কেলভিন ফিলিপ্স খুব শীঘ্রই অফিসিয়ালি ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দিতে চলেছেন, এ খবর এখন আর নতুন নয়। তবে, আজীবন লিডস ইউনাইটেডের সমর্থক এই খেলোয়াড় সিটিতে যোগ দেওয়ার সাথে সাথে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন কাহিণীর জন্ম দিতে চলেছেন। গত মৌসুমের শুরুতে জ্যাক গ্রিলিশের মতই ফিলিপ্স এর হাতেও দুইটি অপশনই ছিল — নিজের শৈশবের প্রিয় ক্লাবের হয়ে খেলতে থাকা, অথবা একটি অসাধারণ ক্লাবে যোগ দিয়ে সকল শিরোপা জয়ের জন্য নিজেকে উন্মুক্ত করা এবং নিজেকে একজন কিংবদন্তি ফুটবলারে পরিণত করা। যদিও এখন এটি প্রায় নিশ্চিতই যে, এই প্রতিভাবান খেলোয়াড় পরের অপশনটিই বেছে নিয়েছেন, এখন কেবল দেখার বাকি যে তিনি সিটি’র জার্সি গায়ে চড়িয়ে কতটুকু সুবিধা করতে পারেন এবং কতগুলি শিরোপা ঘরে তুলতে পারেন।

ব্রিটিশ মিডিয়ার খুবই বিশ্বস্ত সূত্র অনুসারে জানা গিয়েছে যে, এই ২৬ বছর বয়সী ইংলিশ ফুটবলার খুব শীঘ্রই লিডস ইউনাইটেড ছেড়ে পেপ গার্দিওলা’র দলে যোগ দিতে চলেছেন। সিটিজেনরা তার জন্য প্রাথমিকভাবে লিডস ইউনাইটেডকে ৪৫ মিলিয়ন পাউন্ড হস্তান্তর করবে, তবে বিভিন্ন এড-অন আকারে আরো ৫ মিলিয়ন পাউন্ড তাদেরকে পরবর্তীতে হস্তান্তর করতে হতে পারে। অর্থাৎ, পুরো ট্রান্সফারটির মান এসে দাঁড়াচ্ছে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডে।

ম্যানচেস্টার সিটি এখন আরো একটি যুদ্ধ জয়ের হাসি হাসতে পারবে, কারণ এই ইন-ডিমান্ড মিডফিল্ডারকে কেনার জন্য তাদেরকে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দীদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ম্যানচেস্টার সিটিকে বেছে নেওয়াটা অবশ্য এই ইংলিশ আন্তর্জাতিক মিডফিল্ডারের জন্য বেশ সহজ একটি সিদ্ধান্তই ছিল, কারণ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এখন নিজেরাও জানেন না যে তারা কি চান।

গত মৌসুমের শেষের দিকে ম্যানচেস্টার সিটি’র বিদায়ী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ফার্নান্দিনহো’র পারফর্মেন্সগুলি খুবই হতাশাজনক ছিল, এবং কেবলমাত্র স্প্যানিশ তারকা রড্রিই ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটি’র গহীন মিডফিল্ড এর কান্ডারী হিসেবে। এজন্য, সেই সময় থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে এবারের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে দীর্ঘকাল ধরে সিটিতে খেলে আসা সেই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারের বদলী হিসেবে একজন যুবা খেলোয়াড়কে কেনা হবে, কারণ পেপ গার্দিওলা অবশ্যই চাইবেন না যে তার দলে কেবলমাত্র একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারই থাকুক, বিশেষ করে যখন প্রায় সকল পজিশনেই তাদের একাধিক বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়েছেন।

যখন ট্রান্সফার উইন্ডোটি উন্মুক্ত হয়েছিল, তখন সকলেই জানতো কোন কোন পজিশনে ম্যানচেস্টার সিটি শক্তিমত্তা বৃদ্ধি করতে চাইবে। গত মৌসুমের পুরোটা জুড়েই তারা একজন আউট এন্ড আউট স্ট্রাইকার ছাড়াই খেলেছে, এবং যে কেউ এ কথাটি বলতে পারেন যে, সে কারণেই অনেক বড় বড় ম্যাচের ফলাফল তাদের পক্ষে যায়নি। সেই অসঙ্গতিটি পেপ গার্দিওলা ট্রান্সফার উইন্ডোর শুরুতেই ঘুঁচিয়ে দেন, এবং বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে দলে আনেন বিশ্ব কাঁপানো নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ড আর্লিং হাল্যান্ডকে, তাও আবার মাত্র ৫১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে, যা এই মানের খেলোয়াড়ের জন্য খুবই কম।

এছাড়া, সুযোগ বুঝে তারা ফার্নান্দিনহো’র অভাবটিও এখন পূরণ করে নিল কেলভিন ফিলিপ্সকে দলে ভিড়িয়ে। এতে তাদের ঘরোয়া খেলোয়াড়ের কোঠাও বৃদ্ধি পেল, এবং তাদের দলে আরো প্রতিভা এবং টেকনিক্যাল দক্ষতাও যুক্ত হল।

পড়ুন:  4 Incidents in the English Premier League_ When Rivalries Became Too Heated

কেন ম্যানচেস্টার সিটি কেলভিন ফিলিপ্সকেই টার্গেট করেছিল? (Why did Manchester City go for Kalvin Philips?)

এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই যে, কেলভিন ফিলিপ্স বর্তমানে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে প্রতিভাবান ডিফেন্সিব মিডফিল্ডারদের মধ্যে একজন। তার অদম্য গতি, স্থিরতা, দৈহিক শক্তি, এবং অসাধারণ পাস দেওয়ার ক্ষমতা লিডস ইউনাইটেডে থাকাকালীন সময়েই তাকে প্রিমিয়ার লীগের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনে পরিণত করেছে।

যেহেতু তিনি তার পজিশনে একজন অনবদ্য খেলোয়াড় এবং তার পজিশনের খেলোয়াড়দের চাহিদাও অনেক বেশি, সেহেতু এটি কেবল সময়েরই অপেক্ষা ছিল মাত্র যে, কোন এক বড় ক্লাব তার জন্য অনেক টাকা খরচ করে তাকে দলে ভেড়াবে। আর সঠিক মূল্য পেয়ে গেলে লিডসও তাকে বিক্রি করে দিতে পিছপা হবেনা এমনটিও ধারণা করাই যাচ্ছিল।

ফিলিপ্স সর্বপ্রথম ম্যানচেস্টার সিটি’র মুখোমুখি হোন ২০২০ সালে, এবং এলান্ড রোডে খেলা সেই ম্যাচটি বহুদিন ধরে দুই দলের সমর্থকদেরই মনে থাকবে, কারণ ম্যাচটি ছিল একটি প্রিমিয়ার লীগ ক্লাসিক।

সেটি ছিল ডাগ আউটে বসে থাকা দুই শিক্ষক এবং শিষ্যের মধ্যকার লড়াই। বছরের পর বছর ধরে বহু প্রেস কনফারেন্স ও মিডিয়ার সাথে সাক্ষাৎকারে পেপ গার্দিওলা এ কথাটি বলেছেন যে, অনবদ্য কোচ মার্সেলো বিয়েলসা’র কোচিং ক্ষমতা দেখেই তিনি ম্যানেজার হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। এটি তাই একদমই অবাক করার মত কোন তথ্য নয় যে, উভয় ম্যানেজারই তাই তাদের দলের হয়ে একই ধরণের ফুটবল উপহার দিয়ে অভ্যস্ত। তার অতীতের শিষ্যের মতই, মার্সেলো বিয়েলসাও তাই যেকোন ম্যাচে নিজের দলের পায়ে বল পজিশন রাখতে পছন্দ করেন, এবং ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেও পছন্দ করেন।

এলান্ড রোডের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে কেলভিন ফিলিপ্সই সবচেয়ে বেশি পজিশন রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এছাড়া, তিনি পুরো ম্যাচটি জুড়েই সম্পূর্ণ মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন। সত্যি বলতে, সেই ম্যাচটিতে এই ২৬ বছর বয়সী মিডফিল্ড মাইস্ট্রো এর চেয়ে বেশিবার বল পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিলেন শুধুমাত্র রড্রি নিজেই। 

এ সবকিছু ছাড়াও, সেই ম্যাচটিতে তিনি অন্য সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন তার লং রেঞ্জ পাসিং এর সুবাদে। যতবারই তিনি লং পাস এগিয়ে দিয়েছিলেন, ততবারই তা তার কোন সতীর্থের পায়েই পড়ছিল। এমন একটি ম্যাচ, যেটিতে কেভিন ডি ব্রুয়না, রিয়াদ মাহরেজ প্রমুখ এর মত খেলোয়াড়েরা মাঠে ছিলেন, সেই ম্যাচে কেলভিন ফিলিপ্স এর সেরা খেলোয়াড় (ম্যান অব দ্য ম্যাচ) হওয়াটা আসলেই অনেক বড় একটি বিষয়, এবং সেটির জন্য তিনি অনেক প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন।

শুধু এতটুকুতেই তিনি থেমে থাকেননি। ফিরতি ম্যাচে যখন আবার তিনি ম্যানচেস্টার সিটি’র মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখনও তিনি একই রকম একটি পারফর্মেন্স দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। এমনটিই মনে হচ্ছিল যে, তিনি ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে যেন অডিশন দিচ্ছিলেন। তার সেদিনের ম্যাচটিতে দেখানো শক্তিমত্তা ও গতিশীলতা উভয় দলেরই অন্য কোন খেলোয়াড় দেখাতে পারেননি। ম্যাচটিতে আন্ডারডগ লিডস ইউনাইটেড সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে ম্যানচেস্টার সিটিকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে দেয়। যেসকল খেলোয়াড় তাদের বিরুদ্ধে ভালো খেলে থাকেন, সেসকল খেলোয়াড়দেরকেই দলে ভেড়ানো যেন বড় ক্লাবগুলির একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কেলভিন ফিলিপ্স এর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি সত্য।

পড়ুন:  গ্রীষ্ম 2024: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ EPL স্থানান্তর

ফার্নান্দিনহো’র ছেড়ে যাওয়া স্থানটি পুরণের লক্ষ্যে কেলভিন ফিলিপ্সই ছিল ম্যানচেস্টার সিটি’র জন্য একজন আদর্শ টার্গেট, কারণ তার নিকট রয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রিমিয়ার লীগে খেলার অভিজ্ঞতা। এছাড়া পেপ গার্দিওলার প্রিয় মিডফিল্ডারদের মত তিনিও পারেন ডিফেন্সকে মুহূর্তের মধ্যে অ্যাটাকে রূপান্তরিত করতে। এছাড়া, তিনি বল পজিশন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ফরোয়ার্ডদের উদ্ধেশ্যে শর্ট বা লং পাস পাঠাতেও বেশ পারদর্শী, যেমনটি পেপ গার্দিওলা চান, এবং যেটি ম্যানচেস্টার সিটি’র চিরাচরিত খেলার ধরণের অন্তর্ভুক্ত। এখানে এ ব্যাপারে কোনই দ্বিধা নেই যে, ম্যানচেস্টার সিটি বেশ কম দামের মধ্যেই তাদের জন্য একজন আদর্শ খেলোয়াড়কে খুজে নিতে পেরেছে।

যেভাবে তিনি ক্লাবটিতে সহজেই মানিয়ে নিতে পারবেন (How he fits perfectly into the club)

এটি এখন সাধারণ জ্ঞান যে পেপ গার্দিওলা তার দলে যে ক্রীড়া কৌশল প্রয়োগ করে থাকেন, সেই কৌশল অনুসরণ করে খেলা সকল খেলোয়াড় এর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই ধরণের সিস্টেমে সকল খেলোয়াড়কেই বল পজিশন রাখতে হয়, এবং খুব সময়ের মধ্যেই ত্রিভুজাকৃতির বা স্কোয়ার পাস সম্পন্ন করতে হয়। এমনটি করা বা এমন সিস্টেমে খাপ খাইয়ে নেওয়া অনেক খেলোয়াড় এর জন্যই বেশ কঠিন হয়ে পড়তে পারে, এবং সেজন্যই নিজের কাজ সহজ করে নেওয়ার লক্ষ্যে পেপ গার্দিওলা সবসময় টেকনিক্যালি গিফটেড খেলোয়াড়দেরকেই চিহ্নিত করেন এবং ট্রান্সফার মার্কেটে তাদেরকেই টার্গেট করেন।

যেমনটি আপনি ইতিমধ্যে ধারণা করেই ফেলেছেন, কেলভিন ফিলিপ্সের ম্যানচেস্টার সিটি’র হাই প্রেসিং এন্ড সুইফট পাসিং সিস্টেমে মানিয়ে নিতে তেনন কোন সমস্যাই হবে না, কারণ তিনি মার্সেলো বিয়েলসা’র অধীনে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ একটি সিস্টেমেই বেশ কিছু বছর ধরে খেলে এসেছেন।

২৬ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার শূন্য এবং ভূমি উভয় মাধ্যমেই বল পজিশন পুনরুদ্ধার করতে বেশ পটু, এবং গত দুই মৌসুম ধরেই তিনি ট্যাকেলিং এর ক্ষেত্রেও প্রিমিয়ার লীগের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। শুধুমাত্র লেস্টার সিটি’র উইল্ফ্রিড এনদিদি এবং রিকার্ডো পেরেরাই সেই সময়কালে তার চেয়ে শ্রেয় ট্যাকেলিং পরিসংখ্যান ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

এ ব্যাপারে যদিও কোনই সন্দেহ নেই যে, রড্রিকে পেছনে ফেলে ম্যানচেস্টার সিটি’র ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এর পজিশনটি তার নিজের করে নেওয়াটা একদমই সহজ হবে না, তবুও এটি মানতেই হবে যে কেলভিন ফিলিপ্স বল পজিশন পুনরুদ্ধার করার ক্ষেত্রে বা ইন্টারসেপশন করার ক্ষেত্রে সেই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার এর থেকে কোন অংশেই কম যান না। প্রকৃতপক্ষে, পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায় যে, গত মৌসুমের যেসকল ম্যাচে ময়ান সিটি পরাজয় বরণ করেছিল, সে সকল ম্যাচেই রড্রি বেশ কিছু বার বল পজিশন হারিয়েছিলেন, এবং তার দলকে বিপদে ফেলেছিলেন। এটি বলার মাধ্যমে আমরা এই অসাধারণ স্প্যানিশ ম্যায়েস্ট্রোকে কোনভাবেই ছোট করতে চাচ্ছি না, বরং শুধুমাত্র এই বিষয়টিই সামনে আনতে চাচ্ছি যে, তাকে তার পজিশনে প্রতিযোগিতা উপহার দেওয়ার জন্য কেলভিন ফিলিপ্স এর চেয়ে ভালো খেলোয়াড় বর্তমান বাজারে পাওয়া খুবই কঠিন ছিল।

পড়ুন:  পেপ গার্দিওলা এবং ম্যানচেস্টার সিটি কি প্রিমিয়ার লিগকে কম প্রতিযোগিতামূলক করেছে?

কেলভিন ফিলিপ্সকে নিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি এখন কিভাবে নিজেদের দল সাজাবে? (How will City line up with Kalvin Philips in their team?)

ম্যানচেস্টার সিটি সাম্প্রতিক সময়ে তাদের ৪-৩-৩ ফর্মেশনের জন্যই অধিক পরিচিত। এই সিস্টেমে তারা শুধুমাত্র একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকেই জায়গা করে দিতে পারে। এমনটি বলাই যায় যে, আটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে সিটিতে পাড়ি জমানোর পর থেকে উক্ত পজিশনটি রড্রি অনেকটা নিজের নামেই করে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি পজিশনটির একপেশে স্বভাব থেকে বের হয়ে এসে দলের ক্রিয়েটিভ স্পেসেও নিজের ছাপ রেখেছেন। এছাড়া, তিনি গত মৌসুমে তার দলের জন্য অনেক বড় বড় ম্যাচের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত্বে গোলও করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হল সিজনের শেষ ম্যাচে বাঁচা মরার লড়াইয়ের সময়ে এস্টন ভিলার বিরুদ্ধে তার করা গোলটি, যা ম্যাচটিতে ২-২ গোলের সমতা আনে, এবং ম্যানচেস্টার সিটিকে শিরোপার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। রড্রি শুধু গোল করেন তাই নয়, তার করা অধিকাংশ গোলই জায়গা করে নেয় প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমের সেরা গোলগুলির তালিকায়। এই একটি দিক দিয়েই কেলভিন ফিলিপ্স রড্রির থেকে অনেকটা পিছিয়ে, কারণ তিনি খুব বেশি গোল করার জন্য পরিচিত নন।

তবে, উভয় খেলোয়াড়ই বল পজিশন পুনরুদ্ধার এর পরিসংখ্যানে একদম কাছাকাছি অবস্থান করে আসছেন। ২৬ বছর বয়সী ফিলিপ্স তার করা প্রতি ১০০টি টাচ এর মধ্যে ১২.৮৭ টি রিকোভারি সম্পন্ন করেছিলেন গত মৌসুমে, যা রড্রির করা ১৭.০১ টি বল রিকোভারিই চেয়ে মাত্র কিছুটা কম। তবে, কেলভিন ফিলিপ্স এর ব্যাপারে একটি কথা না বললেই নয়, এবং সেটি হচ্ছে, তার সাবেক দল লিডস ইউনাইটেড ম্যানচেস্টার সিটি’র মত খেলার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিভাবে নিজেদের দখলে না রাখতে পারলেও, বল পায়ে তার মত স্থিরতা এবং সক্ষমতা অন্য কোন খেলোয়াড়ই প্রদর্শন করতে পারেননি।

এই ব্যাপারটি হয়তো এখন ভেবে অবাক লাগছে যে, পেপ গার্দিওলা কিভাবে আগামী মৌসুমে এমন দুইজন অসধারণ খেলোয়াড়কে একই পজিশনে অদল বদল করে খেলাবেন এবং দুজনকেই খুশি রাখবেন। তবে, এই ট্যাক্টিক্যাল ম্যায়েস্ট্রো আগেও এমন পরিস্থিতিতে প্রমাণ করেছেন যে, একটি বড় ক্লাব চালাতে হলে স্কোয়াডে এমন গভীরতা থাকা খুবই জরুরি। মৌসুমজুড়ে কোন খেলোয়াড় কখন ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত হবেন তার কোনই নিশ্চয়তা নেই। আবার, গত মৌসুমের বিভিন্ন পর্যায়ে এটিও স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছিল যে, রড্রি’র একজন যোগ্য সহযোগী আসলেও অনেক দরকার, কারণ এমন কঠিন লীগে একটি গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ম্যাচের পর ম্যাচ একাই খেলে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এছাড়া যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে যেকোন খেলোয়াড়ই কিছুটা গা ছেড়ে দিয়ে খেলতে পারেন, এবং পেপ গার্দিওলা কখনোই তা চাইবেন না।

আগামী মৌসুমে যখন ফিলিপ্স তার নতুন দলে খাপ খাইয়ে নিতে থাকবেন, তখন হয়তো পেপ গার্দিওলা তাকে ঘরোয়া কাপগুলির ম্যাচেই নিয়মিত খেলাবেন, এবং প্রিমিয়ার লীগ ও চ্যাম্পিয়নস লীগের বেশির ভাগ ম্যাচে রড্রিকেই খেলাবেন বলেই এখন ধারণা করা যাচ্ছে। বাকিটা মৌসুম শুরু হলেই টের পাওয়া যাবে।

Share.
Leave A Reply