প্রেডিকশন (Prediction)
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ১ – ২ ম্যানচেস্টার সিটি
আগামী শনিবারের ম্যানচেস্টার ডার্বিটি পূর্বের যেকোন ডার্বি’র থেকে আলাদা হতে চলেছে। এর পেছনে মূল কারণই হল এই যে, এরিক তেন হাগের অধীনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড একটি জয়ের ফর্মুলা খুঁজে পেয়েছে।
বর্তমান মৌসুমটি কেবলমাত্র অর্ধ-পর্যায়ে পৌঁছেছে, এবং এখন পর্যন্ত এই মৌসুমে মাঠে ও মাঠের বাইরে প্রচুর উত্থান পতনের শিকার হয়েছে রেড ডেভিলরা। সেসকল পতনগুলির মধ্যে একটি হল গত অক্টোবরে ম্যান সিটি’র বিপক্ষে তাদের ৬-৩ গোলের পরাজয়টি।
সেই ম্যাচটিতে ম্যান ইউনাইটেডের দ্বিতীয়ার্ধে করা ৩টি গোলের প্রথমটি যখন এসেছিল, ততক্ষণে ম্যাম সিটি ৪-০ গোলে এগিয়ে ছিল। এরপর সিটি কিছুটা ঢিলেঢালা ভঙিতে খেলেছিল। সেদিন ইউনাইটেডকে একরকম লজ্জা দিয়েই হারিয়েছিল সিটি, এবং এটিই প্রথমবার নয়। তবে, এমনটি বলাই যায় যে, সেই হারের পর থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিজেদের খেলায় অনেক উন্নতিসাধন করেছে, এবং আগামীকাল সিটি’র বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যেই তারা মাঠে নামবে।
অন্যদিকে, ম্যানচেস্টার সিটি কেবলমাত্র তাদের পুরনো ফর্ম ফিরে পেতে শুরু করেছে, যদিও নিজেদের সেরা ফর্ম থেকে তারা এখনো অনেকটাই দূরে রয়েছে। এভারটনের বিপক্ষে ঘরের মাঠে হতাশাজনকভাবে ড্র করার পর তারা যথাক্রমে প্রিমিয়ার লীগে এবং এফএ কাপে দুইটি ম্যাচে চেলসিকে হারাতে সক্ষম হয়। তবে, তাদের খেলা সর্বশেষ ম্যাচে কারাবাও কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নিজেদের মৌসুমের সবচেয়ে বাজে পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে সাউথ্যাম্পটন এর নিকট ২-০ গোলে পরাজিত হয় সিটিজেনরা।
বিশ্বকাপের পর ক্লাব ফুটবল পুনরায় চালু হওয়ার পর থেকে ম্যানচেস্টার সিটি’র জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হতে চলেছে এই ম্যাচটিই, কেননা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ধারাবাহিকভাবেই দূর্দান্ত খেলে চলেছে। তবে, সিটিজেনরা এটিও জানে যে, লীগ লিডার্স আর্সেনালের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে তাদেরকে এই ম্যাচটিতে জয়লাভ করতেই হবে।
গানারস’রা আগামী রবিবার টটেনহ্যাম হটস্পার্স স্টেডিয়ামে গিয়ে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখোমুখি হবে। ম্যান সিটি চাইবে যেন সেখানে গানারস’রা পয়েন্ট হারায়। তবে, সেই আশা করার আগে তাদের নিজেদেরকে জিততে হবে রেড ডেভিলদের বিপক্ষে।
গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ (Key notes)
- এবারের মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগের যেকোন দলের থেকে বেশি গোল করেছে ম্যানচেস্টার সিটি। তারা এ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের জালে মোট ৪৫ বার বল ঢুকাতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে ৪০টি গোল নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে টেবিল টপার আর্সেনাল।
- শুধুমাত্র এই দুই দলই প্রিমিয়ার লীগের এবারের মৌসুমে ৪০টি বা তার বেশি গোল করতে সমর্থ হয়েছে।
- ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবারের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমে সম্মিলিতভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্লিন শিট অর্জন করতে পেরেছে (৮টি)। আর্সেনাল এবং তাদের ক্লিন শিটের সংখ্যা সমান। ১০টি ক্লিন শিট নিয়ে এবারের মৌসুমের সবচেয়ে সফল রক্ষণভাগের অধিকারী হল নিউক্যাসেল ইউনাইটেড।
- সম্পূর্ণ গত মৌসুম মিলিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কেবলমাত্র ৮টি ক্লিন শিট রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
ফর্ম বিবরণীঃ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (Form Guide: Manchester United)
বিশ্বকাপের পর থেকে নিজেদের খেলা সর্বশেষ ৫টি ম্যাচের সবকটিতেই জয়লাভ করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তবে, তারপরও তারা নিশ্চিন্ত চিত্তে এই ম্যাচটিতে প্রবেশ করতে পারছে না, শুধুমাত্র কারণ তাদের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রিমিয়ার লীগের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি।
এই সময়কালে তারা সকল প্রতিযোগিতায় যে ৫টি দলকে হারিয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি র্যাংকধারী দল ছিল নটিংহ্যাম ফরেস্ট, যারা প্রিমিয়ার লীগে বর্তমানে ১৫তম পজিশনে রয়েছে। এছাড়া, এ ধারায় তারা ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতার একটি দল বার্নলি’র বিপক্ষেও জয়লাভ করেছে।
উল্লেখিত সেই ধারাটিতে তারা যেসকল দলকে হারিয়েছে, তার থেকে ম্যানচেস্টার সিটি’র কোয়ালিটি অনেকটাই বেশি। তবে, আপনি যদি আরো একটু পেছনে ফিরে দেখেন, তাহলেও দেখতে পাবেন যে ম্যান সিটি’র নিকট ৬-৩ গোলে হারার পর থেকে তারা লীগে কেবলমাত্র আর একটি ম্যাচেই পরাজিত হয়েছে। সব মিলিয়ে, তাদের খেলা সর্বশেষ ১১টি ম্যাচের মধ্যে তারা কেবলমাত্র একটিতেই পরাজিত হয়েছে, এবং ৭টিতে জয়লাভ করেছে।
ফর্ম বিবরণীঃ ম্যানচেস্টার সিটি (Form Guide: Manchester City)
মৌসুমের প্রথম ১৭টি ম্যাচের মধ্যে কেবলমাত্র ৩টিতে হারার পরেই কোন দলকে সাধারণত শিরোপার লড়াই থেকে ছিটকে পড়তে দেখা যায় না। তবে, ম্যানচেস্টার সিটি’র নিকট হতে মানুষের প্রত্যাশা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, তারা একটি ম্যাচও হারলে সেটিকে অনেক বড় একটি পরাজয় বলেই ধরে নেওয়া হয়। এই স্ট্যান্ডার্ড ম্যান সিটি নিজেই ধার্য করেছে নিজেদের কপালে, তাদের অসাধারণ ফুটবলীয় স্টাইলের মধ্য দিয়ে।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর বিপক্ষে ম্যান সিটি প্রিমিয়ার লীগে তাদের সবশেষ ৪টি ম্যাচের মধ্যে ৩য় জয়টি হাসিলের উদ্দেশ্যে মাঠে নামবে, যাতে করে তারা লীগ লিডার আর্সেনালের উপর আরো চাপ প্রয়োগ করতে পারে।
পেপ গার্দিওলা’র ম্যান সিটি দলটি এবারের মৌসুমে ঘরের বাইরের মাঠগুলি থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেছে (১৭ পয়েন্ট)। তারা তাদের অ্যাওয়ে ম্যাচগুলির মধ্য থেকে কেবলমাত্র একটিতেই পরাজয়ের শিকার হয়েছে। এই ম্যাচেও তারা সেই রেকর্ডটি ধরে রাখতে চাইবে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম ম্যানচেস্টার সিটি সম্পর্কিত কিছু তথ্য (Manchester United Vs Manchester City Facts)
- ঘরের মাঠে ম্যানচেস্টার সিটি’র বিপক্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাম্প্রতিক ফর্ম খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। ২০১১ সালের পর থেকে এই দুই দল মোট ১২ বার ওল্ড ট্রাফোর্ডে মুখোমুখি হয়েছে, যার মধ্যে ৭ বারই জয়লাভ করেছে সিটিজেনরা।
- থিয়েটার অব ড্রিমসে খেলা সেই ১২টি প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচের মধ্য থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জয়লাভ করতে পেরেছে মাত্র ৩টিতে, আর ড্র হয়েছে মোট ২টি ম্যাচ।
- ম্যানচেস্টার ডার্বির ইতিহাসে কেবলমাত্র ৬ বারের মত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের উপর লীগ ডাবল সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মাঠে নামছে ম্যান সিটি। এর চেয়ে বেশি সংখ্যক বার তারা আর কোন দলের বিপক্ষে লীগ ডাবল সম্পন্ন করতে পারেনি (লিভারপুলের বিপক্ষে ৫ বার)।
- ম্যানচেস্টার সিটি’র বিপক্ষে তাদের খেলা সর্বশেষ ৩টি ম্যাচে সর্বমোট ১২টি গোল হজম করেছে রেড ডেভিলরা। এর মধ্যে গত অক্টোবরে এতিহাদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতেই তারা ৬টি গোল কন্সিড করে। এই তিন ম্যাচের পূর্বে সিটি’র বিপক্ষে খেলা মোট ১২টি ম্যাচে তারা সর্বমোট ১২টি গোল হজম করেছিল।
- ২০০৬ সালের পর থেকে এবারই প্রথম একটি ক্যালেন্ডার বছর শুরুর এত কম সময়ের মধ্যে ম্যানচেস্টার ডার্বি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। ২০০৬ সালের ১৪ই জানুয়ারির সেই ম্যানচেস্টার ডার্বিতে এতিহাদ স্টেডিয়ামে ৩-১ গোলে জয়লাভ করেছিল সিটিজেনরাই।
যেসকল খেলোয়াড়দের উপর সবার নজর থাকবে (Players to watch out for)
মার্কাস র্যাশফোর্ড – ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (Marcus Rashford – Manchester United)
একটি কঠিন ২০২১-২২ মৌসুম পার করার পর এবারের মৌসুমে এসে নিজের সেরা ফর্মে ফিরতে পেরেছেন এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড। এবারের মৌসুমে ৭টি গোল নিয়ে তিনিই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তার খেলা দেখে মনে হচ্ছে যেন তাকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা কোন ডিফেন্ডারেরই নেই।
এই ধরণের বড় বড় ম্যাচে খুব ভালো খেলার রেকর্ড রয়েছে র্যাশফোর্ড এর। এছাড়া, ম্যানচেস্টার সিটি’র বিপক্ষেও মোট ৪টি গোল ইতিমধ্যে তার ঝুলিতে রয়েছে।
আর্লিং হাল্যান্ড – ম্যানচেস্টার সিটি (Erling Haaland – Manchester City)
নরওয়েজিয়ান এই তারকা স্ট্রাইকারের নিকট এবারের মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে ইতিমধ্যে ২১টি গোল রয়েছে, এবং গত মৌসুমের গোল্ডেন বিট জয়ী ট্যালিকে ছুঁতে তার আর মাত্র ২টি গোল দরকার।
তিনি নিজের সবটুকু দিয়ে গত অক্টোবরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর উপর হামলা চালান, এবং ম্যাচটিতে হ্যাট্রিক করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। আগামীকালও তিনি অনেকটা সেরকম কিছু করার লক্ষ্যেই মাঠে নামবেন।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম ম্যানচেস্টার সিটি প্রেডিকশন (Manchester United Vs Manchester City Prediction)
আমরা এই ম্যাচটিতে ম্যানচেস্টার সিটি’র একটি ২-১ গোলের জয়ের দিকেই রায় দিয়েছি, কেননা আর্সেনালকে ধরার জন্য তাদের এখন প্রত্যেকটি ম্যাচেই জয় দরকার। এছাড়া, শুধুমাত্র কোয়ালিটি বা গুণমানের দিক থেকে দেখলেও বড় বড় ম্যাচে ম্যান সিটি’র স্কোয়াডটিকেই এগিয়ে রাখতে হবে।
সিটি’র বিপক্ষে নিজেদের সবশেষ ম্যাচে নাকানিচুবানি খাওয়ার পর থেকে ইউনাইটেড কতটা উন্নতিসাধন করেছে নিজেদের খেলায়, তার প্রমাণ তারা এই ম্যাচে দেবে ঠিকই, তবে সেটিও যথেষ্ট হবে না তাদের ম্যাচটি জেতার বেলায়। এই ম্যাচের মধ্য দিয়েই লীগে রেড ডেভিলদের চার ম্যাচের জয়ের ধারাটি ভেঙে ফেলবে ম্যানচেস্টার সিটি — এমনটিই আমাদের ধারণা।