ইতিহাসজুড়ে বিশ্বকাপ ফুটবল সবসময় গ্রীষ্মকালেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু এবার তা অনুষ্ঠিত হচ্ছে শীতকালে। যাই হোক, এখন যখন বিশ্বকাপ শুরু হয়েই গিয়েছে, আমরা এমন ৬টি প্রিমিয়ার লীগ দলকে বেছে নিয়েছি যাদের ম্যানেজাররা এই বিরতির সময়ও খাতা কলম হাতে নিয়ে নানা ধরণের ছক কষবেন বলে আমরা মনে করি। প্রিমিয়ার লীগের চলতি মৌসুম পুনরায় শুরু হবে ২৬ই ডিসেম্বর অর্থাৎ বক্সিং ডে থেকে।
সূচিপত্র
- লীগের শীর্ষভাগে অবস্থানরত দলগুলির ক্ষেত্রে
- লীগের নিম্নভাগে অবস্থানরত দলগুলির ক্ষেত্রে
- কিভাবে বিশ্বকাপের বিরতিটি প্রিমিয়ার লীগের শিরোপার লড়াইকে প্রভাবিত করতে পারে?
তাহলে কোন কোন প্রিমিয়ার লীগ দলের উপর এবারের বিশ্বকাপ বিরতিটি সবচেয়ে বেশি (ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রিমিয়ার লীগের সম্ভাব্য সেসকল দলের ব্যাপারে।
লীগের শীর্ষভাগে অবস্থানরত দলগুলির ক্ষেত্রে (Top of the league teams)
আর্সেনাল (Arsenal)
আপনি যদি এই প্রশ্নটি করেন যে, “বিশ্বকাপ আসরের ফলে প্রিমিয়ার লীগের কোন ক্লাবটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?” তাহলে অনেকের আংগুলই যাবে আর্সেনালের দিকে। বর্তমানে তারা প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে। প্রিমিয়ার লীগের এবারের মৌসুমটি বেশ আনপ্রেডিক্টেবল হয়েই এগুচ্ছে, এবং তারই একটি অংশ হল আর্সেনালও।
পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে দেখলে, মৌসুমের ১৩ ম্যাচ পরে প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে আর্সেনালের এই সূচনাটি হল যেকোন দলের জন্য সেরা সূচনাগুলির তালিকায় ৫ম। মিকেল আর্তেতা এবং তার স্টাফ প্রায় তিন বছর ধরে অনেক জল্পনা কল্পনা এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে এই নতুন আর্সেনালকে আবিষ্কার করেছেন। এখন এসে এই দলটি আসলেই শিরোপার জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত, এবং এবারের মৌসুমে তারা শেষ পর্যন্ত সেই লড়াই চালিয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।
কিন্তু, যেহেতু মৌসুমের মাঝেই বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, তাই অনেকেই এমনটি ভাবছেন যে, প্রিমিয়ার লীগের উপর বিশ্বকাপের বিরূপ প্রভাবটি সবচেয়ে বেশি টের পাবে গানারস’রাই। এটি শুধুমাত্র গানারস সমর্থকদেরই দুশ্চিন্তা নয়, বরং এমন দুশ্চিন্তা জ্ঞাপন করেছেন সেসকল ফুটবল বিশারদরাও, যারা কি না মৌসুমের শুরু থেকেই আর্তেতা ও আর্সেনালের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ছিলেন।
প্রজেক্ট আর্তেতা এবার সফলকাম হতে চলেছে, যদিও গত তিন বছরে এই স্প্যানিশ কোচের কোচিং দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রচুর আর্সেনাল ভক্তরাই। তবে, আর্সেনাল কর্তৃপক্ষ তার উপর ভরসা রেখেছেন, যার ফল তারা এখন পাচ্ছেন। কিন্তু, তাদের বেঞ্চ বা ব্যাকআপ খেলোয়াড়দের শক্তিমত্তা বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, এই ফর্মটি খোয়াতে তাদের খুব বেশি সময় লাগবে না, যদি বিশ্বকাপে তাদের কোন জরুরি খেলোয়াড় ইঞ্জুরিতে পড়েন।
এবারের বিশ্বকাপে আর্সেনাল থেকে কমপক্ষে ১০ জন খেলোয়াড় অংশ নিতে চলেছেন, যারা হলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস (ব্রাজিল), এরোন র্যামসডেল (ইংল্যান্ড), থমাস পার্টে (ঘানা), গ্রানিত জাকা (সুইজারল্যান্ড), ম্যাট টার্নার (যুক্তরাষ্ট্র), বুকায়ো সাকা (ইংল্যান্ড), তাকেহিরো তমিয়াসু (জাপান), উইলিয়াম স্যালিবা (ফ্রান্স), গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি (ব্রাজিল), এবং বেন হোয়াইট (ইংল্যান্ড)।
এর মধ্যে গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি, বেন হোয়াইট এবং এরোন র্যামসডেল প্রায় প্রথমবারের মতই তাদের জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেতে চলেছেন।
উল্লিখিত তালিকাটির সকল খেলোয়াড়ই মিকেল আর্তেতা’র জন্য ইঞ্জুরি কনসার্ন। আর তা হবেই না বা কেন? বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়েরা তো খুব বেশি বিশ্রামের সুযোগও পাননি। কাতারে যেতে চলেছেন এমন গানারস’দের মধ্যে দুই একজন এমনও রয়েছেন যারা প্রিমিয়ার লীগের সর্বশেষ গেমউইকে কিছুটা চোট পেয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন গ্রানিত জাকা, যিনি কি না ওলভসের বিপক্ষে ম্যাচের ২০ মিনিটের মাথায়ই মাঠ ত্যাগ করেছিলেন।
যেহেতু প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকা ম্যানচেস্টার সিটি’র ছাড়া নিশ্বাস এখনো আর্তেতা’র ঘাড়েই পড়ছে, সেহেতু বলাই যায় যে, বিশ্বকাপে তার দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়েরা ইঞ্জুরিতে পড়লে তার দলের শিরোপার লড়াই এর সমাপ্তি সেখানেই ঘটবে। আর্সেনাল বর্তমানে ম্যানচেস্টার সিটি’র থেকে ৫ পয়েন্ট এগিয়ে আছে, কিন্তু পেপ গার্দিওলা’র নিকট রয়েছে অধিকতর বড় ও শ্রেয় একটি স্কোয়াড, যা মৌসুমের শেষ নাগাদ তাদেরকেই শিরোপার জন্য ফেভারিট করে তুলবে।
লিভারপুল (Liverpool)
পূর্বের বেশ কিছু মৌসুমের তুলনায় এবারের মৌসুমে দলের পেছনে অধিকতর বেশি টাকা খরচ করলেও আকষ্মিকভাবে লিভারপুল মৌসুমটির সূচনা একদমই ভালোভাবে করতে পারেনি।
অল রেডস’রা সর্বশেষ ট্রান্সফার উইন্ডোতে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সবচেয়ে নামীদামী খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন, সাদিও মানেকে বায়ার্ন মিউনিখের নিকট হারায়। তবে তার রিপ্লেসমেন্ট তারা গত জানুয়ারিতেই কিনে রেখেছিল, যখন ২০২১-২২ মৌসুমের শীতকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে তারা এফসি পোর্তো থেকে কলোম্বিয়ান উইংগার লুইস ডিয়াজকে দলে ভিড়িয়েছিল। তবে, তার চেয়েও বেশি নজরকাড়া যে ট্রান্সফারটি লিভারপুল সম্পন্ন করেছে গত গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে, সেটি হল উরুগুয়ান ফরোয়ার্ড ডারউইন নুনেজ এর ট্রান্সফারটি। আরেক পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা থেকে তাকে অল রেডস’রা দলে ভেড়ায় ক্লাব রেকর্ড ফি ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে। প্রিমিয়ার লীগে সেই ট্রান্সফারটি নিয়ে শুধু তোলপাড়ই শুরু হয়েছিল না, বরং সকলেই ভেবেছিল তিনি লীগটিতে ঝড় তুলে ছাড়বেন, এবং লিভারপুলকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।
তবে, এই দুই সাইনিং এর কোনটিই এখন পর্যন্ত ওতটা কার্যকরী হয়ে ওঠেনি, এবং দু’জন খেলোয়াড়ই প্রিমিয়ার লীগের সাথে এখনো খাপ খাইয়েই নিচ্ছেন। তাছাড়া, ইঞ্জুরি সমস্যায় জর্জরিত লিভারপুল মিডফিল্ড এর জন্যও কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে বেশ ভুগতে হচ্ছে। ক্লান্তিও তার দলে যেন জেঁকে বসেছে। সব মিলিয়ে, দলের খেলোয়াড়েরা ক্লপের হাই-ইন্টেন্সিটি ফুটবল খেলতে হিমসিমই খাচ্ছেন বটে। মোহাম্মদ সালাহ্ও তার স্বভাবসুলভ গোলস্কোরিং ফর্মে ফিরতে পারছেন না, এবং তারা এমনও কিছু ম্যাচে হারছে, পূর্বে যেসকল ম্যাচ শুরু হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে জয়ী ঘোষণা করা যেত।
এর বাইরেও ক্লপের “সপ্তম মৌসুমের অভিশাপ” নিয়েও বেশ কথাবার্তা হয়েছে ফুটবল মহলে। এএ আগে এফসি মাইঞ্জ এবং বরুশিয়া ডর্টমুন্ডেও এই সপ্তম মৌসুমে এসেই তার সাম্রাজ্য ভেঙে চুরমার হয়েছিল। জার্মান এই কোচ তার ক্যারিয়ারে মাত্র তিনটি ক্লাবের নেতৃত্বই দিয়েছেন, এবং তার মধ্যে পূর্বের দুটি ক্লাবেই তিনি ৬ বছর যাবত বেশ দাপটের সাথে কোচিং করেন এবং দল দু’টিকে নানা ধরনের সাফল্য এনে দেন। তবে, সপ্তম মৌসুম শুরুর সাথে সাথেই তার দলগুলি দিশেহারা হয়ে ওঠে, এবং তাকে হতে হয় চাকরিচ্যুত।
এবারের মৌসুমে লিভারপুলেও যেন সেই একই বিষয়টিই পরিলক্ষিত হচ্ছে। অবশ্য সর্বশেষ দুইটি ম্যাচে তারা কিছুটা ফর্ম ফিরে পেয়েছে, কিন্তু ঠিক যখন তাদের ফর্ম ফিরতে শুরু করেছে, তখনই বিশ্বকাপের বিরতিটি শুরু হয়ে গেল, এবং তাদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটাও আরো কয়েকগুণ বেশি কঠিন হয়ে গেল।
যেহেতু লিভারপুলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়েরা তাদের নিজ নিজ জাতীয় দলের জন্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু ইয়ুর্গেন ক্লপ নিশ্চয় আঁচ করতে পারছেন যে, তার দলের বেশ কিছু খেলোয়াড়ই বিশ্বকাপ থেকে ইঞ্জুরি নিয়ে ক্লাবে ফিরতে পারেন। তবে, ক্লপ নিশ্চয় বেশ ভালো করেই জানেন যে, এই মুহূর্তে আবার ইঞ্জুরি আঘাত হানলে তা তার দলের জন্য সেটি কতটা ক্ষতিকর হতে পারে।
নিউক্যাসেল ইউনাইটেড (Newcastle United)
এবারের বিশ্বকাপ আসরটি প্রিমিয়ার লীগের আর কোন দলটির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে? এই প্রশ্নটির খুব সহজ উত্তর হল নিউক্যাসেল ইউনাইটেড, যারা কি না নতুন মালিকানা এবং ব্যবস্থাপনার অধীনে বেশ চমৎকার সময় পার করছে।
ক্লাবটির চতুর্দিক ঘিরে এখন কেবলই বইছে উত্তেজনা ও প্রত্যাশার হাওয়া। এই নিউক্যাসেল দলটি বারবার সেই এলান শেয়ারার এর নিউক্যাসেলের কথাই মনে করিয়ে দেয়, যারা কি না নিয়মিত আকারে প্রিমিয়ার লীগ শিরোপার জন্য লড়াই করতো এবং ইউরোপীয় প্রতিযোগিতাগুলিতে অংশগ্রহণ করতো।
সাবেক এএফসি বোর্নমাউথ কোচ এডি হাও এই নিউক্যাসেল ইউনাইটেড দলটির মধ্যে এক ধরনের নতুন প্রানের সঞ্চার করেছেন। কাগজে কলমে দলটির দিকে তাকালে মনে হবে যে, প্রিমিয়ার লীগের নিম্নভাগই তাদের জন্য যোগ্য স্থান। কিন্তু, ম্যান সিটি, লিভারপুল, এবং আর্সেনালদেরকে ছাপিয়ে নিউক্যাসেল ইউনাইটেডই হল বর্তমানে প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে ইন-ফর্ম দল। বর্তমানে তারা লীগ টেবিলের ৩য় স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে, গোল স্কোর করার দিক দিয়ে তারা কেবলমাত্র আর্সেনাল ও ম্যান সিটি’র থেকেই পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়া, এখন পর্যন্ত লীগে সবচেয়ে কম গোল হজম করা দলটিও হল নিউক্যাসেলই (আর্সেনালের সাথে সসম্মিলিতভাবে)।
নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের জন্য অদূর ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বলই মনে হচ্ছে। যদিও তাদেরকে এখন পর্যন্ত কেউই সম্পূর্ণভাবে শিরোপা প্রত্যাশী একটি দল হিসেবে ধরতে নারাজ, তারপরও ২০২২-২৩ মৌসুমের শেষে তারা কমপক্ষে উয়েফা ইউরোপা লীগে একটি স্থান নিজেদের নামে করতে চাইবে।
এটিও তাদের জন্য একটি অসাধারণ ব্যাপার যে, এবারের বিশ্বকাপে তাদের দল থেকে খুব বেশি খেলোয়াড় খেলতে যাবেন না। শুধুমাত্র নিক পোপ (ইংল্যান্ড), কিয়েরান ট্রিপিয়ার (ইংল্যান্ড), ক্যালাম উইলসন (ইংল্যান্ড), ফ্যাবিয়ান শের (সুইজারল্যান্ড), এবং ব্রুনো গিমারেশ (ব্রাজিল) যাচ্ছেন কাতারে মাঠ কাঁপাতে।
এখন এডি হাও এর জন্য সমস্যা একটাই এবং সেটি হল যে, বিশ্বকাপের এই চার সপ্তাহ জুড়ে তিনি কিভাবে তার দলের সেই অসাধারণ গতিবিধি বা মোমেন্টামটি ধরে রাখবেন, যেহেতু এ সময়কালে তার দলের জন্য কোন প্রকার সক্রিয় ফুটবলই চালু থাকবে না।
আর্সেনালের মতই অনেকের কাছেই নিউক্যাসেলকে নিয়েও একই প্রশ্ন রয়েছে, “মৌসুমটি যখন পুনরায় শুরু হবে, তখন কি তারা তাদের পূর্বের ফর্ম পুনরুদ্ধার করতে পারবে?” এটি একটি যথাযথ প্রশ্ন, কেননা গানারস’দের মত নিউক্যাসেলের নিকটও বিশাল বড় কোন স্কোয়াড নেই, তথা তাদের ব্যাক আপ অপশনও ওতটা ভালো নয়।
এই বিরতির সময়টি প্রিমিয়ার লীগের অনেক দলের জন্যই সুবিধাজনক হবে, আবার এমনও অনেক দল রয়েছে যাদের জন্য এটি কাল হয়ে দাঁড়াবে। নিউক্যাসেলের ক্ষেত্রে, এটি একটি মিষ্টিমধুর সমস্যার সৃষ্টি করবে, কারণ বিশ্বকাপ থেকে সকলে ফেরার পর এমনটি দেখা যেতেই পারে যে, শীর্ষ ৬ এর অন্যান্য দলের থেকে তাদের স্কোয়াডটি দূর্বল হয়ে পড়েছে।
লীগের নিম্নভাগে অবস্থানরত দলগুলির ক্ষেত্রে (Struggling teams)
এস্টন ভিলা (Aston Villa)
এস্টন ভিলা ছিল ২০২১-২২ মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগের অন্যতম বড় আন্ডারডগ। সেবার মাঝ মৌসুমে স্টিভেন জেরার্ডকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ করার পর থেকে তারা দূর্দান্ত ক্রীড়ানৈপূণ্য প্রদর্শন করে।
স্কটিশ প্রিমিয়ার লীগের দল গ্লাসগো রেঞ্জার্স এর দায়িত্ব ছেড়ে এসে তিনি এস্টন ভিলা’র ম্যানেজার হোন, যা কি না ছিল প্রিমিয়ার লীগে তার প্রথম ম্যানেজারিয়াল পোস্ট। ২০২১-২২ মৌসুমের প্রথমার্ধ রেলিগেশন জোনে থাকার পর স্টিভেন জেরার্ড দায়িত্ব নিয়ে এস্টন ভিলাকে বিপদমুক্ত করেন।
তারা মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে অসাধারণ ফুটবল খেলে লীগ টেবিলের ১৪তম পজিশনে উঠে আসে। সবাই ভেবেছিল যে, এবার বুঝি ক্লাবটির দুর্দিন কাটতে চলেছে। স্টিভেন জেরার্ড ক্লাবটির হয়ে তার প্রথম প্রাক মৌসুম প্রস্তুতিও এবারই করে নেন, এবং সকলেরই প্রত্যাশা ছিল তারা গত মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধের সেই দূর্দান্ত পারফর্মেন্স এর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে।
তবে, সবার সেই প্রত্যাশায় গুড়ে বালি দিয়ে প্রজেক্ট জেরার্ড ব্যর্থ হয়, এবং ভিলা কর্তৃপক্ষ তাকে অক্টোবরের শেষ নাগাদ চাকরিচ্যুত করে দেন। চাকরিটি তারা এমন একজনকে দেন যার নিকট এই পর্যায়ে জেরার্ডের চেয়ে দশগুণ বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে।
নতুন ভিলা কোচ উনাই এমারি ক্লাবটির ম্যানেজার হিসেবে নিজের সময়কালের সূচনা করেছেন ঘরের মাঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে ইন-ফর্ম ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়নকেও তারা ২-১ গোলে হারিয়েছে। ভিলা সমর্থকরা তাই এখন আনন্দ উল্লাসে ভাসছে।
দলের দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক ১০ দিনের মাথায় তিনি দলটিকে এই দুইটি চমৎকার জয় এনে দিয়েছেন। যেহেতু সামনে বিশ্বকাপের বিরতি আসছে, সেহেতু চার বারের এই উয়েফা ইউরোপা লীগ জয়ী কোচ এস্টন ভিলা’র সেসকল খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে অনেকদিন কাজ করতে পারবেন, যারা এবার বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন না। এতে করে দলটিতে তার ফুটবলীয় দর্শনও তিনি বেশ ভালোভাবেই প্রবেশ করাতে পারবেন।
এস্টন ভিলা বিশ্বকাপ বিরতির সময় এসকল খেলোয়াড়দেরকে ট্রেনিং গ্রাউন্ডে পাবে না — এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (আর্জেন্টিনা), ম্যাটি ক্যাশ (পোল্যান্ড), ইয়ান বেদনারেক (পোল্যান্ড), ডগলাস লুইজ (ব্রাজিল), এবং লিয়ান্ডার ডেন্ডোঙ্কার (বেলজিয়াম)। নিজ নিজ দলের হয়ে তারা বিশ্বকাপ খেলতে কাতারে যাবেন।
তবে, ভিলা দলের কিছু বড় বড় নাম যেমন টাইরন মিংস (ইংল্যান্ড), ডিয়েগো কার্লোস (ব্রাজিল), লুকাস ডিনিয়ে (ফ্রান্স), এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া (আর্জেন্টিনা), ফিলিপ কুটিনহো (ব্রাজিল) এবার বিশ্বকাপে পাড়ি জমাতে পারছেন না, বিধায় তারা উনাই এমারির সাথে কিছু সময় কাটাতে পারবেন বলেই আশা করা যাচ্ছে।
মাঝ মৌসুমে কোন স্ট্রাগলিং দলের ম্যানেজার এর দায়িত্ব নেওয়াটা বেশ ঝামেলার এবং ঝুকির একটি কাজ। তবে, তাও অনেকেই সেই ঝুকিটি নেন, এবং সফলও হোন।
এবারের মৌসুমটি এতটাই বিচিত্র যে, উনাই এমারি হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন, এবং ভিলা ম্যানেজার হিসেবে উড়ন্ত সূচনা করেছেন। তিনি যে ক্লাবেই কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই ক্লাবকেই তিনি ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলিয়েছেন। তাই, যেহেতু সূচনাটি বেশ চমৎকার হয়েছে, সেহেতু তিনি এবং এস্টন ভিলাও ইউরোপে খেলার স্বপ্ন দেখতেই পারে।
লিডস ইউনাইটেড (Leeds United)
জেসি মার্শ গত মৌসুমে একদম পতনের মুখ থেকে লিডস ইউনাইটেডকে বাঁচিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন, কিন্তু এবারের মৌসুমে তিনি তার দলকে কোনভাবেই রেলিগেশন জোন থেকে দূরে আনতে পারছেন না। অনেকে বলছেন, মার্শের নাকি সেটি করার সামর্থ্যই নেই।
জেসি মার্শ, যিনি কি না বব ব্রাডলি এবং ডেভিড ওয়াগনার এর পর প্রিমিয়ার লীগে নিয়োজিত কেবলমাত্র তৃতীয় আমেরিকান ম্যানেজার, এবারের মৌসুমে তার দলকে তার ফুটবলীয় দর্শন মোতাবেক খেলাতে পারছেন না, যদিও এল্যান্ড রোডের লিডস কর্তৃপক্ষ তার পরামর্শ অনুসারেই বেশ কিছু নতুন সাইনিং দলে ভিড়িয়েছে।
মৌসুমের একটি বাজে সূচনার পর অক্টোবর এর শেষ পর্যন্ত লিডস ইউনাইটেড রেলিগেশন জোনেই অবস্থান করেছে। তবে, সম্প্রতি তাদের ফর্মে কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে, এবং তারা লীগ টেবিলের ১২তম পজিশনে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে, যা কি না অক্টোবরের শুরুতে তাদের পজিশন থেকে ৭ ধাপ উপরে।
গত কয়েকটি ম্যাচে তাদের ফলাফলই বলে দিচ্ছে যে, জেসি মার্শ এর দলটি ভালো কিছুর দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তারা নিজেদের সেই ফর্মটির পুনরাবৃত্তি কিছুটা হলেও করতে পেরেছে, যার উপর ভর করে তাদের সাবেক কোচ মার্সেলো বিয়েলসা প্রায় দুই দশক পর লিলি হোয়াইটস’দেরকে প্রিমিয়ার লীগে এনেছিলেন, এবং প্রথম টপ ফ্লাইট সিজনেই দলটিকে ৯ম পজিশনে অধিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন।
বিশ্বকাপের বিরতিটিকে কাজে লাগাতে পারলে জেসি মার্শ তার দলটিকে তার নিজস্ব ফুটবলীয় দর্শনের সাথে আরো ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন। তার সাবেক দুই দল রেড বুল সালজবার্গ এবং রেড বুল লাইপজিগে তিনি সেটিই করেছিলেন, এবং বিনিময়ে ভালো ফলাফলও পেয়েছিলেন। তবে, তিনি এবং লিডস কর্তৃপক্ষ কেউই চাইবেন না যেন ২০২১ সালে লাইপজিগ এর মত এবার তিনি লিডসকেও গহীন বিপদে ফেলেন।
লিডস ইউনাইটেড থেকে এবার পূর্বের বহু টুর্নামেন্টের মত বিশ্বকাপেও খেলতে যাচ্ছেন বেশ কিছু খেলোয়াড়, যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রবিন কখ (জার্মানি), ব্রেন্ডেন এরোনসন (যুক্তরাষ্ট্র), টাইলার এডামস (যুক্তরাষ্ট্র), এবং ম্যাটিউশ ক্লিখ (পোল্যান্ড)। লিডস ইউনাইটেড খুব একটা ভালো না খেললেও এই খেলোয়াড়েরা তাদের জাতীয় দলে সুযোগ পাবেনই, এবং সেটির মূল কারণই হল তাদের গুণমান।
এই চার জন খেলোয়াড় না থাকলেও জেসি মার্শ দলের অন্যান্য বেশিরভাগ খেলোয়াড়কে নিয়েই বিশ্বকাপের লম্বা বিরতিতে কাজ করতে পারবেন, এবং নিজের ক্রীড়াকৌশলে কিছু জরুরি পরিবর্তনও আনতে পারবেন, যা তাকে মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে অনেক সাহায্য করতে পারে। বলাই বাহুল্য, প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধ সবসময়ই অনেক গতিশীল হয়ে থাকে।
লেস্টার সিটি (Leicester City)
ব্রেন্ডান রজার্সের অধীনে এবারের মৌসুমে নিজেদের স্বভাবসুলভ ফর্মটি এখনো খুঁজে পায়নি লেস্টার সিটি। চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে মোট ১৫টি ম্যাচ খেলে এ পর্যন্ত তারা মাত্র ৫টিতেই জয়লাভ করতে পেরেছে।
২০১৫ সালে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা জেতার পর থেকে কোন মৌসুমে এটিই তাদের সবচেয়ে বাজে সূচনা। এছাড়া, রজার্সের অধীনেও এটিই তাদের সবচেয়ে খারাপ সূচনা। বলাই বাহুল্য, এর আগে প্রায় প্রত্যেকটি মৌসুমেই লেস্টারকে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় কোয়ালিফাই করিয়েছেন এই আইরিশ কোচ।
এ পর্যন্ত ফক্সেস’দের মৌসুমটি অনেকটাই লিডস ইউনাইটেড এবং এস্টন ভিলা’র মৌসুমের অনুরূপ। তাদের মত লেস্টারের শুরুটিও ছিল জঘন্য, যদিও অক্টোবরের শেষ নাগাদ তারা কিছুটা ফর্ম ফিরে পায়। তবে, বর্তমানে তারা লীগ টেবিলের ১১তম পজিশনে উঠে এসেছে, যা কি না লিডস এবং ভিলা’র ঠিক উপরেই।
তাদের এই নব-আবিষ্কৃত ফর্মটিকে আরো টেকসই ও মজবুত করার জন্য বেশ খানিকটা সময় ব্রেন্ডান রজার্স পাবেন এই বিশ্বকাপ বিরতিতে। প্রকৃতপক্ষে, ব্রেন্ডান রজার্সই এই বিরতিটির কারণে সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন, কারণ প্রিমিয়ার লীগের সকল বর্তমান ম্যানেজারদের মধ্যে তার চাকরিটিই সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছিল।
তবে, উল্লিখিত তিনটি দলের মধ্যে লেস্টার সিটির স্কোয়াড থেকেই সর্বোচ্চ সংখ্যক খেলোয়াড় বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন।
শুধুমাত্র তাদের ডিফেন্স থেকেই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন ড্যানিয়েল আমার্তে (ঘানা), উঠ ফায়েস (বেলজিয়াম), এবং টিমোথি ক্যাস্তানিয়ে (বেলজিয়াম)। এছাড়া, তাদের মিডফিল্ড খেলোয়াড়দের অর্ধেকই হয়তো বিশ্বকাপে যাচ্ছেন।
ব্রেন্ডান রজার্স হয়তো বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে তার মোট স্কোয়াডের অর্ধেকেরও বেশি খেলোয়াড়কে কাছে পাবেন না, তবে তার কোচিং দলকে সাথে নিয়ে দলটির ক্রীড়াকৌশল নতুন করে সাজানোর জন্য প্রচুর সময় তিনি পাবেন, যা কাজে লাগালে তারা মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধটি খুব ভালো করেই পার করতে পারবে।
কিভাবে বিশ্বকাপের বিরতিটি প্রিমিয়ার লীগের শিরোপার লড়াইকে প্রভাবিত করতে পারে? (How the World Cup break can impact the Premier League title race)
সময়সূচি (Schedule)
এখানে বিশ্বকাপের সময়সূচিটি হল প্রধান আলোচ্য বিষয়, কারণ এর আগে কোন পরিস্থিতিতেই ফুটবল বিশ্ব এমন অদ্ভূত সময়ে বিশ্বকাপ কখনোই দেখেনি।
এর আগে লীগ মৌসুমে এমন বিরতি এসেছিল কোভিড-১৯ এর কারণে, যখন সেই বৈশ্বিক দুর্যোগের কারণে প্রায় পুরো বিশ্বই থমকে দাঁড়িয়েছিল, এবং সব ধরণের ফুটবলও বন্ধ ছিল ২ মাসের জন্য। যখন আবার ফুটবল মাঠে ফিরেছিল, তখন অনেক ধরণের পরিবর্তনই নজরে পড়েছিল, এবং যেকোন দলের জন্যই তাদের স্বভাবসুলভ খেলাটি খেলতে পারা হয়ে উঠেছিল বেশ কঠিন।
এবারের বিশ্বকাপ বিরতিটি কোভিড বিরতির মত আচমকা আসছে না অবশ্য। তবে, এটির জন্যও প্রিমিয়ার লীগের দলগুলিকে বেশ খানিকটা ভোগান্তিই পোহাতে হবে, কেননা বক্সিং ডে থেকে পুনরায় মাঠে ফিরতে যাচ্ছে লীগটি, এবং তারপর থেকে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই দু’টি করে ম্যাচ খেলতে হবে দলগুলিকে।
বিশ্বকাপ খেলে আসা খেলোয়াড়েরা লীগ মৌসুম পুনরায় শুরুর আগে আর মাত্র ৮ দিন সময় পাবেন নিজেদেরকে পুনরায় প্রস্তুত করার জন্য। এরপর তাদের ছুড়ে দেওয়া হবে এমন একটি কঠিন সময়সূচির মধ্যে, যেখানে তাদেরকে প্রায় প্রতি তিন দিনেই একটি করে ম্যাচ খেলতে হবে, একদম মৌসুমের শেষ অবধি।
যেসকল খেলোয়াড়দের দল বিশ্বকাপ থেকে আগেভাগেই বিদায় নিবে, তারা অধিক সময় বিশ্রাম নিতে পারবে। তবে, যাদের দল বিশ্বকাপে অনেক দূর পর্যন্ত টিকবে, তাদের ক্লান্ত হয়ে পড়াটা বেশ যুক্তিযুক্ত, কারণ বিশ্বকাপেও কয়েকদিন পর পরই ম্যাচ খেলতে হয়।
গতিবিধি (Momentum)
যেমনটি আমরা আগেও বলেছি, বিশ্বকাপের বিরতিটির কারণে অনেক দলের জন্যই সেই গতবিধিটি ধরে রাখাটা কষ্টসাধ্য হবে, যেটি তারা বিশ্বকাপের আগের সপ্তাহগুলিতে তৈরি করেছিল।
আর্সেনাল এ পর্যন্ত ১৪টি ম্যাচ খেলে মোট ৩৭ পয়েন্ট অর্জন করেছে। এর মধ্যে তারা ১২টি ম্যাচেই জয়ী হয়েছে, একটি ড্র করেছে, এবং একটিতে পরাজিত হয়েছে। পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে দেখলে, মৌসুমের ১৪ ম্যাচ পর তারা প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে সফল দলগুলির তালিকায় ৫ম স্থানে রয়েছে।
এটি হল গানারস ম্যানেজার মিকেল আর্তেতা’র তিন বছরের নিরলস কষ্টের ফল, যার এই দীর্ঘ প্রক্রিয়াটির সমালোচনা অনেকেই করেছে এ সময়কাল জুড়ে। তবে, গানারস’দের জন্য মূল সমস্যা হচ্ছে এই যে, গত দুই মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি এবার সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে আর্সেনাল এর থেকে মাত্র ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে।
একই সুবিধা ও অসুবিধার মারপাঁচ উভয় দলের জন্যই প্রযোজ্য হবে অবশ্য। আর্সেনালের অনেক খেলোয়াড়ই তাদের জাতীয় দলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন, এবং ম্যানচেস্টার সিটি’র খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একই। প্রিমিয়ার লীগের অন্য যেকোন দলের মত এই দুই দলও বিশ্বকাপের পর সমান পরিমাণে সময় পাবে বিশ্রাম নেওয়ার। তবে, যেহেতু ম্যানচেস্টার সিটি’র দলের গভীরতা অনেক বেশি, সেহেতু এই দুর্ভোগটি আর্সেনালকেই বেশি পোহাতে হতে পারে।
আর্সেনাল যদি বিশ্বকাপের পর নিজেদের ফর্মটি পুনরুদ্ধার করতে হিমসিম খায়, তাহলে ম্যান সিটি তাদের স্কোয়াড ডেপথকে কাজে লাগিয়ে প্রিমিয়ার লীগের শিরোপার লড়াইয়ে এগিয়ে যেতেই পারে। এবং এর ফলে পেপ গার্দিওলা তার টানা তৃতীয় প্রিমিয়ার লীগ শিরোপাটি জিতে নিতে পারবেন, যা তাকে অর্জনের দিক থেকে প্রিমিয়ার লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সফল ম্যানেজারে পরিণত করে ফেলবে।
ফিটনেস (Fitness)
এবারের বিশ্বকাপের সময়ে সকল ক্লাবের কর্তৃপক্ষই চিন্তিত থাকবে তাদের খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে।
শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলি (যেমন লীগের শীর্ষ ছয়টি দল), এবং লীগের ডার্ক হর্স দলগুলি (যেমন নিউক্যাসেল ইউনাইটেড এবং ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়ন) অবশ্যই আশা করবে যেন বিশ্বকাপ থেকে তাদের খেলোয়াড়েরা ইঞ্জুরি সমস্যা নিয়ে না ফেরেন।
বিশ্বকাপ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট, এবং বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় যে, এ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলার জন্য অনেক খেলোয়াড় তাদের ক্যারিয়ারকেই ঝুকির সামনে ফেলে দিতেও প্রস্তুত থাকেন। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের রাউন্ড অব ১৬ তে উরু এবং হ্যামস্ট্রিংয়ের ইঞ্জুরিসহ নিজের ক্যারিয়ারকে ঝুকির মধ্যে ফেলে খেলতে নামা চিলি অধিনায়ক গ্যারি মেদেল পরে ফিফাকে অনুরোধ করে একটি সাবস্টিটিউশন বেশি করার অনুমতি নিয়ে এসেছেন।
লিভারপুলের তারকা ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইক এবার বিশ্বকাপে যাওয়ার পূর্বে শপথ করেছেন যে, বিশ্বকাপের প্রত্যেকটি ম্যাচে তিনি জানপ্রাণ দিয়ে খেলবেন, এবং তার দলের কোচ লুইস ভ্যান গাল এর জন্য বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের চেষ্টাই তিনি করবেন, কারণ এ বছরের শুরুর দিকে এই কিংবদন্তি কোচ ক্যান্সারের সাথে লড়েছেন, এবং বিজয়ীও হয়েছেন। এমন প্রতিশ্রুতির মানেই হল যে, তিনি তার জাতীয় দলের জন্য নিজের সবকিছু বিসর্জন দিতে রাজি, এবং সেটি তার ক্লাব কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে কিছুটা হলেও ভাবাবে।
আর্সেনাল, টটেনহ্যাম হটস্পার্স এবং লিভারপুল ইতিমধ্যেই ইঞ্জুরি সমস্যা নিয়ে ভুগছে, যার ফলে তাদেরকে প্রতি ধাপেই বুদ্ধিদীপ্ততার প্রমাণ দিতে হয়েছে। তাই, এবারের বিশ্বকাপ আসরটি অন্যান্য দলের চেয়ে এই দলগুলির জন্য অধিকতর চিন্তার উদ্রেক করবে।
আন্ডারডগ এবং ডার্ক হর্সেস (Underdogs and dark horses)
আন্ডারডগ এবং ডার্ক হর্সেস’দের কথা চিন্তা করলে, ২০২২-২৩ মৌসুমটি হল প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় এবং আনপ্রেডিক্টেবল মৌসুমগুলির একটি।
এটি এমন একটি মৌসুম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যেখানে প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ ৬ এর অভ্যন্তরীণ কোন দলই বলতে পারবে না যে তারা মৌসুম শেষে শীর্ষ ৬ এ থাকতে পারবে, বা কোন পজিশনে থাকতে পারবে। এর পেছনে মূল কারণই হল এই যে, নিউক্যাসেল ইউনাইটেড এবং ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়ন এর মত দলগুলি সবাইকে চমকিয়ে দিয়ে অনেক ভালো পজিশনে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক সময়ে লেস্টার সিটি এবং ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডও এমনটি করতে সক্ষন হয়েছে।
বিশ্বকাপের স্কোয়াডগুলি একে একে প্রকাশ পাওয়ার সময় প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ ৬ এর প্রত্যেকটি দলই বেশ চিন্তায় ছিল, কারণ তাদের দলের কমপক্ষে ৫ জন করে খেলোয়াড় বিশ্বকাপ খেলতে কাতারে যাবে সেটি তারা জানতো। নিউক্যাসেল এবং ব্রাইটন এর দল থেকেও অনেকেই বিশ্বকাপে যাচ্ছেন, কিন্তু সেই শীর্ষ ৬ দলের থেকে সেই সংখ্যাটি তাদের ক্ষেত্রে অনেকটাই কম, যার ফলে বিরতির সময়ে তাদের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই বিশ্রামে থাকবে।
এর ফলে তারা বাকি মৌসুমের জন্য আরো ভালো প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে, এবং পরিকল্পনা করতে পারবে যে কিভাবে তারা শীর্ষ দলগুলির পায়ের নিচ থেকে মাটি সরিয়ে ফেলতে পারবে। এছাড়া, এ সময়ে তারা নিজেদের অন্যান্য খেলোয়াড়দের নিয়ে ট্রেনিংও করতে পারবে, যার ফলে ফিটনেস লেভেলও ঠিক থাকবে দলের মধ্যে।
নিউক্যাসেল ইউনাইটেড বর্তমানে প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের ৩য় স্থানে অবস্থান করছে, এবং ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়ন রয়েছে ৭ম স্থানে। এবারের মৌসুমটি তাদের জন্য এভাবেই শেষ হতে পারে, আবার তারা এর চেয়ে উচ্চতর অবস্থানেও অধিষ্ঠিত হতে পারে।
এছাড়া, এবারের শিরোপার লড়াইয়েও এই দুই দল অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে, কারণ আর্সেনাল ও ম্যানচেস্টার সিটি’র বিপক্ষে তাদের খেলাগুলিতে শীর্ষ দল দুইটি পয়েন্ট খোয়াতেই পারে।