গত শুক্রবার রাতে প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমের শুভ সূচনা হয়েছে, এবং আমরা এই ব্যাপারে একটি সুষম ধারণাও পেয়ে গেছি যে কোন দলের কাছ থেকে কতটুকু প্রত্যাশা রাখতে পারি। প্রিমিয়ার লীগের কিছু নির্দিষ্ট দল যেখানে খুবই ভালো খেলে আমাদেরকে তাদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছে, ঠিক তেমনি অন্য কিছু দল আবার সবাইকে হতাশও করেছে। এছাড়াও উত্তেজিত হওয়ার মত অনেক কিছুই হয়েছে প্রিমিয়ার লীগের প্রথম উইকেন্ডে, যার মধ্যে অন্যতম হল কিছু আকর্ষণীয় নতুন খেলোয়াড়দের ডেব্যু, এবং বিভিন্ন দলের ডাগ আউটে বেশ কিছু নতুন ও নামকরা ম্যানেজারদেরকে দেখতে পাওয়া।

আমাদের শীর্ষ ১০টি প্রেডিকশনের প্রথম অংশে আমরা অনুমান করব এমন কিছু ফলাফল, যা আমরা দলগুলির/খেলোয়াড়গুলির প্রাক মৌসুম ও প্রথম উইকেন্ডের ম্যাচগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি করেছি। তাহলে আর দেরি কিসের? চলু, শুরু করা যাক।

 

লেস্টার সিটি এবার রেলিগেশনের ঝুঁকিতে পড়বে (Leicester City risk relegation)

ফক্সেস খ্যাত লেস্টার সিটি এবার তাদের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমের শুরু করেছে ব্রেন্টফোর্ডের বিরুদ্ধে একটি ড্র দিয়ে। একটি নতুন ফর্মেশনে খেলতে নেমে, যেটিতে কি না ৫ জন ডিফেন্ডার ও একটি মিডফিল্ড ডায়মন্ড বিদ্যমান, ম্যাচের প্রথম এক ঘন্টায় অনবদ্য পারফর্মেন্স দেখায় লেস্টার। তবে, ম্যাচটির শেষ ৩০ মিনিটে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখতে পাওয়া যায়, যেখানে লেস্টার সিটি’র দলগত ঐক্য পুরোপুরিভাবে ভেঙে পড়ে, এবং দুইটি গোল হজম করে বসে। খেলায় চলে আসে সমতা। আইভান টনি এবং জশ ডা সিলভা সফরকারী ব্রেন্টফোর্ডের হয়ে গোল দু’টি করেন, এবং খেলায় ২-২ এ সমতা আনেন। এর আগে লেস্টারের হয়ে টিমোথি ক্যাস্তানিয়ে একটি অসাধারণ শটের মাধ্যমে গোলের ধারা শুরু করেন, এবং তারপর কিয়েরনান ড্রিউসবেরি-হল তাদের লিডটিকে দ্বিগুণ করে নেন। এই দুই গোলের লিডকে শুরুতে অনেক বড় মনে হলেও লেস্টারের ভাগ্যে অন্য কিছুই ছিল।

এবারের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে নতুন কোন সাইনিং এর অভাব, হার্ভি বার্নস ও রিকার্ডো পেরেরা’র মত মূল একাদশের নিয়মিত খেলোয়াড়দের ইঞ্জুরি, এবং প্রধান ডিফেন্ডার ওয়েসলি ফোফানা’র সম্ভাব্য বিদায় — এ সবকিছু মিলিয়ে বলা যায় যে, লেস্টারের জন্য মৌসুমের শুরুটা একদমই আদর্শ কোন সূচনা ছিল না। এএ ফলে আমরা ধারণা করছি যে, তারা চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে প্রিমিয়ার লীগে প্রমোশন অর্জন করার পর থেকে প্রথমবারের মত এবারই রেলিগেশন লড়াইয়ে সামিল হবে।

তাদের আশেপাশের কিছু দল, যেমন নিউক্যাসেল ইউনাইটেড ও ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়ন, এর দূর্দান্ত পারফর্মেন্স এর পাশাপাশি সদ্য প্রমোটেড দুই দল ফুলহ্যাম ও বোর্নমাউথের অসাধারণ কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে তাই বলা যায় যে, লেস্টার সিটি এবার বিপদে পড়তেও পারে। ফক্সেস সমর্থকদের জন্য তাই এই মৌসুমটি হতে যাচ্ছে একটি দীর্ঘ মৌসুম।

 

নিউক্যাসেল ইউনাইটেড একটি ইউরোপীয় স্পট দখল করবে (Newcastle United will secure a European spot)

সদ্য প্রমোটেড দল নটিংহ্যাম ফরেস্ট এর বিরুদ্ধে প্রিমিয়ার লীগের প্রথম উইকেন্ডে ২-০ গোলের একটি সহজ জয় তুলে নিয়ে নিউক্যাসেল ইউনাইটেড এখন লীগ টেবিলের ৪র্থ পজিশনে অবস্থান করছে। সেটি ছিল টুনস’দের জন্য নতুন মৌসুমের একটি আদর্শ সূচনা। গত শনিবার বিকেলের সেই ম্যাচটিতে নিউক্যাসেলের হয়ে গোল দু’টি করেন যথাক্রমে ফ্যাবিয়ান শের এবং ক্যালাম উইলসন। এই জয়ের মধ্য দিয়ে নিউক্যাসেল প্রমাণ করেছে যে, তারা গত মৌসুমের শেষ যেখানে করেছিল, এবারের মৌসুমের শুরুটি ঠিক সেখান থেকেই করেছে। এটি ছিল প্রিমিয়ার লীগে তাদের টানা তৃতীয় জয়, এবং গত মৌসুম থেকে ধরে এখন পর্যন্ত তাদের সর্বেশেষ ৯ ম্যাচের মধ্যে ৭ম জয়। তারা নিয়মিত আকারে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলার মত যেকোন দলের ন্যায় ফর্ম ও দক্ষতার প্রদর্শন করে চলেছে।

পড়ুন:  গত দশকের সবচেয়ে খারাপ প্রিমিয়ার লিগ একাদশ (2013 - 2022)

বল পজিশনের রেটিং এর দিক থেকে প্রিমিয়ার লীগের উইকেন্ড জুড়ে টুনস’রা ৬২% নিয়ে পুরো লীগের মধ্যে ৬ষ্ঠ অবস্থানে ছিল। এছাড়া, ম্যাচটিতে তারা লীগের সকল দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শট অন গোল (২৩) ও শট অন টার্গেটও (৯) নিউক্যাসেলই করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা নটিংহ্যাম ফরেস্ট এর উপর এমনভাবে চেপে বসেছিল যে স্টিভ কুপারের দল খুব তাড়াতাড়িই খেই হারিয়ে ফেলেছিল, এবং হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিল।

সিজনটি অনেক বড় এবং কঠিন হবে সে ব্যাপারে কোনই দ্বিধা নেই, তবে ম্যাগপাইরা সাহসী হবে নিজেদেরকে আগামী মৌসুমে ইউরোপা লীগে দেখার বিষয়ে, কারণ তারাই বর্তমানে এই লীগের অন্যতম সেরা ইন-ফর্ম দল। এটি হবে তাদের ইউরোপের বিগ লীগে ফেরার লক্ষ্যে প্রথম ধাপ। যতক্ষণ পর্যন্ত ক্যালাম উইলসন ও ব্রুনো গিমারেশ এর মত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়েরা ফিট থাকছেন এবং যতক্ষণ দলটির মধ্যে ঐক্য বজায় থাকছে, ততক্ষণ এডি হাও এর অধীনে এই দলটির সম্ভাবনা অপরিসীম।

 

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আবারো শীর্ষ চারে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হবে (Manchester United will again miss out on the top four)

গত মৌসুমে ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড এর করা একটি ভুলের ফায়দা নিয়ে কোন রকমে চুপিসারে শীর্ষ ছয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছিল রাল্ফ রাঙনিকের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তাদের ভাগ্য সেবার নিজেদের হাতে ছিল না, তবে তারা শেষ পর্যন্ত ইউরোপের দ্বিতীয় সারির লীগ উয়েফা ইউরোপা লীগে জায়গা করে নিতে পেরেছিল।

নতুন মৌসুমের জন্য তাই তাদের প্রধান লক্ষ্যই হওয়ার কথা আবারো ইউরোপের শীর্ষ লীগ, অর্থাৎ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগে জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু, তাদের সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে শুরুটা খুবই বাজে হয়েছে। গত উইকেন্ডে তারা মিড টেবিল ক্লাব ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়ন এর কাছে নিজ মাঠে ২-১ গোলে হেরেছে। সিগালস খ্যাত ব্রাইটন রেড ডেভিলদের কিছু বিচ্ছিন্ন পাসিংকে কাজে লাগিয়ে প্রথমার্ধেই দুইটি গোল করে বসে। অপেক্ষাকৃত সহজ কিন্তু দর্শনীয় সেই দুইটি গোলই করেন ব্রাইটন মিডফিল্ডার প্যাস্কাল গ্রোস।

ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ব্রাইটনকে দেখে মনেই হয়নি যে ইউনাইটেডকে রুখে দিতে তাদের তেমন কোন বেগ পেতে হচ্ছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচটির ৬৮ মিনিটে ব্রাইটন ডিফেন্ডার এলেক্সিস ম্যাকআলিস্টার এর করা আত্মঘাতী গোলের বদৌলতে খেলায় কামব্যাক করলেও, সমতাসূচক গোলের আশায় তাদের করা সকল আক্রমণকেই ব্রাইটন সিদ্ধহস্তে প্রতিরোধ করে যায়।

রেড ডেভিলরা ভালো ফুটবলের কিছু ঝলক দেখাতে পেরেছিল ঠিকই, এবং মার্কাস র‍্যাশফোর্ড এর জন্য দু’টি সুন্দর সুযোগও তারা তৈরি করেছিল, যা এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড গোলে পরিণত করতে ব্যর্থ হোন। তাই এটি বলাই বাহুল্য যে, তারা গত মৌসুমে যেসকল সমস্যায় জর্জরিত ছিল, এবারের মৌসুমের শুরুতেও সেসকল সমস্যা তাদের মধ্যে থেকেই গিয়েছে।

ট্রান্সফার উইন্ডো আর মাত্র কয়েক সপ্তাহই খোলা থাকবে, এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এখনও তাদের পছন্দের মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে দলে পাওয়ার আশায় দিন গুনছে। তাকে যদি তারা দলে ভেড়াতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের জন্য বিকল্প অপশন হলেন জুভেন্টাসের ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডার এদ্রিয়ান রাবিও। নানা সূত্রের মোতাবেক, রাবিও’র সাথে চুক্তিটি সম্পন্ন করার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে রেড ডেভিলরা। যেহেতু ইউনাইটেড তাদের স্প্যানিশ নাম্বার ওয়ান ডেভিড ডি গেয়াকে দলে রেখে আরেক গোলকিপার ডিন হেন্ডারসনকে নটিংহ্যাম ফরেস্ট এর কাছে লোনে বিক্রি করেছে, সেহেতু তাদের গোলকিপিং পজিশনটিও পুরোপুরি ঝামেলামুক্ত নয়। শুধুমাত্র একজন মানসম্মত গোলকিপার নিয়ে তাদের জন্য পুরো মৌসুম পার করাটা একদমই সহজ হবে না, এবং এই সিদ্ধান্তটির মাশুল তাদেরকে দিতে হতে পারে মৌসুমের শেষ ভাগে গিয়ে।

পড়ুন:  কেন টটেনহ্যাম তাদের কোচকে দীর্ঘমেয়াদী রাখতে সংগ্রাম করছে?

গত মৌসুমে শীর্ষ ছয়ের মধ্যে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডই এমন একমাত্র দল যারা এবারের মৌসুমটি শুরু করেছে একটি হারের মধ্য দিয়ে। অন্যান্য সেসব দল তাদের ইতিমধ্যে শক্তিশালী একাদশকে আরো শক্তিশালী করে নিয়েছে এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোতে, এবং সেকারণেই আমরা মনে করি যে, বর্তমান মৌসুমে ইউরোপা লীগ পজিশনগুলির একটি নিয়েই ইউনাইটেডকে খুশি থাকতে হবে। তবে, সেটি পরিবর্তন হতে পারে যদি রেড ডেভিলরা এই মাসের মধ্যে কিছু দূর্দান্ত সাইনিং করাতে পারে।

 

আর্সেনাল আবার চ্যাম্পিয়নস লীগে ফিরে আসবে (Arsenal will return to the Champions League)

মুদ্রার ঠিক অপর পৃষ্ঠেই যেন আছে গানারস খ্যাত আর্সেনাল। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যেটি নিজের মাঠে করতে পারেনি, তা আর্সেনাল পরের মাঠে করে দেখিয়েছে — একটি মিড টেবিল দলকে হারানো। প্রিমিয়ার লীগের ২০২২-২৩ মৌসুমের পর্দা উন্মোচনকারী ম্যাচে শুক্রবার রাতে তারা সেলহাস্ট পার্কে ২-০ গোলের ব্যবধানে ক্রিস্টাল প্যালেসকে হারায়। গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি’র নিখুঁত হেডার এবং প্যালেস ডিফেন্ডার মার্ক গুয়েহি’র করা একটি আত্মঘাতী গোলের উপর ভর করে আর্সেনাল এমন একটি দলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ তুলে নেয়, যারা তাদেরকে গত মৌসুমের শেষের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হারিয়েছিল। এরই সাথে ঘরের বাইরে একটি ওয়েল-ডিসার্ভড ক্লিন শিটও তুলে নেয় আর্তেতা’র বাহিণী।

শুক্রবার রাতের এই জমজমাট খেলাটিতে তিনজন খেলোয়াড় — ওলেক্সান্ডার জিনচেঙ্কো, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, এবং উইলিয়াম স্যালিবা –– তাদের আর্সেনাল ডেব্যু সম্পন্ন করেন। এর মধ্যে জেসুস এবং স্যালিবা দূর্দান্ত পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেন, এবং জিনচেঙ্কোও একটি সন্তোষজনক পারফর্মেন্স উপহার দিতে সক্ষম হোন।

গ্যাব্রিয়েল জেসুস আর্সেনালের আক্রমণভাগে কিছু অতি প্রয়োজনীয় স্টাইল, গতি, এবং ওয়ার্ক রেট যুক্ত করেছেন, এবং প্রতিপক্ষের ডিফেন্সিভ লাইনকে প্রায়শই হকচকিত করতেও সক্ষম হয়েছেন। তিনি ম্যাচটিতে কোন গোল করতে না পারলেও তার অসাধারণ পারফর্মেন্স এটিই প্রমাণ করেছে যে এই সাবেক ম্যান সিটি ফরোয়ার্ড অদূর ভবিষ্যতে গানারস’দের হয়ে অনেক গোল করার সামর্থ্য রাখেন।

অন্যদিকে উইলিয়াম স্যালিবাও আর্সেনালের ডিফেন্সে একটি ভালো দিন পার করেন। ক্রিস্টাল প্যালেসের আক্রমণভাগের শারিরিক দিকটির মোকাবেলা তিনি খুব সাহসের সাথেই করেছেন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্যাকেল ও ইন্টারসেপশনও তিনি করতে সক্ষম হয়েছেন। যদি তিনি এমন পারফর্মেন্স এর ধারা বজায় রাখতে পারেন, তাহলে তিনি প্রমাণ করবেন যে তার ম্যানেজারের তাকে গত তিন মৌসুম ধরে লোনে খেলানোর সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল।

ম্যাচটিতে তাদের রক্ষণভাগে গানারস’রা মাঝে মাঝে কিছু ভুল যে করেনি তাও কিন্তু নয়। তবে, ক্ষণিকের জন্য ম্যাচটির নিয়ন্ত্রণ হারালেও, মোটের উপর ম্যাচটি দেখে আর্সেনাল সমর্থকরা তাদের দলের ইতিবাচক দিকই বেশি খুঁজে পাবেন। তাদের নতুন সাইনিং মিডফিল্ডার ফ্যাবিও ভিয়েরা যেহেতু এখনো ইঞ্জুরির কারণে নিজের ডেভ্যুটি সম্পন্ন করতে পারেনি, সেহেতু বলা যায় যে, এটিও এই আর্সেনাল দলের সেরা চেহারা নয়, বরং তাদের ফর্ম আরো ভালো হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

পড়ুন:  জয়ী দলগুলি হঠাৎ করে আর জিততে পারে না কেন?

গতবার খুবই সামান্য ব্যবধানের জন্য তারা চ্যাম্পিয়নস লীগ পজিশন থেকে ছিটকে পড়লেও, এবারের মৌসুমে গানারস’দের নিকট রয়েছে একটি অধিকতর বড় ও শক্তিশালী স্কোয়াড, এবং একজন অধিকতর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোচ। লীগ টেবিলের চতুর্থ স্থানটির জন্য তাই আমাদের মতে তারাই এবার ফেভারিট। কে জানে? হয়তো তারা তৃতীয় স্থানটিও দখল করে ফেলতে পারে!

 

আর্লিং হাল্যান্ড এবার প্রিমিয়ার লীগে ৩০টিরও অধিক গোল করবেন (Haaland will score 30 Premier League goals)

‘বুন্দেসলিগা ট্যাক্স’ এর ধার না ধেরে ম্যানচেস্টার সিটি’র নতুন নাম্বার নাইন অর্থাৎ আর্লিং হাল্যান্ড এবারের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমে সিটিজেনদের প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড এর বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে ফেলেছেন। লন্ডনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে তার করা দুইটি গোলের উপর ভর করেই প্রিমিয়ার লীগের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা তাদের মৌসুমের প্রথম জয়টি ছিনিয়ে নেয়, এবং এই নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ডের সেদিনকার ভয়ংকর পারফর্মেন্স যদি আপনি দেখে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে এই প্রেডিকশনটি কেন আকাশ পাতাল কোন প্রেডিকশন নয়।

পুরো ৯০ মিনিটের জন্যই তিনি ওয়েস্ট হ্যামের ডিফেন্ডারদের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটেছেন, এবং যে দুইবার ম্যানচেস্টার সিটি’র মিডফিল্ডাররা তাকে ডিফেন্স চেড়া পাস দিয়ে খুঁজে নিতে পেরেছে, সেই দুইবারই তিনি ওয়েস্ট হ্যাম ডিফেন্সকে পেছনে ফেলে গোলকিপারের মুখোমুখি হতে পেরেছেন, এবং গোল করতে পেরেছেন। প্রথম গোলের ক্ষেত্রে অবশ্য ওয়েস্ট হ্যাম গোলকিপার আলফন্স আরিওলা তাকে ফাউল করেন, এবং ফলস্বরূপ পেনাল্টি থেকে তিনি সিটিকে লিড এনে দেন।

দ্বিতিয়ার্ধের মাঝামাঝি কেভিন ডি ব্রুয়না’র একটি থ্রু বল এই দীর্ঘকায় স্ট্রাইকারকে আবারো খুঁজে পায়, এবং গোলকিপারের সাথে ওয়ান অন ওয়ান পরিস্থিতিতে তিনি খুবই বিচক্ষণতার সাথে বলটিকে ওয়েস্ট হ্যামের জালে জড়ান।

ইতিমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কেন ম্যান সিটি তাকে দলে নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। সিটি’র ফুল ব্যাকরা এখন প্রতিপক্ষের ডি বক্স অভিমুখে ক্রসও ছোঁড়েন, যা গত মৌসুমে একদমই নজরে পড়েনি। তাছাড়া দলটির অন্তর্গত বিশ্বমানের প্লেমেকাররা এখন প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভেদ করে পাস দিয়েও মজা পাচ্ছেন, কারণ হাল্যান্ড সবসময়ই প্রতিপক্ষের ডিফেন্সের পেছন বরাবর দৌড় দিয়ে থাকেন। তবে, ম্যাচটিতে এমনও অনেক মুহূর্ত ছিল যেখানে সিটি মিডফিল্ডাররা হাল্যান্ডের দৌড় লক্ষ্য করতে ব্যর্থ হোন, নতুবা তিনি আরো গোল করার সুযোগ পেতে পারতেন। তবে, সেই ব্যাপারটিকে এখন এড়িয়ে যাওয়ায় যায়, কারণ আমরা সকলেই জানি যে তার নতুন সতীর্থদের সাথে হাল্যান্ডের সম্পর্ক ও বোঝাপড়া কেবলমাত্র বিকশিত হতে শুরু করেছে। এভাবে ভাবলে আসলেও ভয় করে যে, সেসকল সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হওয়ার পর অন্যান্য দলের জন্য পরিস্থিতি কেমন হবে!

তাই আমরা মনে করি যে, হাল্যান্ডকে এই মৌসুমে ৩০ গোলের সীমা পার করা থেকে শুধু একটি বিষয়ই আটকাতে পারে, এবং সেটি হল তার ফিটনেস। অতীতে তার ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত হওয়ার একটি বাজে রেকর্ড রয়েছে। তবে, যদি ভাগ্য তার পাশে থাকে এবং তিনি মৌসুমজুড়ে কোনপ্রকার দীর্ঘকালীন ইঞ্জুরিতে না পড়েন, তাহলে তিনি নিজ হস্তে ম্যানচেস্টার সিটিকে তাদের টানা তৃতীয় প্রিমিয়ার লীগ শিরোপাটি জিতিয়ে দিতে পারবেন। এমন কৃতিত্ব প্রিমিয়ার লীগে এ পর্যন্ত কোন ক্লাবই অর্জন করতে পারেনি।

Share.
Leave A Reply