয়ার দক্ষতার কারণেই তাকে দলে নিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং এরিক তেন হাগ।
৪. কেলভিন ফিলিপ্স (লিডস ইউনাইটেড থেকে ম্যানচেস্টার সিটি) [4. Kalvin Phillips (Leeds United to Manchester City)]
ইয়োর্কশায়ারে জন্ম নেওয়া লিডস ইউনাইটেডের নিজস্ব এই মিডফিল্ডার তার হোমটাউনের ক্লাবে থেকে সেটির হয়ে খেলতে এবং সেখানেই তার ক্যারিয়ারটি শেষ করতে পারতেন, কিন্তু পেপ গার্দিওলা’র অধীনে তার অসাধারণ ম্যানচেস্টার সিটি দলটিতে খেলার সুযোগ পাওয়ার পর কয়জন সেটিকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে? নিঃসন্দেহে সেই সংখ্যাটি মোটেও খুব বেশি হবে না।
কেলভিন ফিলিপ্স ইংলিশ জাতীয় দলেও একজন নিয়মিত মুখ। তিনি বলের নিয়ন্ত্রণ যেমন ভালো রাখতে পারেন, ঠিক তেমনি তার পাসিং একিউরেসিও অনেক উঁচু মানের। এছাড়া, তার শারিরিক গঠনের কারণে তিনি নিজেকে বেশ শক্তিশালী একজন মিডফিল্ডারে পরিণত করতে পেরেছেন, যার ফলে রদ্রি’র ডেপুটি হিসেবে তিনি গার্দিওলা’র জন্য একটি সহজ বিকল্প ছিলেন। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি’র জন্য এমনি শক্তিশালী একটি প্রতিযোগিতা’র প্রয়োজন ছিল, যা দলটিকে আরো একটু শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।
৩. গ্যাব্রিয়েল জেসুস (ম্যানচেস্টার সিটি থেকে আর্সেনাল) [3. Gabriel Jesus (Manchester City to Arsenal)]
পিয়ের এমেরিক অবামেয়াং নর্থ লন্ডনের ক্লাবটি ছেড়ে বার্সেলোয়ায় পাড়ি জমানোর পর থেকেই আর্সেনালের একমাত্র প্রতিষ্ঠিত স্ট্রাইকার ছিলেন আলেকজান্ডার ল্যাকাজেট নামক এক ফরাসি তারকা, যার ক্যারিয়ারের সেরা সময় তিনি অনেক আগেই পার করে এসেছেন। গত কয়েক মৌসুম ধরে ল্যাকাজেট তার খেলার শক্তিশালী অংশগুলি একে একে হারিয়েছেন। আর্সেনালের তাই প্রয়োজন ছিল একজন নতুন, যুবা ও অনবদ্য গোলস্কোরারের, যিনি তাদেরকে আগামী মৌসুমে অন্তত একটি ভালো অর্জনের দিকে ধাবিত করতে পারবে। তখনই আর্তেতা খুঁজে পান ম্যান সিটিতে তার সাবেক শিষ্য গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে। ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ডকে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সিটি থেকে আর্সেনালে নিয়েও আসেন আর্তেতা। এবং, প্রি সিজন ফ্রেন্ডলি ম্যাচগুলিকে আমলে নিলে দেখা যায় যে, জেসুস আসলেও সামর্থ্য রাখেন আর্সেনালকে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর করার।
যদিও ম্যানচেস্টার সিটি ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা তাকে কখনোই স্ট্রাইকারের পজিশনে খেলাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না, তবুও নতুন পরিবেশে এবং নতুন টিমমেটদের সাথে গানারস শিবিরে তিনি তার স্বভাবসুলভ স্ট্রাইকিং পজিশনটিতে ভালোই মানিয়ে নিয়েছেন বলেই মনে করা যাচ্ছে।
২. ডারউইন নুনেজ (বেনফিকা থেকে লিভারপুল) [2. Darwin Nunez (Benfica to Liverpool)]
চলমান ট্রান্সফার উইন্ডো এর শুরুর দিকেই যখন সাদিও মানে লিভারপুল ছেড়ে বায়ার্ন মিউনিখের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন, তখন নিশ্চয় অধিকাংশ লিভারপুল সমর্থকদের হৃদয়েই ব্যথার উদ্রেক হয়েছিল। তবে, তখন তারা জানতেন না যে ইয়ুর্গেন ক্লপের নিকট আগে থেকেই একজন রিপ্লেসমেন্ট তৈরি করাই ছিল, যিনি হলেন বেনফিকার (সাবেক) উরুগুয়ান ফরোয়ার্ড ডারউইন নুনেজ।
এই দীর্ঘকায় সাউথ আমেরিকান স্ট্রাইকার হয়তো সাদিও মানে’র পজিশনে খেলবেন না, বা তার মত ঝড়ো গতিতে দৌড়াতেও পারবেন না, তবে তিনি তার নিজস্ব ভঙিমায় খেলে দলকে অনেক গোল এনে দিতে পারবেন বলেই সকলে ধারণা করছেন। ৮০ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি দাম দিয়ে কেনা এই ফরোয়ার্ড তাই লিভারপুলকে প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা এনে দেওয়ারও সামর্থ্য রাখেন বলেই আমরা মনে করি।
১. আর্লিং হাল্যান্ড (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ম্যানচেস্টার সিটি) [1. Erling Haaland (Borussia Dortmund to Manchester City)]
গত মৌসুমে পেপ গার্দিওলা’র উপর ম্যানচেস্টার সিটি সমর্থকদের সবচেয়ে বড় একটি ক্ষোভের জায়গা ছিল ক্লাবটিতে কোন প্রকার প্রতিষ্ঠিত একজন স্ট্রাইকার এর অনুপস্থিতি। ব্রিটিশ মিডিয়াও ম্যান সিটির চ্যাম্পিয়নস লীগ না জেতার পেছনে মূলত এই কারণটিই দেখিয়েছে। বহু বছর যাবৎ সার্জিও আগুয়েরো এই স্থানটি দখল করে রাখায় পজিশনটি নিয়ে ক্লাবটিকে কখনো চিন্তাই করতে হয়নি। তবে, এখন মনে হচ্ছে যে, মাঝখানে একটি মৌসুম স্ট্রাইকার ছাড়া কাটানোটা পেপ গার্দিওলা এবং সিটি’র পক্ষ থেকে একটি মাস্টারস্ট্রোকই ছিল।
এবারের ট্রান্সফার মৌসুমে পেপ গার্দিওলা তার সমালোচনার জবাব হিসেবে দলে ভিড়িয়েছেন এ সময়কার সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রতিভাবান যুবা স্ট্রাইকার আর্লিং ব্রাউত হাল্যান্ডকে। গত মৌসুমের শুরুতে তার মূল্য ১৩২ মিলিয়ন ইউরোর আশেপাশে থাকলেও এবার এই নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ডকে মাত্র ৫১ মিলিয়ন ইউরো দিয়েই কিনতে সমর্থ্য হয়েছে সিটিজেনরা। তার অসাধারণ হোল্ড আপ প্লে, রানিং বেহাইন্ড, এবং হেডিং দক্ষতার কারণে প্রিমিয়ার লীগের সকল ডিফেন্ডারই এখন তার বিরুদ্ধে মাঠে নামতে এক প্রকার ভয়ই পাবেন। এখন পর্যন্ত, এই ট্রান্সফার উইন্ডোতে, এটিই সবচেয়ে সেরা সাইনিং, এ ব্যাপারে কারোই কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়।