...

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বর্তমানে একটি ডুবন্ত জাহাজে অবস্থান করছে, এবং তাদের ম্যানেজার এরিক তেন হাগ নিশ্চয় নিজেকেই প্রশ্ন করছেন যে তিনি এই জাহাজটিকে আদৌ ভাসিয়ে রাখতে পারবেন কি না। মৌসুমের প্রথম উইকেন্ডে ঘরের মাটিতে ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়ন এর কাছে ২-১ গোলে হারার পর তারা জি-টেক কমিউনিটি স্টেডিয়ামে গিয়ে ব্রেন্টফোর্ডের নিকট ৪-০ গোলে নাকানিচুবানি খেয়ে এসেছে। ১৯৯২ সালের আগষ্ট মাসের পর থেকে এবারই প্রথমবারের মত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড লীগ টেবিলের তলানিতে অবস্থান করছে। 

লিভারপুলের ব্যাপারে বলতে গেলে, তারা এবারের মৌসুমের শুরুটি মোটেও তাদের স্বভাবসুলভ ভঙিতে করতে পারেননি। মৌসুমের প্রথম দু’টি ম্যাচ থেকেই তারা কেবলমাত্র একটি করে পয়েন্ট নিতে সক্ষম হয়েছে, এবং উভয় ক্ষেত্রেই তারা সৌভাগ্যক্রমেই সেই একটি করে পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেছিল। যদিও ম্যাচটিতে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর তারা তাদের তারকা ফরোয়ার্ড ডারউইন নুনেজকেও হারিয়েছিল (লাল কার্ডের শিকার), তবুও লিভারপুলের জন্য ম্যাচটি জেতা খুবই প্রয়োজনীয় ছিল, কারণ ম্যাচটিতে তাদের প্রতিপক্ষ অর্থাৎ ক্রিস্টাল প্যালেসকে তারা গত মৌসুমে হোম এবং অ্যাওয়ে উভয় ফিক্সচার মিলিয়ে ৯-০ গোলে হারিয়েছিল। এমন দলের সাথে ড্র করলে মৌসুমের শেষের দিকে গিয়ে তাদেরকে পস্তাতে হতে পারে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।

 

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (Manchester United)

ওল্ড ট্রাফোর্ডের বর্তমান আবহ বর্ণণা করতে গেলে নিঃসন্দেহে এই তিনটি শব্দই যে কারো মাথায় আসবে — ধ্বংসলীলা, দুর্যোগ, এবং অন্ধকার।

থিয়েটার অব ড্রিমস খ্যাত এই স্টেডিয়ামটি তার সমর্থকদের আর সেই আনন্দ বা উল্লাস প্রদান করতে পারে না, যা সেটি ১০ বছর আগে পারতো।

রাল্ফ রাঙনিকের শোচনীয় স্পেলটি শেষ হওয়ার পর থেকেই সকল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সমর্থকই বেশ উত্তেজিত ছিলেন এটি ভেবে যে, তাদের পরবর্তী কোচ এরিক তেন হাগ তাদেরকে এই ঘোর অমানিশা থেকে বাঁচাবেন। ডাচ এই ম্যানেজারটিও তাদেরকে সেসকল স্বপ্নই দেখিয়েছিলেন যা তারা বহু বছর ধরে চাচ্ছিলেন, এবং যা তারা তাদের ঘৃণিত চির প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যান সিটি’র মধ্যে বহু বছর ধরেই দেখে আসছিলেন। প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি ম্যাচগুলিতে রেড ডেভিলদের অসাধারণ পারফর্মেন্স তাদের ভক্তদের প্রত্যাশার বাঁধ আরো খানিকটা ভেঙে দেয়।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রি সিজন ম্যাচগুলিতে দলটি সে সবকিছুই দেখাতে পেরেছিল যা তাদের দর্শকরা দেখতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু, হায়! নতুন মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে যেন ইউনাইটেড আবারো তাদের গত মৌসুমের রূপেই ফিরে গিয়েছে। মৌসুমের প্রথম দুইটি ম্যাচেই তারা মুখ থুবড়ে পড়েছে, এবং অপেক্ষাকৃত ছোট দু’টি দলের নিকট তারা ধরাসয়ী হয়েছে। সেই দুটি ম্যাচে ম্যান ইউ এর পক্ষে যে একটি গোল হয়েছে, সেটিও এসেছিল প্রতিপক্ষের একজন খেলোয়াড় এর পা থেকেই (আত্মঘাতী গোল)। এছাড়া, ঐতিহাসিক এই দলটি বর্তমানে লীগ টেবিলের একদম তলানিতে অবস্থান করছে।

ফুটবল বোদ্ধারা, বিশ্লেষকরা, এবং দলটির সকল সমর্থকরাই একই দিকে ব্যর্থতার আংগুল তুলেছেন, এবং সেটি হল ক্লাবটির আমেরিকান মালিক গ্লেজার্স পরিবারের দিকে। এই পরিবারটির উপর তাদের মূল অভিযোগ হল যে, তারা নাকি ক্লাবটি থেকে শুধু অর্থ কামাইয়ের ধান্দাই করে এসেছেন, এবং ক্লাবটির ভালো মন্দ কিছুই তারা চান না, তাই ট্রান্সফার উইন্ডোতে নতুন ভালো কোন খেলোয়াড়কে কেনার জন্য তারা চেষ্টাও করেন না।

তাদের সর্বশেষ ম্যাচটিতে খেলার জন্য মাঠে নামার আগে একটি সুসংবাদ পেয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সমর্থকরা, এবং সেটি হল যে, তাদের প্রিয় খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো’র নামটি ম্যাচটির শুরুর একাদশে ছিল। সেটিই ছিল নতুন মৌসুমে তার প্রথম স্টার্ট। তবে, গোলকিপার ডেভিড ডি গিয়া এবং পুরো ইউনাইটেড ব্যাক লাইনের ভুলের পর ভুল এর কারণে ম্যাচটির শুরু থেকেই দলটি ব্যাক ফুটে পড়ে যায়। 

ম্যাচটিতে তারা ৪-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়, এবং এখানে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়টি হচ্ছে যে, ব্রেন্টফোর্ড এর জায়গায় আরো ভালো কোন দল হলে সেই ব্যবধানটি আরো বড়ও হতে পারতো।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের পরবর্তী ম্যাচে একটি আহত লিভারপুল দলের মুখোমুখি হবে, যারা কি না তাদের নতুন তারকা ফরোয়ার্ড ডারউইন নুনেজকে ছাড়াই ম্যাচটিতে প্রবেশ করবে।

 

লিভারপুল (Liverpool)

সুপারস্টার ফরোয়ার্ড সাদিও মানেকে বায়ার্ন মিউনিখের নিকট বিক্রি করার পর কেউই লিভারপুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তটিকে সহজে মেনে নিতে পারেনি। সেনেগালিজ সেই স্ট্রাইকার বেশ কয়েক বছর ধরেই লিভারপুল ছাড়ার হুমকি দিচ্ছিলেন, তবে বিশ্বস্ত সূত্রে এমনটি জানা গিয়েছে যে, তার বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে লিভারপুল কর্তৃপক্ষের অনীহার কারণেই তিনি আরো তাড়াতাড়ি ক্লাবটি ছেড়েছেন। 

দলটিতে তার রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে কেনা উরুগুয়ান ফরোয়ার্ড ডারউইন নুনেজ এর জন্য মৌসুমের শুরুটা অবশ্য ভালোই হয়েছিল। প্রথম ম্যাচেই ফুলহ্যামের বিরুদ্ধে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাইড-হিলড গোল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার আগে তিনি কমিউনিটি শিল্ডে ম্যানচেস্টার সিটি’র বিরুদ্ধেও জয়সূচক গোলটি করেছিলেন।

তবে, গত সপ্তাহে এনফিল্ডে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিরুদ্ধে ম্যাচে তার বাজে পারফর্মেন্সের পর সকল লিভারপুল সমর্থকই এখন চিন্তিত এই ব্যাপারটি নিয়ে যে, তিনি আদৌ দলটির ফরোয়ার্ড লাইনের নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না।

রোবার্তো ফিরমিনো দলটির জন্য যেমনটি বছরের পর বছর ধরে করে এসেছেন, সেভাবে তিনি তার আক্রমণভাগের সতীর্থদের বল সাপ্লাই বা স্পেস তৈরি করে দিতে পারছেন না। পুরো ম্যাচটি (লাল কার্ড দেখার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত) এই উরুগুয়ান ফরোয়ার্ড একটি হতাশার প্রতিচ্ছবি হয়েই কাটিয়েছেন। হয়তো বাজে পারফর্মেন্সের জের ধরেই তিনি তার ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিলেন, এবং ক্রিস্টাল প্যালেসের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হোয়াকিম এন্ডারসেনকে হেডবাট করার দরুণ সরাসরি লাল কার্ড দেখেছিলেন।

ইয়ুর্গেন ক্লপের এখন দরকার তার পুরনো বোর্ডটি বের করা এবং তার দলকে দেখানো যে তাদের সামর্থ্য আরো কতটা বেশি। যে করেই হোক তাদেরকে অতি শীঘ্রই জয়ের ধারায় ফিরতেই হবে, নতুবা তারা অদূর ভবিষ্যতে বিপদে পড়তে পারে, কারণ এসকল হারানো পয়েন্ট তাদেরকে ম্যানচেস্টার সিটি’র ভবিষ্যৎ পয়েন্ট ট্যালি থেকে ইতিমধ্যেই দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

এরপর লিভারপুলের প্রতিপক্ষ হল তাদের ঐতিহাসিক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। যদিও গত কয়েক মৌসুম জুড়ে এই ফিক্সচারটি বেশ একপেশে ও ওয়ান-সাইডেড একটি ফিক্সচারে পরিণত হয়েছে, তবুও লিভারপুলের সাম্প্রতিক বাজে ফর্ম ও তাদের প্রধান ফরোয়ার্ড এর অনুপস্থিতি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে কিছুটা হলেও আশা দেখাবে বলেই আমরা মনে করি।

 

প্রেডিকশন (Prediction)

লিভারপুল তাদের মৌসুমের প্রথম জয়টি তুলে নিতে বেশ হিমসিম খেলেও তাদের সামনে এখন একদম আদর্শ একটি শিকার অপেক্ষা করছে, যার নাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। যদিও রেড ডেভিলরা এই ম্যাচটিতে ভালো করার এবং জয়ের ধারায় ফিরে আসার একটি আপ্রাণ চেষ্টা করবে, তবুও তাদের অগোছালো রক্ষণভাগের কারণেই আবারো তাদের পতন হবে, এমনটিই আমাদের ধারণা।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ১ – ৩ লিভারপুল

২.৫ গোলের উর্ধ্বে

লিভারপুল -১.০ (এশিয়ান হ্যান্ডিক্যাপ)

Share.

Leave A Reply

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.