যা যা থাকছে

    • মেসি’র পুরো যাত্রার দিকে এক নজর
    • ক্লাব পর্যায়ে মেসি যা যা জিতেছেন
    • আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি যা যা জিতেছেন
    • মেসি’র অধীনস্থ গিনেস বিশ্ব রেকর্ডসমূহ
    • মেসি এবং রোনাল্ডো’র মধ্যকার “সর্বকালের সেরা” বিষয়ক বিতর্ক

    এখন পর্যন্ত মেসি’র পুরো যাত্রাটির দিকে এক নজর (A look at Messi’s journey so far)

    একটি অসাধারণ ক্যারিয়ার সম্পন্ন করার পরে, যেখানে তিনি সকল বাঁধাকে অতিক্রম করেছেন, অসংখ্য রেকর্ড ভেঙে ফেলেছেন, প্রচুর শিরোপা ঘরে তুলেছেন, এবং তার সকল প্রতিপক্ষের সম্মান অর্জন করেছেন, শেষ পর্যন্ত লিওনেল মেসি সেই পুরষ্কারটিও হাতে তুলেছেন, যার কামনায় আসক্ত হয়ে থাকে পুরো ফুটবল বিশ্ব – ফিফা বিশ্বকাপ শিরোপা।

    এবং, তিনি সেটি অর্জন করেছেন ফুটবলীয় ভাষায় ৩৫ বছরের “বুড়ো” বয়সে, যা কোন প্রকার চমৎকার থেকে কোন অংশেই কম নয়।

    যারা যুক্তি বোঝেন, এবং সত্য স্বীকার করে নিতে জানেন, তাদের জন্য এই প্রশ্নটি এখন অনর্থক বলে গণ্য হবে যে, সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? তবে, যারা মাথা দিয়ে না ভেবে আবেগ দিয়ে ভাববেন, তাদের জন্য এই বিতর্ক চলতেই থাকবে। তবে, সেই প্রশ্নটির উত্তর যাই হোক না কেন, এটি সকলেরই মানতে হবে যে, চিরকাল ফুটবল দেবতাদের অসম্পূর্ণ তালিকার উপরিভাগেই অবস্থান করে যাবেন আর্জেন্টাইন এই মহাতারকা, যিনি হলেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের অনুপ্রেরণাও বটে।

    আর যদি আবেগের সাহারা না নিয়ে সকলেই এটি বুঝে যান যে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হচ্ছেন লিওনেল মেসি, তাহলে সেই “সর্বকালের সেরা” বা গোট বিষয়ক আলোচনার আমরা এখানেই ইতি টানতে পারি।

    আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরের সেই ছোট্ট ছেলেটি আজ সত্যিই অনেক দূরে এসেছেন। চলুন, তার পুরো যাত্রাটির দিকে এক নজর তাকানো যাক।

    ক্লাব পর্যায়ে মেসি যা যা জিতেছেন (What has Messi won at the club level?)

    ১৯৮৭ সালের ২৪ই জুন জন্ম নেওয়া লিওনেল মেসি (বর্তমানে ৩৫ বছর বয়সী) বার্সেলোনায় তার প্রতিভা প্রস্ফুটিত করতে শুরু করেন। বার্সেলনাতেই তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভালো সময়গুলো কাটিয়েছেন তিনি। সেখানে একজন সক্রিয় খেলোয়াড় হিসেবে খেলাকালীন তিনি ৬টি ব্যালন ডি’অর জিতেন। তার ৭ম ব্যালন ডি’অর পুরষ্কারটিও তিনি বার্সেলোনার হয়ে খেলার জন্যই পেয়েছিলেন, কিন্তু পুরষ্কারটি হাতে পাওয়া পর্যন্ত তিনি পিএসজি’তে যোগ দিয়ে দিয়েছিলেন। সে কারণে অনেকে মনে করেন যে, সেই পুরষ্কারটি তিনি একজন পিএসজি খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছিলেন।

    ১৯৫৬ সালে ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশন ব্যালন ডি’অর পুরষ্কারটি উদ্ভাবন করার পর থেকে তিনিই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বার সেটি জিতেছেন।

    যেহেতু ব্যালন ডি’অর তাদেরকেই দেওয়া হয়ে থাকে যারা ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স এর পাশাপাশি দলের সাফল্যে সমানভাবে বিশাল ভূমিকা পালন করেন, সেহেতু মেসি’র ৭টি ব্যালন ডি’অর এর মানে হল এই যে, তিনি বছরের পর বছর ধরে বার্সেলোনাকে একের পর এক শিরোপা জিতিয়েছেন। বিশ্ব ফুটবলে এমন কোন সম্ভাব্য শিরোপা নেই, যা তিনি তার দলের হয়ে জিতেননি।

    সর্বমোট ৪২টি শিরোপা নিজের নামে করার পর (বার্সেলোনার হয়ে ৩৫টি, আর্জেন্টিনার যুবা ও সিনিয়র দলের হয়ে ৫টি, পিএসজি’র হয়ে ২টি) তিনি এখন বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ী খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন।

    বার্সেলোনায় তার সময়কালে তিনি শুধু তাদের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়েই পরিণত হোননি, বরং তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী খেলোয়াড়েও পরিণত হয়েছেন।

    তিনি বার্সেলোনায় আসার আগে ১০০ বছরেরও বড় ইতিহাসে ক্লাবটি ১৬টি লা লিগা শিরোপা জিতেছিল। আর তিনি ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তারা মোট ১০টি লা লিগা শিরোপা জিতে নেয়। মেসি ছিলেন সেই ফুটবলিং জেনারেশনের নেতা, যেই জেনারেশনটি বার্সেলোনাকে সেই উচ্চতায় পৌঁছিয়েছে, যেখানে তারা বর্তমানে অবস্থান করছে। তার হাত ধরেই বার্সেলোনা বিশ্বজুড়ে এত এত দর্শক, সমর্থক ও অনুসারী অর্জন করেছে।

    পড়ুন:  লিভারপুল বনাম ম্যানচেস্টার সিটি রিপোর্ট

    ১০টি লা লিগা শিরোপা জিতে নিয়ে তিনি বার্সেলোনার শিরোপা ট্যালিকে নিয়ে গিয়েছেন ২৬ এ। এই সময়ে, স্পেনের সবচেয়ে সফল দল রিয়াল মাদ্রিদ কেবলমাত্র ৪টি লা লিগা শিরোপা জিততে সক্ষম হয়েছে। বছরের পর বছর রিয়াল মাদ্রিদের ছায়া হয়ে থাকার পর মেসি এসেই রিয়াল মাদ্রিদের সাথে বার্সেলোনার লা লিগা শিরোপা ট্যালির ব্যবধান ১০ এর নিচে নামাতে পেরেছেন।

    তিনি তাদেরকে এসকল সাফল্য এনে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় স্প্যানিশ ফুটবলের গোল ও এসিস্ট সম্পর্কিত অসংখ্য রেকর্ডও ভেঙেছেন। ৫২০টি লীগ ম্যাচ খেলে ৪৭৪টি গোল করার পর তিনিই পরিণত হয়েছেন স্প্যানিশ ফুটবলের গোলস্কোরিং মাপকাঠিতে। তাকেই এখন ধরা হয় স্ট্যান্ডার্ডধারী। সেসকল গোল তাকে পরিণত করেছেন ৬টি ইউরোপীয় গোল্ডেন বুটধারীতে, যা নিজে থেকেই একটি রেকর্ড।

    যখন তিনি স্প্যানিশ টপ ফ্লাইটে বার্সেলোনাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলছিলেন, ঠিক তখনই তিনি স্প্যানিশ কাপ কম্পিটিশন কোপা দেল রে’তেও ক্লাবটির ইতিহাস পুনর্জীবিত করে তুলেছিলেন। কোপা দেল রে হল স্পেনের সবচেয়ে পুরনো ক্লাব প্রতিযোগিতা, যেখানে স্প্যানিশ লা লিগার সবকটি বড় বড় দলই খেলে থাকে। তিনি যে ১৭ বছর ক্লাবটিতে খেলেছেন, তার মধ্যেই তিনি ৭ বার এই শিরোপাটি জিতেছেন। কোপা দেল রে’র ইতিহাসে তিনি কেবলমাত্র ৫ জনের মধ্যে একজন, যারা কি না ৭ বার শিরোপাটি জিততে পেরেছেন।

    স্পেনের এই দুইটি জাতীয় শিরোপা বহু সংখ্যক বার জেতার পাশাপাশি লিওনেল মেসি বার্সেলোনার হয়ে মোট ৮ বার জিতেছেন সুপারকোপা দে এস্পানিয়া শিরোপা। এই প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও লিওনেল মেসি বার্সেলোনাকে এতটাই এগিয়ে দিয়েছেন যে, তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ কেবল তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতেই হিমসিম খেয়ে গিয়েছে। তিনি স্পেন থেকে বিদায় নেওয়ার আগে প্রতিযোগিতাটিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। প্রতিযোগিতাটিতে মোট ২০টি ম্যাচ খেলে তিনি সর্বমোট ১৪টি গোল করেছিলেন। তার খেলা সেই ২০টি ম্যাচ ছিল প্রতিযোগিতাটিতে যেকোন খেলোয়াড়ের খেলা সর্বোচ্চ ম্যাচ সংখ্যা।

    এছাড়া তিনি বার্সেলোনার হয়ে ইউরোপীয় পর্যায়েও নিজের ছাপ রেখে গিয়েছেন।

    ২০০৫/০৬ মৌসুম ছিল তার অভিষেক মৌসুম, যেখানে তিনি খুব কম পরিমাণ সময় বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়নস লীগ দলে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে, এরপর তিনি দলের হাল ধরেন, নেতৃত্ব নিজের ঘাড়ে নেন, এবং ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মোট তিনবার তার দলকে চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালে উঠান। ২০০৮-০৯ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতার মধ্য দিয়ে তারা এমন একটি এক্সক্লুসিভ ক্লাবে যোগদান করেন, যেখানে শুধুই ইউরোপীয় ফুটবলের ট্রেবল জয়ী ক্লাবগুলি অবস্থান করছে।

    ২০১৪-১৫ মৌসুমে তিনি আবারও চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা জিতেন, যেটি ছিল তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ ইউসিএল শিরোপা। সেবছর বার্সেলোনা দ্বিতীয় বারের মত ট্রেবল জিতে আবারও ইতিহাস গড়ে।

    বার্সেলোনা ত্যাগ করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি চ্যাম্পিয়নস লীগে মোট ১৪৯টি ম্যাচ খেলে সর্বমোট ১২০টি গোল করতে সক্ষম হোন। তিনি হলেন প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। এছাড়াও তিনি চ্যাম্পিয়নস লীগে আরও বেশ কিছু রেকর্ড তৈরি করেছেন।

    তিনটি উয়েফা সুপার কাপ শিরোপা এবং তিনটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা ধরলেই বার্সেলোনার হয়ে তার ৩৫টি শিরোপা পূর্ণ হয়ে যায়।

    ২০২১ সালে সেই কষ্টের মুহূর্তটি আসে যখন তাকে তার প্রাণের ক্লাব বার্সেলোনা ছেড়ে যেতে হয় ক্লাবটির নানা অর্থনৈতিক জটিলতার কারণে। সেদিন তার চোখ থেকে অঝড় ধারায় পানি ঝড়েছিল। তবে, তাকে ঠিকানা প্রদান করার জন্য এগিয়ে এসেছিল ফ্রান্সের ধনকুবের ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই, ওরফে পিএসজি। কিলিয়ান এমবাপ্পে, যাকে কি না অনেকে মেসি’র যোগ্য উত্তরসুরী মনে করেন, এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নেইমার, যিনি কি না ২০১৪-১৫ মৌসুমে মেসি’র সাথেই বার্সেলোনাতে ট্রেবল জিতেছিলেন, তাদের পাশাপাশি তিনি একটি অপ্রতিরোধ্য আক্রমণভাগ গঠন করেন, এবং দুইটি লিগা উন শিরোপা জিতে নেন।

    পড়ুন:  কোপেনহেগেন বনাম ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচ রিপোর্ট

    আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি যা যা জিতেছেন (What has Messi won with Argentina?)

    মেসি জাতীয় দলে খেলার আগেই ক্লাব ফুটবল জগতে একজন কিংবদন্তি ফুটবলারের মর্যাদা অর্জন করে ফেলেছিলেন। তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তাই শুরু থেকেই একজন অমর খেলোয়াড় মানা হতো। তবে, ২০২১ সালের আগ পর্যন্ত এমনটিই মনে হচ্ছিল যে, আর্জেন্টিনার হয়ে তার একমাত্র সাফল্য হবে একটি যুবা প্রতিযোগিতার শিরোপা।

    আর্জেন্টিনার যুবা দলের হয়ে ২০০৫ সালের যুবা (অনূর্ধ্ব ১৭) বিশ্বকাপ এবং ২০০৮ সালের অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতলেও, সিনিয়র দলের হয়ে বেশ কিছু প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেও কোন শিরোপার দেখা পাননি মেসি।

    মনে হচ্ছিল ২০১৪ সালেই তার সেই আন্তর্জাতিক শিরোপা খরাটি কাটবে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেবার গোল্ডেন বল পুরষ্কারটি জিতলেও শেষ পর্যন্ত ফাইনাল ম্যাচে জার্মানির কাছে হেরে যায় আলবেসিলেস্তে’রা।

    শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালে এসে তিনি আর্জেন্টিনা সিনিয়র ফুটবল দলের হয়ে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপাটি হাতে তুলতে সক্ষম হোন। সেটি ছিল কোপা আমেরিকা ২০২১ এর শিরোপা।

    তার কোপা আমেরিকা শিরোপা জেতার পর তার সর্বকালের সেরা হওয়ার বিতর্কটি আরো জোড়েসোড়ে শুরু হয়। তবে, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার পর সেই বিতর্কটি অনেকটা শেষই হয়ে গিয়েছে বলা যায়। শুধু শিরোপাই নয়, তিনি এবারের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল পুরষ্কারটিও জিতেছেন। তিনিই এখন বিশ্বকাপের ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড় যার নিকট বিশ্বকাপের দুইটি গোল্ডেন বল পুরষ্কার রয়েছে।

    মেসি’র অধীনস্ত গিনেস বিশ্ব রেকর্ডসমূহ (Messi’s Guinness World Records)

    তার ক্যারিয়ারের পুরোটা জুড়েই তিনি অসংখ্য ফুটবলীয় রেকর্ড গড়েছেন, যার অনেকগুলিই আবার স্থান পেয়েছে গিনেস বিশ্ব রেকর্ডের বইয়ে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসই হল বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা, অদ্ভূত এবং সাতরঙী রেকর্ডগুলির আবাসস্থল।

    এসব রেকর্ডের মধ্যে অন্যতম হল টানা ম্যাচে মোট ৯১টি গোল করার একটি অসাধারণ রেকর্ড, যার মধ্যে ৭০টি এসেছিল ক্লাব সাইড বার্সেলোনার হয়ে, এবং ২১টি এসেছিল জাতীয় দল আর্জেন্টিনার হয়ে। তবে, তার এমন সবচেয়ে সাম্প্রতিক (এবং সবচেয়ে উত্তেজনাকর) রেকর্ডটি হল সেই রেকর্ডটি যেটি ইন্সটাগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বার “লাইক” পেয়েছে।

    এই নিবন্ধটি লেখার সময় পর্যন্ত মেসি’র বিশ্বকাপ জয়ের সেই পোস্টটি ইন্সটাগ্রামে ৭০ মিলিয়নেরও বেশি লাইক অর্জন করেছে। এর আগে ইন্সটাগ্রামে একটি পোস্টে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লাইক এসেছিল ৫৫ মিলিয়নের কাছাকাছি। এই রেকর্ড কারো ভাঙতে অনেক সময় লাগবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে, কেননা ইন্সটাগ্রাম এর মোট গ্রাহক সংখ্যাই হল ৫০০ মিলিয়নের আশেপাশে, যারা একেক জন একেক বিষয়ে আগ্রহী। মেসি’র এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন লাইকের কোঠাও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    এসকল উত্থান পতনের মধ্যে শুধুমাত্র একজন খেলোয়াড়ই রয়েছেন, যিনি তার ধারেকাছে ঘেষতে পারেন, এবং তিনি হলেন পর্তুগীজ সুপারস্টার ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।

    মেসি এবং রোনাল্ডো’র মধ্যকার গোট বিতর্ক (The GOAT debate between Messi and Ronaldo)

    বছরের পর বছর ধরে মেসি সাফল্যের চূড়ায় থাকলেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো তার পিছু ছাড়েননি, বরং অনেক দিয়েই সমানে সমানে টক্কর দিয়েছেন।

    রোনাল্ডো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খুব কম বয়সেই ঝড় তুলে ফেলেছিলেন, এবং ২৩ বছরে পা দেওয়ার আগেই তার ঝুলিতে একটি ফিফা ব্যালন ডি’অর পুরষ্কার চলে এসেছিল। তবে, ঠিক সেরকম সময়েই সুদূর স্পেনের বার্সেলোনাতে লিওনেল মেসি নামক একজন ফুটবলারও একটি বড়সড় ঝড় তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ইউনাইটেড এর হয়েই রোনাল্ডো কয়েকবার বার্সেলোনার বিপক্ষে খেলার সময় মেসি’র সম্মুখীন হয়েছিলেন, এবং তখনই বিশ্বের কাছে এটি স্পষ্ট হয়েছিল যে, পরবর্তী প্রজন্মের ফুটবলের দুই কান্ডারি হবেন এই দুই ফুটবলারই।

    পড়ুন:  মন্তব্যঃ কেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের হারানো অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে পারবে না

    রিয়াল মাদ্রিদ কোনক্রমেই বার্সেলোনাকে লা লিগার শিরোপাটি উৎসর্গ করে দিতে রাজি ছিল না, এবং সেজন্যই তারা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে একটি বিশ্ব রেকর্ড ট্রান্সফার ফি দিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে দলে ভিড়িয়ে নেয়। এরপরের বছরগুলিতে লা লিগাতে যেমন প্রতিযোগিতা দেখতে পাওয়া গিয়েছে, তা আগামী বহু বছরেও দেখতে পাওয়া যাবে কি না সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

    বহু সংখ্যক গোলস্কোরিং রেকর্ড এবং শিরোপার পাশাপাশি তারা দু’জনে মিলেই এর পরের মোট ৯টি ব্যালন ডি’অর পুরষ্কার জিতেছিলেন, যার মধ্যে ৫টি ছিল মেসি’র এবং ৪টি রোনাল্ডো’র। এছাড়া, এর পরের ৯টি মৌসুমের মধ্যে ৮টিতেই ইউরোপীয় গোল্ডেন বুট পুরষ্কারটি থেকেছিল তাদের দু’জনের মধ্যেই। তবে, এক্ষেত্রে অবশ্য মেসি’র ঝুলিটি কিছুটা বেশিই ভারি ছিল (৫ বার জিতেছিলেন মেসি, আর রোনাল্ডো ৩ বার)।

    তবে, রোনাল্ডো তখনই মেসিকে প্রচন্ড চাপের মুখে ফেলতে পেরেছিলেন, এবং অনেকাংশে কিছুটা পেছনেও ফেলতে পেরেছিলেন, যখন তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা জিতেছিলেন।

    রিয়াল মাদ্রিদ আগে থেকেই ইউরোপের সবচেয়ে সফল ক্লাবগুলির মধ্যে একটি ছিল, কিন্তু কয়েক দশক আগে প্রতিযোগিতাটিকে নতুন করে সাজানোর পর থেকে তারাও কখনোই (২০১৭ সালের আগ পর্যন্ত) শিরোপাটি টানা দুইবার জিততে পারেনি। তবে, তারপর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর আগমণ ঘটে এবং তিনি মাদ্রিদকে টানা তিনটি ইউসিএল শিরোপা এনে দেন, যা ২০০০ এর দশকের শেষের দিকে বার্সেলোনা ও মেসি’র অর্জনগুলিকেও মুর্ঝিয়ে দেয়।

    সেসকল চ্যাম্পিয়নস লীগ ও লা লিগা শিরোপা জেতার মাঝে রোনাল্ডো তার জাতীয় দল পর্তুগালকেও তাদের ইতিহাসের প্রথম দুইটি শিরোপা এনে দেন — উয়েফা ইউরো ২০১৬ এবং উয়েফা নেশনস লীগ ২০১৯। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে তিনি যখন সাফল্যের চূড়ায়, তখন গোট বিতর্কটি অনেকাংশেই তার অনুকূলে চলে যায়।

    রোনাল্ডো সেই বিতর্কটি তার আরো অনুকূলে নিয়ে চলে আসেন, যখন তিনি একাধারে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গোল করার রেকর্ড এবং এরপর সবধরণের ফুটবলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গোল করার রেকর্ড ভেঙে ফেলেন। সব ধরণের ফুটবলে তার করা ৮১৯টি এখনো পর্যন্ত রেকর্ড হিসেবে অক্ষুণ্ণ রয়েছে। আর মেসি? এক্ষেত্রে তিনি অনেকটাই পিছয়ে আছেন। নিবন্ধটি লেখার সময় তার গোল সংখ্যা ৭৯৮টি।

    তবে, যখন ২০২১ সালে মেসি কোপা আমেরিকা শিরোপাটি জেতার মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে সিনিয়র ফুটবলে নিজের আন্তর্জাতিক শিরোপা খরাটি কাটান, তখন ধরেই নেওয়া হয়েছিল যে, একটি বিশ্বকাপ শিরোপা বা আরো একটি চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা জিততে পারলেই তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন। যেহেতু দুই খেলোয়াড়েরই ক্যারিয়ার অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, সেহেতু এমনটিই মনে করা হচ্ছিল যে, রোনাল্ডোর খানিক শ্রেয় শিরোপা ট্যালি তাকেই মেসি’র থেকে এগিয়ে রাখতে সক্ষম হবে, যদিও বেশির ভাগ ফুটবল প্রেমীরই মন্তব্য হচ্ছে ফুটবলার হিসেবে মেসিই অধিকতর গিফটেড।

    আর তখনই, কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ চলে আসলো। আর বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে বেশির ভাগ নিন্দুকেরই মুখ বন্ধ করে দিলেন মেসি। এখন এই বিতর্কে তাই তিনি অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন আবারও।

    মেসি’র ক্যারিয়ার শেষ হতেও এখন অনেকটা সময় বাকি। পিএসজি’র হয়ে এখনো তার নজর রয়েছে বেশ কিছু শিরোপার উপর। এছাড়া, তার জেতা কোপা আমেরিকা শিরোপাটিও তিনি ডিফেন্ড করার স্বপ্ন দেখতেই পারেন আগামী ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকা প্রতিযোগিতায়। আর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, কে জানে? ২০২৬ বিশ্বকাপে তাকে আবারও দেখা যেতে পারে আলবেসিলেস্তে’দের নীল সাদা জার্সিতে।

    Share.
    Leave A Reply