বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যেকোন খেলোয়াড়ের জন্যই প্রিমিয়ার লীগ হল সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার নাম। একজন খেলোয়াড়ের মাহাত্ম্য প্রায়ই মাপা হয় এই বিষয়টি মাথায় রেখে যে সেই খেলোয়াড় কখনো প্রিমিয়ার লীগে খেলেছেন কি না, এবং খেলে থাকলে কেমন ছিল তার এই লীগে পারফর্মেন্স। প্রিমিয়ার লীগের গুরুত্ব বিশ্ব ফুটবলে এতটাই বেশি!

যদিও সকল পজিশনেই খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে তাদের সেরাটাই মাঠে বের করে দিতে বাধ্য করে এই প্রিমিয়ার লীগ, তবুও বলাই বাহুল্য যে, স্ট্রাইলার বা ফরোয়ার্ড বা গোলস্কোরার, অর্থাৎ এক কথায় আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের জন্য এই লীগটি আসলেই অনেক বেশি দয়াহীন, কারণ তারাই হলেন পুরো দলের ভালো খেলাকে গোলে পরিণত করার যন্ত্র। যদি তারা তাদের কাজে পারদর্শী না হোন, তাহলে দলও ভালো করতে পারেনা, এবং বিনিময়ে তাদের ভক্তদের ও মিডিয়ার বিদ্রুপের শিকার হতে হয় খুব সহজেই। আজকাল প্রিমিয়ার লীগের দর্শক ও ভক্ত-সমর্থকদের গোলের চাহিদাও বেড়েছে বটে! তবে মোহাম্মদ সালাহ, সার্জিও আগুয়েরো, এবং থিয়েরি অঁরি’র মত খেলোয়াড় প্রতি নিয়ত পাওয়া খুব কঠিন, কারণ এসকল লিজেন্ডরা এবং তাদের গোল করার ক্ষমতা এখনো অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়, কারণ তারা হলেন অতি বিশেষ ট্যালেন্ট, যা বহুদিন পর পর একবার করে দেখতে পাওয়া যায়।

তবে, মুদ্রার একটি অপর পৃষ্ঠও রয়েছে, এবং সেই পৃষ্ঠে রয়েছেন এমন সকল স্টাইকার বা আক্রমণভাগের খেলোয়াড় যারা অনেক টাকার বিনিময়ে প্রিমিয়ার লীগে আসলেও তেমন কিছুই করতে পারেননি, বরং খেয়েছেন ফ্লপ! আজকে আমরা এমনি পাঁচজন আক্রমনাত্মক খেলোয়াড়ের ব্যাপারে জানব যারা বহু মূল্যে প্রিমিয়ার লীগে প্রবেশ করলেও তাদের ক্লাব বা ভক্তদের তেমন কিছুই উপহার দিতে পারেননি।

কেন আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের প্রিমিয়ার লীগে ভালো করতে বেশ বেগ পেতে হয়? (Why do attackers barely survive the Premier League)

এই সার্বজনীন প্রশ্নটির উত্তর খুবই সহজ। আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের জন্য প্রিমিয়ার লীগ খুবই বিপজ্জনক ও কঠিন হওয়ার প্রধান কারণ হল এই লীগের অতি প্রতিযোগিতামূলক খেলার ধাঁচ এবং এই লীগে খেলা ডিফেন্ডারদের অতি উচ্চ গুণমান। থিয়াগো সিলভা, রুবেন ডিয়াস, ভার্জিল ভ্যান ডাইক, এবং রাফায়েল ভারানের মত বড় বড় খেলোয়াড়েরা এই লীগের বিভিন্ন দলের রক্ষণভাগ সামলিয়ে থাকেন, যা এই লীগের যেকোন ফরোয়ার্ডের খেলাকে এবং গোল করাকে অনেকাংশে কঠিন এবং দুঃসাধ্য করে তোলে। 

আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের উপর চাপও থাকে অনেক বেশি, কারণ ব্রিটিশ মানুষেরা এই ঐতিহ্যবাহী ফুটবল খেলাকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেয়। তাই খেলোয়াড়দের উপর সবসময়ই একটি প্রত্যাশা কাজ করে যেন তারা প্রতিটা সপ্তাহে এক বা একাধিক বার মাঠে নামতে পারে এবং তাদের সেরা খেলাটা উপহার দিতে পারে। ভালো খেলতে না পারলে প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলোর ভক্ত সমর্থকদের ক্ষিপ্ততাও অনেক বড় আকার ধারণ করে ফেলে। এসকল কারণেই প্রিমিয়ার লীগে আসা যেকোন অ্যাটাকিং খেলোয়াড়ের জন্য ধারাবাহিকভাবে ফিট থাকা, ভালো করা এবং সবার মন জয় করা খুবই কঠিন একটি ব্যাপার।

আন্দ্রে শেভচেঙ্কো – চেলসি (Andrei Shevchenko – Chelsea)

২০০৬ সাল পর্যন্ত আন্দ্রে শেভচেঙ্কোকে ধরা হত একজন অসাধারণ ফরোয়ার্ড হিসেবে, যিনি যেকোন ডিফেন্ডারের মোকাবেলা করে গোল ছিনিয়ে আনতে সক্ষম ছিলেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ২৫০টিরও বেশি গোল করে তিনি ফুটবল ইতিহাসে নিজের নামও স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়ে ফেলেছিলেন, এবং তাকে ধরা হত বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা ফিনিশার হিসেবে।

কেমন ছিল সফর? (How it was)

এসি মিলানে খেলাকালীন সময়ে এই ইউক্রেনিয়ান ফরোয়ার্ড ছিলেন তার জীবনের সেরা ফর্মে, যেখানে তিনি সর্বমোট ১৭৫টি গোল করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং এখনো পর্যন্ত তিনিই ক্লাবটির ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাবটি দখল করে রেখেছেন। এটি যেকোন খেলোয়াড়ের জন্যই একটি বড় অর্জন, এবং শেভচেঙ্কোর ভালো পারফর্মেন্স তাকে ইতিমধ্যে এসি মিলানের একজন ক্লাব লিজেন্ডও বানিয়ে দিয়েছিল। এছাড়াও, তিনি এসি মিলানের হয়েই ২০০৩ সালের উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগও জিতেছিলেন, এবং সেই জয়ের পেছনের নায়কও ছিলেন তিনিই।

পড়ুন:  এনফিল্ডে ভার্জিল ভ্যান ডাইকের অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি শেষমেষ ভেঙেই গেল

পতনের শুরু কোথা থেকে? (Where did it go down?)

একটি সম্পূর্ণ বছর চেষ্টা করার পর ২০০৬ সালে তার অনেক বড় ভক্ত এবং চেলসি’র তখনকার নব্য মালিক রোমান আব্রামোভিচ তাকে শেষ পর্যন্ত চেলসিতে এনেই ছাড়েন। ২০০৬ সালে তাকে কিনতে চেলসিকে ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড গুনতে হয়। এমন বড় অঙ্কের মূল্য যেকোন ক্লাবই শুধুমাত্র কোন অসাধারণ বা বড় মাপের খেলোয়াড়ের জন্যই খরচ করতে রাজি হয়, যিনি কি না তার ক্ষমতার চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছেন। 

কিন্তু, চেলসিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি তার সর্বোচ্চ ক্ষমতায় কখনোই পৌঁছাতে পারেননি। এসি মিলানে তার রেকর্ডের তুলনায় তার গোল করার প্রবণতা চেলসিতে অনেকাংশেই কমে গিয়েছিল, এবং গোলের সামনে তার চলাচল বা মুভমেন্টও খুবই ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে পড়েছিল। ২ বছর চেলসিতে কাটিয়ে তিনি মাত্র ২২টি গোল করতে সক্ষম হয়েছিলেন, এবং তারপর, ২০০৮ সালে, চেলসি তাকে আবার এসি মিলানেই লোনে ফেরত পাঠায়। এভাবেই চেলসি ভক্তদের মনে দাগ না কেটেই প্রিমিয়ার লীগে তার বাজে সময়ের সমাপ্তি ঘটে।

সেবাস্টিয়ান আলের – ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড (Sebastian Haller – West Ham United)

কিছু খেলোয়াড়েরা প্রিমিয়ার লীগে খেলার জন্য একদমই তৈরি বা ফিট নন, এবং এরকম খেলোয়াড়ের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হলেন সেবাস্টিয়ান আলের। গোলের সামনে তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা ও দক্ষতার কথা অবশ্য বলাই বাহুল্য, যা তিনি তাঁর বর্তমান ক্লাব আয়াক্সে প্রতিটা খেলায় গোলের পর গোল করে প্রমাণ করে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন প্রিমিয়ার লীগের দল ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডেও তিনি নাম লিখিয়েছিলেন? আপনি কি জানেন সেখানে তাকে কত বেশি বেগ পেতে হয়েছিল গোল করার জন্য? এ সবকিছু আজ আমরা জানাব আপনাকে।

কেমন ছিল সফর? (How it was)

সেটি ছিল ২০১৪ যখন ডাচ ক্লাব এফসি ইউট্রেখ্ত সেবাস্টিয়ান আলেরকে লোনে দলে ভিড়িয়ে গোবরে পদ্মফুলের জন্ম দিয়েছিল। খুব কম সময়ের মধ্যেই সেখানে তিনি একজন খ্যাতনামা গোলস্কোরারে পরিণত হয়ে ওঠেন। ওলন্দাজ সেই আউটফিটে তিনি তারপরে আরো ৩টি মৌসুম কাটান, এবং সেই সম্পূর্ণ সময়কালে তার করা গোলের সংখ্যা ছিল আকাশচুম্বী। ২০১৭ সালে তিনি জার্মান ক্লাব ফ্র‍্যাঙ্কফুর্টে পাড়ি জমান এবং সেখানেও তার ফর্ম এর গ্রাফ এক বিন্দুও নিম্নমুখী হয়নি। সেখানে তিনি ২ বছর কাটান, যে সময়ে তিনি ৩৩ বার দলটির হয়ে বল গোলে জড়িয়েছিলেন।

পতনের শুরু কোথা থেকে? (Where did it go down?)

২০১৯ সালে ওয়েস্ট হ্যাম এমন একটি কাজ করে যা তাদের ইতিহাসে তারা খুব কম সংখ্যক বারই করেছে। তারা তাদের প্রায় সম্পূর্ণ ট্রান্সফার বাজেট কাজে লাগিয়ে ৪৫ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে ফ্র‍্যাঙ্কফুর্ট থেকে সেবাস্টিয়ান আলেরকে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসে। সেই দলবদলটি ছিল ওয়েস্ট হ্যাম এবং ইংলিশ ফুটবলের জন্য একটি তাক লাগানো ইভেন্ট। কিন্তু, যদিও সবাই আশা করছিল এবং অনেকটা নিশ্চিতই ছিল যে আলের পুরো লীগকেই চমকে দিবেন বা তার আলোয় আলোকিত করবেন, এমন কিছু তো হয়ইনি, বরং যা হয়েছে তা ঠিক তার উল্টোটা। দেড় বছর ক্লাবটিতে খেলার পর দেখা গিয়েছিল যে সেবাস্টিয়ান আলের ওয়েস্ট হ্যামের হয়ে মাত্র ১৪টি গোল করতে সক্ষম হয়েছিলেন, যার মধ্যে অধিকাংশই এসেছিল কাপ কম্পিটিশনে। ওমন গগণবিদারী মূল্যে কেনা খেলোয়াড় এর কাছে থেকে ওয়েস্ট হ্যামের আশা অবশ্যই আরো অনেক অনেক গুণে বেশি ছিল। কিন্তু, তিনি ধারাবাহিকভাবে ক্লাবটি এবং তার ভক্তদের হতাশ করে গিয়েছেন।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট হ্যামের নিকট একটি সুযোগ আসে আলেরকে বিক্রি করে দেওয়ার, এবং তারা খুব তাড়াতাড়ি সেই সুযোগটিকে লাজে লাগিয়ে আলেরকে আয়াক্সের কাছে বিক্রি করে দেন। এবং সাথে সাথেই, প্রিমিয়ার লীগের সেই ফ্লপ স্ট্রাইকার আমস্টারডামে গিয়ে আবারো একজন নিয়মিত গোলস্কোরার হয়ে ওঠেন। এখন পর্যন্ত তিনি আয়াক্সের হয়ে ৬৩টি ম্যাচ খেলে ৪৬টি গোল করতে সক্ষম হয়েছেন।

পড়ুন:  ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়ন বনাম লেস্টার সিটি প্রিভিউ এবং প্রেডিকশন - ০৪/০৯/২০২২

ফার্নান্দো তরেস – চেলসি (Fernando Torres – Chelsea)

ফার্নান্দো তরেস একজন খ্যাতনামা ফুটবলার, যিনি একটি অসাধারণ এবং সাফল্যে ভরা ক্যারিয়ার পার করেছেন। অনেকের মতেই তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সুন্দর ও সেরা সময়গুলি তিনি পার করেছিলেন যখন তিনি খেলতেন লিভারপুলের হয়ে। তিনি গোলের সামনে ছিলেম একজন দানবাকার উপস্থিতি, যিনি গোল তো মিস করতেনই না, বরং হাফ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গোলে পরিণত করতেন। তরেস বহু ম্যাচে ছিলেন লিভারপুলের একক নায়ক। বড় বড় ম্যাচে তার পারফর্মেন্স ছিল দেখার মত, এবং সবসময় স্পটলাইটে থেকেই তিনি মাঠের পর মাঠ দাপিয়ে বেড়াতেন। কিন্তু, তার ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে তিনি আরেক ইংলিশ ক্লাব চেলসিতে যোগ দিয়েছিলেন, যেখানে তার ফর্মের বিশাল অধপতন ঘটে। তিনি সেখানে তার অতীতের ছায়া হয়েই ছিলেন, বেশির ভাগ ম্যাচে তিনি থাকতেন অদৃশ্য, এবং সেখানেই তিনি একজন দামী ফ্লপ হিসেবে তার খেতাবটি অর্জন করেন!

কেমন ছিল সফর? (How it was)

একজন অসাধারণ গোলস্কোরার হিসেবে ফার্নান্দো তরেসের সূচনা হয়েছিল আটলেটিকো মাদ্রিদে। সেখানে তিনি প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন ২০০০ সালে, এবং বেশ কিছু বছর ধরেই ক্লাবটির হয়ে তিনি নিয়মিত গোল করে গিয়েছেন। তিনি ছিলেন দলটির জন্য একজন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়, যিনি দলের বিপদে সবসময় এগিয়ে আসতেন এবং গোল করে বিপদ থেকে রক্ষা করতেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি দলটির হয়ে ৯৭টি গোল করে, যা ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুলের নজর কাড়ে এবং তারা তাকে দলে ভিড়ান। এবং লিভারপুলেই তিনি তার “এল ফেনোমেনন” উপাধিটি অর্জন করেন। অল রেড’দের হয়ে তিনি মাত্র ৩ বছরেই ৮১টি গোল করে বসেন, যা প্রিমিয়ার লীগের স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে এক কথায় অসাধারণ। 

কিন্তু, তার ঠিক পরেই আসে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কালো অধ্যায়টি।

পতনের শুরু কোথা থেকে? (Where did it go down?)

২০১১ সালের জানুয়ারিতে, চেলসি একটি বড় মাপের ট্রান্সফারে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে স্প্যানিশ সুপারস্টার ফার্নান্দো তরেসকে দলে আনে। সে সময়ে তিনি ছিলেন বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট গোলদাতাদের মধ্যে একজন, এবং সেজন্যই সবাই ভেবেছিল যে ট্রান্সফারটি সফলই হবে। 

এর পরের তিন বছরে তিনি অনেকগুলি দলগত সাফল্য অর্জন করলেও ব্যক্তিগত দিক থেকে দেখলে, সেই তিন বছর ছিল তরেসের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ তিনটি বছর, যেখানে তিনি ধারাবাহিকভাবে একদমই পারফর্ম করতে পারেননি, বরং সহজ সহজ অনেক সুযোগ নষ্ট করে চেলসি ভক্তদের অপছন্দের তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন। এবং, ধীরে ধীরে তিনি চেলসির বেঞ্চের একজন নিয়মিত সদস্য হয়ে ওঠেন। ক্লাবটিতে তার অবস্থা এতই শোচনীয় হয়ে উঠেছিল যে, শেষ পর্যন্ত চেলসি তাকে ২০১৩/১৪ মৌসুমে এসি মিলানের কাছে লোনে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

নিকোলাস পেপে – আর্সেনাল (Nicolas Pepe – Arsenal)

ক্লাব ট্রান্সফারের দুনিয়ায় বাজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকে আর্সেনাল, এবং তাদের সেই খারাপ সিদ্ধান্তের তালিকার শীর্ষে রাখা যায় নিকোলাস পেপেকে। অনেক ফুটবল বোদ্ধার মতেই, পেপে হচ্ছেন আর্সেনালের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সাইনিং, বিশেষ করে যখন তার ট্রান্সফার ফি’কে গণণায় নেওয়া হয়। কিন্তু, নিকোলাস পেপের ভাগ্য এবং ফর্ম কি সবসময়ই এত খারাপ ছিল? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

কেমন ছিল সফর? (How it was)

ফরাসি ক্লাব লি’ল এর হয়ে লিকোলাস পেপে দুইটি চমৎকার মৌসুম পার করেছিলেন, যা ছিল সম্ভবত তার ছোট্ট ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত সেরা সময়। রাইট উইং থেকে লি’ল এর হয়ে তিনি সেই দুই বছরে ৩৭টি গোল করতে সক্ষম হোন। তিনি ফরাসি লীগে তার সর্বশেষ মৌসুমেই শুধু ২৩টি গোল করেছিলেন, যা ইউরোপের সেরা সব দলের নজর কেড়েছিল। বিভিন্ন অফারের মাঝে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ইংলিশ জায়ান্ট আর্সেনালকে। এবং বাকিটা আসলেই ইতিহাস!

পড়ুন:  জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডো থেকে যা যা প্রত্যাশা করা যায়

পতনের শুরু কোথা থেকে? (Where did it go down?)

২০১৯ সালে, লি’ল এ নিকোলাস পেপের দমদার সব পারফর্মেন্স দেখে মন্ত্রমুগ্ধ আর্সেনাল তাকে দলে ভেড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লাগে, এবং শেষ পর্যন্ত ৭২ মিলিয়ন পাউন্ডের উচ্চ মূল্যে তাকে এমিরেটস স্টেডিয়ামে আনতে সক্ষম হয়। সাথে সাথে তিনি হয়ে যান আর্সেনালের ইতিহাসের সবচেয়ে দামী বা ব্য্যবহুল খেলোয়াড়। এট মোটেও কোন ফেলে দেওয়ার মত ট্রান্সফার ফি ছিল না, যার জন্য সবাই আশায় ছিল যেন পেপে নিয়মিত ভালো পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে সেই দামটির প্রতি সুবিচার করেন। 

কিন্তু, এখনও পর্যন্ত, নিকোলাস পেপে আর্সেনাল ভক্তদের জন্য শুধুমাত্র একটি হতাশারই নাম। গত তিন বছরে নিকোলাস পেপে আর্সেনালের হয়ে ১১০টি ম্যাচ খেলে মাত্র ২৭টি গোল করতে সক্ষম হয়েছেন। এত উচ্চ মূল্যে একজন খেলোয়াড়কে কেনার পর ফুটবল ইতিহাসে কোন দলই এর চেয়ে বেশি হতাশ হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রায়শই পন্ডিত সমাজে তর্ক বিতর্কের উদ্ভব হয়।

আলভারো মরাতা – চেলসি (Alvaro Morata – Chelsea)

আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানোর দিক থেকে চেলসি’র ভাগ্য বরাবরই বেশ মন্দ। এখানে আমরা তাদের কেনা আরেকজন দামী অ্যাটাকিং ফ্লপকে নিয়ে কথা বলব, যার নাম আলভারো মরাতা। ফুটবল বিশ্বে এতদিনে খুবই পরিচিত একটি নাম হলেও, আলভারো মরাতা চেলসিতে একদমই নিজের নামের শান বাড়াতে পারেননি। চলুন তার সফর সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কেমন ছিল সফর? (How it was)

মরাতা তার ফার্স্ট টিম ফুটবল ক্যারিয়ারের সূচনা করেন ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাসে, যেখানে তিনি দুই বছর ধরে খেলে খুবই চমৎকার সব পারফর্মেন্স উপহার দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে, মরাতা তার শৈশবের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে ফিরে যান, যেখানকার একডামীতে তার ফুটবলীয় হাতে খড়ি হয়েছিল। ফেরার পর প্রথম মৌসুমেই তিনি ২০টি গোল করতে এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ জিততে সক্ষম হোন। তার ফলেই ট্রান্সফার মার্কেটে তার দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।

পতনের শুরু কোথা থেকে? (Where did it go down?)

মরাতার ক্যারিয়ারের এই পর্যায়েই আগমণ ঘটে চেলসি’র। ব্লুস’রা ২০১৭ সালে মরাতাকে দলে ভেড়ায় ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডের আকাশচুম্বী ট্রান্সফার ফি এর বিনিময়ে, যা কি না এমনকি আজকের বাজারেও অনেক বিশাল একটি ট্রান্সফার ফি। মরাতা চেলসিতে দেড় বছর ধরে খেলে মাত্র ২৪টি গোল করতে পেরেছিলেন। তার বাজে ফর্মের ফলে চেলসি তাকে ২০১৯ সালে আটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে লোনে পাঠাতে বাধ্য হয়, যেখানে গিয়ে তার ফর্ম এর কিছুটা উন্নতি ঘটে।

শেষ কথা (Final thoughts)

এরই মধ্য দিয়ে আমাদের এই ছোট্ট সফরটি শেষ হল। প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে দামী পাঁচজন অ্যাটাকিং ফ্লপদের এই তালিকায় কিছু বিষ্ময়কর নামও ছিল, যারা অন্যান্য লীগে বা দলে খুব ভালো পারফর্মার ছিলেন, এবং গোলের পর গোল করে দর্শক মাতিয়েছেন, কিন্তু প্রিমিয়ার লীগে এসে খাপ খাওয়াতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছেন। এবং, হয়তো বা এই কারণেই প্রিমিয়ার লীগকে বিশ্বের সেরা লীগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

আজকের জন্য আমাদের নিবন্ধটি এতটুকুই ছিল। প্রিমিয়ার লীগে ফ্লপ খাওয়া সবচেয়ে দামী অ্যাটাকারদের তালিকায় কিছু সেরা খেলোয়াড়দের নামও উপস্থিত রয়েছে, যা এই নিবন্ধটিকে করে তুলেছে আরো বেশি প্রাণবন্ত। বিদায় জানাতে আমরা পছন্দ করি না। তাই নিবন্ধটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। খুব শীঘ্রই আবার আরেকটি নিবন্ধের মাধ্যমে আপনাদের সাথে কথা হবে।

Share.
Leave A Reply