আমাদের ১০টি প্রেডিকশনের দ্বিতীয় কিস্তিতে আপনাদেরকে স্বাগতম। এবার আমরা আরো ৫টি এমন শিক্ষিত অনুমান করবো, আগামী মৌসুমের পুরোটা জুড়ে প্রিমিয়ার লীগে যেগুলি ঘটার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমরা মনে করি।

 

প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ ৩ গোলদাতার মধ্যে একজন হবেন আলেকজান্ডার মিত্রোভিচ (Aleksandr Mitrovic will be among the top 3 goal scorers)

হাল্যান্ডের মতই আলেকজান্ডার মিত্রোভিচও প্রিমিয়ার লীগের প্রথম উইকেন্ডে অসাধারণ ক্রীড়ানৈপূণ্য প্রদর্শন করেছেন, যদিও হাল্যান্ডের মত করে তিনি তার সদ্য প্রমোটেড ফুলহ্যাম দলটিকে জয়লাভ করাতে পারেননি। অবশ্য এই ফলাফলটি নিয়ে ফুলহ্যাম সমর্থকদের কোনই অভিযোগ থাকার কথা নয়, কারণ তারা গত মৌসুমের প্রিমিয়ার লীগ রানার্স আপদের বিরুদ্ধে একটি পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে সক্ষম হয়েছে।

বর্তমান এফএ কাপ ও কারাবাও কাপ চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলের বিরুদ্ধে মিত্রোভিচ তার ক্যারিয়ারের সেরা একটি পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেছেন। ম্যাচটিতে তিনি দুই দুই বার ভার্জিল ভ্যান ডাইককে বোকা বানিয়েছেন, যার মধ্যে একবার তিনি গোল অভিমুখে ছুটে যেতে সক্ষম হোন এবং একটি পেনাল্টি কামিয়ে নেন। সেই পেনাল্টিটিকে আবার গোলে পরিণতও করেন তিনিই। তার হল্ড-আপ প্লে ছিল দেখার মত, যার ফলে তার দল কিছুটা চাপমুক্ত হতে পেরেছিল এবং সাথে সাথে লিভারপুলের অর্ধে কিছুটা বাড়তি সময়ও কাটাতে পেরেছিল।

গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় ৪৪ ম্যাচ খেলে ৪৩টি গোল করার পর আলেকজান্ডার মিত্রোভিচ এবারের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমেও একটি স্বপ্নের মত সূচনা করলেন। গতবার (২০২০-২১ মৌসুমে) প্রিমিয়ার লীগে খেলাকালীন তিনি পুরো মৌসুমজুড়ে মাত্র ৩টি গোল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এবার এক ম্যাচেই তিনি সেই ট্যালিটিকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছেন।

ফুলহ্যাম বারবার প্রিমিয়ার লীগে এসেও এখানে এক মৌসুমের বেশি টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে, এবারের বেলায় মনে হচ্ছে তারা প্রিমিয়ার লীগে দীর্ঘকাল ধরে টিকে থাকার জন্য আঁটসাঁট বেঁধেই লেগেছে। আবারো একটি রেলিগেশন লড়াই থেকে বাঁচতে হলে তাদেরকে মিত্রোভিচের গোলগুলির উপরই মূলত ভরসা রাখতে হবে। শারিরিক দিক দিয়ে তিনি যেকোন ডিফেন্ডারের জন্যই একটি দুঃস্বপ্নের কারণ। এছাড়া, এমন আত্মবিশ্বাসের সাথে খেললে তিনি সহজেই মৌসুমশেষে ২০ গোলের সীমা পার করতে পারবেন, এবং প্রিমিয়ার লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় নিজের নামটি লিখাতে পারবেন।

 

লিভারপুল হয়তো এবার দ্বিতীয় স্থানও দখল করতে পারবে না (Liverpool might not finish in second spot this term) 

কমিউনিটি শিল্ডে ম্যানচেস্টার সিটি’র বিরুদ্ধে লিভারপুলের একটি অনবদ্য পারফর্মেন্স এর পর বেশির ভাগ রেডস সমর্থকরাই ভেবেছিল যে সামনে তাদের জন্য একটি সুখকর মৌসুমই অপেক্ষা করছে। তবে, লীগ প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচেই সদ্য প্রমোটেড দল ফুলহ্যামের বিরুদ্ধে ড্র’টি তাদের সেসব উত্তেজনায় পানি ঢেলে দিয়েছে।

পড়ুন:  এরিক তেন হাগঃ যেভাবে এই ডাচ ম্যানেজার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলার উন্নতিসাধন করেছেন

এখনো আমরা কেবলমাত্র নতুন মৌসুমের শুরুতেই রয়েছি, কিন্তু তবুও লন্ডনে লিভারপুলের পারফর্মেন্স দেখে বহু রেডস সমর্থকের মনেই নিশ্চয় প্রশ্ন জেগেছে এই ব্যাপারে যে, আসলেই তাদের দল এবার কতটুকু অর্জন করার সামর্থ্য রাখে। ডেব্যু ম্যাচে খেলতে নামা ডারউইন নুনেজ এর করা একটি এবং জাত গোলস্কোরার মোহাম্মদ সালাহ্ এর করা একটি গোলের উপর ভর করে লিভারপুল নিশ্চিত করে যেন ফুলহ্যাম পুরো তিন পয়েন্ট নিয়েই ক্রেভেন কটেজ না ছাড়তে পারে। তবে, আরো কাছে থেকে দেখলে বোঝা যায় যে, লিভারপুলের সেই দুইটি গোলও এসেছিল তাদের সৌভাগ্যবশতই।

প্রথম গোলের ক্ষেত্রে ডারউইন নুনেজ প্রথমেই তার ফ্লিকটি মিস করেন, এবং বলটি ফুলহ্যাম ডিফেন্ডার তসিন আদারাবিয়োয়ো’র হাঁটুতে বাড়ি খেয়ে আবার আচমকা নুনেজের পায়ে লেগে জালে জড়িয়ে পড়ে। আর দ্বিতীয় গোলটির বেলায় এই উরুগুয়ান ফরোয়ার্ড বলটি নিয়ন্ত্রণে ভুল করলেও সৌভাগ্যবশত তা মোহাম্মদ সালাহ্ এর ঠিক সামনেই পতিত হয়, এবং মিশরীয় এই জাদুকর খুবই পারদর্শীতার সাথে একটি ঠান্ডা মাথার ফিনিশ প্রদান করেন। তারা ম্যাচটির বাঁকি অংশ জুড়ে আরো কিছু সুযোগ তৈরি করতে পারলেও মোটের উপর এমনটিই মনে হয়েছে যে, লিভারপুল ভাগ্যের জোড়েই ম্যাচটি ড্র করতে পেরেছে।

যে দলগুলি গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের শীর্ষ পাঁচে ছিল, তাদের মধ্যে শুধু লিভারপুলই তাদের প্রথম ম্যাচ থেকে জয় হাসিল করতে অক্ষম হয়েছে, তাও আবার সবচেয়ে সহজ বা কাগজে কলমে দূর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এছাড়া তাদের আশেপাশের অন্যান্য দলের পারফর্মেন্স দেখার পর লিভারপুল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটিকে শিরোপাচ্যুত করার চেয়ে বেশি চিন্তায় থাকবে তাদেরকে টপকিয়ে দ্বিতীয় স্থানটি অন্য কোন দল দখল করে নেয় কি না সেটি নিয়ে।

টটেনহ্যাম হটস্পার্স তাদের নিজস্ব ক্যাম্পেইন এর খুবই সুন্দর একটি সূচনা করেছে, এবং চেলসি, যারা গত মৌসুমে তৃতীয় হয়েছিল, এবারও শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলোর জন্য একটি হুমকির নাম। এক্ষেত্রে আর্সেনালের নামটিও না নিলেই নয়, যারা তৃতীয় স্থান দখলের জন্য অনেকের মতেই ফেভারিট।

যদি লিভারপুল এখন থেকেই সতর্ক না হয়ে যায়, তাহলে হয়তো তাদেরকে এবার শিরোপার লড়াই নয়, বরং শীর্ষ চারে অবস্থান করার লড়াইয়ে লিপ্ত থাকতে হবে।

 

বরাবরের মতই এবারও ম্যানচেস্টার সিটিই লীগ শিরোপাটি জিতে নিবে (Man City will win the league as usual)

ম্যানচেস্টার সিটি’র জন্য নিয়মিত বাণিজ্য আবার চালু হয়ে গিয়েছে, কারণ মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই তারা লন্ডনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে গিয়ে ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডকে ২-০ গোলে হারিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। তারা ম্যাচটিতে ৭৩% পজিশন নিজেদের দখলে রাখতে সমর্থ্য হয়, এবং পাশাপাশি খেলাটি দেখে মনে হচ্ছিল যেন ওয়েস্ট হ্যাম পুরো মাঠটিই সিটিজেনদেরকে দিয়ে দিয়েছিল খেলার জন্য, এবং এটি কোন প্রতিযোগিতামূলক খেলাই ছিল না, বরং ছিল একটি প্র‍্যাক্টিস সেশন। সিটি’র জন্য ম্যাচটি ছিল একটু বেশিই সহজ, এবং এটু পুরো লীগের জন্যই একটি চিন্তার বিষয়।

পড়ুন:  বিশ্বের সেরা ৫জন প্রিমিয়ার লীগ খেলুনের ২য় দশকের প্রতিভার প্রতীক।

আর্লিং হাল্যান্ড এর মত একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে দলে নেওয়ার পর এবং তার ডেব্যু ম্যাচে তার পারফর্মেন্স দেখার পর এমনটিই মনে হচ্ছে যে, ম্যানচেস্টার সিটি গত মৌসুমের চেয়েও অনেকাংশে শক্তিশালী হয়ে গিয়েছে, এবং টানা তৃতীয় লীগ শিরোপা জেতার জন্য তারাই হট ফেভারিট। যদি তারা তেমনটি করতে সক্ষম হয়, তাহলে ২০০০ এর দশকের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড দলের পরে তারাই হবে সেই কৃতিত্বটি অর্জনকারী প্রথম দল। গত মৌসুমের পুনরাবৃত্তির একটি সমূহ সম্ভাবনা এখনি দেখা যাচ্ছে, কারণ শিরোপার লড়াইয়ে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ লিভারপুল তাদের নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পয়েন্ট হারিয়েছে।

যেহেতু তাদের নতুন গোলস্কোরার ইতিমধ্যেই গোল করা শুরু করে দিয়েছেন, এবং তাদের অন্যান্য নতুন সাইনিংরাও ধীরে ধীরে দলটিতে মানিয়ে নিচ্ছেন, সেহেতু এমনটিই ধারণা করা যাচ্ছে যে, লীগের অন্যান্য দলের জন্য এবারের মৌসুমটি বেশ দীর্ঘ হতে চলেছে, এবং সিটিজেনরা গত ছয় বছরের মধ্যে তাদের ৫ম শিরোপাটি জয় করতে চলেছে।

 

মৌসুম শেষ হওয়ার পূর্বে কমপক্ষে দুই জন ম্যানেজার চাকরিচ্যুত হবেন (At least two managers will be sacked before the season ends)

প্রিমিয়ার লীগে একটি ক্লাবকে ম্যানেজ করা যে কারো জন্যই একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপার, এবং একটি সম্পূর্ণ দীর্ঘ মৌসুম চলাকালীন সময়ে বেশ কিছু ম্যানেজারই চাকরিচ্যুত হবেন সেটিই স্বাভাবিক। এবারের মৌসুমেও এর বিপরীত হবে না, এবং নতুন মৌসুমের শুরুতেই নানা দলের নানা ফলাফল দেখে মনে হচ্ছে যে, প্রিমিয়ার লীগের “মিড সিজন স্যাকিং” এর প্রথাটি এবারও বহাল থাকবে।

স্টিভেন জেরার্ডের অধীনে থাকা এস্টন ভিলা দল গত সপ্তাহে সদ্য প্রমোটেড দল এএফসি বোর্নমাউথের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে পরাজিত হয়েছে। ম্যাচটিতে স্কট পার্কারের বোর্নমাউথ দল মাত্র ৩৪% পজিশন দখল করতে পারলেও এমনটিই মনে হয়েছে যে ম্যাচের অধিকাংশ সময়জুড়ে তারাই খেলার নিয়ন্ত্রণে ছিল। মৌসুমের শুরুতে যে পরিমাণ অর্থ তিনি দলটির পেছনে খরচ করেছেন, তাতে জেরার্ড অবশ্যই চাইবেন যেন তার দলের এই পারফর্মেন্স এর পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে। 

পড়ুন:  এন্তোনিও কন্তে কি পারবেন টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর বিশাল ট্রফি খরা কাটিয়ে উঠতে?

রাল্ফ হ্যাসেনহুটল এর সাউথ্যাম্পটন দলটি গত মৌসুম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত একটি পাঁচ ম্যাচের পরাজয়ের ধারায় অবস্থান করছে, এবং পর পর আটটি ম্যাচে তারা কোন জয় হাসিল করতে পারেননি। এই জার্মান কোচ অবশ্যই চাইবেন তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনটি যেন এবারের মৌসুমে বরাবরের চেয়ে আরেকটু আগেই আসে, যাতে করে তাকে এবং তার দলকে কোন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়।

প্রায় দুই দশক পর কোন প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচে খেলতে নেমে গত শনিবার স্টিভ কুপার এর নটিংহ্যাম ফরেস্ট দল একটি শক্তিশালী নিউক্যাসেল ইউনাইটেড এর বিরুদ্ধে একদমই কোন সুবিধা করতে পারেনি। তাদের খেলা দেখে আসলেই মনে হয়েছে যে চ্যাম্পিয়নশিপের একটি দল খেলছে, ঠিক যেন জলের প্রাণী স্থলে উঠে আসার মত। ক্লাবটির সমর্থকদের জন্য এই পারফর্মেন্সটি ছিল খুবই হতাশাজনক এবং ভয়ের উদ্রেককারী। খুব তাড়াতাড়ি যদি তিনি এই ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নিতে পারেন, এবং দলটির পারফর্মেন্স এ কোনপ্রকার উন্নতি না আনতে পারেন, তাহলে খুব সহজেই প্রতিষ্ঠানটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে নেতিবাচকতা প্রবেশ করতে পারে, এবং তাকে তার চাকরিটি হারাতে হতে পারে।

নটিংহ্যাম ফরেস্ট এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোতে বেশ কিছু নতুন খেলোয়াড় কিনেছে, এবং নতুন দল ও নতুন লীগে মানিয়ে নিতে তাদের অনেকেরই কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হবে। কিন্তু, সেখানেই মূল সমস্যাটি লুকিয়ে রয়েছে। দীর্ঘ, কঠিন ও ক্লান্তিকর এই লীগে তারা কি আদৌ সেই সময়টি পাবে? এই প্রশ্নটির জবাবে অধিকাংশ ফুটবল বোদ্ধাই বলবেন, “না”। ক্লাবটির বোর্ড অবশ্যই চাইবে না এত টাকা খরচ করার পর ক্লাবটি আবার চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে যাক। তাই এমনটি হতেই পারে যে, মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানেই স্টিভ কুপার হিরো থেকে জিরোতে পরিণত হয়ে যাবেন, এবং তার প্রিয় ক্লাবটি থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে।

এই তিনজন ম্যানেজার এর মধ্য থেকে যেকোন দুইজন এবারের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমে তাদের বর্তমান ক্লাব থেকে চাকরিচ্যুত হবেন এটিই আমাদের ধারণা, এবং এটিই হল আমাদের ৯ম ও ১০ম প্রেডিকশনও। এগুলো আমাদের শিক্ষিত অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই এগুলির মধ্যে কোনটি ভুল প্রমাণিত হলে, অথবা কোন দলের বা খেলোয়াড়ের ভক্তদেরকে রাগান্বিত করে থাকলে আমরা একান্তভাবে দুঃখিত। আমরা আবারও ফিরে আসবো প্রিমিয়ার লীগ বিষয়ক এমনি সব মজার আর্টিকেল নিয়ে। ততদিন পর্যন্ত আপনাদেরকে জানাই বিদায়।

Share.
Leave A Reply