বিশ্বজুড়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ পরিচিত ধারাবাহিক ব্লকবাস্টার এবং সৌখিন বিনোদনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে। পুরাতন ইংলিশ ফার্স্ট ডিভিশন এর নাম ১৯৯২ সালে পরিবর্তন করে রাখা হয় “প্রিমিয়ার লীগ”। নামের সাথে সাথে পরিবর্তন হয় লীগটির দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবেও। তার পর থেকেই লীগটি বিশ্বের সবচেয়ে দামী এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় লীগে পরিণত হয়েছে। নিয়মিতভাবে এই লীগে এখন আমরা নাটকীয়তা, অনবদ্য বিনোদন, এবং চোখ ধাঁধাঁনো সব গোল দেখে থাকি।
যদিও এটি হল পৃথিবীর সবচেয়ে সমালোচিত ফুটবল লীগ, তার পরও এই লীগটি সেই দিকটি পুষিয়ে দেয় বিভিন্ন ধরণের আলোচনার সঞ্চার করার মাধ্যমে, যা যেকোন ম্যাচ বা ফিক্সচার শুরুর আগেই সেই ম্যাচটির গুরুত্ব ও উত্তেজনা বহু অংশে বাড়িয়ে দেয়।
প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলি জুড়ে রয়েছে বহু ব্যক্তিগত বুদ্ধিদীপ্ততার দৃষ্টান্ত, খেলার মাঠে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি, অতিরিক্ত সময়ের অসাধারণ সব গোল, এবং মাঠের ভেতরে ও বাইরে দুই দলের ম্যানেজারদের মধ্যকার বেশ কিছু লড়াই। এসকল স্থান থেকেই লীগটির মূল নাটকীয়তার অংশটি বের হয়ে আসে।
রয় কিন, জোয়ি বার্টন, এবং হোসে মোরিনহোর মত চরিত্ররা প্রিমিয়ার লীগের নাটকীয়তা অনেকাংশে বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাদের তৈরি করা সেসব মুহূর্ত সত্যিই অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে, যদিও তা অধিকাংশ মানুষই নেতিবাচক হিসেবেই দেখবে। কে ভুলতে পারে ওল্ড ট্রাফোর্ডের টানেলে রয় কিন এবং প্যাট্রিক ভিয়েরার মধ্যকার সেই হাতাহাতি, বা সাইডলাইনের পাশে সাবেক আর্সেনাল কোচ আর্সেন ওয়েংগার ও সাবেক চেলসি কোচ হোসে মোরিনহোর মধ্যকার ধস্তাধস্তির দৃশ্যগুলি?
এগুলি অবশ্য প্রিমিয়ার লীগের অসংখ্য মজার ও আবেগ জড়ানো মুহূর্তগুলির মধ্য থেকে মাত্র কয়েকটি। তাতেই তো আর থেমে থাকা যায় না! এই নিবন্ধে আমরা প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকা এমনি ১০টি সেরা ঘটনা বা মুহূর্ত্ব তুলে ধরব। চলুন শুরু করা যাক!
স্টিভেন জেরার্ডের পা পিছলানোর কীর্তি (The great slip from Steven Gerrard)
লিভারপুলের এই অবিসংবাদিত কিংবদন্তী খেলোয়াড়কে মার্সিসাইডে অনেকেই ঈশ্বরের তোকমাও দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু, তার লিভারপুল ক্যারিয়ারের দিকে পেছন ফিরে তাকালে জেরার্ডের একটি আফসোস আজীবন থেকেই যাবে, আর তা হল ক্লাবটির হয়ে খুব বেশি শিরোপা জিততে না পারা। সাবেক এই ইংলিশ আন্তর্জাতিক ফুটবলার অবশ্যই এখনো নিজেকে নিয়মিত চিমটি কাটেন এটি ভেবে যে তিনি তার লম্বা এনফিল্ড ক্যারিয়ারে একবারও প্রিমিয়ার লীগ শিরোপাটি নিজ হাতে তুলতে পারেননি।
তবে, তার ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসে তিনি একটি অযাচিত কীর্তি গড়ে ফেলেন। সকল ফুটবল প্রেমীদের মনেই ঘটনাটি এখনো তাজাই রয়েছে। কীর্তিটি হচ্ছে ২০১৪ সালে চেলসি’র বিরুদ্ধে একটি শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জেরার্ডের পা পিছলিয়ে পড়ে যাওয়ার ঘটনা। তার পড়ে যাওয়ার কারণে সে সময়ের চেলসি স্ট্রাইকার ডেম্বা বা বলটি নিয়ে দৌড় দেন, এবং লিভারপুল গোলকিপারকে ভেদ করে গোল করে বসেন। লিভারপুল ম্যাচটি হেরে যায়, এবং সাথে সাথে তারা প্রিমিয়ার লীগ শিরোপাটিও বিসর্জন দেয় ম্যানচেস্টার সিটি’র কাছে। তার এই পিছলানোটা আরো স্মরণীয় হয়ে আছে এই কারণে যে, ম্যাচটি শুরুর আগেই তিনি খুব উদ্যমের সাথে তার দলের অন্যান্য সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যেন শিরোপাটি তাদের হাত থেকে পিছলিয়ে না যায়। এটি একই সাথে খুবই হাসির এবং কষ্টেরও যে, দিন শেষে পিছলানোর কাজটি তিনিই করেছিলেন।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ম্যাচের কয়েক সেকেন্ডের মাথায়ই স্টিভেন জেরার্ডের লাল কার্ড (Steven Gerrard sent off seconds after the start of a match against arch-rivals Manchester United)
কিংবদন্তি এই মিডফিল্ডার আমাদের তালিকায় আবারো জায়গা করে নিলেন, এবং আবারো কোন ইতিবাচক কারণে নয়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং লিভারপুলের মধ্যকার ম্যাচটি হল সম্ভবত উভয় দল এবং তাদের বেশির ভাগ সমর্থকদের জন্য মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ।
তবে, এই ফিক্সচারটিতে মনে হয় জেরার্ডের অংশগ্রহণ করার তেমন কোন ইচ্ছাই ছিল না, কারণ ম্যাচটি শুরুর ৪০ সেকেন্ডের মাথায়ই তার এক অযাচিত ট্যাকেলের কারণে তাকে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়। আমরা এখনো জানি না যে এই ইংলিশ তারকার মাথায় তখন কি চলছিল বা ম্যাচ শুরুর পূর্বে তিনি কি গ্রহণ করেছিলেন, তবে তার ট্যাকেলটি দেখে এমনই মনে হয়েছিল যে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোন একজন খেলোয়াড়কে আহত করার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন।
একজন সমর্থককে দেওয়া এরিক ক্যান্টোনার কুং ফু স্টাইলের কিক (Eric Cantona kicks fan in full on Kung Fu style)
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই কিংবদন্তি ফুটবলার ছিলেন ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে মজার চরিত্রগুলির মধ্যে একটি। তার জার্সির কলার সবসময় থাকতো উঁচুতে, এবং তিনি সবসময় খেয়াল রাখতেন যেন মাঠে তার পারফর্মেন্স এর উচ্চতা তার আকাশ সমান ইগো’র উচ্চতাকেও ছাড়িয়ে যায়। তবে তার একটি অত্যন্ত নেতিবাচক দিকও ছিল, যা হল তার রাগ।
১৯৯৫ সালের একটি ম্যাচে কোন এক অজানা কারণে এই সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা ক্রিস্টাল প্যালেসের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে দৌড়ে গিয়ে গ্যালেরিতে বসে থাকা একজন সমর্থককে উড়ন্ত একটি সাইড কিক উপহার দেন৷ আজ পর্যন্ত এটিই হল প্রিমিয়ার লীগ ইতিহাসের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর একটি দৃশ্য।
হোসে মোরিনহোর “স্পেশাল ওয়ান” প্রেস কনফারেন্স (Jose Mourinho’s ‘Special One’ press conference)
চেলসিতে রোমান আব্রামোভিচ এর যুগের শুরুতে তখন কেবলমাত্র পর্তুগিজ যুবা কোচ হোসে মোরিনহোকে দলটির হেড কোচের দায়িত্ব সমর্পণ করা হয়েছে। সদ্য ঘোষিত সেই চেলসি ম্যানেজারকে তখন রীতি অনুসারেই মিডিয়া বা প্রেস এর সম্মুখীন হতে হয়। তবে, পর্তুগিজ এই কিংবদন্তি কোচ কনফারেন্স ঘরে যেভাবে প্রবেশ করেন, এবং যেমন সাবলীলভাবে সকল প্রশ্নের উত্তর দেন, তাতে মনেই হচ্ছিল না যে তার উপর চেলসিতে শিরোপা ফিরিয়ে আনার গুরুদায়িত্বটি অর্পণ করা হয়েছিল। এরপর, প্রেস কনফারেন্সটির শেষের দিকে তিনি ইতিহাস রচনা করেন। পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তোর হয়ে লীগ শিরোপা জেতার বিষয়টিকে চিহ্নিত করে তিনি বলে বসেন যে, তিনি কোন সচরাচর ম্যানেজার নন, বরং তিনি হলেন “দ্য স্পেশাল ওয়ান”।
পেপে রেইনা’র বলঘটিত বিড়ম্বনা (Pepe Reina’s beach ball confusion)
সাবেক এই লিভারপুল গোলকিপার প্রিমিয়ার লীগে তার সময়কালে বেশ কিছু হাস্যকর মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন। তবে, তার অন্যান্য মুহূর্তগুলিকে ছাপিয়ে যে ঘটনাটি আমাদের সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে তা হল তার অত্যাধিক জনপ্রিয় বীচবল মুহূর্তটি।
সেবার সান্ডারল্যান্ড এর স্টেডিয়াম অব লাইটে সমর্থকরা মাঠে বিভিন্ন ধরণের বলও ছুঁড়ে মারতে শুরু করেন। খেলা চলাকালীন অবস্থায় সান্ডারল্যান্ড এর স্ট্রাইকার ড্যারেন বেন্ট গোলের দিকে জোড়েসোড়ে একটি নিচু শট মারেন, যা সরাসরি গিয়ে মাঠে অবস্থিত একটি বীচবলে লাগে। বীচবলে প্রতিফলিত হয়ে ম্যাচবলটি একজন হকচকিত পেপে রেইনাকে রশানলে ফেলে দিয়ে জালে জড়িয়ে পড়ে। রেফারির কাছে তৎক্ষণাৎ ব্যাপারটি তুলে ধরলেও তা রেইনাকে আজীবনের বিদ্রুপ থেকে বাঁচাতে পারেনি।
একটি সম্পূর্ণ মৌসুম জুড়ে ইনভিন্সিবল গানারস’দের অপরাজিত থাকার রেকর্ড (The Invincible Gunners go unbeaten for a whole season)
আমরা প্রথমেই একটি ব্যাপার স্পষ্ট করতে চাই — যেভাবেই হোক, প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা জেতাটাই একটি বিশাল প্রাপ্তি। কিন্তু, কোন দল যদি পুরো প্রিমিয়ার লীগ মৌসুম জুড়ে অপরাজিত থেকে লীগটির শিরোপা জিতে নেয়, তাহলে সেই দলটি নিশ্চয় একটু বেশিই স্পেশাল।
আর্সেন ওয়েংগারের অনবদ্য সৈন্যদল কোন প্রকার হোঁচট না খেয়েই এক দৌড়ে প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। পথিমধ্যে তারা লীগের ৩৮টি ম্যাচের মধ্যে ২৬টিতে জয় ও ১২টিতে ড্র হাসিল করতে সমর্থ্য হয়েছিল। একটি স্বর্ণালী দলের একটি স্বর্ণালী অর্জন। এমনটি আর কোন দল কখনো করতে পারবে কি না সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
এএফসি উইম্বলডনের বিরুদ্ধে মধ্য মাঠ থেকে ডেভিড বেকহাম এর গোল (David Beckham’s goal from the halfway line against AFC Wimbledon)
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই অবিসংবাদিত লিজেন্ড তার পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই বিখ্যাত ছিলেন সেটপিস গ্রহণে তার চরম দক্ষতার কারণে। সরাসরি ফ্রি কিক থেকে গোল করার অশেষ ক্ষমতা তার পায়ে বিদ্যমান ছিল বছরের পর বছর ধরে।
এএফসি উইম্বলডন এর বিরুদ্ধে তার ঐতিহাসিক গোলটি অবশ্য কোন ফ্রি কিক বা সেটপিস থেকে আসেনি। তিনি নিজেদের অর্ধে বলের নিয়ন্ত্রণ নেন, এবং খেয়াল করেন যে উইম্বলডনের গোলকিপার তার লাইন থেকে বাইরে অবস্থান করছেন। এমনটি দেখে তিনি সেখান থেকেই একটি লং রেঞ্জ শট মারেন, এবং বলটি গিয়ে আঁছড়ে পড়ে উইম্বলডনের জালে।
কেনি ডালগ্লিশের নেতৃত্বে ব্ল্যাকবার্ন রভার্স এর প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জয় (Kenny Dalglish leads Blackburn Rovers to title triumph)
১৯৯২ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের সূচনার পর থেকে লীগ শিরোপাটি খুব বেশি দলের হাতে যায়নি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি ও চেলসিই এই শিরোপাটি সবচেয়ে বেশিবার জিততে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি আর্সেনাল, লেস্টার সিটি এবং লিভারপুলও স্বাদ পেয়েছে এই অসামান্য কৃতিত্বের।
তবে, আজকের যুগের বেশির ভাগ ফুটবল সমর্থকেরই হয়তো একটি ব্যাপার জানা নেই, এবং তা হল বর্তমানে রেলিগেটেড দল ব্ল্যাকবার্ন রভার্স ১৯৯৪ সালে প্রিমিয়ার লীগের শিরোপাটি ঘরে তুলেছিল। ভাবতেই অবাক লাগে, তাই না? তবে, অদ্ভূত হলেও সেটিই সত্যি। সেবার তাদের লীগ জয়ের দুই নায়ক ছিলেন টিম শেরউড এবং অ্যালান শেয়ারার।
প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জয়ের মাধ্যমে লেস্টার সিটি’র অসাধ্য সাধন (Leicester City does the impossible by winning the league)
২০১৫/১৬ প্রিমিয়ার লীগ মৌসুম শুরুর আগে লেস্টার সিটি পরিচিত ছিল কেবলমাত্র একটি নিম্ন মিড টেবিল দল হিসেবেই। তার আগের মৌসুমেই তারা অল্পের জন্য রেলিগেশনের খপ্পর থেকে বেঁচেছিল। সেই মৌসুমে জুয়ারীদের মধ্যে লেস্টার সিটি প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জেতার ক্যাটেগরিতে কেবলমাত্র ৫০০০/১ অডস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।
তবে, সেই মৌসুমে ফুটবলের ইতিহাসে এমন কিছু হতে যাচ্ছিল যার পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষমতা কারোই ছিল না। লেস্টার সিটি মৌসুমের শুরু করে ঝড়ো গতিতে। মাঝ পথে দুই একবার হোঁচট খেলেও তাদের ইতালিয়ান ম্যানেজার ক্লাউদিও রানিয়েরি প্রত্যেকটি ম্যাচকে সমান গুরুত্ব দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। লেস্টারের পথে আসা সব দলকেই তারা গুড়িয়ে দিয়েছিলেন। সবশেষে, দুই ম্যাচ বাঁকি থাকতেই তারা লীগ শিরোপা নিজেদের করে নিতে সক্ষম হোন। লেস্টারের অসম্ভবকে সম্ভব করার এই কীর্তিটিকে আজও অনেকেই ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা অর্জনগুলির মধ্যে একটি হিসেবে মানেন।
সার্জিও আগুয়েরো’র ৯৩ঃ২০ গোল এবং মার্টিন টাইলার এর মন মাতানো ধারাভাষ্য (Sergio Aguero’s late goal and Martin Tyler’s commentary classic)
যদি প্রিমিয়ার লীগের শ্বাসরুদ্ধকর ও নাটকীয় দিকগুলি উপস্থাপন করার জন্য যেকোন একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তকে বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে যে কারো মাথায়ই ভাসবে একটি মুহূর্তের কথা — আগুয়েরোওওওওও। ২০১১-১২ এর সেই প্রিমিয়ার লীগ ফাইনাল ডে নাটকীয়তার কথা কোন ফুটবল ভক্তেরই ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং ৪৫ বছর ধরে কোন শিরোপা না জেতা ম্যানচেস্টার সিটি সেদিনের শুরুতেও পয়েন্টের দিক দিয়ে ছিল সমানে সমান, যদিও ম্যান সিটি’র গোল ব্যবধান ছিল ইউনাইটেড এর থেকে অনেকটাই বেশি। দুই খেলা একসাথে শুরু হয়, এবং সান্ডারল্যান্ড এর বিরুদ্ধে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের ম্যাচটি বেশ সহজেই ১-০ গোলের ব্যবধানে জিতে নেয়।
কিন্তু, অপর দিকে, ম্যানচেস্টার সিটি অপ্রত্যাশিতভাবে নিজেদের মাঠে রেলিগেশন প্রত্যাশী কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স এর বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ২-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে। ম্যাচ একদম শেষের দিকে গড়িয়ে যায়, কিন্তু সিটি’র একের পর এক আক্রমণ কিউপিআর রুখে দিতে থাকে। ৯০ মিনিট সম্পন্ন হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ডেভিড সিলভা’র করা কর্নার কিকে মাথা ছুঁইয়ে এডিন জেকো খেলায় সমতা আনেন। কিন্তু তারপরেও গ্যালেরি বা বাসায় থাকা সকল স্কাই ব্লু সমর্থকরাই ভেবেছিলেন যে সেবারের মত শিরোপা বুঝি তাদের হাতছাড়াই হতে চলেছে। কিন্তু, তারা জানতো না যে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে — শতাব্দীর সেরা ফুটবলীয় মুহূর্ত। মারিও বালোতেল্লি কোনভাবে বলটি ডি বক্সের ভেতরে আগুয়েরোর কাছে পৌঁছান, এবং ম্যাচের ৯৩ঃ২০ মিনিটে আর্জেন্টাইন এই সুপারস্টার কিউপিআর ডিফেন্ডার তাইয়ে তাইওকে কাটিয়ে নিয়ার পোস্টে একটি জোড়ালো শট মারেন, যা কিউপিআর এর জালে ঝড়ো গতিতে আঁছড়ে পড়ে। পুরো এতিহাদ স্টেডিয়াম যেন সেদিন ম্যান সিটি খেলোয়াড় ও সমর্থকদের আনন্দ-অশ্রুতে সিক্ত হয়েছিল। অন্য দিকে, অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড খেলোয়াড় ও সমর্থকরা আগুয়েরোর গোলটির সংবাদ পাওয়া মাত্রই হতভম্ব হয়ে পড়েন। বিশ্বের সেরা ফুটবল লীগের সবচেয়ে সেরা এই মুহূর্তটির কথা যুগ যুগ ধরে সকল ফুটবল প্রেমীই মনে রাখবেন।