যদিও ২০২০-২১ মৌসুমের শেষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সমর্থকরা কিছুটা সন্তুষ্ট ছিলেন, বিশেষ করে লীগে দ্বিতীয় হওয়ার পর এবং চ্যাম্পিয়নস লীগে কোয়ালিফাই করার পর, কিন্তু এবারের গ্রীষ্মে তারা শুধুই সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন অসন্তুষ্টি এবং হতাশাকে।

অলে গানার সলসকিয়ের এর অধীনে গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের ২য় স্থানে নিজেদের নাম দেখতে পেলেও এবারের মৌসুম শেষে তারা চ্যাম্পিয়নস লীগেও কোয়ালিফাই করতে অক্ষম হয়েছেন। প্রিমিয়ার লীগে এবার তারা দখল করেছে ৬ষ্ঠ স্থান, তাও মাত্র কয়েক পয়েন্টের ব্যবধানে।

তবে, নতুন কোচ হিসেবে সাবেক আয়াক্স কোচ এরিক তেন হাগ এর আগমণ অনেক রেড ডেভিল সমর্থকদের মনেই আবারো আশার উদ্রেক ঘটিয়েছে। যদিও, তারা তাদের সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকেই শিখেছে কি করে এমন আশাকে দমিয়ে রাখতে হয়।

এখন যেহেতু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজমেন্ট তাদের ভক্তদের মনে এতটুকু আশার সৃষ্টি করতে পেরেছে, সেহেতু তাদের উচিৎ সেসকল ভক্তদের উত্তেজনা আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে দলটির জন্য কিছু মানসম্পন্ন খেলোয়াড়দের সাইন করানো।

চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক এমন ৫ জন খেলোয়াড়কে যাদেরকে এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোতেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাইন করানো উচিৎ। আমরা কেন এই ৫ জনকেই বেছে নিয়েছি তা নিয়েও আলোচনা করব।

তাহলে আর অপেক্ষা কিসের? আসুন, শুরু করা যাক।

১. ম্যাঠাইস ডি লিট (1. Matthijs de Ligt)

এটি এখন বিশ্বের কোন ফুটবল ভক্ত বা অনুসারীর কাছেই গোপন কোন বিষয় নয় যে, গিত মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ ছয়টি দলেএ মধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডিফেন্সই সবচেয়ে জঘন্য ছিল। ইঞ্জুরি, বাজে ফর্ম এবং বাজে নির্দেশনার কারণে মৌসুমের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের রক্ষণভাগ একদম সম্পূর্ণভাবে তছনছ হয়ে গিয়েছে। ব্রাইটন এবং ওয়াটফোর্ডের মত দলগুলির কাছে তারা ৪টি করে গোল হজম করেছে, যা ইউনাইটেডের মত দলের জন্য বেশ লজ্জার বিষয়, বিশেষ করে যখন তাদের দলে রয়েছেন বর্তমানে প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে দামী ডিফেন্ডার, হ্যারি ম্যাগুয়াইয়ার।

তারা যে শুধু গোল হজমই করেছে তাই নয়, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা এমন এমন ভুল করেছে যা এমন বিশ্বখ্যাত ক্লাবের খেলোয়াড়দের কাছে অন্তত একদমই আশা করা যায় না। এই সমস্যাটি এখন ইউনাইটেডে অনেক বেশি সাধারণ একটি বিষয়ে পরিণত হয়ে গিয়েছে, যা তাদের জন্য আরো অধিক চিন্তার একটি বিষয়।

হ্যারি ম্যাগুয়াইয়ার, এরন ওয়ান-বিসাকা, এবং রাফায়েল ভারানদের মত বিশ্বখ্যাত খেলোয়াড়দেরকে অনেক টাকা দিয়ে দলে আনার পর এর চেয়ে ভালো কিছু তাদের রক্ষণভাগের কাছে আশা করতেই পারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কর্তৃপক্ষ।

যদিও এ ব্যাপারে ম্যান ইউ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি যে কোন কোন ডিফেন্সিভ খেলোয়াড়দের তারা এই ট্রান্সফার উইন্ডোতে বিক্রি করে দিবেন, তবে আমরা মনে করি যে, যেহেতু ইউনাইটেডের এখন খুব বেশি করে ভালো ডিফেন্সিভ খেলোয়াড় দরকার, তাই তাদের উচিৎ জুভেন্টাসের ম্যাঠাইস ডি লিটকে সাইন করানোর আপ্রাণ চেষ্টা করা।

যেহেতু এই ডাচ ইন্টারন্যাশনাল খেলোয়াড় তার তারুণ্যের দিনগুলিতে আয়াক্সে খেলেছেন এবং সেখানেই একজন অসাধারণ ডিফেন্ডার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন, সেহেতু তিনি এরিক তেন হাগ এর সাথেও বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। তিনি হলেন সেই কোচ যিনি ডি লিটকে প্রথমবারের মত মূল একাদশে খেলার সুযোগ দিয়েছিলেন। ২০১৮-১৯ মৌসুমের শুরুতে ডি লিট ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারদের একজন, যাকে দলে নেওয়ার জন্য হিরিক পড়েছিল ফুটবলের বাজারে। কিন্তু, জুভেন্টাস এর হয়ে ইতালির টুরিন শহরে পাড়ি জমানোর পর থেকে তিনি তার প্রত্যাশার মাপকাঠি ধরে রাখতে পারেননি।

পড়ুন:  ফুটবলে জার্গেন ক্লপের ভবিষ্যত সম্পর্কে একটি অনুমানমূলক চেহারা

যেহেতু ডি লিট ইতিমধ্যে এ বিষয়ে জানান দিয়েছেন যে তিনি এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোতে ওল্ড লেডি খ্যাত জুভেন্টাস দল ছাড়তে চান, তাই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড চাইলেই জুভেন্টাসের কাছে একটি ভালো এবং মানসম্মত অফার রেখে দেখতেই পারে। তেন হাগের সাথে পুনর্মিলনীর অভিপ্রায় এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ লীগে খেলার ইচ্ছায় ডি লিট সেই অফারে হ্যাঁও বলে দিতেই পারেন।

২. ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং (2. Frenkie De Jong)

ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটিকে কেন্দ্র করে আজকাল সবচেয়ে বেশি যে ট্রান্সফারটির গুজব শুনতে পাওয়া যাচ্ছে তা হল ডাচ মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে নিয়ে। শুরুতে বেশ আকাশচুম্বী মনে হলেও যখন আপনি বার্সেলোনার অর্থনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করবেন, তখন এই গুজবটিকে বেশ মজবুত হিসেবেই মনে হবে।

ডি ইয়ং একজন বেশ নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার, যিনি আক্রমণের সাথে সাথে ডিফেন্সেও অনেক সাহায্য করে থাকেন। মূলত, এই ট্রান্সফারটি সম্পন্ন হলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের মিডফিল্ডে যে সাবলীলতা ফিরে পাবে ২০২১-২২ মৌসুমে তেমন সাবলীলতার ধারে কাছেও তারা পৌঁছাতে পারেনি।

বার্সেলোনা সম্প্রতি নানাভাবে অর্থ জোগার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে করে তারা তাদের তারকা খেলোয়াড়দের দলে রাখতে পারে, এবং দলে আরো নতুন নতুন সংযোজনও আনতে পারে। তবুও, সব মিলিয়ে তাদের বর্তমানে যেমন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাতে হয়তো ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে বিক্রি করে তাদের কিছু অর্থের সঞ্চার করতে হতে পারে বলেই মনে হচ্ছে। এবং, এক্ষেত্রেও, যেহেতু ডি ইয়ং এরিক তেন হাগ এর সাথে আয়াক্সে তার ক্যারিয়ারের শুরুতেই কাজ করেছেন, তাই তার প্রতি যেমন তার শ্রদ্ধাও রয়েছে, তেমনি তার সাথে আবারো কাজ করে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধও করবেন, বিশেষ করে বার্সেলোনাতে তিনটি কঠিন বছর কাটানোর পর।

যদিও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লীগে খেলতে পারবে না, তবুও সেটি ডি ইয়ং এর জন্য কোন বাঁধার সৃষ্টি করবে না, কারণ বার্সেলোনা আর্থিক দিয়ে আসলেই খুবই বাজে পরিস্থিতিতে রয়েছে, এবং বেশ কিছু খেলোয়াড়দের বিক্রি করেই তাদেরকে সেই পরিস্থিতি থেকে বের হতে হবে।

৩। পাওলো দিবালা (3. Paulo Dybala)

Source: manchestereveningnews.co.uk

ট্রান্সফারের বাজার যখন একদিকে গরম, তখনই আরেক দিকে এমনও অনেক খেলোয়াড় কিন্তু আছেন যারা ফ্রিতে এভেইলেবল রয়েছেন। কেমন হয় যদি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের স্ট্রাইকার এর অভাব ঘুচানোর জন্য পাওলো দিবালাকে ফ্রিতে সাইন করে নেয়? মোটেও মন্দ নয়।

সদ্য সমাপ্ত মৌসুমটির শেষে তখনকার ম্যান ইউনাইটেড কোচ রাল্ফ রাঙনিক বলেছিলেন যে, বড় বড় সব শিরোপার জন্য ম্যানচেস্টার সিটি এবং লিভারপুলকে টক্কর দিতে হলে এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে কমপক্ষে ১০ জন খেলোয়াড় কিনতে হবে।

যদিও এটি বলাই বাহুল্য যে একটি ট্রান্সফার উইন্ডোতে এতগুলি খেলোয়াড়কে কেনা অবশ্যই আকাশ কুসুম চিন্তা ভাবনা। তবে, দলটিকে জাতের বানাতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং এরিক তেন হাগকে প্রায় অনেকগুলোই খেলোয়াড় দলে ভিড়াতে হবে বলেই মনে হচ্ছে। সেটি যদি সত্যি হয়, তাহলে সেসকল খেলোয়াড়দের মধ্যে দুই একজনকে কমপক্ষে ফ্রিতে দলে নিতেই হবে তাদের।

যখনই ফ্রি এজেন্টদের বিষয়টি সামনে আসে, তখনই সবার প্রথম ভাবনাই হয় “ফ্রি এজেন্ট কি কখনো ভালো খেলোয়াড় হতে পারে?” আসলে এটি বোঝা কঠিন যে কেন জুভেন্টাস দিবালার চুক্তিটি এভাবে শেষ হতে দিল, কিন্তু কোন ফ্রি এজেন্ট এর গুণমান যদি দিবালার মত হয়, তাহলে অবশ্যই ফ্রি এজেন্টরা ভালো খেলোয়াড় এবং তাদেরকে নির্দ্বিধায় কেনা উচিৎ। এখানে কারো লোকসান হলে তা হচ্ছে তার সাবেক দল জুভেন্টাসের। সত্যি বলতে, বর্তমানে দিবালার চেয়ে ভালো মানের ফ্রি এজেন্ট বাজারে নেই বললেই চলে।

পড়ুন:  প্রিমিয়ার লিগের পুরস্কার

জুভেন্টাসের জন্য ২০২১-২২ মৌসুমটি একটি হতাশাজনক মৌসুম হলেও সেখানে তাদের জন্য একমাত্র আলোর দিশারী হয়ে ছিলেন পাওলো দিবালা। পুরো সিজন মিলিয়ে সিরি আ তে মোট ২৯টি ম্যাচ খেলে তিনি ১০টি গোল এবং ৫টি এসিস্ট করতে সক্ষম হোন।

এছাড়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড স্ট্রাইকারের পাশাপাশি রাইট উইং পজিশনটিতেও কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়েছে। দিবালা কিন্তু দু’টি পজিশনেই খেলতে বেশ পারদর্শী। যেহেতু মেসন গ্রিনউড তার ব্যক্তিগত সব সমস্যার কারণে ধরার মধ্যেই পড়ছেন না এবং এন্থোনি মারশিয়ালও দল ছাড়বেন বলেই মনে হচ্ছে, সেহেতু দিবালাকে সাইন করানো তাদের জন্য বেশ কার্যকরী হবে বলেই মনে করা যাচ্ছে।

ইউনাইটেডের বেশ কিছু খেলোয়াড় এবার ক্লাবটি থেকে বিদায় নিচ্ছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলেন হুয়ান মাতা। মাতা বেশির ভাগ সময় সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেললেও রাইট উইংগেও তিনি খেলতেন প্রায়ই। তার চলে যাওয়ার ফলে বিশাল একটা শূন্যস্থান কিন্তু থেকেই যাচ্ছে ইউনাইটেডের অ্যাটাকিং ব্যাকাপে। লেফট উইংগে মার্কাস র‍্যাশফোর্ড এবং জ্যাডোন স্যাঞ্চো একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারলেও রাইট উইংগে তাদের একজনও প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় নেই বললেই চলে।

দিবালার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসার আরেকটি কারণ হতে পারেন স্বয়ং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। টুরিনে তারা বেশ কয়েক বছর একসাথে খেলেছেন, এবং এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড এর সাথে তার বোঝাপড়াও বেশ তাগড়া। তাই পুরনো বন্ধুর সাথে পুনর্মিলনীতে অংশ নিতে ছুটে আসতেও পারেন দিবালা, এমনটিই আমাদের ধারণা।

৪. ম্যাটি ক্যাশ (4. Matty Cash)

Source: talksport.com

যখন কেউ বলে যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের গত সিজনে ডিফেন্সে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, তখন তারা এটি বুঝায় না যে রেড ডেভিলদের সেন্ট্রাল ডিফেন্সেই শুধু সমস্যা, আসলে সমস্যা তাদের পুরো ডিফেন্স জুড়েই।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দুই ফুল ব্যাক পজিশনের চারজন খেলোয়াড় খুব বেশি হতাশ করেছেন পুরো মৌসুমজুড়েই। ইঞ্জুরি, বাজে ফর্ম, এবং নির্দেশনার অভাব এখানেও তাদেরকে ভুগিয়েছে, এবং অলে গানার সলসকিয়ের ও রাল্ফ রাঙনিক দুইজনকেই বার বার পরিবর্তন করে খেলাতে হয়েছে সেই চারজনকে। কেউই জায়গাগুলি নিজের করে নিতে পারেনি।

বিশেষ করে তাদের ডিফেন্সের ডান পার্শ্বটিতে তাদের এক নম্বর চয়েজ খেলোয়াড় এরন ওয়ান-বিসাকাকে নিয়ে সবারই অনেক আশা ছিল সিজনের শুরুতে। কিন্তু, ইউনাইটেডের পিরো ডিফেন্সের মতই তিনিও সকলকেই হতাশ করেছেন। এমনটিও বলা হয়েছে যে, ওয়ান-বিসাকা শুধু ওয়ান-অন-ওয়ান ডিফেন্সেই পারদর্শী, এবং এছাড়া একজন আধুনিক ফুল ব্যাক হিসেবে তার স্কিলসেটে কিছুই নেই বললেই চলে। ইউনাইটেডের প্রথম একাদশ এবং ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে তার দায়িত্বটা কি তাই এখনো অনেকেই বুঝতে পারেনি।

২০২১-২২ মৌসুমের শুরুতে ওয়ান-বিসাকা ইউনাইটেডের ফার্স্ট চয়েজ রাইট ব্যাক হিসেবে বিবেচিত হলেও মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে এসে তার জায়গাটি দখল করে নেন ডিয়োগো ড্যালো। কিন্তু এই পর্তুগিজ ফুল ব্যাকও ইউনাইটেড সমর্থকদের আশা পূরণ করতে পারেননি। আক্রমণভাগে বেশ সক্রিয় হলেও ডিফেন্স করার ক্ষেত্রে তিনি আবার ওতটা পারদর্শী নন। এমনটি তার কাছে মোটেও কাম্য ছিল না, কারণ তার ঠিক আগের মৌসুমেই ইতালিয়ান জায়ান্ট এসি মিলানে লোনে খেলতে গিয়ে তিনি অসাধারণ একেকটি পারফর্মেন্স দিয়েছিলেন।

যেহেতু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রাইট ব্যাক পজিশনটি তাদেরকে অনেকদিন ধরেই বেশ পীঁড়া দিয়ে আসছে, তাই তারা সেটির সমাধান এর জন্য দলে নিতে পারেন এস্টন ভিলা’র ম্যাটি ক্যাশকে। ১৩ বারের প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য তিনি একজন আদর্শ খেলোয়াড়। যেমনি তিনি ডিফেন্সে ঘোড়ার মত খেটে বেড়ান, তেমনি ওভারল্যাপিং দৌড় ফিয়ে ছুঁটে যান অ্যাটাকে। এ যেন ওয়ান-বিসাকা এবং ড্যালো এর অস্থির একটি সমন্বয়।

পড়ুন:  প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচউইক 33 অ্যাওয়ার্ডস

প্রথমে ডিন জেমস এর অধীনে এবং তারপর স্টিভেন জেরার্ডের অধীনে ম্যাটি ক্যাশ এস্টন ভিলার হয়ে অসাধারণ একটি মৌসুম পার করেছেন, যেখানে তিনি প্রিমিয়ার লীগের সবক’টি ম্যাচেই শুরু থেকে খেলেছেন।

এস্টন ভিলার দলে দুইজন দীর্ঘকায় স্ট্রাইকার থাকায় ম্যাটি ক্যাশের অসাধারণ ক্রসগুলিকে তারা গোলে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়া, তিনি যে নিজেও অন্যের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে দলের জন্য গোল হাসিল করে নিতে পারেন, সেটিও তিনি সিজনজুড়ে যথাযথভাবেই প্রমাণ করে এসেছেন।

ম্যান ইউনাইটেডের পুরো ডান পাশের উইং জুড়ে ম্যাটি ক্যাশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন — এমন দৃশ্য যেন সকল ফুটবল প্রেমীরই স্বপ্ন, বিশেষ করে যদি তিনি রেড ডেভিলদের ভক্ত হয়ে থাকেন।

তিনি প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের খুব কড়া মার্কিংয়ের মধ্যে রাখতেও বেশ পারদর্শী, এবং প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের মধ্যে তাকে মার্ক করাও বিপক্ষ দলের ডিফেন্ডারদের জন্য প্রায়শই বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।

৫. ডেক্লান রাইস (5. Declan Rice)

ডেক্লান রাইস হচ্ছেন বর্তমানে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে দামী এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন। এখনই শুধু নয়, গত বেশ কিছু বছর ধরেই তাকে দলে ভেড়ানোর জন্য প্রিমিয়ার লীগেরই অনেক দল অনেক বড় বড় অফার উত্থাপন করেছে ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের নিকট।

গত বছরের জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে রাইস প্রায় চেলসিতে যোগ দিয়েই দিয়েছিলেন, কিন্তু ঠিক তখনই চেলসি’র দায়িত্ব নেন থমাস টুখেল। তার ফলে রাইসের ট্রান্সফারটিতে বাঁধা পড়ে যায়, এবং তা আর পরে পুনঃজ্জীবিতও হয়নি।

কিন্তু, এখন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মিডফিল্ডকে মেরামত করাকেই এরিক তেন হাগ তার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

মিডফিল্ডের মাঝ বরাবর খেলার মত খেলোয়াড় এর বেশ অভাব এখন ইউনাইটেডে। পল পগবা এবং হুয়ান মাতা ক্লাব ছাড়ায় তারা এই পজিশনটিতে খুব শীঘ্রই কোন নতুন খেলোয়াড় সাইন করাতে চাইবেন।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর একমাত্র প্রতিষ্ঠিত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হলেন নেমানিয়া ম্যাটিচ, এবং তিনিও এবছর ইউনাইটেড ছাড়ছেন বলেই জানা গিয়েছে।

তাই ডেক্লান রাইসই সেই খেলোয়াড়টি হতে পারেন যিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আগামী মৌসুমে প্রত্যেকটি ম্যাচে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এর পজিশনটি দখল করে রাখবেন।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভক্ত সমর্থকরা ইতিমধ্যে স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছে তাদের দলের আগামী মৌসুমের কাল্পনিক মিডফিল্ড নিয়ে, যেখানে থাকবেন ডেক্লান রাইস, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং এবং ব্রুনো ফার্নান্দেজ।

তেন হাগ এর অধীনে সাফল্য পেতে হলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মিডফিল্ডকে বেশ জোরদার করতেই হবে, নতুবা বড় বড় প্রতিযোগিতায় সব বড় বড় দলই তাদেরকে ডমিনেট করে হারাবে, যেমনটি এবার প্রিমিয়ার লীগে তাদের সাথে করেছিল লিভারপুল এবং ম্যানচেস্টার সিটি।

শেষ কথা (Final Word)

এরিক তেন হাগ অনেকের কাছে একটি নতুন নাম হলেও, ফুটবল জগতে সকল ফুটবল প্রেমীরাই তার নাম একবার হলেও শুনেছে, এবং যুবা কোচদের মধ্যে তিনি বেশ হাইলি-রেটেড। এমন একজন নতুন, তরুণ এবং প্রতিভাবান কোচকে পেয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলোয়াড়েরা তাদের হারানো উদ্যম ফিরে পাবেন এমনটিই আশা করবেন ইউনাইটেড সমর্থকরা।

তবে কারও জন্যই মূল একাদশে নিজের জায়গাটি তৈরি করে নেওয়া কোনক্রমেই সহজ হবে না। এবারের ট্রান্সফার মৌসুমটি রেড ডেভিলদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্ব বহণ করছে, এবং যদি তারা তাদের দরকারী পজিশনগুলোতে বেশ কিছু ভালো খেলোয়াড় কিনে আনতে পারেন, তাহলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থকরা আবারও তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন।

 

Share.
Leave A Reply