ভূমিকা (Introduction)

ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ হল পৃথিবীর সবচেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর, উত্তেজনাময়, এবং পুংখানুপুংখরূপে দর্শকদের জন্য আনন্দময় একটি লীগ। এমন একটি পরিচিতি এই লীগটি অর্জন করেছে বিশেষ করে গত দুই দশকে, এবং তার পেছনে কারণ হিসেবে শুধু যে বিশ্বের সেরা সেরা খেলোয়াড় ও পিআর দলদের উপস্থিতিই দায়ী তেমনটি নয়, বরং বিশ্বের সকল নামীদামী ম্যানেজারদের উপস্থিতিও একটি বড় কারণ।

শুধুমাত্র কিছু বুদ্ধিদীপ্ত যুবা খেলোয়াড় থাকলেই চলে না, বরং তাদেরকে গাইড করার জন্য থাকতে হয় কিছু অসাধারণ ও অভিজ্ঞ মস্তিষ্ক। যেসকল মস্তিষ্কে সারাক্ষণ ফুটবলীয় চিন্তা ভাবনা ও পরিকল্পনাই ঘুরপাক খায়, সেগুলিকে কাছে পাওয়া বা কাছে থেকে দেখা মোটেও কোন ছোটখাট ব্যাপার নয়, এবং বর্তমানে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ খুবই ভাগ্যবান এদিক থেকে যে, তাদের নিকট উভয়ই রয়েছে — বহু প্রতিভাবান উদীয়মান খেলোয়াড় এবং প্রচুর বুদ্ধিদীপ্ত ও নামকরা ম্যানেজার। প্রিমিয়ার লীগে সবসময়ই দেখা মিলেছে পৃথিবীর সবচেয়ে তীক্ষ্ণ ও ট্যাকটিকাল মস্তিষ্কসম্পন্ন ম্যানেজারদের, যাদের ফুটবলকে দেখা বা অনুভব করার পদ্ধতিই অন্যান্য গড়পড়তা ম্যানেজারদের থেকে অনেকটাই আলাদা। গত কয়েক দশকে লীগটিতে সাফল্য অর্জন করা এমন অনেক ম্যানেজারদের মধ্যে অন্যতম হলেন স্যার আলেক্স ফার্গুসন, হোসে মোরিনহো, আর্সেন ওয়েংগার, কার্লো এনচেলত্তি, পেপ গার্দিওলা, ইয়ুর্গেন ক্লপ প্রমুখ।

শুধু তাদের নাম উল্লেখ করাটাই যথেষ্ট নয়। তাই আমরা এই নিবন্ধ জুড়ে প্রিমিয়ার লীগের এসকল অনবদ্য মাইন্ডগুলির সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানব। চলুন শুরু করা যাক!

ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের লোভনীয়তা (The alluring effect of the Premier League)

এ ব্যাপারে একদমই কোন সন্দেহ নেই যে, বিশ্বজুড়ে প্রত্যেকটি যুবা ফুটবল খেলোয়াড়েরই স্বপ্ন থাকে কোন না কোন সময় প্রিমিয়ার লীগে খেলার। তারা এই স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে, এবং প্রিমিয়ার লীগের যে ব্যাপারটি তাদেরকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে তা হল লীগটির প্রতিযোগিতাময় আবহাওয়া, এর তীব্রতা, প্রত্যেকটি ক্লাবের অসংখ্য অসংখ্য সমর্থকদের আহাজারি, এবং সবসময়ই লীগটির সাথে জড়িত থাকা অসম্ভব রকমের উত্তেজনা। তবে, শুধু তাই নয়, সব মিলিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ হল যেকোন খেলোয়াড়, সমর্থক ও ফুটবলপ্রেমীদের জন্য একটি সম্পূর্ণ প্যাকেজ, এবং সেখানে খেলার উত্তেজনার পাশাপাশি প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জন্য একটি বড় বিষয় হল বিশ্বের সেরা সব কোচদের অধীনে কাজ করার সুযোগ। এমন কোচ বা ম্যানেজারদের সাতগে কাজ করার মাধ্যমে সেসব খেলোয়াড়েরা নিজেদেরকে বিকশিত করার লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে যান, তাদের নিজস্ব সীমা সম্পর্কে জ্ঞাত হোন, তাদের অন্তর্নিহিত সকল প্রতিভা সম্পর্কে জ্ঞাত হোন, এবং জানতে পারেন যে তাদের কতটুকু বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এবং কোন উপায়ে।

একজন সাধারণ ইয়াংস্টার তার বিকাশের সময়টিতে ভাবতে থাকেন যে তিনি খেলোয়াড় হিসেবে স্কেলের ১ থেকে ১০ এ কিভাবে পৌঁছাবেন। কিন্তু, তিনি যখন একজন তুখোর কোচের অধীনে কাজ করার সুযোগ পাবেন, তখন তাকে সেই কোচ শেখাবেন যে কিভাবে আগে ফুটবলের এ টু জেড সম্পর্কে জানতে হয়, কারণ তা জানতে পারলে সেকেলের ১ থেকে ১০ এ কেন, ১০০ পর্যন্তও পৌঁছানো সম্ভব। প্রিমিয়ার লীগ ক্লাবগুলি ভালো ভালো কোচদের নিয়োগ দিয়ে এভাবে খেলোয়াড়দের বিকশিত করার দিক দিয়ে বিশ্বসেরা, এবং সেজন্যই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাবান যুবারা এই লীগটিতেই যোগ দেওয়ার জন্য প্রচন্ডরকম আগ্রহী হয়ে থাকে।

কেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগকে পৃথিবীর সকল জিনিয়াস কোচদের অবধারিত ঠিকানা বলা হয়ে থাকে? (Why is the EPL the home of genius minds?)

একটি প্রধান ব্যাপারের জন্যই ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগকে পৃথিবীর সকল বুদ্ধিমান ও ট্যাকটিকালি জিনিয়াস কোচদের ঠিকানা বলা হয়ে থাকে, এবং সেটি হল এই লীগটির প্রতিযোগিতাময় আবহাওয়া, খেলার তীব্র গতিময়তা এবং খেলোয়াড়দের গুণমান। ইংলিশ টপ টিয়ারের এসকল কোচরা তাদের অধীনে খেলতে থাকা খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে সেরাটা বের করে আনার সুযোগ পান এবং আরো সুযোগ পান তাদের নিজেদের সীমা সম্পর্কে জানতে। এছাড়া, আমরা জানি যে, প্রিমিয়ার লীগ সবসময়ই জনপ্রিয় হয়ে এসেছে যুবা খেলোয়াড়দের দুযোগ দেওয়ার জন্য, এবং এই লীগটিই হল বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাবান ইয়াং খেলোয়াড়দের ঠিকানাও বটে। এবং এই ব্যাপারটির ফলেও অনেক ম্যানেজার প্রিমিয়ার লীগে কাজ করতে আগ্রহী হোন, কারণ এখানেই তারা সুযোগ পাবেন সেসকল অপরিপক্ক প্রতিভাদের নিয়ে কাজ করে তাদেরকে বিশ্বমানের খেলোয়াড়ে পরিণত করার।

পড়ুন:  শীর্ষ 10 প্রিমিয়ার লীগ সর্বকালের শীর্ষ গোল স্কোরার

 

এসকল বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিষ্কের অধিকারীরা আসলে কারা? (Who are these intelligent minds?)

বর্তমান ও সাম্প্রতিক সময়ে প্রিমিয়ার লীগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দুইজন অনবদ্য কোচের রাজ, এবং তারা হলেন স্প্যানিশ জাদুকর পেপ গার্দিওলা (ম্যানচেস্টার সিটি) এবং জার্মান রকস্টার ইয়ুর্গেন ক্লপ (লিভারপুল)। তবে, আমরা যদি লীগটির সম্পূর্ণ ইতিহাসের দিকে এক নজর তাকাই, তাহলে আমরা এমন আরো অনেক সফল ও নামকরা ম্যানেজারদের চিহ্নিত করতে পারব, যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। 

২০১৬ সালে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে মোট ১১টি শিরোপা জেতার মাধ্যমে (৪টি প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা) পেপ গার্দিওলাই প্রিমিয়ার লীগের সেরা কোচে পরিণত হয়েছেন। অন্যান্য কোচ বা ম্যানেজাররা গার্দিওলা’র মত সাফল্য অর্জন করতে না পারলেও তারা সময় নিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করছেন এবং আমরা যদি তাদের গত মৌসুমের পারফর্মেন্স দেখি, তাহলে বুঝতে পারব যে, সেসকল ম্যানেজাররাও ইংল্যান্ডের মুকুট দখলের লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার জন্য এখন প্রস্তুত।

এখানে আমরা এমন কিছু ম্যানেজারদের সম্পর্কে জানব যারা আগামী মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগের শিরোপার লড়াইয়ে সামিল থাকবেন বলেই আমরা মনে করি।

১. পেপ গার্দিওলা – ম্যানচেস্টার সিটি (1. Pep Guardiola – Manchester City)

বর্তমানে গত এক দশকে প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে সফল ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির নৌকাটির ভরসাবান মাঝি হয়ে রয়েছেন পেপ গার্দিওলা। কাগজে কলমে লীগটিতে ম্যান সিটির চেয়ে শক্তিশালী ও ভয়ংকর কোন দল আর নেই বললেই চলে। গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও রহিম স্টার্লিংকে হারালেও গত মৌসুমে তাদের কেনা জ্যাক গ্রিলিশ ও এবারের মৌসুমে তাদের কেনা আর্লিং হাল্যান্ড এর মধ্যে তারা এমন দু’জন খেলোয়াড়কে পেয়েছেন যারা তাদের দলে শুধু শক্তিমত্তাই যোগ করবে না, তাদেরকে অন্য সব ক্লাবের থেকে কয়েক ধাপ উপরে নিয়ে যাবে।

২. ইয়ুর্গেন ক্লপ – লিভারপুল (2. Jurgen Klopp – Liverpool)

ইয়ুর্গেন ক্লপের অধীনে অল রেডস’রা গত মৌসুমে একদম শেষ পর্যন্ত প্রিমিয়ার লীগের শিরোপার জন্য লড়েছিল, কিন্তু তাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে পেপ এর শিষ্যরা শিরোপাটি তাদের নাকের নিচ থেকে ছিনিয়ে নেয়। গত বেশ কিছু বছর ধরে লিভারপুলের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন সাদিও মানে এবার ক্লাবটি ছেড়ে বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দিয়েছেন, এবং খোলা দৃষ্টিতে সেটি যে কারোর কাছেই একটি বিশাল ঝটকা মনে হওয়ারই কথা। অনেকে এটিও মনে করতে পারেন যে, মানে’র অনুপস্থিতিই সুযোগ করে দিবে অন্যান্য দলদের লিভারপুলের স্থানটি দখল করার। কিন্তু, ইয়ুর্গেন ক্লপ তার সময়কালে লিভারপুলে এমন একটি মনোভাব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন যে, কোন একজন খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতি তার দলকে দূর্বল করে দেবে না। এছাড়া তারা তাদের দলে ডারউইন নুনেজকে যুক্ত করতে পেরেছেন, যা অবশ্যই দলটিকে আরো শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।

৩. এরিক তেন হাগ – ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (3. Erik Ten Hag – Manchester United)

সাবেক এই আয়াক্স কোচ কিছুদিন আগেই আমস্টারডাম এর ক্লাবটি ছেড়ে এসে যোগ দিয়েছেন ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এ। গত মৌসুমে তারা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের গ্রুপ পর্যায়ে ৩য় স্থান দখল করায় বাকি ইউরোপীয় সময়কাল তাদেরকে উয়েফা ইউরোপা লীগে কাটাতে হয় এবং প্রিমিয়ার লীগে তারা ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করায় আগামী মৌসুমেও তাদেরকে ইউরোপের দ্বিতীয় সারির লীগটিতেই খেলতে হবে। এমতাবস্থায় তারা দলের দায়িত্ব সপেছেন ডাচ কোচ এরিক তেন হাগের উপর, যিনি কি না ম্যানেজার হিসেবে গত কয়েক বছরে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন, এবং যার খেলার পদ্ধতি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ঐতিহাসিক মানসিকতার সাথে মানানসই।

পড়ুন:  আর্সেনাল এবং সিটির ইউসিএল পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করা

এরিক তেন হাগ আয়াক্সের হয়ে হাত পা বাঁধা অবস্থায়ও অনেক অনেক সাফল্য অর্জন করেছেন, এবং তেমনিভাবে যদি তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন, তাহলে রেড ডেভিল সমর্থকরা আশা করতেই পারেন আগামী মৌসুম অন্তত উয়েফা ইউরোপা লীগ জেতার এবং প্রিমিয়ার লীগে শীর্ষ চারে থাকার। তারা এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র টাইরিক ম্যালেসিয়া নামক একজন অনভিজ্ঞ ডাচ ফুল ব্যাককেই কিনতে সক্ষম হয়েছেন, তাই এটি এখন দেখার বিষয় যে এরিক তেন হাগ তার বর্তমান স্কোয়াড নিয়ে খুশি কি না, এবং আরো কোন নতুন খেলোয়াড় তিনি দলে ভেড়াতে পারেন কি না।

৪. এন্তোনিও কন্তে – টটেনহ্যাম হটস্পার্স (4. Antonio Conte – Tottenham Hotspurs)

টটেনহ্যাম হটস্পার্স হল এমন একটি দল যারা বহু বছর ধরে অন্যান্য ক্লাবের সমর্থকদের বিদ্রুপের পাত্র হয়ে আসছে, এবং তার পেছনে মূল কারণই হল তাদের শূন্য ট্রফি ক্যাবিনেট। সেই সমস্যাটির সমাধান করতেই তারা ২০২১ সালের শেষের দিকে সাবেক চেলসি, ইন্টার মিলান ও জুভেন্টাস কোচ এন্তোনিও কন্তের উপর দলটির দায়িত্ব অর্পণ করেন। তারপর থেকেই দলটি উন্নতির পথেই রয়েছে, এবং নতুন মৌসুম শুরুর আগে তারা কিছু অনবদ্য সাইনিংও করে ফেলেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলেন ব্যাক আপ গোলকিপার ফ্রেজার ফোর্স্টার, মিডফিল্ডার ইভস বিসুমা এবং এক্সাইটিং ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন, যিনি কি না এভারটনে থাকাকালীন সেরা সেরা সব পারফর্মেন্স উপহার দিয়েছিলেন। 

স্পার্স তাদের ইতিহাসে খুব কম সংখ্যক সময়েই এত শক্তিশালী একটি স্কোয়াড ধারণ করতে পেরেছে, কিন্তু তারপরও অনেক ফুটবল বোদ্ধা ও বিশ্লেষকরাই তাদেরকে প্রিমিয়ার লীগের শিরোপার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মানতে নারাজ। তবে, এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, কেউ যদি স্পার্সকে শিরোপা জেতাতে পারেন তবে সেটি কন্তেই, কারণ সেদিক থেকে অন্যান্য ক্লাবে তার অতীতের রেকর্ড বেশ চমৎকার। এখন শুধু দেখার বিষয় যে আগামী মৌসুমে তার ট্যাকটিক্স কাজে লাগে কি না।

৫. মিকেল আর্তেতা – আর্সেনাল (5. Mikel Arteta – Arsenal)

যদিও আর্সেনাল গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের শীর্ষ চারে থাকার মোক্ষম সুযোগটি হাতছাড়া করে মৌসুমের শেষ কয়েকটি ম্যাচে, তবুও এই বিষয়টি অমান্য করা যাবে না যে, মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানেই আর্তেতা আর্সেনালের চেহারা ও ভাগ্য উভয়েই বেশ খানিকটা পরিবর্তন এনে ফেলেছেন। যদিও প্রিমিয়ার লীগের মত একটি প্রতিযোগিতামূলক লীগে আমরা কেউই হলপ করে কিছুই বলতে পারব না, তবুও এমনটিই মনে হচ্ছে যে, আগামী মৌসুমে আর্সেনাল শীর্ষ চারে থাকার জন্য এখন প্রস্তুত।

আর্তেতার আর্সেনাল যুবা রক্তে পুরোপুরিভাবে টইটম্বুর। তবে কি পারবেন তিনি আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে আর্সেনালকে তাদের অতীতের সাফল্যের সেসব সময়ে আবারো ফিরিয়ে নিয়ে যেতে? একটি বিষয়ে কোনই সন্দেহ নেই যে, আর্তেতা হলেন পেপ গার্দিওলা’র সাবেক ডান হাত, অর্থাৎ ভালো ম্যানেজমেন্ট এবং শিরোপা জেতার অভ্যাস তার আগে থেকেই রয়েছে, তাই তার ট্যাকটিক্স এবং মস্তিষ্কের উপর আর্সেনাল সমর্থকরা ভরসা রাখতেই পারেন। মৌসুম শুরুর আগে গানার্সরা কিছু অসাধারণ সাইনিংও দলে ভিড়িয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলেন সাবেক ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ডিফেন্ডার মার্কুইনহোস এবং মিডফিল্ডার ভিয়েরা।

পড়ুন:  কেন প্রিমিয়ার লীগের রেফারিদের ম্যাচ পরিচালনা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠছে?

৬. থমাস টুখেল – চেলসি (6. Thomas Tuchel – Chelsea)

থমাস টুখেল হলেন এমনি এক জাদুকর, যিনি গড়পড়তা কোন দলকে নিয়েও অনেক কিছু অর্জন করে ফেলতে পারেন। যেবছর চেলসিকে নিয়ে তাদের নিজস্ব সমর্থকরাও কোনপ্রকার স্বপ্ন দেখেননি, ঠিক সেইবারই দলটির দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা জিতিয়েছিলেন থমাস টুখেল। তবে, প্রিমিয়ার লীগ শিরোপাটি তার জন্য এখনো অধরাই রয়ে গিয়েছে। গত মৌসুমটি মাঠ ও মাঠের বাইরের বিভিন্ন কারণে তার জন্য বা চেলসি’র জন্য মোটেও ফলপ্রসূ হয়নি। তবে কিছু নতুন ডিফেন্ডার কেনা ছাড়া খুব বেশি সাইনিং দলে ভেড়ানোর চেয়ে তার দলটিতে ইতিমধ্যে যারা আছেন সেসকল বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের পারফর্মেন্স বৃদ্ধির দিকে নজর দিলেই টুখেল বুদ্ধিমানের মত একটি কাজ করবেন। এভাবেই তিনি এখন সেই মুকুটটি দখল করতে পারবেন, যে মুকুটের মালিক বর্তমানে পেপ গার্দিওলা।

থমাস টুখেলের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে তিনি খেলা হিসেবে ফুটবলকে খুব ভালো করে বোঝেন, এবং তার প্রতিপক্ষদের শক্তি ও দূর্বলতাসমূহ নিয়ে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করেই দল সাজান এবং মাঠে নামান। সব মিলিয়ে তার কোচিং পদ্ধতি ও দলের গঠন দেখে এমনটিই মনে হচ্ছে যে, আগামী মৌসুমে ম্যান সিটি ও লিভারপুলকে টক্কর দিয়ে প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জেতার মত দল এখন শুধু চেলসি’রই রয়েছে।

আসন্ন ২০২২-২৩ প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমে যে যে ট্যাকটিকাল লড়াইয়ের দেখা মিলতে পারে (2022/23 – An upcoming storm of tactical battles in Premier League)

এত সব অসাধারণ ম্যানেজার ও বিশ্বের সেরা সব অনবদ্য প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের উপস্থিতিতে ২০২২-২৩ প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমটি কতটা উত্তেজনাময় এবং শ্বাসরুদ্ধকর হতে চলেছে, তা সহজেই ধারণা করা যায়।

প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসজুড়ে আমরা দেখেছি যে লীগটির দূর্দান্ত সব দলগুলি (যেমন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি এবং আর্সেনাল ইত্যাদি) বিভিন্ন মৌসুমে দর্শকদের একমুখী বা দ্বিমুখী শিরোপার লড়াই উপহার দিতে পেরেছেন। কিন্তু, এবারই বহু বছর পর এমন মনে হচ্ছে যে, দুই এর অধিক দল প্রিমিয়ার লীগের শিরোপার জন্য লড়তে চলেছে। এসকল দলগুলিই আমাদেরকে ২০২২-২৩ মৌসুমজুড়ে প্রচুর শ্বাসরুদ্ধকর এবং স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিতে চলেছে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।

গত বছর যেহেতু ম্যানচেস্টার সিটি কেবল একটি ছোট্ট ব্যবধানেই লিভারপুলকে প্রিমিয়ার লীগ শিরোপার দৌড়ে পেছনে ফেলতে পেরেছিল। সেটি দেখাই প্রিমিয়ার লীগের অন্য সব তুখোর ম্যানেজাররা সাহস পাবেন যে, এই শিরোপাটিও তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়।

শেষ মন্তব্য (Closing sentences)

এত বড় বড় এবং নামীদামী ম্যানেজারদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা মোটেও কোন সহজ বিষয় নয়, তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে সেটি করার চেষ্টা করেছি। আমরা এখন নিরাপদভাবে এটি দাবি করতে পারি যে, এসকল ম্যানেজার এবং তাদের দলগুলি সম্পর্কে আমাদের দেওয়া তথ্যগুলি যদি আপনি এক নজর দেখে নেন, তাহলে আগামী মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে কি কি হতে চলেছে তা সম্পর্কে একটি ন্যূনতম ধারণা আপনাদের থাকবে। 

বিদায় নিতে আমরা কখনোই পছন্দ করি না, কিন্তু হায়! এখন যে সেই বিদায়েরই পালা। আমাদের আজকের এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু নিয়ে আপনাদের যেকোন ধরণের প্রশ্ন থাকলে আপনারা আমাদেরকে জানাতে পারেন, কারণ আপনাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া আমাদের কর্তব্যের অধীন। আগামীবার আবারো এমনি কোন মজার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে। ততদিন পর্যন্ত আপনাদেরকে জানাই ধন্যবাদ এবং খোদা হাফেজ।

Share.
Leave A Reply