প্রিমিয়ার লীগের বর্তমান মৌসুমটি এখন পুরোদমে চলছে। ইতিমধ্যে ৭টি ম্যাচ অতিবাহিত হয়েছে, এবং প্রাক মৌসুম থেকেই যে দলকে শিরোপার জন্য ফেভারিট মনে হয়েছে, সেই লিভারপুল এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লীগে মোট ৬টি ম্যাচ খেলে মাত্র ২টিতে জয়ের দেখা পেয়েছে।
ইয়ুর্গেন ক্লপের লাল বাহিণী গত মৌসুমের একদম শেষ মিনিট পর্যন্ত প্রিমিয়ার লীগের শিরোপার লড়াইয়ে বিদ্যমান ছিল। তবে, শেষ পর্যন্ত তাদেরকে মাত্র ২ পয়েন্টের ব্যবধানে শিরোপাটি পেপ গার্দিওলা ও ম্যান সিটি’র নিকট সমর্পণ করতেই হয়। মৌসুমের শেষ ম্যাচে নাটকীয় জয় ছিনিয়ে এনে ম্যানচেস্টার সিটি লিভারপুকের কোয়াড্রাপল এর স্বপ্নটিও ভেস্তে দেয়।
এরপর স্প্যানিশ জায়ান্টস রিয়াল মাদ্রিদ তাদের কাটা ঘায়ে আরও বেশি নূন ছিটিয়ে দেয়। চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালে তারা লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইউরোপে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখে। ম্যাচটিতে অবশ্য আগা গোড়া ভাগ্য তাদের সহায়তা করেছিল। পুরো ম্যাচটিতে লিভারপুল নিয়ন্ত্রণ রাখলেও ভিনিসিয়াস জুনিয়রের করা চমৎকার গোলের জের ধরে এবং থিবোঁ কর্তোয়া’র করা বেশ ক’টি অসাধারণ সেইভ এর বদৌলতেই মূলত রিয়াল মাদ্রিদ ইউরোপ জয় করতে পেরেছিল।
ম্যাচটিতে পুরো ৯০ মিনিট জুড়ে লস ব্লাঙ্কোস খ্যাত রিয়াল মাদ্রিদ অন টার্গেটে কেবলমাত্র ২টি শট নিতে পেরেছিল। তবে, ম্যাচের এক ঘন্টা পূর্ণ হওয়ার কিছু আগে উরুগুয়ান উইংগার ফেডি ভ্যালভার্ডে’র দেওয়া মাটি কামড়ানো ক্রসে পা ঠেকিয়ে রিয়ালকে জয়সূচক গোলটি এনে দেন ব্রাজিলিয়ান স্বর্ণবালক ভিনিসিয়াস জুনিয়র। এতে করেই রিয়ালের ট্রফি ক্যাবিনেটে যুক্ত হয় তাদের ইতিহাসের ১৪তম চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা, এবং লিভারপুলকে আবারও খুশি থাকতে হয় শুধুমাত্র রানার্স আপ মেডেল নিয়েই।
অল রেডস’রা অবশ্য ঘরোয়া কাপগুলিতে ডাবল অর্জন করতে সক্ষম হয়। এফএ কাপ ও কারাবাও কাপ — উভয় কাপের ফাইনালেই চেলসিকে পেনাল্টি শুট আউটে হারিয়ে তারা গত মৌসুমে সেই দুর্লভ কৃতিত্বটি অর্জন করে। ফলে, মূল স্বপ্ন পূরণ না হলেও মৌসুমটিকে লিভারপুলের জন্য একটি সফল মৌসুম হিসেবেই ধরেছিলেন ফুটবল বিশ্লেষকরা।
এ পর্যন্ত লিভারপুলের মৌসুম (Liverpool’s Season So Far)
মৌসুমের সূচনাটি লিভারপুল করেছিল অত্যন্ত ইতিবাচক ভঙিতেই। মৌসুমের পর্দা উন্মোচনকারী কমিউনিটি শিল্ড শিরোপার লড়াইয়ে তারা ম্যানচেস্টার সিটিকে ৩-১ গোলে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। তারই ফলস্বরূপ সকলে ভেবেছিল যে এবারের মৌসুমটিও অল রেডস’দের জন্য খুবই ফলপ্রসূ হতে চলেছে।
ম্যাচটিতে তাদের পারফর্মেন্স দেখে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি যে, তারা তার কিছুদিন আগেই তাদের সুপারস্টার ফরোয়ার্ড সাদিও মানেকে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হারিয়েছে।
রাইট ব্যাক ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নোল্ড, তারকা উইংগার মোহাম্মদ সালাহ্ এবং নতুন সাইনিং ডারউইন নুনেজ এর করা গোলগুলির উপর ভর করেই তারা সিটিজেনদেরকে হারিয়েছিল, এবং একটি শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়েই মৌসুমের সূচনা করেছিল।
সাদিও মানেকে হারানোর পরও প্রিমিয়ার লীগ শিরোপার জন্য সকলে ম্যানচেস্টার সিটি’র পাশাপাশি অল রেডস’দের নামটিই নিচ্ছিল। কিন্তু, বাস্তবে তারা এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লীগে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সূচনাগুলির মধ্যে একটিই অর্জন করতে পেরেছে।
ফুলহ্যাম ও ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম দুইটি ম্যাচে কষ্টার্জিত জয় তুলে নেওয়ার পর তারা ওল্ড ট্রাফোর্ডে পাড়ি জমিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছেও পরাজয় বরণ করে। ফলে, তাদের মৌসুমের প্রথম জয়টি তুলে নেওয়ার জন্য তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয় এনফিল্ডে এএফসি বোর্নমাউথের আগমণ পর্যন্ত।
চেরিস খ্যাত বোর্নমাউথ এর বিরুদ্ধে তারা ধ্বংসলীলা চালায়, এবং চেরিস গোলকিপার মার্ক ট্র্যাভার্সকে এড়িয়ে মোট ৯ বারের মত বলটিকে বোর্নমাউথের জালে জড়ায়। সেই সহজ জয়ের পর তারা ঘরের মাঠে শক্তিশালী নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের বিপক্ষে একটি কষ্টার্জিত ২-১ গোলের জয়ও তুলে নেয়।
এরপর মার্সিসাইড ডার্বিতে তারা বেশ বাজে পারফর্মেন্স উপহার দিলেও আবারও ভাগ্যের জোড়ে তারা ম্যাচটি থেকে একটি পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফিরতে পেরেছিল। কিন্তু, অল রেডস’দের জন্য সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা তখনও অপেক্ষা করছিল। চ্যাম্পিয়নস লীগে তাদের প্রথম ম্যাচে তারা নাপোলির বিপক্ষে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে একটি বিশাল রিয়ালিটি চেক এর সম্মুখীন হয়।
নাপোলির এস্তাদিও দিয়াগো আর্মান্ডো মারাডোনা স্টেডিয়ামে তারা সেই মর্মান্তিক ম্যাচটিতে এবারের মৌসুমের সবচেয়ে বাজে পারফর্মেন্সটি উপহার দিতে সক্ষম হয়, এবং এক হালি গোল হজম করায় তাদের রক্ষণভাগের উপর আরো বেশি চাপ এসে পড়ে।
অস্বভাবসুলভ সেই হারটির পর ইয়ুর্গেন ক্লপ নিজেও স্বীকার করেন যে, তার দলের সকল সদস্যকেই আবার নিজেদেরকে নতুন করে খুঁজতে হবে, এবং নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে। কারণ, তাদের পুরনো রূপ ফিরে পেতে হলে সেটির আর কোন বিকল্প নেই।
গ্রেট ব্রিটেন এর রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর মৃত্যুকে সম্মান প্রদর্শন পূর্বক প্রিমিয়ার লীগের গত উইকেন্ডের সকল ম্যাচ পিছিয়ে দেওয়ার ফলে অল রেডস’রা আয়াক্স এর বিরুদ্ধে মাঠে নামার পূর্বে কিছুটা বিশ্রামের সময় পায়, যা নাপোলির বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর হারের পর তাদের মানসিক ভারসাম্য ফিরে পাওয়ার জন্য অনেক বেশি জরুরি ছিল।
ফলে, তাদের পরবর্তী ম্যাচে চ্যাম্পিয়নস লীগে আয়াক্সের বিরুদ্ধে তারা একটি অধিকতর উত্তম পারফর্মেন্স উপহার দিতে সক্ষম হয়, এবং তার আগ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা আয়াক্সকে ২-১ গোলে পরাজিত করতেও সক্ষম হয়।
যদিও ডাচ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে অল রেডস’দের পারফর্মেন্স প্রশংসার দাবিদারই ছিল বটে, তবুও এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত তাদের অধারাবাহিক ফর্ম কিন্তু কারো নজরকেই এড়াতে পারেনি। এবং সেটির জন্যই অনেক ফুটবল বোদ্ধাই লিভারপুলের প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
আয়াক্সের বিপক্ষে জয়ের ঠিক পরেই আন্তর্জাতিক বিরতি শুরু হয়ে যাওয়ায় ইয়ুর্গেন ক্লপ এবং তার শিষ্যরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার আরো কিছুটা সময় পেয়েছেন, যা তাদের ফর্মে ফেরার ক্ষেত্রে কাজে দিতে পারে।
তবে, এই নিবন্ধটিতে আমরা এটিই তুলে ধরার চেষ্টা করব যে কেন আমরা মনে করি মা যে, লিভারপুল টানা দ্বিতীয়বারের মত প্রিমিয়ার লীগ টেনিলের দ্বিতীয় স্থানটি দখল করতে পারবে।
ইঞ্জুরি সমস্যা (Injury Crisis)
এবারের মৌসুমে ইঞ্জুরি সমস্যা নিয়ে প্রচুর ভুগতে হয়েছে লিভারপুলকে। এলেক্স অক্সলেড-চেম্বারলেইন, কার্টিস জোনস, এবং নাবি কেইটা সকলেই দীর্ঘকালীন ইঞ্জুরি নিয়ে মাঠের বাইরে অবস্থান করছেন।
ফ্যাবিনহো, জর্ডান হেন্ডারসন এবং থিয়াগো আলকান্তারা বর্তমানে মূল একাদশে ফিরলেও এখনও তারা ইঞ্জুরির সাথে লুকোচুরি খেলে চলেছেন। তবে, ইয়ুর্গেন ক্লপের জন্য তার দলের সমস্যার জায়গাটি বুঝতে নিশ্চয় আর বাকি নেই।
অল রেডস’দের মূল শক্তিমত্তার বেশির ভাগই আসে তাদের বুদ্ধিদীপ্ত মিডফিল্ড থেকে। তবে, তাদের স্কোয়াডের সকল পজিশনেই বেশ কিছু ইঞ্জুরি রয়েছে, যদিও মূল সমস্যাটি হল তাদের মিডফিল্ডের বাজে ফর্ম, এবং সকল মিডফিল্ডারদেরই ইঞ্জুরি সমস্যা। নতুন মৌসুমের শুরুতে অতি বাজে একটি সূচনা করার পেছনে সেটির অনেক বড় হাত রয়েছে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ম্যাচটিতে ক্লপকে মাঠে নামাতে হয় জেমস মিলনার, জর্ডান হেন্ডারসন, এবং হার্ভি এলিয়ট সমৃদ্ধ একটি জোড়াতালি দেওয়া মিডফিল্ড। তবে, ম্যাচটিতে তার সেই সিদ্ধান্তটি চরমভাবে ব্যাকফায়ার করে, কারণ দুই বয়োজ্যেষ্ঠ মিডফিল্ডার মিলনার ও হেন্ডারসন কোনভাবেই ইউনাইটেডের দুই ডাইনামিক মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন ও ব্রুনো ফার্নান্দেজ এর গতি ও বুদ্ধিদীপ্ততাকে টক্কর দিতে পারছিলেন না।
এবারের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডো জুড়েই লিভারপুল এর সাথে লিঙ্কড ছিলেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের ইংলিশ মিডফিল্ডার জুড বেলিংহ্যাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বছরের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে এই সাইনিংটি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অল রেডস’দের অবস্থা দেলহে এমনটিই মনে হচ্ছে যে, এই মুহূর্তেই তাদের একটি তৎক্ষনাৎ সমাধান দরকার।
এছাড়া, লিভারপুল তাদের বাকি মৌসুমে কেমন ফলাফল অর্জন করতে পারবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে তাদের সাইনিংগুলির উপর।
স্পোর্টিং লিসবনের পর্তুগিজ সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার ম্যাটেয়াস নুনেসকে কেনার কথা শোনা গেলেও এখন হয়তো তাকে না কেনার সিদ্ধান্তটি লিভারপুলকে ভোগাচ্ছে। তার পরিবর্তে শেষ পর্যন্ত অল রেডস’রা ট্রান্সফার ডেডলাইন ডে’তে জুভেন্টাস থেকে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার আর্থার মেলোকে কিনতে সক্ষম হয়। এই ট্রান্সফারটিকে অধিকাংশ ফুটবল বোদ্ধারাই ভালোভাবে নিতে পারেননি। তারা এটিকে এক ধরনের “প্যানিক বাই” বলেই আখ্যায়িত করছেন, কারণ ইয়ুর্গেন ক্লপ লিভারপুলে যেমন গেগেনপ্রেসিং সিস্টেম চালু করেছেন, সেটি অনুযায়ী আর্থার মেলো তাদের জন্য খুব একটা মানানসই খেলোয়াড় নন। তাদের দরকার ছিল আরো গতিশীল ও শক্তিশালী কোন খেলোয়াড়।
সাদিও মানে’র অনুপস্থিতি (The Absence of Sadio Mane)
লিভারপুলের সাম্প্রতিক জাগরণের জোয়াড়ে সবচেয়ে মূল্যবান নামগুলির মধ্যে একটি হল সাদিও মানে। ক্লাবটির সাম্প্রতিক সাফল্যে তার অবদান অপরিসীম।
তবে, কোন এক অজানা কারণে এই সেনেগালিজ ফরোয়ার্ডকে ধরে রাখতে অক্ষম হয়েছে লিভারপুল। সদ্য সমাপ্ত ট্রান্সফার উইন্ডোতে তিনি যোগ দিয়েছেন জার্মান জায়ান্টস বায়ার্ন মিউনিখের শিবিরে।
এবারের মৌসুমে লিভারপুল কেবল একটি ম্যাচেই পেরেছে ২টির বেশি গোল করতে। সেই সাফল্যও এসেছিল, যখন তারা বোর্নমাউথকে ঘরের মাঠে ৯-০ গোলের ব্যবধানে ধরাসয়ী করেছিল। সাদিও মানে যখন অল রেডস শিবিরে ছিলেন, তখন তাদের আক্রমণভাগকে বিশ্বের সেরা আক্রমণভাগগুলির মধ্যে একটি হিসেবে ধরা হত। কিন্তু, মানেকে হারানোর পর থেকে তাদের আক্রমণের ধার অনেকটাই কমে গিয়েছে, এবং সেজন্যই এবারের মৌসুমে লিভারপুলের গোল সংখ্যায় ভাঁটা পড়েছে।
অনেকেই এমনটি বলছেন যে, পুরো দলটি শুধুমাত্র নতুন কিছু ট্যাকটিক এর সাথে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছেন, যার জন্য তাদের কিছুটা সময় লাগছে মানিয়ে নিতে। তবে, এটি কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না যে, সাদিও মানে’র অনুপস্থিতি তাদেরকে কিছুটা হলেও ভোগাচ্ছে।
লিভারপুলের জার্সি গায়ে তার কাটানো অসাধারণ সব মৌসুমের জের ধরে মোহাম্মদ সালাহ্কে সাম্প্রতিক কালে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফরোয়ার্ডদের মধ্যে একজন হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে। তবে, বর্তমান মৌসুমে তার পারফর্মেন্স দেখে মনে হচ্ছে যে, সম্ভবত তার সেই সাফল্যের মূলমন্ত্রই ছিল সাদিও মানে’র উপস্থিতি।
বিশ্বব্যাপী ফুটবল ভক্তরা আশ্চর্যান্বিত হয়েছিল যখন মিশরীয় এই জাদুকর বোর্নমাউথের বিরুদ্ধে ৯-০ গোলের ধ্বংসলীলায় একটি গোলও করতে ব্যর্থ হোন। কলোম্বিয়ান ফরোয়ার্ড লুইস ডিয়াজের উপর এখন এসে পড়েছে সাদিও মানে’র পদচিহ্ন অনুসরণ করার গুরুদায়িত্ব, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই দায়িত্বটি তিনি পূর্ণাঙ্গভাবে বা ধারাবাহিকভাবে পালন করতে সক্ষম হোননি। এছাড়া, ডেব্যু ম্যাচে গোল পেলেও ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কেনা লিভারপুলের নতুন স্ট্রাইকার ডারউইন নুনেজ এর জন্য ইংলিশ ফুটবলে খাপ খাইয়ে নেওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্যই প্রমাণিত হয়েছে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই লিভারপুলের ফ্রি-ফ্লোয়িং অ্যাটাকের কান্ডারি হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সাদিও মানে, এবং তিনি ক্লাবটি ত্যাগ করার মাত্র ৬ ম্যাচ পরেই অল রেডস’দেরকে দেখে মনে হয়েছে যে, আক্রমণভাগে তাদের বুদ্ধিদীপ্ততাই অনেকটা কমে গিয়েছে, এবং গোল করার মন্ত্রই যেন তারা ভুলে গিয়েছেন।
ইয়ুর্গেন ক্লপের ৭ম মৌসুমের অভিশাপ! (Jurgen Klopp’s Seventh Season Curse!)
ইয়ুর্গেন ক্লপ তার বর্ণাঢ্য ম্যানেজারিয়াল ক্যারিয়ার জুড়েই প্রচুর সাফল্যের মুখ দেখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে এফএসভি মাইঞ্জ এ কাটানো তার সময়কাল (যেখানে তার কোচিংয়ে হাতে খড়ি হয়েছিল), এবং বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে থাকাকালীন তার অসাধারণ মৌসুমগুলি।
তবে, যদিও তিনি ঐ দুই জার্মান ক্লাবের হয়ে বেশ ভালোই সাফল্য উপভোগ করেছেন, তবুও তিনি তাদের হয়ে কখনোই সপ্তম মৌসুমের কোঠা পার করতে পারেননি।
এফএসভি মাইঞ্জে থাকাকালীন তিনি দুই বার ব্যর্থ হওয়ার পর শেষমেষ ২০০৩-০৪ মৌসুমে ক্লাবটিকে জার্মান ফুটবলের দ্বিতীয় টিয়ার থেকে বুন্দেসলিগায় প্রমোশন জেতাতে সক্ষম হোন।
জার্মান ফুটবলের শীর্ষ লীগে তাদের সেই স্বপ্নযাত্রাটি অবশ্য স্থায়ী হয় ২০০৬-০৭ মৌসুম পর্যন্তই, কারণ সেবার তারা রেলিগেটেড হয়ে যায়। রেলিগেশনের পরেও ক্লপ মাইঞ্জ ছাড়েন না। তবে, সেই মৌসুমের শেষে যখন তিনি তার ক্লাবকে আবারও প্রমোশন জেতাতে ব্যর্থ হোন, তখন তিনি ক্লাবটি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেটি ছিল মাইঞ্জের হয়ে তার সপ্তম ও সর্বশেষ মৌসুম।
এরপর তিনি বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের দায়িত্ব নেন, এবং সাথে সাথে সাফল্যের মুখ দেখতে পান। প্রথম মৌসুমের তিনি বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে জার্মান সুপার কাপের শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হোন। এরপর তিনি ডর্টমুন্ডের হয়ে টানা দুইটি জার্মান বুন্দেসলিগা শিরোপাও জিতেন। তার মাধ্যমে তারা বায়ার্ন এর বহুদিনের রেকর্ডটিও ভাঙতে সক্ষম হয়। তাছাড়া, তিনি ডর্টমুন্ডের হয়ে ২০১২ সালে ডিএফবি পোকাল ও ২০১৩ সালে সুপার কাপ শিরোপা জিততেও সক্ষম হোন।
তবে, এই জার্মান জায়ান্টদের সাথে তার স্বপ্নযাত্রাও শেষ হয় তার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সেই সপ্তম মৌসুমে গিয়েই। সেই মৌসুমে ডর্টমুন্ড লীগ টেবিলের সপ্তম পজিশন অর্জন করতে সমর্থ্য হয়েছিল, এবং চ্যাম্পিয়নস লীগের রাউন্ড অব ১৬ থেকে বিদায় নিয়েছিল।
জার্মান এই ট্যাকটিশিয়ান বর্তমানে লিভারপুল ম্যানেজার হিসেবে তার সপ্তম মৌসুম পার করছেন, এবং এটি কাকতালীয় হলেও সত্যি যে, যে লিভারপুল দলকে বেশ কিছু মৌসুম ধরে ইউরোপের যেকোন দলই ভয় করে আসছে, সেই লিভারপুল দলকেই এবারের মৌসুমে দেখে মনে হচ্ছে যে, যেকোন দলই তাদেরকে হারাতে পারবে।
ইয়ুর্গেন ক্লপের সপ্তম মৌসুমের অভিশাপ হয়তো কেবলমাত্র একটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন যুক্তিই হতে পারে, কিন্তু যেদিক দিয়েই দেখুন না কেন, সেটিকে আমলে নিয়ে তার ট্যাকটিক্স এবং চিন্তাধারায় কিছুটা নতুনত্ব আনার বুঝি সময় এসে গিয়েছে।