প্রেডিকশন (Prediction)
লিভারপুল ১ – ৩ ম্যানচেস্টার সিটি
২.৫ গোলের উর্ধ্বে
ম্যানচেস্টার সিটি -১.০ (এশিয়ান হ্যান্ডিক্যাপ)
গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ (Key notes)
- এবারের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমে লিভারপুল এখন পর্যন্ত ৮টি ম্যাচ খেলে মাত্র ১০ পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেছে, যা কি না ২০১২-১৩ মৌসুমের পর থেকে (৯ পয়েন্ট) মৌসুমের ৮ ম্যাচ পর তাদের সর্বনিম্ন পয়েন্ট ট্যালি। তারা এই মৌসুমে ইতিমধ্যে সেই সংখ্যক ম্যাচে পরাজিত হয়েছে, যে সংখ্যক ম্যাচে তারা পরাজিত হয়েছিল পুরো ২০২১-২২ মৌসুম জুড়ে (২টি)।
- ম্যানচেস্টার সিটি প্রিমিয়ার লীগে তাদের খেলা সর্বশেষ ৩৭টি ম্যাচের মধ্যে শুধুমাত্র একটিতেই পরাজয় বরণ করেছে। এছাড়া, তারা প্রতিযোগিতাটিতে তাদের খেলা সর্বশেষ ২১টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে (১৬টি জয়, ৫টি ড্র)। আর নিজেদের মাঠের বাইরে খেলা তাদের সর্বশেষ ২২টি প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচে তারা অপরাজিত রয়েছে (১৬টি জয়, ৬টি ড্র)। এই ধারাটি প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে এমন রেকর্ডের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
- প্রিমিয়ার লীগে অন্য যেকোন দলের চেয়ে বেশি সংখ্যক বার ম্যানচেস্টার সিটিই এবারের মৌসুমে প্রথমে গোল করতে পেরেছে (৮টি ম্যাচে)। অন্যদিকে, ম্যাচের প্রথম গোলটি হজম করার তালিকায় লিভাপুলের (৬টি) উপরে রয়েছে শুধুমাত্র সাউথ্যাম্পটন (৭টি)। প্রকৃতপক্ষে, অল রেডস’রা তাদের খেলা সর্বশেষ ১২টি প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচের মধ্যে ১০টিতেই প্রথমে গোল হজম করেছে। এর আগের ৪১ ম্যাচ জুড়ে সমসংখ্যক বার প্রথমে গোল হজম করেছিল তারা।
ফর্ম বিবরণীঃ লিভারপুল (Form Guide: Liverpool)
দ্বিতীয়ার্ধে একটি অদম্য পারফর্মেন্স এর মাধ্যমে গত সপ্তাহে স্কটিশ জায়ান্টস রেঞ্জার্সকে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করে লিভারপুল। সেই জয়টির মধ্য দিয়ে তারা স্কটিশ ক্লাবটির উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের (ইউসিএল) দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার সকল স্বপ্ন ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।
লিভারপুলের স্টলওয়ার্ট মোহাম্মদ সালাহ্ সেদিন দ্বিতীয়ার্ধে বেঞ্চ থেকে খেলতে নেমে মাত্র ৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডের মধ্যে নিজের হ্যাট্রিক সম্পন্ন করে ফেলেন, যেটি কি না চ্যাম্পিয়নস লীগের ইতিহাসের দ্রুততম হ্যাট্রিক।
তাদের জন্য সেই জয়টি খুব বেশি প্রয়োজন ছিল, এবং এমন একটি জয় নিশ্চয় ম্যানচেস্টার সিটি’র মুখোমুখি হওয়ার পূর্বে তাদেরকে অনেক বেশি সাহস ও আত্মবিশ্বাস জোগাবে। যেকোন দলের বিরুদ্ধে ভালো ফলাফল অর্জন করার ক্ষেত্রে সেটিই তো প্রথম ধাপ।
ফর্ম বিবরণীঃ ম্যানচেস্টার সিটি (Form Guide: Manchester City)
ম্যানচেস্টার সিটি গত মিডউইকে ডেনমার্কের ক্লাব এফসি কোপেনহেগেন এর বিরুদ্ধে ০-০ গোলে ড্র করার পরে চ্যাম্পিয়নস লীগের দ্বিতীয় রাউন্ডে নিজেদের স্থানটি প্রায় পাকাপোক্তই করে ফেলেছে। ম্যাচটির স্কোরলাইন দেখে যেমনটি মনে হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে ম্যাচটি তার চেয়ে অনেক বেশি ঘটনাবহুল ছিল। কোপেনহেগেন এর মাঠ বায়েন্স হোল্ড এবারের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লীগে এখনও পর্যন্ত গোলশূন্য, এবং এই ম্যাচটির মাধ্যমে সকল প্রতিযোগিতায় ম্যানচেস্টার সিটি’র ৬ ম্যাচ ব্যাপী জয়ের ধারাটি ব্যাহত হল।
ম্যানচেস্টার সিটি এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত সকল প্রতিযোগিতায় অপরাজিত রয়েছে, কিন্তু সেই রেকর্ডটি হুমকির মুখে পড়ে যাবে, যখন তারা মুখোমুখি হবে লিভারপুল নামক একটি সহজাত কিন্তু কঠিন প্রতিপক্ষের।
লিভারপুল বনাম ম্যানচেস্টার সিটি সম্পর্কিত কিছু তথ্য (Liverpool Vs Manchester City Game Facts)
- প্রিমিয়ার লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি’র বিরুদ্ধে লিভারপুল তাদের সর্বশেষ ৫টি লীগ ম্যাচে কোন জয়ের দেখা পায়নি (৩টি ড্র, ২টি পরাজয়)। তাদের লীগ ইতিহাসে তারা কখনো সিটিজেনদের বিরুদ্ধে টানা ৬টি ম্যাচে জয়হীন থাকেনি।
- ম্যানচেস্টার সিটি প্রিমিয়ার লীগে লিভারপুলের বিরুদ্ধে খেলা তাদের সবশেষ ২টি ম্যাচ থেকে সর্বমোট ৪টি পয়েন্ট অর্জন করেছে। এর আগে লিভারপুলের বিরুদ্ধে খেলা ১৭টি ম্যাচে তারা সর্বমোট ৫ পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেছিল (৫টি ড্র, ১২টি পরাজয়)। এই ম্যাচটি জিততে পারলে ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসের পর থেকে এবারই প্রথমবারের মত অল রেডস’দের বিরুদ্ধে টানা ৩ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়তে চলেছে সিটিজেন’রা।
- সকল প্রতিযোগিতায় ম্যানচেস্টার সিটি’র বিপক্ষে খেলা তাদের সর্বশেষ ৪টি ম্যাচের প্রত্যেকটিতেই লিভারপুল কমপক্ষে ২টি করে গোল করতে সক্ষম হয়েছে (২টি জয়, ২টি ড্র)। পেপ গার্দিওলা ম্যানেজ করছেন এমন কোন দলের বিরুদ্ধে এর আগে আর কোন দলই পর পর ৫টি ম্যাচ জুড়ে কমপক্ষে ২টি করে গোল করতে পারেনি।
- বর্তমান প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি’র বিরুদ্ধে প্রিমিয়ার লীগে লিভারপুল মোট ২২টি ম্যাচ জিতেছে, যা কি না অন্য যেকোন দলের চেয়ে ৬টি বেশি। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে ম্যান সিটি’র নিকট নিজ মাঠে ১-০ গোলে হারার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে খেলা ১৩টি হোম প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচের একটিতেও হারেনি অল রেডস’রা (৭টি জয়, ৭টি ড্র)।
যেসকল খেলোয়াড়দের উপর সবার নজর থাকবে (Players to watch out for)
আর্লিং হাল্যান্ড – ম্যানচেস্টার সিটি (Erling Haaland – Manchester City)
ম্যানচেস্টার সিটি’র আর্লিং ব্রাউত হাল্যান্ড এ পর্যন্ত প্রিমিয়ার লীগে কেবলমাত্র ৯টি ম্যাচই খেলেছেন, কিন্তু ইতিমধ্যে লীগটির ইতিহাসে যেকোন খেলোয়াড়ের খেলা প্রথম ১০টি ম্যাচে সর্বোচ্চ গোল (১৫টি), এবং সর্বোচ্চ গোল ইনভলভমেন্ট (১৮টি) এর রেকর্ডটি কিন্তু তিনি দখল করে নিয়েছেন। মৌসুমের যেকোন সময়ে ১০ ম্যাচ জুড়ে সর্বোচ্চ যে সংখ্যক গোল কোন খেলোয়াড় এ পর্যন্ত প্রিমিয়ার লীগে করতে পেরেছে তা হল ১৬। ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সেই রেকর্ডটি গড়েছিলেন সাবেক লিভারপুল স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ। হাল্যান্ড কি পারবেন সেই রেকর্ডটি লিভারপুলের বিরুদ্ধেই ভাঙতে?
মোহাম্মদ সালাহ্ – লিভারপুল (Mohamed Salah – Liverpool)
লিভারপুলের হয়ে প্রিমিয়ার লীগে নিজের মাঠে ম্যানচেস্টার সিটি’র বিরুদ্ধে খেলা ৫টি ম্যাচের মধ্যে ৪টিতেই গোলের দেখা পেয়েছেন মোহাম্মদ সালাহ্। শুধুমাত্র ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জিমি ফ্লয়েড হ্যাসেলব্যাংকই পেরেছিলেন প্রিমিয়ার লীগে ম্যানচেস্টার সিটি’র বিরুদ্ধে টানা ৪টি হোম ম্যাচে গোল করতে।
লিভারপুল বনাম ম্যানচেস্টার সিটি প্রেডিকশন (Liverpool Vs Manchester City Prediction)
গত কয়েক বছর ধরেই এই ফিক্সচারটি আমাদেরকে ইংগিত দিয়ে দিয়ে আসছিল যে, সিজন শেষে এই দুই দলের মধ্য থেকে চ্যাম্পিয়ন কে হতে পারে। কিন্তু এবারের মৌসুমে এমনটিই মনে হচ্ছে যে, দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন শক্তির এবং ভিন্ন লক্ষ্যসম্পন্ন দুইটি দলের মধ্যে একটি লড়াই হতে চলেছে। লিভারপুল ম্যানেজার ইয়ুর্গেন ক্লপ ইতিমধ্যেই বলেছেন যে, লিভারপুল এবারের শিরোপার লড়াই থেকে ছিটকে পড়েছে। কিন্তু, তাদের পরিস্থিতি শোচনীয় হলেও ম্যানচেস্টার সিটি’র শিরোপা জয়ের পথে একটি বড়সড় কাঁটা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা লিভারপুল এখনো রাখে। আমরা এনফিল্ডে একটি স্মরণীয় ম্যাচ দেখতে পারি, কিন্তু ম্যাচটি শুরুর আগ পর্যন্ত ম্যানচেস্টার সিটিই ম্যাচটি জয়ের জন্য ফেভারিট হিসেবে গণ্য হবে।