ভূমিকা (Introduction)
কিলিয়ান এমবাপ্পে; বহুদিন ধরে এই নামটিই রয়েছে সকল অনলাইন ও অফলাইন ফুটবল আউটলেটের স্ট্রিম জুড়ে। সবার মুখে মুখে এই নাম যেন প্রতিনিয়তই চলে আসে। এই ইয়াংস্টারকে নিয়ে এত আলোচনা এবং সমালোচনার ঝড় একদমই নতুন কিছু নয়; বরং মাত্র ১৭ বছর বয়সে লাইমলাইটে আসার পর থেকে তিনি প্রতিনিয়তই সংবাদের শিরোনামে অবস্থান করে আসছেন। এমনকি, এটি এখন নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, মাত্র ২৩ বছর বয়স বা তার নিচে যত খেলোয়াড় এখন বিশ্ব ফুটবলে খেলছেন, তাদের মধ্যে কিলিয়ান এমবাপেই হচ্ছেন সেরা। এবং মেসি-রোনাল্ডোদের যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে অদূর ভবিষ্যতে ফুটবল দুনিয়ায় রাজত্ব করতেও তিনি প্রস্তুত বলেই এখন ধরে নেওয়া হচ্ছে।
তাকে এবং তার গুনমান নিয়ে এত আলোচনা এবং সমালোচনার কারণেই তাকে বর্তমান সময়ের মোস্ট-ওয়ান্টেড খেলোয়াড় হিসেবেও মানা হয়। তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়গুলিতে তাকে নিজেদের জার্সিতে দেখতে চান না এমন কোন দল বোধ হয় ইউরোপের আনাচে কানাচে কোথাও নেই।
তাকে নিয়ে এত সব আলোচনা-পর্যালোচনা যখন চলমান, তখনই তার জন্য যুগান্তকারী এক অফার নিয়ে হাজির হয় তার স্বপ্নের দল রিয়াল মাদ্রিদ। এখন একদিকে তার ছোটবেলার স্বপ্ন, এবং অপরদিকে তার স্বদেশী দল পিএসজি যেখানে তাকে ঈশ্বর মানা হয় — এই দুইদলের মধ্যে কাকে তিনি বেছে নিবেন? তার ক্যারিয়ারের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়, কারণ যাকেই তিনি বেছে নিন না কেন, সেখানেই তার ক্যারিয়ারের কমপক্ষে পরবর্তী তিন বছর (যা অনেকের মতে হতে চলেছে তার ক্যারিয়ারের সেরা তিন বছর) কাটাতে হবে। তার বয়সটিকে যেমন একজন ফুটবলারের ক্যারিয়ারের সেরা বয়স বলা হয়ে থাকে, তেমনি এই বয়সেই অনেক প্রয়িভাবান খেলোয়াড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার নষ্ট করে ফেলেছেন এমন নজিরও কম নয়। তবে সিদ্ধান্ত এমবাপ্পে নিয়ে ফেলেছেন, এবং তা পুরো ফুটবল বিশ্বকেই কাঁপিয়ে তুলেছে। হ্যাঁ, তিনি পিএসজিতেই থাকছেন। কিন্তু কেন তিনি তার ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত পিএসজিকেই বেছে নিলেন? রিয়াল মাদ্রিদে না গিয়ে তার জন্য কোন কোন জিনিস অপ্রাপ্যই থেকে গেল? চলুন এসবকিছু সম্পর্কেই জেনে নেওয়া যাক। না পড়লেই পস্তাবেন!
এমবাপ্পে এবং পিএসজি (Mbappe and PSG)
এটি এখন সবার জন্যই একটি জানা বিষয় যে, পার্ক দে প্রাঁ’তে এমবাপ্পের এই পর্যন্ত যাত্রাটি একরকম রূপকথার চেয়ে কোনন অংশেই কম নয়, তা তার অসাধারণ পারফর্মেন্সের উপর ভিত্তি করেই হোক বা তার চমৎকার পরিসংখ্যানের জের ধরেই হোক। তিনি তার প্রতিভার সম্মান রেখেছেন এবং তার সে প্রতিভা যেন দিন দিন আরো বাড়ছেই! ২০১৭ সালে এমবাপ্পেকে দলে ভিড়ানোর জন্য পিএসজি ১৮০ মিলিয়ন ইউরোর এক মাথা নষ্ট করা ফি প্রদান করে এএস মোনাকোকে, যা তৎক্ষণাৎ তাকে পরিণত করে বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে দামী টিনেজারে। এবং তার পর থেকেই তিনি প্যারিসের খরচ করা প্রত্যেকটি পয়সা তাদের জন্য উশুল করে আসছেন।
এই অগাধ প্রতিভাবান যুবা তার পর থেকেই ধীরে ধীরে ক্লাবটির পোস্টার বয়ে পরিণত হয়ে ওঠেন, তাদের স্পোর্টিং প্রজেক্টের মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠেন, এবং কালক্রমে তার আরেক দামী ও প্রতিভাবান টিমমেট নেইমার জুনিয়রকেও জনপ্রিয়তার দিক থেকে ছাপিয়ে যান। তার অসম্ভব গতি, গোল করার প্রবণতা, এবং ডিফেন্ডারদের সাথে মুখোমুখি লড়াইয়ে তার সফলতার হার তাকে প্রায়শই অতিমানবিক করে তোলে, এবং সব মিলিয়ে তার মত প্রতিভা বিশ্ব ফুটবলে এখন আর দ্বিতীয়টি নেই। দলটিতে তিনি যোগ দেওয়ার পর ৫ বছর পার হয়েছে, এবং এরই মধ্যে তিনি দলটির হয়ে ২০০টির কাছাকাছি গোল করেছেন, ১১টি শিরোপা জিতেছেন, এবং ২০২০ সালে চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালও খেলেছেন, যেখানে পিএসজি একটুর জন্য হেরে যায় বায়ার্ন মিউনিখের কাছে।
গল্পের এখনো শেষ হয়নিঃ ২০২৫ সাল পর্যন্ত এমবাপ্পে থাকছেন পিএসজিতে (The story continues: 2025)
জয়যাত্রা কোনক্রমেই থামতে দেওয়া যাবে না! পিএসজি কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় গত কয়েক মাস ধরে এই কথায় ভাবছিলেন, কারণ বিশ্ব ফুটবলের সেরা যুবা প্রতিভাকে দলে রাখার দায়িত্ব ছিল তাদেরই উপর। ২০২১-২২ মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথেই এমবাপ্পে প্রবেশ করেন পিএসজি’র সাথে ২০১৭ সালে তার করা ৫ বছরের চুক্তির শেষ বছরে। মৌসুমের শেষে এসেও যখন তিনি নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেননি, তখন অনেকেই ভাবছিলেন যে হয়তো তিনি এবার আসলেই পিএসজি ছাড়তে যাচ্ছেন। সত্যি বলতে, সেই পরিস্থিতিতে তাকে নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করানোর চেয়ে কঠিন কাজ হয়তো পিএসজি কর্মকর্তারা কখনো করেননি, এবং ভবিষ্যতেও তাদের করতে হবে না। কারণ, বছরের পর বছর এই কথাটি সংবাদ ও প্রিন্ট মাধ্যমে প্রচলিত হয়ে উঠেছে যে কিলিয়ান এমবাপ্পে পিএসজিকে শুধুমাত্র একটি সিঁড়ি হিসেবেই ব্যবহার করছেন তার স্বপ্নের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমানোর জন্য।
কিন্তু, যখন সকলেই ধারণা করছিল যে তিনি রিয়ালেই যাবেন, তখনই তিনি তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি জানান, যা পুরো পৃথিবীকেই হকচকিত করে তোলে। এবং সিদ্ধান্তটি হলঃ তিনি আরো তিন বছরের জন্য পিএসজিতেই খেলবেন!
রিয়াল মাদ্রিদের আশা ভরসা মুহূর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। আসুন এবার তাদের দিক থেকে ব্যাপারটিকে দেখা যাক।
এমবাপ্পে এবং রিয়াল মাদ্রিদ (Mbappe and Real Madrid)
কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং রিয়াল মাদ্রিদ উভয়েই হচ্ছেন একে অপরের অনেক বড় ভক্ত। এমনটিই ধারণা করা হয় যে, এই ফরাসি তারকা ছোটবেলা থেকেই নিজের ভেতর রিয়াল মাদ্রিদে খেলার স্বপ্ন পুষে আসছেন। তিনি সেটির জানান সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দিয়েছেন। তাই রিয়াল মাদ্রিদও এ সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানতো। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এবং পিএসজিতে নানাবিধ সুবিধা প্রাপ্তির কারণে সেই ট্রান্সফারটি এখনো পর্যন্ত বাস্তবে পরিণত হয়ে ওঠেনি।
রিয়াল মাদ্রিদ বেশ কয়েকবার এই ফরাসি আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়কে কেনার প্রয়াস চালিয়েছে, বিশেষ করে তার বয়স ২০ বছর হওয়ার আগেই। আমরা এখানে তিনটি এমন সময়কাল তুলে ধরব যখন রিয়াল মাদ্রিদ আসলেই উঠে পড়ে লেগেছিল এমবাপ্পের স্বাক্ষর পাওয়ার জন্য, যদিও শেষ পর্যন্ত তারা কোন সুবিধাই করতে পারেনি।
২০১৭ – মোনাকো থেকে এমবাপ্পেকে কেনার প্রয়াস (2017 – Mbappe pursuit in Monaco)
২০১৭ সাল ছিল কিলিয়ান এমবাপ্পের আত্মপ্রকাশের বছর। সেবছর এমবাপ্পে কেবল পুরো ফুটবল বিশ্বের কাছে পরিচিত হতে শুরু করেছিলেন একজন ওয়ান্ডারকিড হিসেবে, এবং ভবিষ্যতের একজন জ্বলজ্যান্ত সুপারস্টার হিসেবে। ঠিক তখনই ইউরোপের প্রচুর ক্লাব তার পেছনে লাইন ধরতে শুরু করে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল রিয়াল মাদ্রিদ।
রিয়াল যেটির ব্যাপারে পূর্ণ আস্থা জোগাতে অক্ষম হয়েছিল তা হচ্ছে মূল একাদশে তাকে জায়গা করে দেওয়া। এটিই হয়ে ওঠে চুক্তিটি ভেঙে পড়ার পেছনে একটি বড় বিষয়। কিন্তু একদিকে চুক্তি ভাঙলে, আরেকদিকে তা গড়ে ওঠে। এই সুযোগটিই নিয়ে নেয় পিএসজি এবং তাদের সে সময়কার কোচ উনাই এমারি। এমারি এমবাপ্পেকে এবং তার পরিবারকে পূর্ণ আশ্বাস দেন যে পিএসজিতে এমবাপ্পে প্রতিনিয়তই মূল একাদশে খেলার সুযোগ পাবে, যা তিনি হারে হারে ডিজার্ভও করতেন। এবং, যেমনটি আমরা আগেও বলেছি, তারপরই তিনি লা পারিসিয়ানদের দলে যোগদান করেন।
২০২১ – প্রস্তাব যখন প্রচুর টাকার (2021 – Serious money on the table)
৪ বছর অপেক্ষা করার পর, যখন কিলিয়ান এমবাপ্পে একজন পরীক্ষিত সুপারস্টার এ পরিণত হয়েছেন, এবং বিশ্বব্যাপী যখন তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, তখনই আবার তার জন্য আরেকটি অফার নিয়ে চলে আসে রিয়াল মাদ্রিদ। লস ব্লাঙ্কোস এর উদ্দেশ্য ছিল মৌসুমটির শেষে ফরাসি এই তারকাকে দলে ভিড়ানো। স্প্যানিশ জায়ান্টরা এমবাপ্পেকে স্যান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে আনার জন্য অনেক টাকাও অফার করে, কারণ ২০২১ সালের সেই সময়টিতে পিএসজির সাথে করা তার চুক্তির আর মাত্র এক বছরই বাকি ছিল।
কিন্তু, কোন এক জাদুকরী উপায়ে পিএসজি এমবাপ্পেকে মানিয়ে ফেলে রিয়ালের সেই অফারটিকে উপেক্ষা করতে এবং পার্ক দে প্রাঁ’তে আরেক বছর কাটাতে।
২০২২ – শেষ প্রত্যাখ্যান (2022 – the final refusal)
সর্বশেষ মৌসুমটির শেষে এটি খুব পরিষ্কারই মনে হচ্ছিল যে, আগের চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় এমবাপ্পে পিএসজিতে আর নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করবেন না, এবং শেষ পর্যন্ত তাকে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে দেখা যাবে। রিয়াল মাদ্রিদ আবারো প্রচুর টাকা অফার করতে থাকে জানুয়ারি থেকেই, আর পিএসজি চেষ্টা করতে থাকে তাদের সুপারস্টারকে দলে রাখার, কারণ অদূর ভবিষ্যতে তারাও অনেক শিরোপা জিততে চায়।
তবে, শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটি এসে পড়ে সেই এমবাপ্পের উপরেই, কারণ উভয় পক্ষের অফার প্রায় পুরোপুরি সাদৃশ্যপূর্ণই ছিল। তিনি যে দলের পক্ষেই সিদ্ধান্তই নিতেন, দিনশেষে তিনিই হতেন দলটির স্পোর্টিং প্রজেক্টের কর্ণধার, এবং বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতনের খেলোয়াড়। এবং, যেমনটি আপনারা ইতিমধ্যেই জানেন, এমবাপ্পে বেছে নিয়েছেন পিএসজিকে।
“কি হতে পারতো, আর কি হয়েছে!” (A case of “could’ve been”)
বিশ্বের অগণিত ফুটবলার এবং অ্যাথলেটদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার নাম হচ্ছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। কোন ক্রীড়াবিদ কি এমন আসলেই আছেন যিনি রোনাল্ডোর মত সফল ক্যারিয়ার পেতে চান না? এমন কাউকে পাওয়া আসলেই অসম্ভব!
যেহেতু ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এমবাপ্পেরও আইডল, সেহেতু এটি খুবই মজার বিষয় যে, এমবাপ্পের এখন যা বয়স সে বয়সে থাকাকালেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন। আর তারপর আমরা সকলেই জানি যে, বাকিটা পুরোপুরিই ইতিহাস।
এটি অবশ্য সম্পূর্ণরূপেই ভাগ্যের উপর নির্ভর করে যে যদি কিলিয়ান এমবাপ্পে তার আদর্শের পদচিহ্ন অনুসরণ করতেন, তাহলে কি হত! অবশ্যই তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও নামীদামী ক্লাবে খেলার সুযোগ পেতেন তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সুন্দর সময়টিতে, সুযোগ পেতেন লস ব্লাঙ্কোস এর হয়ে অনেক অনেক শিরোপা জেতার, এবং প্রচুর ইতিহাস গড়ার। কিন্তু এ সবকিছুই এখন কাল্পনিক মাত্র!
পিএসজিতে এমবাপ্পে যা যা পাচ্ছেন (What PSG can offer Mbappe)
এখন আসুন আমরা বিশ্লেষণ করি এমবাপ্পের পিএসজিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনের কারণগুলিকে। সব খেলোয়াড় রিয়াল মাদ্রিদকে উপেক্ষা করে পিএসজিকে বেছে নিবে না, বিশেষ করে কারণ ক্লাব হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদ এর ঐতিহ্য অনেক বৈচিত্র্যময়।
কিন্তু, যেহেতু আমরা এখানে মূল কারণগুলি বের করতে চাচ্ছি, সেহেতু হয়তো আমাদেরকে অনেক দিকই বিবেচনা করতে হবে। বর্তমানে পিএসজির দলে রয়েছে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় বড় নামগুলি। এর মধ্যে রয়েছেন বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন, লিওনেল মেসি, যিনি পিএসজির হিয়ে মাত্র ক্যারিয়ার শুরু করলেন। এছাড়াও রয়েছেন গত দশকের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের একজন, ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার জুনিয়র, যিনি পার্ক দে প্রাঁ’তে একজন লিজেন্ড হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে আরো বিখ্যাত নাম যেমন সার্জিও রামোস, মার্কো ভেরাত্তি, জিনি ওয়াইনালদাম, ডোনারুমা, মার্কুইনোস, এঞ্জেল ডি মারিয়া, ইত্যাদি। এমবাপ্পে নিশ্চয় চাচ্ছেন এসকল অসাধারণ খেলোয়াড়দের সাথে একই দলে আরো কয়েক বছর খেলতে।
এছাড়াও, পিএসজি এক কথায় তাদের সম্পূর্ণ স্পোর্টিং প্রজেক্টের চাবিই তুলে দিয়েছে এমবাপ্পের হাতে। ক্লাবটিতে এখন যত যাই হবে, তার মুখছবি এবং কেন্দ্রবিন্দু সবকিছুই হবেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এমনটিও ধারণা করা হচ্ছে যে, এখন থেকে তিনি ক্লাবটির ট্রান্সফার বিষয়ক এবং কোচ নির্ধারণ বিষয়ক সকল সিদ্ধান্তসমূহেও মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন। নিজের ক্লাব থেকে এর চেয়ে বেশি আর কোন খেলোয়াড় কি চাইতে পারেন?
শুধু তাই নয়, নতুন এই চুক্তির ফলে এমবাপ্পেই হচ্ছেন বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতন কামাইকারী ফুটবল খেলোয়াড়। আর তাছাড়া তার অকল্পনীয় সাইনিং বোনাস তো থাকছেই। বছরপ্রতি কিলিয়ান ঘরে তুলবেন প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইউরো।
এসব জানার পর কেন কিলিয়ান এমবাপ্পে পিএসজিতে থেকে যাচ্ছেন তা বোঝা অনেক সহজ হয়ে উঠেছে, তাই না?
এমবাপ্পের সিদ্ধান্ত; আমাদের মন্তব্য (Mbappe’s decision; our verdict)
এখনই সূবর্ণ সুযোগ আর্টিকেলের শুরুতে আমরা যে প্রশ্নটি তুলে ধরেছিলাম, সেটির উত্তর খোঁজার। সিদ্ধান্তটি ফরাসি এই সুপারস্টারের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আবির্ভূত হবে নাকি অভিশাপ হয়ে তাকে তাড়িয়ে বেড়াবে? আমাদের মন্তব্য কি এই ব্যাপারে?
গত মৌসুমে পিএসজি কিছুটা নিস্প্রভ ছিল, যদিও তাদের দলে ছিলেন নেইমার, এমবাপ্পে এবং মেসি’র মত তারকারাশি। তাই এটি অনুমান করাই যায় যে দলটিতে এখনো কিছু একটার অভাব রয়েই গিয়েছে। অনেকেই ধারণা করছেন সেই অভাবটি হচ্ছে দলগত প্রয়াসের অভাব। অনেক নতুন খেলোয়াড় নিয়ে সাজানো দলে প্রথম মৌসুমে এমনটি হওয়া কোন নতুন বিষয় অবশ্য নয়। এছাড়া, এমবাপ্পে সুযোগ পাচ্ছেন তার নিজের দেশে, নিজের শহরে, নিজের মানুষদের মাঝে থেকে নিজের খেলায় আরো উন্নতি করার, এবং সেটিও তার জন্য একটি বড় বিষয়। অনেকেই মনে করেন যে, পিএসজির জন্য অদূর ভবিষ্যতে চ্যাম্পিয়নস লীগ জয় খুবই সহজ হয়ে উঠবে, কারণ ক্লাবটির ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা দল তারা এবারই গঠন করতে সক্ষম হয়েছেন।
তাই, যদিও অনেকেই দ্বিমত পোষণ করবেন, তবুও সব মিলিয়ে আমাদের মনে হয় যে, এমবাপ্পে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিয়েছেন, এবং এটি তার জন্য আশীর্বাদ হয়েই আবির্ভূত হবে।
উপসংহার (Conclusion)
আজ অনেক কিছু নিয়েই আলোচনা হয়ে গেল, তাই না? এমবাপ্পে’র ক্যারিয়ারের এবং তাকে নিয়ে তৈরি হওয়া ট্রান্সফার নাটকীয়তার পরতে পরতে থাকা সব ঘটনা নিয়েই আমরা জেনেছি, এবং ফরাসি রাজধানীতে তার ভবিষ্যৎ নিয়েও অনেক জল্পনা কল্পনা করেছি। আমরা আশা করছি যে এতকিছু জানার পর এখন আপনিও বুঝতে পারছেন কেন রিয়াল মাদ্রিদকে উপেক্ষা করে কিলিয়ান এমবাপ্পে পিএসজিতেই থেকে গিয়েছেন আরো ৩ বছরের জন্য।
আমাদের কন্টেন্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানাতে অবশ্যই ভুলবেন। এমন লিখা আরো পড়তে হলে আমাদের সঙ্গেই থাকুন!