২০২২ সালের জানুয়ারি (শীতকালীন) ট্রান্সফার উইন্ডো শেষে, অর্থাৎ এবছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে ইংল্যান্ডের ফুটবল লীগ টু (যা কি না দেশটির ফুটবল প্রশাসনের অন্তর্গত ৪র্থ সারির লীগ) এর দল গিলিংহ্যাম এফসি এর চেয়ারম্যান পল স্কেলি খুবই ক্ষীপ্ত হয়ে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে, ট্রান্সফার মার্কেটকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে প্রিমিয়ার লীগ।

তার মন্তব্য, অথবা তার আহাজারির পেছনে কারণটি খুবই যুক্তিসঙ্গত এবং কষ্টদায়ক। তার মতে প্রিমিয়ার লীগ দেশটির সেরা লীগ হলেও সেখানকার দলগুলি যেভাবে পাগলের মত টাকা খরচ করে খেলোয়াড় কিনে, তাতে দেশটিতে ফুটবলের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এবং নিচের সারির লীগগুলির বেশ কিছু দল এখন প্রায় বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্মুখীন।

আপনারা হয়তো মনে করতে পারবেন যে, এই বছরের জানুয়ারিতেই সাবেক প্রিমিয়ার লীগ দল বল্টন ওয়ান্ডারার্স আর্থিক সংকটের কারণে গত তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয় বারের মত প্রশাসনের আওতায় প্রায় চলেই গিয়েছিল। তবে, শেষ মুহূর্তে যুক্তরাজ্য সরকার দলটিকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করে। আপনাদের এটিও মনে থাকার কথা যে, গত মৌসুমে আরেক ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ডার্বি কাউন্টি আর্থিক কারণেই প্রশাসনের আওতায় চলে যায়, যার ফলে তাদের পয়েন্ট ট্যালি থেকে ২১ পয়েন্ট কেটে নেওয়া হয়। ফলস্বরূপ, ডার্বি কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে লীগ ওয়ানে নেমে যায়।

এছাড়াও, আরো মর্মান্তিক ঘটনা যেটি সবার মনেই দাগ কেটেছিল, সেটি হচ্ছে ২০২০ সালে ব্যুরি এফসি, যা কি না ইংল্যান্ডের সবচেয়ে পুরনো ক্লাবগুলির একটি, তাদের চরম অর্থনৈতিক দুর্গতির কারণে ক্লাব হিসেবেই বিলুপ্ত হয়ে যায়।

এমন অনেক দুর্যোগপূর্ণ ঘটনা নিচের সারির লীগগুলিতে চলতে থাকলেও প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলি এ ব্যাপারে একদমই নাক গলাতে অনিচ্ছুক। তবে, এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই যে, অযৌক্তিক হারে টাকা খরচ করে বিদেশী খেলোয়াড় কিনার ফলে এবং নিজ দেশের ছোট সেসব ক্লাব থেকে কম দামেই দেশীয় খেলোয়াড় ও স্টাফদের আকৃষ্ট করার মধ্য দিয়ে এই প্রিমিয়ার লীগ ক্লাবগুলিই ঐসকল অপেক্ষাকৃত ছোট ক্লাবগুলিকে অর্থনৈতিক দুর্গতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইংল্যান্ডের ফুটবলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য এখন ধ্বংসের মুখে।

খেলোয়াড় কেনার বাজারে প্রিমিয়ার লীগ ক্লাবগুলির অযৌক্তিক হারে পয়সা খরচের নজির (The obscene numbers behind Premier League spending)

শুধুমাত্র এবছরের জানুয়ারি (শীতকালীন) ট্রান্সফার উইন্ডোতেই প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলি খেলোয়াড় কেনার বাজারে ২৯৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে, যা কি না এক কথায় বিষ্ময়কর। এছাড়া, এটিই হল ইউরোপের সেরা পেশাদার ফুটবল লীগগুলির মধ্যে জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে করা সর্বোচ্চ ব্যয় এর রেকর্ড। এর চেয়েও মজার বিষয় হল, গত এক দশকের মধ্যে ইউরোপের অন্যান্য বড় লীগের চেয়ে খেলোয়াড় কেনার দিক থেকে অনেক গুণে বেশি টাকা খরচ করেছে ইংলিশ টপ ফ্লাইটের ক্লাবগুলি।

শুধুমাত্র ট্রান্সফার ফি’তেই তারা গত দশ বছরে ব্যয় করেছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ইউরো, যা কি না সেই একই সময়কালে অন্যান্য শীর্ষ লীগগুলির সম্মিলিত ব্যয়ের প্রায় দশগুণ। এক্ষেত্রে প্রিমিয়ার লীগের যে দলটি সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে তা হল আকষ্মিকভাবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, যারা এই সময়কালে খরচ করেছে ১ বিলিয়ন ইউরোর চেয়েও কিছুটা বেশি। তবে, খেলোয়াড় কেনার দৌড়ে এত টাকা খরচ করার পরও তারা ইংল্যান্ডের ঘরোয়া লীগ ও কাপগুলিতে বা ইউরোপীয় কোন প্রতিযোগিতায়ই সাফল্য তো অর্জন করতে পারেইনি, বরং ট্রান্সফার মার্কেটের ভারসাম্য বিপুলভাবে নষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে, এবং সমস্যায় ঠেলে দিতে সক্ষম হয়েছে দেশটির বিভিন্ন কম আয়ের ক্লাবগুলিকে।

পড়ুন:  এরিক তেন হাগঃ যেভাবে এই ডাচ ম্যানেজার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলার উন্নতিসাধন করেছেন

পল পগবা, হ্যারি ম্যাগুয়াইয়ার, জ্যাডোন স্যাঞ্চো, রমেলু লুকাকু, এংখেল ডি মারিয়া এবং এন্থোনি মারশিয়াল এর মত অনেক খেলোয়াড়ই ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটিতে এসেছে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি ট্রান্সফার ফি এর বিনিময়ে। তৎকালীন সময়ে পল পগবার ৮৯ মিলিয়ন ইউরোর ট্রান্সফার ফি’টি ভেঙেছিল ইংল্যান্ডের ট্রান্সফার রেকর্ড, এবং পরবর্তীতে যখন তারা বিশাল এক ফি এর বিনিময়ে ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুয়াইয়ারকে লেস্টার সিটির কাছ থেকে কিনেছিল, তখন সেটিও ভেঙে ফেলে বিশ্বব্যাপী কোন ডিফেন্ডারের পেছনে ব্যয় করা ট্রান্সফার ফি’র রেকর্ড।

এছাড়া লীগটির অন্যান্য বড় ক্লাবগুলির ক্ষেত্রেও এই সংখ্যাগুলি খুবই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এমন ক্লাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, চেলসি, ম্যানচেস্টারের দুই ক্লাব, লিভারপুল, এবং এমনকি আর্সেনালও, যারা কি না আর্সেন ওয়েংগারের অধীনে খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রে বেশি টাকা খরচ করার জন্য একদমই প্রস্তুত থাকতো না, কিন্তু উল্লিখিত সময়সীমায় সেই বাঁধটি তারাও অতিক্রম করে ফেলে, এবং বিভিন্ন খেলোয়াড়কে অযৌক্তিক দামে দলে ভেড়ায়।

২০২২ সালের শীতকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোকে কেন্দ্র করে নানান পরিসংখ্যান (The 2022 January transfer window in numbers)

যেহেতু সবকিছুর শেষে এটি মানতেই হবে যে, সকল খেলাধুলাই এক একটি ব্যবসাক্ষেত্র, এবং ফুটবলও অবশ্যই তার বাইরে নয়, সেহেতু কোন দল বা ক্লাব তাদের পছন্দের খেলোয়াড় কেনার লক্ষ্যে এবং নানা রকম শিরোপা জেতার লক্ষ্যে অনেক টাকা খরচ করলে সেক্ষেত্রে তাদেরকে পুরোপুরিভাবে দোষারোপ করাটাও হয়তো ঠিক নয়। ফুটবলকে বলা হয় “জনসাধারণের খেলা”, কিন্তু প্রচুর অর্থ ব্যয় করে খেলাটি থেকে যদি এখন সেই ‘জনসধারণ’কেই (ছোট ক্লাবগুলিকে) দূরীভূত করা হয়, তাহলে অনেকেই অনেক প্রশ্ন তুলবে, সেটাই স্বাভাবিক।

লিভারপুল মাত্র একজন খেলোয়াড়ের পেছনেই ৫০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছিল, যার নাম হল লুইস ডিয়াজ, যিনি পর্তুগিজ দল এফসি পোর্তো থেকে অল রেডস’দের দলে যোগ দিয়েছেন। এই ডিলটি ছিল গত জানুয়ারির (২০২২) ট্রান্সফার উইন্ডোর সবচেয়ে দামী ডিল। এর আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারি বা শীতকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে লিভারপুলই ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সাউথ্যাম্পটন থেকে কিনেছিল ডাচ ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইককে, যা কি না জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোর ইতিহাসের সবচেয়ে দামী ডিল হিসেবে পরিচিত। এছাড়া এবছরের জানুয়ারিতে নব্য ধনী ক্লাব নিউক্যাসেল ইউনাইটেড পাঁচজন খেলোয়াড়ের পেছনে সম্মিলিতভাবে খরচ করেছে ৯৫ মিলিয়ন ইউরো।

এই ক্লাবগুলি খেলোয়াড়দের পেছনে বিনিয়োগ করেছে, এবং তারা সেসব বিনিয়োগের সুফলও পাচ্ছে, বিনিময়ে গুনছে অগণিত টাকা। তবে, উইন্ডোটির শেষে ব্রিটিশ প্রকাশক ‘দ্য মিরর’ এর কাছে করা জনাব স্কেলি’র মন্তব্যটি এই বিষয়কে আরো উত্তম একটি দিক থেকে দেখতে সাহায্য করে।

গিলিংহ্যামের এই চেয়ারম্যান বলেছেন, “জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে কত টাকা খরচ করা হয়েছে সেটির সকল পরিসংখ্যান আমি দেখেছি, এবং বরাবরই বেশ আশ্চর্য হয়েছি। আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারিনি। পরিসংখ্যানগুলি সত্যিই খুবই অযৌক্তিক এবং বিষ্ময়কর, বিশেষ করে যখন বড় দলগুলি এমনটি করছে ফুটবল পিরামিডের নিচের দিকের দলগুলির সাথে তাদের অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও একনিষ্ঠতা পুরোপুরিভাবে নষ করার মাধ্যমে। এই ভাঙা ব্যবস্থাটি ঠিক করার কোন উদ্যোগও কারো মধ্যেই নেই।

পড়ুন:  ইপিএলে একক খেলোয়াড়দের জন্য সেরা মৌসুম

“প্রিমিয়ার লীগের কোন দলের কোন সাধারণ সমর্থকেরই এই ব্যাপারটি নিয়ে আরামপ্রদ হওয়ার কোন কারণ নেই। আমি তাদের জায়গায় থাকলে আমার বিবেক আমাকে বাধ্য করতো এমন কোন দলকে সমর্থন না দিতে, এবং যা হচ্ছে তার ঘোর বিরোধিতা করতে। এবং, যা হচ্ছে তা একদমই বিদ্রুপাত্মক।

“ট্রেসি ক্রাউচ এর বিখ্যাত রিপোর্টটি এই বিষয়ে খুবই নিখুঁত পরিসংখ্যান উপহার দিয়েছে, এবং এসকল ক্লাবকে ধিক্কার জানিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত এমনটিই মনে হচ্ছে যে, প্রিমিয়ার লীগ এবং সেটির অন্তর্গত ক্লাবগুলি তাদের দায়িত্ব মেনে নিতে একদমই অস্বীকার করছে, এবং এ ব্যাপারে কিছু করতেও তারা নারাজ।

“তারা খেলোয়াড় খরিদ করার ক্ষেত্রে যে ধরণের অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছে, তা দেখে দেশের যেকোন ফুটবল সমর্থকেরই তাদের প্রতি ঘৃণা জন্মানো উচিৎ, বিশেষ করে ইএফএল বা নিচের সারির লীগের ক্লাবগুলির সমর্থকদের। বর্তমান এই পরিস্থিতি বিদ্রুপেরও অযোগ্য। এটি খুবই হতাশাজনক, এবং এ থেকে আরও বোঝা যায় যে, সেসব ক্লাবগুলি খুবই একগুঁয়ে, এবং ট্রেসি ক্রাউচের রিপোর্টটির দিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।

“যদি সরকার খুব জলদি এই ব্যাপারটিতে হস্তক্ষেপ না করে, প্রিমিয়ার লীগ কর্তৃপক্ষকে জরিমানা না করে এবং পরিদর্শকরা তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে এই লীগটির কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিদর্শন না করে, তাহলে ইংল্যান্ডের ফুটবলে বেশ ভড়সড় একটি ধ্বস নামতে বেশি দেরি হবে না। যেহেতু বোঝাই যাচ্ছে যে সেইসব দোষী ক্লাবগুলি নিজ ইচ্ছায় আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক নয়, তাই সরকারকেই তাদেরকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে হবে।”

ট্রেসি ক্রাউচ রিপোর্টটি কি? (What is the Tracey Crouch report?)

ট্রেসি ক্রাউচ রিপোর্টটি হল ফুটবল ভক্তদের মন্তব্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা একটি রিপোর্ট। এটি হল ভক্তদের পর্যালোচনার একরকম ফল, যার শুরু হয়েছিল যখন ব্যুরি এফসি বাজেয়াপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এই রিপোর্টটি তুলে ধরেছিল যে, ইংলিশ ফুটবলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কতটা অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্য বিদ্যমান রয়েছে, এবং কিভাবে এক বা একাধিক ফুটবল পরিদর্শক নিয়োগের মাধ্যমে বড় ক্লাবগুলির অর্থ ব্যয়ের ঢেউ কিছুটা হলেও কমানো যাবে। রিপোর্টটির মোতাবেক, এমন অতিরিক্ত খরচের ফলে খুব শীঘ্রই দেশটির ফুটবলে স্থায়ীত্বমূলক নানান সমস্যার সৃষ্টি হবে।

আশানুরূপভাবেই, প্রিমিয়ার লীগের অনেক ক্লাবই এই রিপোর্টটির কার্যকারিতা এবং অখন্ডতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে, যুক্তরাজ্যের সরকারী মহলে এ ব্যাপারটি নিয়ে প্রচুর পর্যালোচনা এখনও চলমান রয়েছে। তবে এই বিষয়টি যে এমন একটি রিপোর্ট তৈরিও হয়েছে শুধুমাত্র এটিই প্রমাণ করে যে, দেশটির বড় বড় ফুটবল ক্লাবগুলির অঢেল সম্পদ এমন একটি অস্থিতিশীল বুদবুদ তৈরি করেছে যা ফেটে গেলে এমন অরাজকতা সৃষ্টি হবে যে দেশটির ফুটবলীয় ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে বাধ্য হবে।

কিভাবে এর ফলে অন্যান্য লীগগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? (How it has affected the other leagues?)

এখানে আরেকটি আলোচনার বিষয় হচ্ছে, প্রিমিয়ার লীগের বড় বড় ক্লাবগুলিই যে শুধু খেলোয়াড়দের পেছনে বড় বড় অঙ্কের টাকা খরচ করছে তাই নয়, বরং ইউরোপ জুড়ে অনেক ক্লাবই তেমনটি করছে। তবে দোষ কেন শুধু ইংলিশ টপ ফ্লাইটের ক্লাবগুলির উপরেই বর্তাবে? তবে, আপনি যদি ট্রান্সফার মার্কেটের ইতিহাসে খুজে দেখেন যে কারা সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে আসছে, তাহলে দেখতে পাবেন যে, ইংলিশ ক্লাবগুলিই সর্ব প্রথম বেশি বেশি অর্থ ব্যয় করার প্রথা শুরু করেছে। প্রথমে শত শত টাকা দিয়ে শুরু করলেও, হাজার, লক্ষ ও মিলিয়নের গন্ডি পেরিয়ে এখন তা এসে ঠেকেছে বিলিয়নের কোঠায়।

পড়ুন:  সাজলিনের উত্সাহজনক মজার অবস্থান স্থাপন করে Week 23 গোল উৎসব ছিল এবং প্রিমিয়ার লীগের ফ্যানদের সব দশটি ম্যাচ এর ব্যাপারে দেখা পেয়েছিল।

রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, জুভেন্টাস, বায়ার্ন মিউনিখ এবং জুভেন্টাসের মত ক্লাবগুলিও খেলোয়াড়দের পেছনে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় এর জন্য বিখ্যাত। যত টাকাই প্রয়োজন হোক না কেন, তারা তাদের টার্গেটেড খেলোয়াড়দের কিনেই ছাড়ে, এবং সেটির সুবিধা খুব ভালো করেই নিয়ে নেয় প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলি। এক রিয়াল মাদ্রিদের কাছেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে বিক্রি করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড পেয়েছিল ৯০ মিলিয়ন ইউরো, এবং তাদের কাছেই গ্যারেথ বেলকে বিক্রি করেও টটেনহ্যাম হটস্পার্স পেয়েছিল ৯০ মিলিয়ন ইউরোই। এগুলি কেবল কয়েকটি উদাহরণ মাত্র।

তবে, যেটি চিন্তার বিষয় তা হল প্রিমিয়ার লীগের এসব ক্লাবগুলি যেন বিদেশী সেসকল ক্লাবের সাথে এক ধরণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত এটি নির্ধারণ করার জন্য যে কে কার চেয়ে বেশি খরচ করতে পারে। আবার, একটি পার্থক্যও রয়েছে তাদের মধ্যে। যেখানে বিদেশী সব বড় বড় ক্লাবগুলি মাত্র ১-২ জন খেলোয়াড়কে টার্গেট করে এবং তাদের পেছনেই বড় বড় অঙ্ক খরচ করে, সেখানে প্রিমিয়ার লীগের অনেক ক্লাবই দেখা যায় এক মৌসুমের অন্তরে তাদের দলের পুরো চেহারাই পরিবর্তন করে ফেলে, যার জন্য তাদেরকে খরচও করতে হয় অন্ধভাবে।

অন্যান্য দেশের লীগে এমন কিছু নিয়মবিধিও রয়েছে যার ফলে তারা নিশ্চিত করতে পারে যে সেখানকার দলগুলির খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের আয়ের উপর কিছু সীমা প্রয়োগ করা বাধ্যতামূলক। এছাড়া তারা আরও নিশ্চিত করে যে, সেসকল ক্লাবেরা খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সীমার উপরে খরচও করতে পারবে না। প্রিমিয়ার লীগে এমন কোন বিধিনিষেধই নেই, এবং তার ফলেই ম্যানচেস্টার সিটি’র মত একটি দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই ২০০,০০০ ইউরো বা তার বেশি সাপ্তাহিক বেতন পেতে সক্ষম হোন।

এর কারণে অন্যান্য দেশের লীগগুলির শক্তিমত্তাও অনেকটাই কমে যায়, এবং এক সময়ে গিয়ে তারা প্রতিভাশূন্যও হয়ে যেতে পারে বলেই অনেকে মনে করছেন। এমনটি চলতে থাকলে ট্রান্সফার মার্কেট খুব শীঘ্রই সম্পূর্ণভাবে বিচলিত হয়ে পড়বে।

উপসংহার (Conclusion)

প্রিমিয়ার লীগ ক্লাবগুলির অসামঞ্জস্যপূর্ণ খরচার কারণে বিশ্ব ফুটবলের অর্থনীতি এখন হুমকির সম্মুখীন। এমনটি চলতে থাকলে কিছুদিন পর দেখা যাবে অন্যান্য দলের কেনার জন্য ট্রান্সফার মার্কেটে আর কোন খেলোয়াড়ই নেই, কিংবা থাকলেও তাদের মূল্য আকাশচুম্বী।

গত বছর ইউরোপীয় সুপার লীগ গঠন নিয়ে বেশ সমালোচনা ও ভীতির সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু, এটি অনেকেই বুঝতে ভুল করেন যে, প্রিমিয়ার লীগ ইতিমধ্যে সুপার লীগের মতই একটি কাঠামো ব্যবহার করছে। তাই, বিশ্ব ফুটবল এবং বিশেষ করে ছোট ক্লাবগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বড় ক্লাবগুলির এমন আচরণকে নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা করতেই হবে। নতুবা, ফুটবলের ভবিষ্যৎ বেশ শোচনীয় হবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।

Share.
Leave A Reply