বর্তমান সময়ে ম্যানচেস্টার সিটি হল পৃথিবীর ও ইউরোপের সবচেয়ে সেরা ও ধনী ক্লাবগুলির মধ্যে অন্যতম। ম্যানচেস্টার সিটিকে জিরো থেকে হিরো বানানোর ক্ষেত্রে রোবার্টো ম্যানচিনি ও ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি ব্যতীত যে মানুষটিকে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দিতে হয়, তিনি হলেন তাদের বর্তমান কোচ পেপ গার্দিওলা। তিনি ম্যানচেস্টার সিটিকে শুধু শিরোপা জিতিয়েছেন তাই নয়, তিনি ক্লাবটিকে সকল দিক থেকে একটি সুপারপাওয়ার বানানোর লক্ষ্যে এখনো লেগে রয়েছেন, এবং সফলও হয়েছেন।

তবে, যেমনটি আমরা ইতিমধ্যে বলেছি, ক্লাবটির মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পেছনে শুধুমাত্র গার্দিওলারই হাত নেই, বরং তিনি যোগ দেওয়ার আগে থেকেই ম্যানচেস্টার সিটি ইংলিশ ফুটবলে তাদের ডমিনেন্স কিছুটা হলেও শুরু করতে পেরেছিল। প্রকৃতপক্ষে, ম্যানচিনি ও পেলেগ্রিনি’র অধীনে ক্লাবটি একটি করে, অর্থাৎ মোট দুইটি প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা ঘরে তুলতে পেরেছিল।

আজকের এই অপ্রতিরোধ্য শক্তিকে বর্তমান রূপে আনার পেছনে তাই অনেকাংশে পেপ গার্দিওলা’র চেয়েও বেশি কৃতিত্ব দিতে হবে ঐ দুইজনকেই। তবে, যে একটি বিষয়ে সিটিতে সেই দুইজন ম্যানেজারের সময়কালেই মিল পাওয়া যায়, সেটি হল তাদের সময়ে ক্লাবটিতে ক্রীড়ারত অনবদ্য সব স্ট্রাইকারদের উপস্থিতি। তারা বিশ্বের সব উচ্চ মানের স্ট্রাইকিং প্রতিভাদেরকে দলে জায়গা করে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম হলেন মারিও বালোতেল্লি, এডিন জেকো, এমানুয়েল আদেবায়োর, রকি স্যান্টা ক্রুজ, স্টেফান জোভেটিচ, কার্লোস তেভেজ, এবং ক্লাব লিজেন্ড সার্জিও ‘কুন’ আগুয়েরো। এরা সকলেই এতিহাদ স্টেডিয়ামে কোন না কোন সময়ে তাদের পারফর্মেন্স এর মাধ্যমে আগুন জ্বালাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

সার্জিও আগুয়েরো এবং কার্লোস তেভেজ এর আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকিং জুটিটি সকল সিটি সমর্থকদের মনে এখনো তাজা হয়ে রয়েছে, কারণ তারা একসাথে খেলার সময় তাদের শারিরিক সক্ষমতার পরিচায়ক এবং এক ধরণের দক্ষিণ আমেরিকান মসলায় মোড়ানো যে পারফর্মেন্সগুলি দর্শকদের উপহার দিতেন, তা সত্যিই অবাক করার মত। এমন কৃতিত্ব ও নৈপুণ্যের প্রদর্শন ম্যানচেস্টারের নীল অংশে তার আগে আর কখনোই দেখতে পাওয়া যায়নি।

কার্লোস তেভেজ সিটি’র চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ও একই শহরের আরেক ঐতিহাসিক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেন এমন একটি ট্রান্সফার ডিলের মাধ্যমে যেটি কি না আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত সমালোচনায় মোড়ানো ছিল। তবে যেভাবেই হোক না কেন, ট্রান্সফারটি সম্পন্ন হয়, এবং এই আর্জেন্টাইন জাদুকর সিটি সমর্থকদের ওয়াদা করেন যে ক্লাবটিকে সর্বোচ্চ সাফল্য এনে দেওয়ার জন্য তিনি তার সবটুকু মাঠে ঢেলে দিবেন। এবং তার ওয়াদাটি তিনি খুব পারদর্শীতার সাথেই পালন করেন। সে সময় তার স্ট্রাইকিং পার্টনার ছিলেন ওয়েলস এর খেলোয়াড় ক্রেগ বেল্যামি, যার সাথে তার বোঝাপড়া ছিল ঈর্ষণীয় এবং খুবই গতিশীল।

এরপর, ২০১২ সালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে কেনা হয় আরেক আর্জেন্টিনিয়ান ফরোয়ার্ড সার্জিও আগুয়েরোকে। তখন ম্যানচেস্টারের কাকপক্ষিও জানতো না যে এই খেলোয়াড়টিই হতে যাচ্ছিল তার পরবর্তী ১০ বছরের ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা। তাকে রোবার্তো ম্যানচিনি দলে নিয়েছিলেন তেভেজ এর এক প্রকার রিপ্লেসমেন্ট হিসেবেই। তবে, কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা যায় যে, আগুয়েরো তার আর্জেন্টাইন সতীর্থ তেভেজের চেয়েও অধিকতর ভালো উপায়ে ইংলিশ ফুটবলে মানিয়ে নিয়েছেন, এবং সবকিছু ঠিক থাকলে তার অর্জনও তেভেজের চেয়ে বেশিই হবে। তিনি ছিলেন টেকনিক্যালি যেকোন ম্যানেজারের জন্যই একজন স্বপ্নের স্ট্রাইকার, এবং তার কথা প্রিমিয়ার লীগ মনে রাখবে আসন্ন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। তবে, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে মাত্র এক বছর আগে সিটি ছেড়ে বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পর এবং সেখানে কয়েক মাস খেলার পরই তার হৃদয়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দন ধরা পড়ে, যার কারণে তাকে স্বল্প বয়সেই ফুটবল থেকে অবসর নিতে হয়৷ আরেক দিকে, কার্লোস তেভেজও গত বছরই ফুটবল খেলা থেকে খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নিলেও এখন তিনি কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পড়ুন:  কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ঃ কে জিতবে এবারের বিশ্বকাপ শিরোপা?

সিটিতে এখন চলছে একটি নতুন যুগ, যার স্ক্রিপ্ট লিখছেন পেপ গার্দিওলা নামক একজন স্প্যানিশ জাদুকর। গত মৌসুমে তিনি দলটিতে কোন প্রকার স্ট্রাইকার এর উপস্থিতি ছাড়াই ম্যানচেস্টার সিটিকে প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা এনে দিয়েছেন। তবে, সম্প্রতি ম্যানচেস্টার সিটি তাদের দলে ভেড়াতে পেরেছে এ সময়ের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্ট্রাইকারকে, যার নাম আর্লিং হাল্যান্ড। এবং, এই নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ড দলটিতে যোগ দেওয়ার সাথে সাথে সবাই লেগে পড়েছে সিটি’র অতীতের সেই আর্জেন্টাইন জুটির সাথে হাল্যান্ডের তুলনা করতে। ভক্তরা, বোদ্ধারা, এবং অবশ্যই তার নিন্দুকরাও যেখানে সেখানে এই ব্যাপারটি নিয়ে বিশ্লেষণ করে যাচ্ছেন যে, আগুয়েরো ও তেভেজ এর সাথে তুলনা করলে হাল্যান্ড পরিসংখ্যানের দিক থেকে কোন জায়গাটিতে অবস্থান করবেন। এক্ষেত্রে একেক জনের নিকট হতে একেক ধরণের মন্তব্য পাওয়া গিয়েছে। তবে, আমরা সেসকল মন্তব্য নিয়ে একদমই মাথা ঘামাব না, বরং আমরা নিজেরাই এই বিষয়টি নিয়ে একটি বিস্তর আলোচনা করব। তাহলে, চলুন শুরু করা যাক।

 

গোলের সামনে অসীম দক্ষতা এবং নির্ভেদ্য লক্ষ্য (Proficiency in front of goal)

এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করে রাখাই শ্রেয়, এবং সেটি হচ্ছে যে, এই তিন জন খেলোয়াড় এর প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ দিক দিয়ে অসীম দক্ষতার অধিকারী। তিন জনই তাদের নিজ নিজ দলে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলেছেন, যখনই তাদের দলের প্রয়োজন পড়েছে তখনই গোল করেছেন, এবং যথেষ্ট পরিমাণে সাফল্যও অর্জন করেছেন। তবে এটিও না বললেই নয় যে, আগুয়েরো এবং তেভেজ এর জুটিটির মধ্যে একজন দরকার পড়লে সবসময়ই মিডফিল্ডে নেমে যেতেন, যাতে করে আরেকজন সামনে থেকে গোল করতে পারেন। এডিন জেকো বা মারিও বালোতেল্লি’র সাথে খেলার সময়ও আগুয়েরো তার এই অনবদ্য গূণমানটির প্রদর্শন করেছেন।

তার ছোট্ট, কিন্তু ঘটনাবহুল ক্যারিয়ারে আর্লিং হাল্যান্ডকে কখনোই তেমনটি করতে দেখা যায়নি। তবে, এখানে আলোচ্য বিষয় সেটি নয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি এই যে, বাকি দুইজনের সাথে তুলনা করলে এই তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে দূর্বল প্রতিযোগী হবেন কার্লোস তেভেজ। ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, এবং ম্যানচেস্টার সিটি’র হয়ে তার খেলা সমন্বিত ২০২টি প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচে তিনি গোল করতে সক্ষম হয়েছিলেন মাত্র ৮৪টি। এখান থেকে দেখা যায় যে, তার ম্যাচপ্রতি গোলের অনুপাত ছিল ০.৪১। অন্যদিকে, তার স্বদেশী সহযোদ্ধা আগুয়েরো তার নিজ ক্যারিয়ারে শুধু ম্যানচেস্টার সিটি’র হয়েই ২৭৫টি প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচ খেলে ১৮৭টি গোল করতে সক্ষম হোন। তার ম্যাচপ্রতি গোলের অনুপাত ছিল ০.৬৭।

আর্লিং হাল্যান্ড এখনো ম্যানচেস্টার সিটি’র হয়ে প্রিমিয়ার লীগে একটি বলও কিক করেননি, তাই তার সিটি পূর্বজদের সাথে এই বিষয়টিতে তার তুলনা করাটাও মোটেই সমিচীন হবে না। তবে, চ্যাম্পিয়নস লীগ ফুটবলে তার অসাধারণ গোলস্কোরিং রেকর্ডটি অবশ্যই তার অসামান্য দক্ষতারই পরিচায়ক। ইউরোপের শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগিতাটিতে এই নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ড মাত্র ১৯টি ম্যাচ খেলেই নিজের ঝুলিতে ভরেছেন সর্বমোট ২২টি গোল! বরুশিয়া ডর্টমুন্ড এর হয়ে তার খেলা ৩ মৌসুমে তিনি গড়ে প্রতি ম্যাচে একটি করে গোল করতে সক্ষম হয়েছেন (৮৫ ম্যাচে ৮৬ গোল)। জার্মান বুন্দেসলিগায় সকল ডিফেন্ডার এর জন্যই তিনি ছিলেন এক ত্রাস এর নাম।

পড়ুন:  প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে ১০টি সাইনিং

অস্ট্রিয়া এবং জার্মানির বুন্দেসলিগায় তার পুরো সময়কালটিই ছিল গোলের বন্যায় ভরা। তার ক্লাব দলগুলির হয়ে এই দীর্ঘকায় নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার এখন পর্যন্ত করেছেন সর্বমোট ১৫৫টি গোল, যা তার বয়সের (২২) যেকোন খেলোয়াড়ের জন্যই স্বপ্নস্বরূপ। তার নিশ্বাসে এবং বিশ্বাসে শুধুই গোল গোল আর গোলই বসবাস করে, ওবং এ থেকেই বোঝা যায় যে, তিনি অন্যদের তুলনায় কতটা আলাদা, এবং ভবিষ্যতে তিনি কোন পর্যায়ে পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখেন। আগামী প্রজন্মের ভাবি সুপারস্টারদের তালিকায় তাকে কিলিয়ান এমবাপ্পে’র পরেই স্থান দেওয়া হয়ে থাকে। যদিও তার আগে ম্যানচেস্টার সিটিতে সার্জিও আগুয়েরো এবং কার্লোস তেভেজ এর মত মহাতারকারা প্রচুর গোল করেছেন, এবং একের পর এক রেকর্ডও ভেঙেছেন, তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি না বললেই নয় যে, আর্লিং হাল্যান্ড যদি নিজেকে দীর্ঘ সময় ধরে একটানা ফিট ও ইঞ্জুরিমুক্ত রাখতে পারেন, তাহলে ঐ দুই আর্জেন্টাইন তো বটেই, তিনি প্রিমিয়ার লীগের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাদেরকেও টপকিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য রাখেন।

 

খেলার ধরণে ভিন্নতা (Style of play)

যেখানে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকিং জুটি সার্জিও আগুয়েরো ও কার্লোস তেভেজ খেলায় খুব বেশি অন্তর্ভুক্ত থাকতে চাইতেন, এবং বল পজিশন না থাকলেও প্রেসিং এ মনযোগ দিতেন, সেখানে আর্লিং হাল্যান্ড হলেন এমন একজন স্ট্রাইকার যিনি প্রেসিং এ ভালো হলেও অধিকাংশ সময় মনোনিবেশ করেন নিজের পজিশনিং এর উপর। ম্যানচেস্টার সিটি’র হয়ে খেলাকালীন তার ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে এসে কার্লোস তেভেজ মূল একাদশে খুব একটা সুযোগ পাননি। তবে, তার সিটি ক্যারিয়ার জুড়েই তিনি দলের প্রয়োজন অনুসারে ফরোয়ার্ড লাইনের যেকোন পজিশনে খেলেছেন, এমনকি মাঝে মধ্যে মিডফিল্ডেও নেমে গিয়েছেন। তবে, অধিকাংশ সময় তিনি কাটিয়েছেন ম্যান সিটি দলের সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে এবং রাইট উইংগে। তিনি তার অদম্য সাহস ও গতি নিয়ে সামনে অর্থাৎ আক্রমণে এগিয়ে যেতেন, ডিফেন্ডারদেরকে ফাউল করাতে বাধ্য করতেন, তার সতীর্থদের উদ্দেশ্যে বল ক্রস/কাট ব্যাক করতেন, এবং দূর থেকে অদম্য সব শটও মারতেন। এক কথায়, তিনি যেকোন ডিফেন্সকেই নিজ হস্তে তচনচ করতে বেশ পারদর্শী ছিলেন।

এদিক থেকে সার্জিও আগুয়েরোও ছিলেন প্রায় একই ধাঁচের, যদিও আমাদের জানা মতে তাকে কখনোই মিডফিল্ডে খেলতে হয়নি। তবে, আরেকজন প্রধান সেন্টার ফরোয়ার্ডের পাশে খেলা এবং তারপরও মৌসুম শেষে ঝুলিতে ২০টির বেশি গোল ভরার জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম ও দক্ষতার প্রয়োজন, তা তার নিকট প্রচুর পরিমাণে ছিল। তিনি বেশ কিছু সাবেক ম্যান সিটি স্ট্রাইকারদের সাথে জুটিবদ্ধ হয়েছিলেন, এবং তাদেরকে অসংখ্য এসিস্ট প্রদান করার পাশাপাশি তিনি নিজেও প্রচুর গোল করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, তিনিই হলেন ম্যানচেস্টার সিটি’র সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। সার্জিও আগুয়েরো ছিলেন প্রিমিয়ার লীগের যেকোন ডিফেন্সের জন্যই একটি হুমকির নাম, এবং তাকে তার অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতার জন্য প্রতিপক্ষের কোন ডিফেন্ডার অবহেলা করলে, তিনি তাদেরকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার জন্যও বিখ্যাত ছিলেন। তার সিটি ক্যারিয়ারে তিনি হেড দিয়েও অসংখ্য গোল করেছেন। দলের অন্যান্য সদস্যদের সাথে (বিশেষ করে স্প্যানিশ প্লেমেকার ডেভিড সিলভা’র সাথে) তার মিলবন্ধন ছিল দেখবার মত, তিনিও তার অসামান্য গতিকে কাজে লাগিয়ে প্রপ্তিপক্ষের ডিফেন্স চিড়ে এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য রাখতেন, দলের অন্যান্য সদস্যদের জন্য স্পেস তৈরি করার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন বেশ পারদর্শী, এবং তার দূরপাল্লার শটগুলিও ছিল অনবদ্য এবং অতুলনীয়।

পড়ুন:  সেরা 10 ব্রেকআউট তরুণ প্রিমিয়ার লিগ তারকা এই মরসুমে

আরেক দিকে, ২২ বছর বয়সী আর্লিং হাল্যান্ড এর মূল শক্তিই হচ্ছে তার পজিশনিং। তার কোন সতীর্থ মাঠের কোন জায়গায় বলের পজিশন ধরে রেখেছেন, সেই ব্যাপারটি তিনি মাথায় রেখে সেই অনুসারে দৌড় দেন, এবং তার সতীর্থরা যদি তাদের বুদ্ধিদীপ্ততা ও ভিশন কাজে লাগিয়ে তাকে খুঁজে পেতে পারেন, তাহলে ধরে নিন গোল নিশ্চিত। এখন পর্যন্ত তার ছোট্ট ক্যারিয়ারে তিনি যে দলেই খেলেছেন, সেখানেই তিনি ছিলেন প্রধান স্ট্রাইকার, যাকে কেন্দ্র করে দলের সকল আক্রমণ গড়ে ওঠে। বরুশিয়া ডর্টমুন্ড এ খেলাকালীন তার সবচেয়ে বড় গোল সাপ্লায়ার ছিলেন মার্কো রিউস, জ্যাডোন স্যাঞ্চো, এবং জুড বেলিংহ্যাম। 

যদিও হাল্যান্ডও দূর থেকে মাপা শট মারার সামর্থ্য রাখেন, এবং দরকার পড়লে কিছুটা নেমে গিয়ে বল রিসিভও করতে পারেন, তবুও তাকে তার আর্জেন্টাইন পূর্বজদের সাথে একই কাতারে ফেলা যাবে না। হাল্যান্ড হলেন একজন ট্র‍্যাডিশনাল স্ট্রাইকার, যিনি নিজের গোল করার সহজাত প্রবৃত্তির উপর অধিক নির্ভরশীল। তার জন্য সুসংবাদ হল তিনি ম্যানচেস্টার সিটিতে গোলের সাপ্লায়ার হিসেবে পাবেন কেভিন ডি ব্রুয়না, বার্নার্দো সিলভা, ইল্কাই গুন্দোগান, রিয়াদ মাহরেজ এবং ফিল ফোডেন এর মত অসম্ভব প্রতিভাবান খেলোয়াড়দেরকে।

 

ফিটনেস, ইঞ্জুরি সমস্যা এবং মানসিক সক্ষমতা (Fitness, injury problems, and conditioning)

সার্জিও আগুয়েরো যদি নিয়মিত আকারে ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত না হতেন, তাহলে হয়তো তিনি প্রিমিয়ার লীগের সর্বকালের সেরা গোলদাতা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারতেন। ক্লাবটির হয়ে তার পারফর্মেন্স লেভেল এবং অর্জনগুলি ছিল অসামান্য, তবে ম্যানচেস্টার সিটিতে তার কাটানো পুরো সময়কালটিই ছিল ইঞ্জুরিতে জর্জরিত।

যদিও কার্লোস তেভেজ তার আর্জেন্টাইন সতীর্থের মত ঘন ঘন ইঞ্জুরিতে পড়তেন না, তবে তার ছিল অন্য সমস্যা। তার বিখ্যাত রাগের কারণে তিনি প্রায়ই লাল কার্ড খেতেন, এবং নৈতিকতা রক্ষা করতে পারতেন না, অর্থাৎ তার মানসিক সক্ষমতার অভাব ছিল। শুধু তাই নয়, তার বাজে আচরণের কারণে তাকে তার সম্পূর্ণ প্রিমিয়ার লীগ ক্যারিয়ার জুড়েই নানা রকম জরিমানা ও নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এছাড়া, ওজন বৃদ্ধিও ছিল তার জনু একটি মুখ্য সমস্যা, কারণ প্রায়ই দেখা যেত যে ওজন বৃদ্ধির কারণে তাকে দল থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে (বিশেষ করে গত মৌসুম জুড়ে) আর্লিং হাল্যান্ডকে বেশির ভাগ সময় ডাক্তারের চেম্বারেই কাটাতে হয়েছে। তবে, গত মৌসুমটি এড়িয়ে গেলে দেখা যাবে যে, তিনি হলেন ফিটনেস এবং মানসিক দক্ষতার একজন চিরন্তন প্রতিনিধি। তার খাবারের ডায়েট বা খাদ্যতালিকায় অসম্ভব সাদৃশ্য রয়েছে পর্তুগিজ আইকন ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো’র খাদ্যতালিকার সাথে। এছাড়া জিম বা ব্যায়ামাগারেও তাকে নিয়মিত আকারেই যেতে দেখা যায়। তাই, ইঞ্জুরি সমস্যা থেকে দূরে থাকা বা ফিটনেস ধরে রাখার দিক দিয়ে তিনি তার ম্যান সিটি পূর্বজদের থেকে কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছেন। এমনকি, সবকিছু ঠিক থাকলে, তিনি শীঘ্রই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং ধারাবাহিক স্ট্রাইকারে পরিণত হওয়ার ক্ষমতাও রাখেন।

Share.
Leave A Reply