উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের রাউন্ড অব ১৬ তে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড এর বিপক্ষে খেলতে হবে ইংলিশ জায়ান্ট চেলসিকে। দ্বিতীয় লেগে স্ট্যাম্ফোর্ড ব্রিজে মাঠে নামার আগে প্রথম লেগে এই দুই দল একে অপরের মুখোমুখি হবে জার্মানির সিগন্যাল ইদুনা পার্ক স্টেডিয়ামে।

তবে, এই ম্যাচটি অত্যন্ত কঠিন হতে পারে চ্যাম্পিয়নস লীগে নতুন নতুন প্রবেশ করা গ্রাহাম পটারের জন্য, যদিও তিনি ইতিমধ্যে প্রতিযোগিতাটিতে নিজের ছাপ কিছুটা ফেলতে পেরেছেন। তবে, এটিও বলাই বাহুল্য যে, গ্রুপ পর্যায়ের থেকে অনেক বেশি আলাদা ও কঠিন হল নকআউট ম্যাচ, কারণ এসকল ম্যাচেই একটি দলের সত্যিকারের লড়াকু মনোভাব প্রকাশিত হয়ে থাকে।

চেলসি’র আদ্যপান্ত বিশ্লেষণ (SWOT analysis of Chelsea)

শক্তি (Strengths)

চেলসি গত কয়েক মৌসুম ধরেই ইউরোপীয় এই প্রতিযোগিতায় যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। এই প্রতিযোগিতায় তাদের হোম এবং অ্যাওয়ে ফর্ম দুইটিই বেশ ভালো, এবং বরুশিয়া ডর্টমুন্ড এর বিপক্ষে তাদের আরো একটি ভালো অ্যাওয়ে পারফর্মেন্স দরকার, নতুবা তারা বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।

নতুন ম্যানেজারের মানেই হল ট্যকটিকসে আমুল পরিবর্তন, খেলার ধরণ বা দলের কাঠামো নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন, এবং নতুনত্বে ভরা একটি স্কোয়াড ম্যানেজমেন্ট ইকো-সিস্টেম তৈরি করা। ঠিকমত খেলতে পারলে এই চেলসি দল ডর্টমুন্ডকে কেন রিয়াল মাদ্রিদের মত দলকেও সহজেই হারানোর শক্তি রাখে।

দূর্বলতা (Weaknesses)

ইউরোপে চেলসি একটি অতি শক্তিশালী দল হিসেবেই খেলছে। এছাড়া, তাদের নতুন খেলোয়াড়দের কালেকশনে যুক্ত হওয়া খেলোয়াড়েরা যেমন মিখায়লো মুদ্রিক এবং এঞ্জো ফার্নান্দেজও এই ম্যাচটিতে অংশ নিতে পারবেন। নিজেদের সুবিধার্থে এবং দর্শকদের তুষ্টির জন্য তারা অবশ্যই ভালো পারফর্ম করতে চাইবেন। অনেক বেশি খেলোয়াড় চেলসি’র রোস্টারে থাকায়, এবং কাকে রেখে কাকে খেলাবেন সেটি এখনও বুঝে উঠতে না পারায় এই ম্যাচটিতে চেলসি’র মূল একাদশ ঠিক করাটাও গ্রাহাম পটারের জন্য বেশ কঠিন হতে চলেছে।

পড়ুন:  EPL সম্প্রচারে অগ্রগতি: একটি ব্যাপক ওভারভিউ

এই বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়েছিল, যখন ডাইনামো জাগ্রেব এবং রেড বুল সালজবার্গ এর বিপক্ষে তারা হিমসিম খেয়েছিল। গ্রাহাম পটার যদি সিগনাল ইদুনা পার্কে গিয়ে একটি জয় হাসিল করে আসতে চান, তাহলে প্রথমেই তাকে অনেক বেশি কষ্ট করতে হবে, সেরা একাদশটি মাঠে নামাতে হবে, এবং ভালো ফলাফল অর্জন করতে হবে।

তেমনটি করতে না পারলে তারা বরুশিয়া ডর্টমুন্ড এর হাতে ধরাসয়ী হতে পারে, যারা কি না নিজেদের লীগে খুবই ভালো ফর্ম পার করছে।

সুবিধা (Opportunities)

চেলসি’র জন্য এই ম্যাচটিতে সুবিধা অনেক কম, এবং মোটের উপর তাদেরকে তাদের শক্তির জায়গাগুলির উপরেই ভরসা রাখতে হবে। তাদের জন্য সেই মূল শক্তির জায়গাটি হল সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয় নক আউট খেলায় তাদের রেকর্ড।

চেলসি অবশ্য একটি দিক দিয়ে ডর্টমুন্ড এর থেকে এগিয়ে, এবং তা হল তাদের অপেক্ষাকৃতভাবে অভিজ্ঞ ডিফেন্স, যাকে কেন্দ্র করে তারা তাদের আক্রমণ সাজিয়ে থাকে। থিয়াগো সিলভা, রিস জেমস, বাদিয়াশিল, বেন চিলওয়েল সকলেই বল পায়ে খুবই পারদর্শী এবং আক্রমণ শুরু করাতে পটু।

হুমকি (Threats)

চেলসি’র জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হল সিগনাল ইদুনা পার্ক। অত্যন্ত ডর্টমুন্ডপন্থী এই স্টেডিয়ামটিকে ইউরোপের শীর্ষ ৫ ঘরোয়া লীগের মধ্যে সবচেয়ে শত্রুভাবাপন্ন স্টেডিয়াম হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।

যখন হলুদ দেয়াল খ্যাত এই স্টেডিয়ামের গ্যালেরি দর্শকে ভরপুর হয়ে যায়, তখন তাদের চিৎকার, আহাজারি, ব্যানার-ফেস্টুন, পতাকা এবং আতশবাজির ফুয়ারায় চারিদিক একাকার হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে অনভিজ্ঞ পটার কিছুটা ভয়ই পেয়ে যেতে পারেন, এবং তেমনটি হলে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড এর হাতেই থাকবে এই ফিক্সচারটির চাবি।

চেলসি’র নিকট কি প্রত্যাশা করা যেতে পারে? (What to expect from Chelsea)

ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়নে তিনি যে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন, তার উপর ভিত্তি করে সাম্প্রতিক সময়ের সেরা ইংলিশ ম্যানেজারদের মধ্যে একজন হিসেবে গ্রাহাম পটারকে গণ্য করা যেতেই পারে। তার গেমপ্ল্যান এবং ট্যাকটিকস এর সাথে চেলসি দলটি এখনো মানিয়ে নিচ্ছে, যার কারণে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অল ব্লুস’দের কিছুটা হিমসিম খেতে হচ্ছে।

পড়ুন:  নিউক্যাসল বনাম ক্রিস্টাল প্যালেস প্রিভিউ

তবে, এমনটি চেলসি’র সাম্প্রতিক কয়েকটি খেলা দেখেই মনে হয়েছে যে, ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগ পর্যন্ত দলটির বোঝাপড়া অনেকটাই তৈরি হয়ে যাবে। এই কারণেই আমরা মনে করি যে, শুরুতে তোপের মুখে পড়লেও শেষ পর্যন্ত এই ম্যাচটিতে চেলসিই জয়যুক্ত হবে, এবং পরের রাউন্ডে অগ্রসর হবে।

প্রেডিকশন: চেলসি এগ্রিগেটে ৪-২ গোলে জিতবে।

Share.
Leave A Reply