প্রেডিকশন (Prediction)

আর্জেন্টিনা ১ – ১ ফ্রান্স (অতিরিক্ত সময় শেষে)  |  আর্জেন্টিনা ৪ – ৩ ফ্রান্স (পেনাল্টি শুট আউট)

ভেন্যুঃ লুসেইল আইকনিক স্টেডিয়াম

১৯৬২ সালের পর থেকে আর কখনোই কোন বিশ্বকাপ ফাইনালিস্ট পর পর দুইটি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ জেতার গৌরব অর্জন করতে পারেনি। সর্বশেষ যখন তেমনটি ঘটেছিল, তখন দুই বিশ্বকাপেই একজন নির্দিষ্ট যুবা সুপারস্টার (পেলে) বিশাল ভূমিকা পালন করেছিলেন, এবং সারা বিশ্বকে হতভম্ব করে দিয়েছিলেন। অনেকটা সেরকম কিছুই করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন এবার ফ্রেঞ্চ সুপারস্টার কিলিয়ান এমবাপ্পে, যিনি ২০১৮ বিশ্বকাপে প্রায় একক প্রচেষ্টাতেই ফ্রান্সকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন, এবং ২০২২ বিশ্বকাপেও একইভাবে ফ্রান্সকে ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন।

তবে, তার পথের কাঁটা হয়ে এখন দাঁড়িয়ে আছেন তারই ক্লাবমেট লিওনেল মেসি, যাকে কি না সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবেও মানা হয়ে থাকে। এবং ফুটবলের প্রতি মেসি’র অসংখ্য অবদানের কারণেই মূলত এমনটি অনুভব করা হচ্ছে যে, অবসরের পূর্বে অন্তত একটি বিশ্বকাপ শিরোপা মেসি’র ট্রফি ক্যাবিনেটে যুক্ত হওয়া অতীব প্রয়োজন। এই ম্যাচটির ফলাফল যাই হোক না কেন, ম্যাচ শেষে ইতিহাস অবশ্যই রচিত হবে, এবং কাতারে অবস্থিত ৮৮,০০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন লুসেইল আইকনিক স্টেডিয়াম সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইবে।

ফর্ম বিবরণীঃ আর্জেন্টিনা (Form Guide: Argentina)

আর্জেন্টিনা হল এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে সাজানো গোছানো দল। ডিফেন্স থেকে শুরু করে আক্রমণভাগ পর্যন্ত, তারা এবারের টুর্নামেন্টটিতে নিজেরা খুব কমই ভুল করেছে, এবং প্রতিপক্ষকেও সুযোগ দিয়েছে খুবই স্বল্প পরিমাণে। তবে, এবারের বিশ্বকাপে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে ফ্রান্স, কারণ এই ম্যাচটিতে তাদেরকে সম্মুখীন হতে হবে একজন ইন-ফর্ম কিলিয়ান এমবাপ্পে’র এবং আক্রমণে তার অসাধারণ সাপোর্টিং কাস্টের, যার মধ্যে অন্যতম হলেন আন্তোয়াঁ গ্রিয়েজমান, যিনি কি না এবারের বিশ্বকাপ জুড়ে একজন মিডফিল্ডার বা প্লেমেকারের ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

পড়ুন:  এভারটন বনাম ম্যানচেস্টার সিটি

তবে, আলবেসিলেস্তে’রা মিডফিল্ডে তাদের শ্রেষ্ঠতা বজায় রাখবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে, এবং সেটি ঠিকমত করতে পারলেই তারা তাদের তৃতীয় বিশ্বকাপ শিরোপার স্বপ্নটিকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবে।

ফর্ম বিবরণীঃ ফ্রান্স (Form Guide: France)

যদিও এবারের বিশ্বকাপ শুরুর আগে বিশ্বকাপের শিরোপার জন্য ফেভারিট দলগুলির মধ্যে ফ্রান্সই সবচেয়ে বেশি ইঞ্জুরি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, তবুও এবারের বিশ্বকাপে তারা প্রত্যাশার সকল বাঁধ ভেঙে ফাইনাল অবধি পৌঁছে গিয়েছে। এমবাপ্পে তো কাউকে হতাশ করেনইনি, বরং তার সাথে সাথে পুরো ফ্রেঞ্চ আক্রমণভাগই এবার সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের সেন্টার ফরোয়ার্ড অলিভিয়ে জিরুঁ এবারের বিশ্বকাপে গোল করার মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলদাতায় পরিণত হয়েছেন।

এছাড়া, ফ্রান্স জাতীয় দলের হয়ে একটানা সবচেয়ে বেশি এপিয়ারেন্স এর রেকর্ডটি ভেঙেছেন আন্তোয়াঁ গ্রিয়েজমান। তাদের কোচ দিদিয়ের দেশম এমন এক ধরণের ট্যাকটিকাল বৈচিত্র‍্যতা প্রদর্শন করেছেন, যা বিশ্ব কোনদিনই দেখেনি। আক্রমণের দিক দিয়ে তারা আর্জেন্টিনার সামনে প্রচুর সমস্যার উদ্ভব করবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে, কিন্তু মিডফিল্ডে তারা আর্জেন্টিনার শক্তিমত্তার কাছে হার মানতে পারে বলেও রায় দিয়েছেন বহু ফুটবল বোদ্ধারা।

ম্যাচটিতে যা যা ঘটতে পারে (How the game could go)

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের যাত্রায় রাউন্ড অব ১৬ এর ম্যাচেই সর্বশেষ আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়েছিল লা ব্লুস’রা, এবং সেবার নিশ্চিতরূপেই শ্রেয় দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল তারাই।

তারপর থেকে উভয় দলেই বিভিন্নভাবে পরিবর্তন এসেছে, তবে আর্জেন্টিনার সবগুলি পরিবর্তনই ঘটেছে ইতিবাচক দিক দিয়ে। সেটিই দু’দলের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে এবারের ম্যাচটিতে, এবং আর্জেন্টিনার সেই পরিবর্তন বা উন্নতির একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ লা ব্লুস’রা পাবে আগামী রবিবার, যখন আর্জেন্টিনাও ফ্রান্সের মতই খেলবে নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে।

Share.
Leave A Reply