সাংবাদিক পিয়ার্স মর্গানকে দেওয়া সমালোচিত ও বিস্ফোরক এক সাক্ষাৎকারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর অভ্যন্তরীণ অনেক অনিয়ম তুলে ধরার পর, আলোচনা সাপেক্ষে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটি তাদের মধ্যকার চুক্তি ভঙ্গ করেছে।
তার কয়েকদিনের মাথায়ই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মালিক আমেরিকার গ্লেজার্স পরিবার ক্লাবটিকে বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এটি কি শুধুই একটি ঘটনার পর আরেকটি ঘটনা, নাকি দু’টো ঘটনার মধ্যে কোন যোগসাজশ রয়েছে?
হয়তো রয়েছে, হয়তো নেই। কিন্তু, পুরো বিষয়টি নিয়ে অনেকগুলি প্রশ্ন এখনও সবার মনেই রয়ে গিয়েছে।
তবে, সবকিছুর পরেও এটি বলাই যায় যে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে একটি নতুন যুগ শুরু করে দিয়েই গিয়েছেন। হয়তো তিনি এভাবে সবকিছুর ইতি টানতে চাননি। তবে, দিনশেষে তেমনটিই ঘটেছে।
চলুন একবার পুরো চিত্রটি দেখে আসা যাক।
আমরা যা জানি (What we know)
এখানে আমরা কিছু ফ্যাক্টস তুলে ধরছিঃ
গ্লেজার্স পরিবার ২০০৫ সাল থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মালিকানা দখল করে রেখেছে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত তারা নিজেদের অসাধারণ বাজারজাতকরণ বা মার্কেটিং জ্ঞান এর মাধ্যমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ক্লাবে পরিণত করেছে।
তবে, ফুটবলীয় দিক থেকে দেখলে, ক্লাবটিতে খুব কমই পরিবর্তন এসেছে। ইতিহাস দেখলে বোঝা যায় যে, আমেরিকান এই বিলিওনিয়ার পরিবারের অধীনে ক্লাবটি তাদের সবচেয়ে অসফল সময় পার করেছে।
প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর ম্যানেজার থাকাকালীন স্যার আলেক্স ফার্গুসন ক্লাবটিকে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী, ঐতিহাসিক, এবং সফল ক্লাবে পরিণত করেছিলেন। তবে, তিনি ক্লাবটির ম্যানেজারের দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর সাফল্য একদমই নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে, এবং এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে এমন একটি ক্লাব হিসেবে দেখা হয় যারা অতীতের গৌরব নিয়ে বেঁচে আছে।
কিংবদন্তি স্কটসম্যান ফার্গুসন ওল্ড ট্রাফোর্ডের ডাগ আউট ত্যাগের পর থেকে হোসে মোরিনহো ব্যতীত আর কোন ম্যানেজারই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে শিরোপা এনে দিতে পারেননি। যদিও, সে সময়কালে ক্লাবটির মালিক গ্লেজার্স পরিবার দলের পেছনে কাড়ি কাড়ি অর্থ ঠিকই ঢেলেছে, এবং বার বার ব্যর্থ হয়েছে। তাদের করা কোন সাইনিংই দলের উপর তেমন একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ভালো কোন ফুটবল ডিরেক্টর নিয়োগ না করাকে, এবং শুধু ব্যবসার দিকটাকে দেখাকেই সেটির মূল কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে।
এছাড়ক, এ সময়ের মধ্যে ক্লাবটির বিভিন্ন ফ্যাসিলিটি এবং কাঠামোগত দিক ভুল পথে বা খারাপের দিকেই গিয়েছে, যার ফলে কিছুদিন পরপরই ক্লাবটির সমর্থকগণ, সাবেক খেলোয়াড়গণ, এবং কিছু বিখ্যাত ভক্তরা প্রতিবাদও জানিয়ে গিয়েছেন।
#গ্লেজার্সদের_পতন_চাই বা #GlazersOut শিরোনামে তাদের এসকল প্রতিবাদ প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে। এমনকি, এ বিষয়ে ওল্ড ট্রাফোর্ডে সমর্থকদের প্রতিবাদের কারণে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যাচও পিছিয়ে যাওয়ার কীর্তি রয়েছে। এ বিষয়ে তাই কোনই সন্দেহ নেই যে, ক্লাবটি ছাড়ার জন্য বেশ খানিকটা সময় ধরেই গ্লেজার্সদের উপর প্রচুর চাপ রয়েছে।
তবে, এতদিন ধরে সমর্থকদের দাবি বা চাওয়াগুলি পূরণ বা করে এখন কেন তারা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার সিদ্ধান্তটি নিলেন? ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সেই সাক্ষাৎকারের কোন প্রভাব কি তাহলে তাদের উপর আসলেও পড়েছে?
একটি সময়োপযোগী সাক্ষাৎকার? (A well-timed interview?)
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো’র সাক্ষাৎকারটি নিয়ে নানা মানুষের নানা মত শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। সকলেই তাদের দিক থেকে ঠিক।
এমনটি খুব দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করা হচ্ছে যে, পাঁচ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই তারকা ফুটবলার একটি বাজে সময়ে এই সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন, কারণ সেসময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড খুব ভালো ফুটবল উপহার দিচ্ছিল, এবং ক্লাবটিকে ঘিরে থাকা মানুষজন বেশ খোশ মেজাজেই ছিলেন। তবে, আরেক দিকে এমনও অনেকে আছেন যারা বলছেন যে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো খুবই সময়মত সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন, এবং তিনি অতীতের যেসকল রেফারেন্স তুলে ধরেছেন এবং বর্তমানে ক্লাবটিতে চলমান যেসকল অনিয়মের কথা বলেছেন তা সত্যিই যথাযথ।
পর্তুগিজ এই মহাতারকা পারিবারিক কারণে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি মিস করেন। এর পেছনে মূলত কারণ ছিল তার নবজাতিকা মেয়ের মৃত্যু, যা তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন। কাকতালীয় হলেও সত্য যে, তিনি যখন এই আবেগঘন মুহূর্ত পার করছিলেন, এবং সে কারণে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ক্যাম্প থেকে দূরে ছিলেন, তখনই তার এজেন্ট হোর্গে মেন্ডেস অন্যান্য কিছু ক্লাবের সাথে তার ব্যাপারে আলোচনা করছিলেন। তখন জোড়েসোড়েই গুজব শুরু হয়ে যায় যে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ওল্ড ট্রাফোর্ড ছাড়ছেন।
এছাড়া, রোনাল্ডো আরো একটি ঘটনার কারণে মাঝে শিরোনামে এসেছিলেন। টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর বিপক্ষে রেড ডেভিলদের অসাধারণ জয়ের দিনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার এরিক তেন হাগ যখন তাকে বেঞ্চ থেকে সাবস্টিটিউট হিসেবে মাঠে নামাতে চান, তখন তিনি তাতে রাজি না হয়ে মাঠ ত্যাগ করেন, এবং শুধু তাই নয়, সেদিন অন্যান্য খেলোয়াড়েরা ড্রেসিং রুমে আসার আগেই তিনি স্টেডিয়ামও ত্যাগ করেন। মিডিয়াও সেদিন তেন হাগের দলের দূর্দান্ত পারফর্মেন্সকে বাদ দিয়ে রোনাল্ডোর সেই কীর্তির পেছনেই বেশি মনযোগ দেয়। সেদিনের পারফর্মেন্সটি ছিল এবারের মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সবচেয়ে পরিপূর্ণ ও অনবদ্য পারফর্মেন্স।
এরপর সবকিছু ঠান্ডা হওয়ার পর যখনই ক্লাবটি ধারাবাহিকভাবে ভালো সব ফলাফল অর্জন করতে লাগল, ঠিক তখনই এই সাক্ষাৎকারটি দিয়ে আবারো সকলের মনযোগ নিজের দিকে আকর্ষণ করলেন রোনাল্ডো।
সাক্ষাৎকারটির পরে মিডিয়ার সাথে তার প্রথম বার্তালাপে তিনি বলেন, “আমার জীবনে আমি মনে করি সবচেয়ে ভালো টাইমিং হল আমার নিজের টাইমিং। আমি এ ব্যাপারে কোনই তোয়াক্কা করি না যে, আমার কথায় কে কি ভাবল। আমার যখন যেটা বলার, আমি তখনই সেটা বলব। ক্লাবের খেলোয়াড়েরাও অনেক বছর ধরেই আমাকে চেনে, এবং তারাও জানে আমি কি ধরণের মানুষ।”
এসকল বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, এবং সেটি হল যে, পর্তুগিজ এই কিংবদন্তি ফুটবলার একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়েই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পেছনে লেগেছিলেন। তিনি সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেই বলেছিলেন যে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তার প্রতি অনেক বেশি অসম্মান প্রদর্শন করেছে, এবং বিশ্ব ফুটবলে তার খ্যাতি ও নামকে তারা অনেকাংশে অগ্রাহ্য করেছে। হয়তো সেটির প্রতিশোধই তিনি নিচ্ছেন।
মৌসুমের শুরুতে তার ক্লাব ছাড়ার লক্ষ্যটি এখন এসে পূরণ হল। তার জন্য সুসংবাদ হল, ইতিমধ্যে কাতারে ২০২২ বিশ্বকাপ আসরও শুরু হয়ে গিয়েছে, যা তার এজেন্টকে প্রচুর সময় দেবে তার জন্য একটি মানানসই ক্লাব খুঁজে বের করার, এবং কথাবার্তা অনেকটা এগিয়ে নেওয়ার। আসন্ন জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতেই তাকে অন্য দলে যোগ দিতে দেখা যাবে বলেই সকলের ধারণা।
বর্তমানে তিনি আরো বেশি উল্লসিত হবেন, কেননা আরো একটি বিশাল অর্জন তিনি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করে ফেলেছেন এবারের বিশ্বকাপে। ঘানার বিপক্ষে পেনাল্টি স্পট থেকে পর্তুগালের হয়ে গোল করার মাধ্যমে তিনিই এখন এমন একমাত্র খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন, যিনি মোট পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করতে পেরেছেন। এছাড়া, এর মাধ্যমে তিনি প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে কেবলমাত্র তৃতীয় এমন খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন, যিনি তার দেশের হয়ে সবচেয়ে কনিষ্ট এবং জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার গৌরব অর্জন করেছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ গোলদাতাদের তালিকায় তার নামটি রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।
তবে, প্রশ্নটি এখনও থেকেই যায় যে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সমর্থকদের প্রতিবাদকে এড়িয়ে যাওয়ার পর এখন এসে এই রোনাল্ডোর সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষিতেই কি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলেন গ্লেজার্স’রা?
গ্লেজার্স’রা কেন এখন এসে ক্লাবের মালিকানা ছাড়তে চাইছেন? (Why the Glazers are willing to sell the club now)
এই প্রশ্নের প্রকৃত উত্তর আসলে কারোরই জানা নেই।
তবে, এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই যে, গ্লেজার্স’রা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত ১৭ বছরে ক্লাবটিতে যেসকল অনিয়ম হয়েছে, তার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র রোনাল্ডো বেশ যথাযথভাবেই তুলে ধরতে পেরেছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এখন হল একটি মার্কেটিং ক্লাব। মার্কেটিং থেকেই ক্লাবের সকল কার্যক্রমের পয়সা আসে। এজন্যই আগামী দুই বা তিন বছরের মধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পক্ষে কোন ধরণের শিরোপা জেতা অনেক বেশি কঠিন বা প্রায় অসম্ভবই হবে।
“ক্লাবের মালিকদের অর্থাৎ গ্লেজার্স পরিবারের এই ক্লাবটির প্রতি কোন আবেগই নেই। এটি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি পেশাদার ফুটবল ক্লাব।”
রোনাল্ডো আরো বলেন যে, প্রায় ১২ বছর আগে তিনি ক্লাবটি ত্যাগের সময় যেসকল কাঠামো দেলহে গিয়েছিলেন, এখনও তার সিকিভাগও পরিবর্তন হয়নি। তিনি আরো জানান যে, ক্লাবটিকে এখন ভেতর থেকে ভেঙে আবার নতুন করে গড়তে হবে, এবং সে উদ্দেশ্যে তিনিই হলেন বলির পাঠা।
এই বক্তব্যটি তার নিকট হতে বেশ আবেগঘনই মনে হয়েছে, এবং আরো মনে হয়েছে যে, তিনি এ সবকিছু তার এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একনিষ্ঠ ভক্তদের জন্যই করেছেন। তবে, অবশ্যই সেটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়। তিনি ক্লাবে প্রত্যাবর্তন এর পর থেকে ক্লাবটি কিভাবে তাকে অসম্মান করেছে এবং অগ্রাহ্য করেছে, সেটি বলার মাধ্যমে তিনি এটিও প্রমাণ করেছেন যে, এসবের পেছনে তার ব্যক্তিগত লক্ষ্যও রয়েছে।
দু’পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর চুক্তিটি বাতিল ঘোষণা করার মাত্র চার ঘন্টা পরেই খবরে আসে যে, গ্লেজার্স পরিবার শীঘ্রই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মালিকানা হস্তান্তর করতে আগ্রহী। এরপর রোনাল্ডোর সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষিতে গ্লেজার্সদের বক্তব্যও জানা যায়।
গ্লেজার্স পরিবারের পক্ষ থেকে আভ্রাম গ্লেজার্স খুব ধীরস্থির ভঙিতে বলেন, “আমি আপনাদেরকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো সম্পর্কে বলতে চাই। তিন একজন অসাধারণ খেলোয়াড়, এবং নিঃসন্দেহে আজীবন তিনি একজন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তিই থেকে যাবেন।
“আমাদের এই ক্লাবটির জন্য তিনি অতীতে যা যা করেছেন, তার জন্য আমরা সকলেই অনেক কৃতজ্ঞ, এবং তার ভবিষ্যতের জন্য তাকে আমরা অনেক শুভকামনা জানাই। সবাইকে ধন্যবাদ।”
এছাড়া, তিনি আরো জানান যে, রোনাল্ডোর সেই বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারটি অন-এয়ার হওয়ার অনেক আগেই তারা ক্লাবের মালিকানা হস্তান্তরের সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন, এবং এই যোগসাজশটি মিডিয়ার তৈরি গুজব ছাড়া কিছুই নয়।
এছাড়া, এটিও ধারণা করা যাচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে চেলসি এবং নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের মালিকানা পরিবর্তন, এবং লিভারপুলের নতুন মালিকানার গুজবের কারণেই গ্লেজার্স’রা এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।
সত্যি বলতে, আমাদের মনে হয় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো সকলের জন্য একটি ভালো সময় বেছে নিয়েই এই সাক্ষাৎকারটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এতে তিনি নিজের ব্যক্তিগত ক্ষোভ তো প্রকাশ করেছেন, তার পাশাপাশি ক্লাবটির প্রচুর অনিয়ম তুলে ধরে ক্লাবের ভবিষ্যৎকেও কিছুটা প্রভাবিত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, ক্লাবটির অন্যান্য বেশ কয়েকজন কিংবদন্তি খেলোয়াড়, যেমন গ্যারি নেভিল, পল স্কোলস, রয় কিন এবং রিও ফার্দিনান্দ’রা বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে যেমনটি করতে চেয়েও করতে পারেননি, সেটিই করে দেখিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
সত্যতা যাই হোক না কেন, এই বিতর্কের কোনই শেষ নেই যে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ঠিক করেছেন না ভুল। এ তর্কের পুরোটা জুড়েই রয়েছে আবেগ ও একটি সোনালী অতীত। ক্লাব এবং খেলোয়াড় উভয়ই নিজেদের জায়গায় অনড় থাকলেন, এবং উভয়েরই কিছু ভুল অবশ্যই রয়েছে পুরো বিষয়টিতে। তবে, যাদের কোনই দোষ-ত্রুটি কখনোই ছিল না, এবং এখনও নেই, তারা হলেন ক্লাবের সমর্থকরা, যারা সুখে দুঃখে নিরলসভাবে ক্লাবটিকে সমর্থন দিয়ে যান। এই পুরো বিষয়টিতে তারাই প্রকৃত জয়ী, কারণ ১৭ বছরের টানা প্রতিবাদের পর শেষ পর্যন্ত তারা গ্লেজার্স’দেরকে ক্লাব থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছেন।