নিউক্যাসেল ইউনাইটেড তাদের নিজেদের ভক্তদের সাথে সাথে বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ও জনপ্রিয় লীগ অর্থাৎ প্রিমিয়ার লীগের সকল ভক্তদের জন্যই একটি মজার ২০২২-২৩ মৌসুমের আশ্বাস দিচ্ছে, বিশেষ করে ২০২১-২২ মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে তাদের অসাধারণ ক্রীড়ানৈপূণ্য প্রদর্শনের জের ধরে।

গত মৌসুমের সেই অন্তিম ভাগটির দিকে তাকালেই স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, টাইনসাইডের ম্যাগপাই’রা আগামী মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ চারে থাকার জন্য অন্যতম সেরা এক দাবিদার।

এ সবকিছুর শুরু নিউক্যাসেলের জন্য তখনই হয়েছিল যখন ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পি আই এফ) নামক একটি কনসোর্টিয়াম, অ্যামান্ডা স্টেভলি’র নেতৃত্বে পিসিপি ক্যাপিটাল পার্টনারস, এবং ডেভিড ও সাইমন রিউবেন এর নেতৃত্বে আর বি স্পোর্টস এন্ড মিডিয়া মিলে দলটিকে কিনে নেয় তাদের পূর্ববর্তী মালিকের নিকট হতে। এবার এই চুক্তিটি চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে অবশ্য ২০২০ সালের জুলাইয়ে এই একই কনসোর্টিয়াম নিউক্যাসেল ইউনাইটেডকে কেনার সুযোগটি হাতছাড়া করেছিল অজানা কোন এক কারণে।

ক্লাবের ক্ষমতায় আসার ঠিক পরেই তাদের জন্য প্রথম যে কর্তব্য ছিল তা হল ক্লাবটির তখনকার চলতি ম্যানেজার স্টিভ ব্রুসকে সরিয়ে এমন কাউকে দায়িত্বটি দেওয়া, যিনি ক্লাবটিকে সঠিক পথে ধাবিত করতে সক্ষম হবেন। এমতাবস্থায় তারা সাহারা নেন সাবেক বোর্নমাউথ কোচ এডি হাও এর, যদিও অনেকেই ভেবেছিল তারা বেছে নিবেন নামকরা কোন বিশ্বখ্যাত কোচকে। যাই হোক, নিউক্যাসেল ম্যানেজার হিসেবে এডি হাও এর শুরুটা ছিল বেশ হতাশাজনক, কারণ তিনি শত চেষ্টা করেও দলটিকে রেলিগেশন জোন থেকে বের করতেই পারছিলেন না। কিন্তু, তখনই তাদের জন্য শান্তির বাতাস বইয়ে আনে জানুয়ারির শীতকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোটি।

Source: Twitter
Source: Twitter

এরপরই তারা কিছু প্রয়োজনীয় পজিশনের জন্য বেশ কিছু খেলোয়াড় কিনে ফেলেন। তবে, ট্রান্সফার উইন্ডো চলাকালীন অনেকেই মনে করছিল যে তাদের করা এসব ট্রান্সফার যথেষ্ট হবে না রেলিগেশন এড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে। আবার অনেকেই মনে করেছিল যে, যে পরিমাণ অর্থ ক্লাবটির নিকট এসেছিল নতুন মালিকানার সুবাদে, সে পরিমাণ অর্থ কাজে লাগিয়ে আরো বেশি ভালো একটি দল তারা তৈরি করতে পারতো সেই ট্রান্সফার উইন্ডোটিতেই।

 

একটি অপর্যাপ্ত ট্রান্সফার উইন্ডো?

দলে রদবদলের শুরুতেই, অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের শীতকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে এডি হাও এর করা সবচেয়ে নামকরা সাইনিং ছিল সাবেক স্পার্স রাইট ব্যাক, কিয়েরান ট্রিপিয়ার, যিনি কি না সেসময় খেলতেন স্প্যানিশ দল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে। ইংল্যান্ড এর আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হওয়ার ফলে ট্রিপিয়ার তার লা লিগা ক্যারিয়ারে সমাপ্তি টেনে ফিরে আসেন তার নিজের দেশে। মাত্র ১৩.৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে নিউক্যাসেলে যোগ দেন তিনি। তাকে দলে নেওয়ার প্রধান কারণই ছিল তার অভিজ্ঞতা —  বড় বড় দলের বিরুদ্ধে খেলার এবং নামকরা সব ম্যানেজারদের সাথে কাজ করার।

এরপর সেই একই ট্রান্সফার উইন্ডোতেই তারা আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পজিশনের জন্য খেলোয়াড় কিনেন, যার মধ্যে রয়েছেন ২২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বার্নলি থেকে স্ট্রাইকার ক্রিস উড, ফরাসি দল অলিম্পিক লিওঁ থেকে ৩৩ মিলিয়ন ইউরোর (এড-অন সহ প্রায় ৪০ মিলিয়ন ইউরো বা তার উর্দ্ধে) বিনিময়ে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ব্রুনো গিমারেশ, এস্টন ভিলা থেকে লোনে লেফট ব্যাক ম্যাট টার্গেট, এবং ব্রাইটন & হোভ এলবিয়ন থেকে ১৩.৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সেন্টার ব্যাক ড্যান বার্নকে দলে ভেড়ায় এডি হাও এর দল।

পড়ুন:  চেলসি বনাম ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড প্রিভিউ এবং প্রেডিকশন - ০৩/০৯/২০২২
Source: Twitter

৯১ মিলিয়ন ইউরোর সেই বিনিয়োগ সে সময়ে প্রিমিয়ার লীগের অন্যান্য সকল দলের নিকট নিউক্যাসেলের হুশিয়ারি ছিল ঠিকই, কিন্তু যে সকল খেলোয়াড়দের তারা কিনেছিল তাদের নামগুলি যথেষ্ট ছিল না ম্যাগপাই ভক্তদের মনে আশার উদ্রেক ঘটানোর ক্ষেত্রে, অথবা প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মনে ভয়ের সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে।

কিন্তু, শেষ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে যে, ঐসকল নতুন খেলোয়াড়েরাই তাদের বুদ্ধিদীপ্ত পারফর্মেন্স ফিয়ে নিউক্যাসেল ইউনাইটেডকে এবং ম্যানেজার এডি হাওকে বিপদ থেকে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছে। এক কথায়, তারা ক্লাবটির ভাগ্য পুরো ৩৬০° ঘুরিয়ে দিয়েছে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই।

জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোর প্রাক কালে, নিউক্যাসেল ইউনাইটেড তাদের সর্বশেষ ১১টি খেলার মধ্যে মাত্র ১টিতে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল, এবং প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের ১৯তম পজিশনে অবস্থান করছিল। এছাড়া রেলিগেশনের জন্য ফেভারিট হিসেবেও তাদের নামই বার বার উঠে আসছিল। কিন্তু, তাদের সেই নতুন ৫টি সাইনিং এর উপর ভর করেই তারা লীগের সবচেয়ে সফল দলগুলির একটিতে পরিণত হয়। ২০২২ সালে, অর্থাৎ ২০২১-২২ মৌসুমের বাকিটুকু জুড়ে, শুধুমাত্র প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ দুই দল — ম্যানচেস্টার সিটি এবং লিভারপুল — নিউক্যাসেলের চেয়ে বেশি পয়েন্ট অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

তারা মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে অতি সুন্দর ফুটবল উপহার দেয়ার মাধ্যমে লীগ টেবিলের ১১তম অবস্থানে থেকে লীগ মৌসুম শেষ করে। এমন পারফর্মেন্স পুরো মৌসুমজুড়ে দিতে পারলে হয়তো তারা শীর্ষ চারের লড়াইয়ে আসলেও লিপ্ত থাকতে সক্ষম হতো। এডি হাও এর দলের সফলতা নিয়ে এখন প্রিমিয়ার লীগ চত্ত্বরে প্রচুর কথাবার্তা চলছে, এবং এমটিই মনে করা হচ্ছে যে আসন্ন মৌসুমে তারা হবে প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ চারের লড়াইয়ের অন্যতম একটি নাম। তবে, ফুটবল বোদ্ধারা এটিও মনে করেন যে, তেমনটি অর্জন করতে হলে প্রথমেই নিউক্যাসেলকে আরো কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে হবে।

 

একটি সাহসী রণকৌশল

নিউক্যাসেল ইউনাইটেড এর ক্লাব অধিনায়ক জামাল ল্যাসেলস গত মৌসুম শেষ হওয়ার ঠিক আগেই একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে এডি হাও ক্লাবটির ম্যানেজার হয়ে আসার পর থেকে দলের সার্বিক মনোভাব এবং আত্মবিশ্বাসে কতটা আকাশ-পাতাল তফাত এসেছে। তার মতে, প্রকৃতপক্ষে, পুরো ক্লাবটিই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।

এই সাবেক এএফসি বোর্নমাউথ কোচকে নিউক্যাসেল ইউনাইটেড এর ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পূর্বে ক্লাবটির কর্তৃপক্ষ অনেক জল্পনা কল্পনায় লিপ্ত হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন হাও কে নিয়োগ দেওয়ার বিরুদ্ধে। তাদের মতে, এডি হাও শুধুমাত্র এমন ক্লাবগুলিকেই পরিচালনা করতে পারেন যেসব ক্লাব রেলিগেশন থেকে বাঁচার লড়াইয়েই লিপ্ত থাকে সারা সিজন ধরে। এবং, সত্যি বলতে, তাদের কথায় সত্যতাও ছিল বটে। তবে, জরুরি সময়ে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও জরুরি, এবং নিউক্যাসেলের নতুন মালিকরা এডি হাও এর উপরেই তাদের আস্থা স্থাপন করতে রাজি হোন। আর সেই সিদ্ধান্তটি নিউক্যাসেলের জন্য ছিল একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। হাও দলের দায়িত্ব নিয়ে দলটির মানসিকতা এবং রণকৌশল পুরোপুরি বদলিয়ে ফেলেন, এবং তা যথাযথভাবে কাজেও দিয়েছে, যার প্রমাণ এখন সম্পূর্ণভাবে আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে।

পড়ুন:  শীর্ষ 10 প্রিমিয়ার লীগ সর্বকালের শীর্ষ গোল স্কোরার

তিনি ক্লাবটিতে সংযোজন করেন দৈনিক ১২ ঘন্টা ট্রেনিংয়ের নতুন এক নিয়ম, যার মধ্যে অবশ্যই ছিল কষ্টদায়ক ট্রেনিং ড্রিল এবং শারিরিক কসরত। এছাড়াও তিনি এসকল ট্রেনিং সেশনে অনেক সময় ব্যয় করেছেন খেলোয়াড় এবং স্টাফদের সাথে নতুন রণকৌশল সম্পর্কে আলোচনা করতে এবং সেগুলি ঠিকমত সাজাতে। তিনি এখানেও থেমে থাকেননি। কিছু খেলোয়াড়দের প্রতি তিনি দিয়েছেন অতিরিক্ত নজর, যার মধ্যে অন্যতম হলেন প্রতিভাবান ব্রাজিলিয়ান জয়েলিংটন। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে হাও তাকে একজন অপরিপক্ক স্ট্রাইকার থেকে দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ে পরিণত করেছেন, তাও আবার তাকে মিডফিল্ডে খেলিয়ে।

Source: Twitter

এ সবকিছু ছাড়াও তিনি দলটিতে তার নিজস্ব একটি দিকও সংযোজন করেছেন, এবং তা হচ্ছে, তিনি তার পুরো দলকেই একটি বন্ডিং সেশনে অংশগ্রহণ করাতেন, যেখানে তারা নিজেদের মধ্যেই নিজেদের ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান করতেন এবং সেগুলি নিয়ে শলা-পরামর্শও করতে পারতেন। এতে করে তিনি জানতে পারতেন যে কোন খেলোয়াড় এর ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলি ভালো করার তাগিদ জোগায়। এমনকি, তিনি তার খেলোয়াড়দেরকে দিয়ে এমন একটি দলগত ছবিও তুলিয়েছিলেন যেখানে সব খেলোয়াড় তো উপস্থিত ছিলেনই, সাথে তাদের বাবা-মা, পরিবারবর্গ এবং কাছের বন্ধুরাও উপস্থিত ছিলেন। এভাবেই তিনি দলটির একত্রতা বাড়িয়েছেন।

কিন্তু, যে ব্যাপারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল, বর্তমানে নিউক্যাসেল ইউনাইটেড পাচ্ছে একদম প্রকৃত কোচিং। অন্য বহু কোচের সাথে এডি হাও এর একটি বড় তফাত হচ্ছে, তিনি শুধু খেলোয়াড়দের দিকে বিভিন্ন ট্যাকটিক বা রণকৌশল ছুড়ে দিয়ে বসে থাকেন না, বরং তা মাঠে কার্যকর করার পদ্ধতিগুলিও তাদেরকে হাতেনাতে শিখিয়ে দেন।

ল্যাসেলস তার সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, “সবকিছু সম্পূর্ণরূপে ম্যানেজারের হাতেই থাকে। যেসকল ট্রেনিং ড্রিল তিনি আমাদের দিয়ে করান, সেগুলি সবই আমাদের আত্মবিশ্বাস এবং প্রতিযোগী মনোভাব বাড়াতে সাহায্য করে। তার কোচিংয়ের কোন অংশই নেতিবাচক নয়, এবং ব্যাক ফুটে খেলতে তিনি একদমই পছন্দ করেন না। এর পুরোটাই আক্রমণ কেন্দ্রিক হয়ে থাকে, এবং কিভাবে ফ্রন্ট ফুটে খেলে যথাযথভাবে ডিফেন্সও সামলানো যায়, তাই তিনি শিখিয়েছেন আমাদেরকে। যখন আপনি এমন মনোভাব নিয়ে দিনের পর দিন ট্রেনিং করবেন এবং প্রতিপক্ষকে হারানোর বিষয়েই সবসময় যুক্তিবুদ্ধি করতে থাকবেন, তখন একটি নির্দিষ্ট সময় পর তা আপনার ডিএনএতে পরিণত হবে সেটাই স্বাভাবিক।”

“আপনারা এর উৎকৃষ্ট একটি উদাহরণ দেখতে পাবেন আর্সেনালের বিরুদ্ধে আমাদের ম্যাচটিতে, যেখানে আমরা পুরোটা ম্যাচ জুড়েই তাদেরকে চাপে রেখেছিলাম, এবং তার ফলে তারা বার বার ভুলও করেছিল। এখন আমাদের ব্যাক ফোর থাকে মধ্যভাগের কাছাকাছি, অনেক সময় প্রতিপক্ষের অর্ধে, যেখানে অন্য ম্যানেজারদের অধীনে আমাদের ব্যাক ফোর থাকতো ১৮ গজের বাক্সের ভেতরে, পুরোপুরি ডিফেন্সিভ একটি ফর্মেশনে। ঐ অবস্থা থেকে বর্তমান অবস্থায় আসার পুরো কৃতিত্ব তাই ম্যানেজার এবং স্টাফদের উপরই দিতে হয়।”

পড়ুন:  সর্বকালের সেরা 5টি সবচেয়ে সফল ইংলিশ ফুটবল ক্লাব

“আমি খুবই উত্তেজিত এবং অনুপ্রাণিত হই এই ভেবে যে, এত কম সময়ে এতদূর আসতে পারলে, কয়েক বছর পর এই ক্লাব কতদূর যেতে পারে তা একদমই কল্পনাতীত।”

 

আরো আত্মবিশ্বাসী এক নিউক্যাসেল

তাদের বিগত মৌসুমের দূর্দান্ত পারফর্মেন্স (বিশেষ করে শেষ ভাগে) এর কথা মাথায় রেখে নিউক্যাসেল ইউনাইটেডে এখন বইছে প্রশান্তির বাতাস। তারা এখন আত্মবিশ্বাসের চরম শিখরে। এই অসাধারণ আক্রমণাত্মক মানসিকতার সাথে সাথে তাদের নতুন মালিকদের অঢেল সম্পদের কথা মাথায় রাখলে এটি বোঝা খুব কঠিন নয় যে, তারা বেশ কিছু খেলোয়াড় কিনে আগামী মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ চারে থাকার লড়াইয়ে আর্সেনাল, টটেনহ্যাম এবং ম্যান ইউনাইটেডদের মত দলকে ভালোই প্রতিযোগিতা উপহার দিবে।

ট্রান্সফারের দুনিয়ায় সম্ভবত বর্তমানে এমন কোন খেলোয়াড়ই নেই যাদেরকে নিয়ে নিউক্যাসেল এ যোগ দেওয়ার কোন গুজব ছড়ায়নি। এটি শুধু একটি দিকেই ইঙ্গিত করে — কমপক্ষে আগামী কয়েকটি মৌসুমজুড়ে তাদের স্বপ্ন থাকবে আকাশচুম্বী। বর্তমানে ট্রান্সফার মিলে নিউক্যাসেলের নামের সাথে যুক্ত হচ্ছে উসমান দেম্বেলে, জেসি লিংগার্ড এবং ভিক্টোর অসিমহেনের মত হাই-প্রোফাইল সব নাম।

এখনো পর্যন্ত এই গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে নিউক্যাসেল নতুন কোন খেলোয়াড়কে কেনার ডিল চূড়ান্ত করতে পারেনি। কিন্তু তাদের অসাধারণ পারফর্মেন্সগুলির উপর ভর করে তারা এখন ট্রান্সফার মার্কেটে আরো সাহসী পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী হবে। সেই সুবাদে তারা অবশ্যই এই ট্রান্সফার উইন্ডোতে কিয়েরান ট্রিপিয়ারের চেয়ে বড় মাপের কোন খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে সক্ষম হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

Source: Twitter

এডি হাও ইতিমধ্যে দলের মধ্যে এমন সকল পজিশন চিহ্নিত করেছেন যেখানে যেখানে তার নতুন খেলোয়াড় ঢুকিয়ে দলের শক্তি আরো বাড়াতে হবে, এবং আমরাও তার সাথে একমত। মৌসুম শেষে শীর্ষ চারে থাকতে হলে ম্যাগপাইদের এখন দরকার শুধু একজন উন্নত মানের গোলকিপার, একজন সেন্টার ব্যাক, একজন লেফট ব্যাক, এবং একজন প্রমাণিত গোলস্কোরার।

এ প্রসংগে সংবাদ মাধ্যমে অনেক নামই উঠে আসছে, যারা নিউক্যাসেলের সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স এর উপর ভিত্তি করে এবং তাদের এই নতুন প্রজেক্টের বিশালতা দেখে সেন্ট জেমস’স পার্কে আসতে মোটেও পিছপা হবেন না।

 

উপসংহার

নিউক্যাসেলের মধ্যে সেই বড় ক্লাব হওয়ার মানসিকতাটি আবারও ফিরে এসেছে, যা মাইক অ্যাশলি’র মালিকানার অধীনে তারা প্রায় হারিয়েই ফেলেছিল। এছাড়া সকল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মত এবং যেকোন খেলোয়াড়কে কেনার মত টাকাও তাদের এখন রয়েছে, কারণ তারা এখন অফিসিয়ালি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ক্লাব।

কিন্তু, এত কিছুর পরও এটা মানতেই হবে যে, ইংলিশ ফুটবলের প্রথম সারীর ক্লাব হিসেবে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করা এতটাও সহজ নয়। তবে, গত মৌসুমের শেষের দিকের ফর্ম যদি তারা ধরে রাখতে পারে, তাহলে আগামী মৌসুম বা তার পরের কয়েকটি মৌসুমের মধ্যেই তারা প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ চারে ঢুকে পড়তে পারবে বলেই আশা করা যায়।

 

Share.
Leave A Reply