প্রেডিকশন (Prediction)
চেলসি ০ – ২ ম্যানচেস্টার সিটি
একে অপরের বিপক্ষে পর পর দুইটি ম্যাচের প্রথমটিতে আগামী বৃহস্পতিবার রাতে স্ট্যাম্ফোর্ড ব্রিজে মুখোমুখি হতে চলেছে চেলসি এবং ম্যানচেস্টার সিটি। প্রিমিয়ার লীগের এই ম্যাচটির পরই আগামী রবিবার আবার এফএ কাপের একটি ম্যাচে এই দুই হেভিওয়েট দল আবারও একে অপরের সম্মুখীন হতে চলেছে।
নতুন বছরে পদার্পণের দিনে নটিংহ্যাম ফরেস্ট এর বিপক্ষে একটি হতাশাজনক ড্র’য়ের পর প্রচুর সমালোচনার শিকার হোন চেলসি কোচ গ্রাহাম পটার। সত্যি বলতে অবশ্য বিশ্বকাপের আগে থেকে এখন পর্যন্ত দলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের ইঞ্জুরির কারণে গ্রাহাম পটার কখনোই তার পূর্ণ শক্তির দলটি নামাতে পারেননি।
অল ব্লুস’রা বর্তমানে তাদের সেরা ফর্ম থেকে অনেকটাই দূরে রয়েছে, এবং তাদের সামনে একটি অসামান্য পরীক্ষা অপেক্ষা করছে, যার নাম হল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নস ম্যানচেস্টার সিটি।
হয়তো এবারের মৌসুমের ১৬টি ম্যাচের পর আর্সেনালই লীগ টেবিলের শীর্ষে রয়েছে, তবে ম্যানচেস্টার সিটি গানারস’দের থেকে কোন অংশেই কম নয়, যদিও নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে তারা ঘরের মাঠে এভারটনের বিপক্ষে পয়েন্ট খুইয়েছে।
নতুন বছরের প্রথম দিনেই টফিস’দের বিপক্ষে আর্লিং হাল্যান্ড তার ২১তম প্রিমিয়ার লীগ গোলটি স্কোর করেন। নরওয়েজিয়ান এই গোল মেশিনের পরবর্তী লক্ষ্য হবে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি থিয়াগো সিলভা’র মুখোমুখি হওয়া, এবং তাকে প্রতিহত করা।
গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ (Key notes)
- ম্যানচেস্টার সিটি হল বর্তমানে প্রিমিয়ার লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতা দল, এবং তাদের সর্বশেষ যে ম্যাচে ২টির নিচে গোল হয়েছিল, সেটি এসেছিল আরো ৮ ম্যাচ আগে।
- প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে কেবলনাত্র দুইটি এমন দল রয়েছে, যারা কি না মৌসুমের ১৬টি ম্যাচের পর বর্তমান আর্সেনাল দলের থেকে শ্রেয় পারফর্ম করেছিল — ম্যান সিটি (২০১৭/১৮) এবং লিভারপুল (২০১৯/২০)।
- এবারের মৌসুমে চেলসির আক্রমণভাগ মোটেও নিজেদের সেরাটা দিতে পারেনি, এবং এখন পর্যন্ত কেবলমাত্র ২০টি গোল স্কোর করতে পেরেছে, যা কি না লীগ টেবিলের শীর্ষ ১০ এর অন্তর্ভুক্ত দলগুলির মধ্যে সর্বনিম্ন।
- প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ চারে চেলসি’র চিরাচরিত পজিশনটি বর্তমানে রয়েছে নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের দখলে। ম্যাগপাইদের সাথে চেলসি’র তুলনা করলে দেখা যায় যে, ডিফেন্স হোক আর আক্রমণ, নিউক্যাসেল চেলসি’র থেকে অনেকগুণে বেশি ধারাবাহিক পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে চলেছে।
ফর্ম বিবরণীঃ চেলসি (Form Guide: Chelsea)
চেলসি বর্তমানে একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগুচ্ছে, এবং নতুন মালিক টড বোহলি’র অধীনে তাদের সময়কালটির খুব একটা ইতিবাচক সূচনা হয়নি।
গত গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করার পরও মৌসুমের এ পর্যায়ে এসে তাদের যেখানে থাকা উচিৎ, তারা তার ধারে কাছেও নেই। এছাড়া, অনেকের মতে, গ্রাহাম পটারকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে তাদের দলগত পারফর্মেন্স আরো খারাপের দিকেই মোড় নিয়েছে।
অল ব্লুস’রা সম্প্রতি এএফসি বোর্নমাউথ এর বিপক্ষে একটি জয় অর্জন করে, যেটি ছিল তাদের খেলা গত ছয়টি প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচের মধ্যে তাদের প্রথম জয়। গত রবিবারে অবশ্য নটিংহ্যাম ফরেস্ট এর বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে তারা আবার বাস্তবতায় মুখ থুবড়ে পড়ে।
চেলসি’র জন্য এই গোল খরাটি থেকে মুক্তি পাওয়া খুব বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে, তবে বিষয়টি তাদের জন্য মোটেও সহজ হবে না, কেননা তাদের পরবর্তী কিছু ফিক্সচার আসলেই অনেক কঠিন হতে চলেছে। চেলসি ইতিমধ্যে লীগ লিডার্স আর্সেনালের থেকে ১৮ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে, এবং এখন বলাই যায় যে, খুব বেশি হলে তারা এই মৌসুমে শীর্ষ চারের জন্য লড়াই করতে পারে।
তাদের পরবর্তী ম্যাচটি হল প্রিমিয়ার লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি’র বিপক্ষে। ম্যাচটি তাদের ঘরের মাঠে হলেও, সাম্প্রতিক উতিহাস বলছে, এই ফিক্সচারে ম্যান সিটিই প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছে।
ফর্ম বিবরণীঃ ম্যানচেস্টার সিটি (Form Guide: Manchester City)
আর্লিং হাল্যান্ডের আগমণের পরে সবাই এটিই প্রত্যাশা করেছিল যে, ম্যানচেস্টার সিটি অপ্রতিরোধ্য হয়ে যাবে, এবং খুব সহজেই তাদের টানা তৃতীয় লীগ শিরোপাটি জিতে নিতে পারবে। তবে, সেটি মোটেও বাস্তবে রূপ নেয়নি, কারণ বর্তমানে লীগ লিডার্স আর্সেনাল তাদের থেকে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছে।
তবে, এত বড় ব্যবধানের পরও, বিষ্ময়করভাবে, অনেকের মতেই এখনো ২০২২-২৩ প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জেতার জন্য ফেভারিট দল ঐ ম্যান সিটিই। গত সপ্তাহে এভারটনের বিপক্ষে ঘরের মাঠে পয়েন্ট হারানোর পর, চেলসি’র বিপক্ষে তারা ক্ষুধার্ত বাঘের মত ছুটে আসবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।
যেহেতু চেলসি’র ডিফেন্সিভ লাইন ইঞ্জুরির কারণে অনেকটাই দূর্বল হয়ে পড়েছে, এবং তাদের পুরো দলটিই আউট-অফ-ফর্ম রয়েছে, সেহেতু অল ব্লুস’দের বিপক্ষে আরো একটি জয় অর্জনের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসীই থাকবে সিটিজেন’রা।
এছাড়া, হাল্যান্ডও মুখিয়ে থাকবেন তার বিশাল গোল ট্যালিটিকে আরো সামনে এগিয়ে নিতে, এবং বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি বুকমেকাররাও এমনটিই মনে করেন যে, এই ম্যাচে হাল্যান্ড এক বা একাধিক গোল করে চেলসিকে আরো কোণঠাসা করে দেবেন।
চেলসি বনাম ম্যানচেস্টার সিটি সম্পর্কিত কিছু তথ্য (Chelsea Vs Manchester City Facts)
- সাম্প্রতিক সময়ে এই ফিক্সচারটি কিছুটা একতরফা হয়ে পড়েছে, কারণ এই দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ ৩টি ম্যাচেই জয়লাভ করেছে ম্যান সিটি। সর্বশেষ ম্যাচটিতে গত নভেম্বরে ২-০ গোলে জয়লাভ করেছিল তারা।
- গত মৌসুমে এই ফিক্সচারের হোম এবং অ্যাওয়ে উভয় ম্যাচেই জয়লাভ করেছিল ম্যান সিটি। এবারের মৌসুমেও বড় দলগুলির বিপক্ষে একরকম ডমিনেট করেই জিতে চলেছে সিটিজেন’রা।
- এই দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ ৩টি ম্যাচের প্রত্যেকটিতেই শুধুমাত্র একটি দলই (ম্যানচেস্টার সিটি) গোল করতে পেরেছে। ম্যাচগুলির কোনটিতেই ২টির বেশি গোল হয়নি।
- গত মৌসুমে এই ফিক্সচারটিতে হোম এবং অ্যাওয়ে উভয় লেগেই ১-০ গোলের ব্যবধানে জিতেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। এই ম্যাচটিতেও তারা একই রকম ফলাফলের আশায়ই মাঠে নামবে।
যেসকল খেলোয়াড়দের উপর সবার নজর থাকবে (Players to watch out for)
কাই হ্যাভার্টজ – চেলসি (Kai Havertz – Chelsea)
স্কোরশিটে নিজেদের নাম লেখাতে হলে গ্রাহাম পটারের জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হলেন জার্মান ফরোয়ার্ড কাই হ্যাভার্টজ। ২০২১ সালের চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনালে চেলসি’র হয়ে সিটিজেনদের বিপক্ষে জয়সূচক গোলটি করেছিলেন তিনিই।
এবারের মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে তার ঝুলিতে রয়েছে মাত্র ৪টি গোল। তবে, সেই ট্যালিতে আরো গোল যোগ করার লক্ষ্যে তিনি বদ্ধপরিকর।
আর্লিং হাল্যান্ড – ম্যানচেস্টার সিটি (Erling Haaland – Manchester City)
নরওয়েজিয়ান এই দানবীয় স্ট্রাইকার এবারের মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে ইতিমধ্যে বেশ কিছু গোলস্কোরিং রেকর্ড ভেঙে ফেলেছেন, এবং নিশ্চিতরূপেই মৌসুমে শেষ হওয়ার আগে তিনি আরো অনেকগুলি রেকর্ডই ভাঙবেন।
নিজের ঝুলিতে ২১টি প্রিমিয়ার লীগ গোল যুক্ত করার মাধ্যমে তিনি ইতিমধ্যে প্রিমিয়ার লীগের গোল্ডেন বুট পুরষ্কারটি নিজের নামে করেই ফেলেছেন বলা যায়। এখন শুধু দেখার বিষয় এই যে, আরো কতগুলি গোল তিনি করতে পারেন এই মৌসুমে। তার করা ২১টি গোল হল এবারের মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে ম্যান সিটির করা মোট ৪৪টি গোলের ৪৭%। এটিই বলে দেয় তিনি তার দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়।
চেলসি বনাম ম্যানচেস্টার সিটি প্রেডিকশন (Chelsea Vs Manchester City Prediction)
উভয় দলই তাদের সর্বশেষ ম্যাচে অপ্রত্যাশিতভাবে পয়েন্ট হারিয়েছে, যদিও চেলসি’র পারফর্মেন্স তুলনামূলকভাবে বাজে ছিল। নটিংহ্যাম ফরেস্ট এর সিটি গ্রাউন্ডে অল ব্লুস’দের পারফর্মেন্স দেখে ধারণা করাই যায় যে, পরবর্তী কয়েকটি ম্যাচে তাদেরকে কঠিন সময় পার করতে হতে পারে।
দলে প্রচুর ইঞ্জুরির কারণে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন’দের বিরুদ্ধে চেলসিকে প্রচুর বেগ পেতে হবে বলেই মনে হচ্ছে। তবে, ম্যানচেস্টার সিটি’র দূর্বলতাগুলিও নজরে পড়েছে যখন তারা নতুন বছরের প্রথম দিনেই এভারটনের মুখোমুখি হয়েছিল। আর্সেনাল যেরকম ফর্ম প্রদর্শন করে চলেছে, তাতে ম্যান সিটি আর একটি পয়েন্ট হারালেও সেটি তাদের জন্য মর্মান্তিক হতে পারে।
গানারস’রা বর্তমানে এক ম্যাচ বেশি খেলে লীগ টেবিলের শীর্ষে সিটি’র সাথে একটি ৮ পয়েন্টের ব্যবধান তৈরি করেছে, এবং সিটি’র সামনে এখন সুযোগ রয়েছে সেই ব্যবধানটিকে কমিয়ে ৫ পয়েন্টে আনার। তবে, গ্রাহাম পটারের শিবিরে অসংখ্য ইঞ্জুরির কারণে, এবং তাদের বাজে ফর্মের কারণে এমনটি বলাই যায় যে, স্ট্যাম্ফোর্ড ব্রিজ থেকে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন’দের সবকটি পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফেরার সম্ভাবনাই বেশি।