খেলা হিসেবে ফুটবলের সবচেয়ে সুন্দর দিকটিই হল যে, এই খেলাটিকে একেক জন একেক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে উপভোগ করতে পারেন, এবং এখানে সাফল্যের কোন ধরাবাঁধা মাপকাঠিও নেই বললেই চলে। কোন দল, সে যত বড় বা ছোটই হোক না কেন, যদি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোয়, এবং ভাগ্য যদি কিছুটা সহায় হয়, তাহলে যেকোন দিন যেকোন দলকে হারিয়ে দিতে পারবে। বড় বড় দলগুলি তাই সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যায় সেসকল দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা যতটুকু সম্ভব কমিয়ে আনার।

নামীদামী এবং সবচেয়ে ভালো ম্যানেজারদের লক্ষ্য এটিই থাকে যেন একটি ফুটবল ম্যাচে তার দলের হারার সম্ভাবনা শূন্যের যতটা কাছাকাছি সম্ভব নিয়ে যাওয়া যায়, এবং সে অনুসারেই তারা তাদের পরিকল্পনা ও নীলনকশা সাজান।

সেই লক্ষ্যটি অর্জনের ক্ষেত্রে আধুনিক ফুটবলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল এনে দিয়েছে ‘পজিশন ফুটবল’ নামক এক ধরণের ট্যাকটিক। এটিকে কোন আধুনিক চিন্তাধারাও বলা যাবে না, কিন্তু বর্তমানে যত বড় বড় বা সফল ক্লাব রয়েছে, তার বেশির ভাগই খেলে থাকে পজিশন-ভিত্তিক আক্রমণাত্মক ফুটবল। আক্রমণ হোক বা ডিফেন্স, মাঠের যেকোন প্রান্তেই এই দলগুলি তাদের সাধ্যের মধ্যে সবটুকু চেষ্টা করে এটি নিশ্চিত করে যেন তারা বলের পজিশন বা নিয়ন্ত্রণ না হারায়, কারণ তারা মনে করে যে, সেভাবে খেললেই তারা গোলের দেখা পাবে, এবং ভালো ফলাফল ও সাফল্য অর্জন করতে পারবে।

এই ধরণের ফুটবলকে বর্তমান সময়ে নিরন্তর প্রমোট করে যাচ্ছেন এমন তিন জন সফল ম্যানেজার হলেন বার্সেলোনা’র জাভি হার্নান্দেজ, আর্সেনাল এর মিকেল আর্তেতা, এবং এমন একজন ম্যানেজার, যার অধীনে পূর্বোক্ত উভয় ম্যানেজারই কাজ করেছেন, তা হোক খেলোয়াড় হিসেবে বা সহকারী ম্যানেজার হিসেবে — ম্যানচেস্টার সিটি’র পেপ গার্দিওলা, যার আসলেও এখন আর কোন ভূমিকারই প্রয়োজন পড়ে না।

এই তিনটি দল হল বর্তমানে ইউরোপের সবচেয়ে বেশি পজিশন-ভিত্তিক ফুটবল খেলা দল, এবং নিজ নিজ ঘরোয়া লীগে তাদের বর্তমান অবস্থানই বলে দিচ্ছে যে, পজিশন-ভিত্তিক ফুটবল কতটা কার্যকর। খেলা যে প্রান্তেই হোক না কেন, এই ট্যাকটিকের অনুসারী দলগুলির সবচেয়ে বড় লক্ষ্যই থাকে হার্ড প্রেসিং এর মাধ্যমে বল পুনরুদ্ধার করা, টেরিটরি নিয়ন্ত্রণ করা, এবং স্পেস ডমিনেট করা, যতক্ষণ সম্ভব বলটিকে নিজেদের দখলে রাখা, এবং নিজেদের গোল থেকে দূরে রাখা। এক্ষেত্রে তাদেরকে সবচেয়ে বেশি যে হাতিয়ারটি ব্যবহার করতে দেখা যায় তা জল একটি উঁচু ডিফেন্সিভ লাইন, যার দ্বারা তারা তাদের প্রতিপক্ষকে নিজস্ব অর্ধে আটকিয়ে রাখে। এছাড়া হাই প্রেস এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করে ফেলার ব্যাপারটি তো রয়েছেই।

এই নিবন্ধটি জুড়েই আমরা আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব যে, কোন কোন বিষয়ের উপর ভর করে পজিশন-ভিত্তিক ফুটবল খেলে কোন দল পুরো একটি ম্যাচকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

 

শূন্যস্থান পূরণ এবং ইনভার্টেড ফুলব্যাক (Space occupation and Inverted full backs)

এই ধরণের ধ্যান ধারণা যেসকল দল অনুসরণ করে, বা নিজেদের মধ্যে পোষণ করে, তাদেরকে সবসময়ই দেখা যায় পজিশন রক্ষার্থে ইনভার্টেড ফুলব্যাকদের ব্যবহার করতে। এসকল দলের জন্য আক্রমণাত্মক বা রক্ষণাত্মক উভয় দিক দিয়েই সুবিধা করে দেন সেসকল ইনভার্টেড ফুলব্যাকেরা। তারা যখন ইনভার্টেড হয়ে পড়েন, তখন তারা মিডফিল্ডের অর্ধশূন্য স্থানটিতে জায়গা করে নেন। এবং, যখন দুইজন নাম্বার ৮ অর্থাৎ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার আক্রমণে যোগ দেন, তখন ঐ দুই ফুলব্যাকই ভেতরে এসে আবারো একটি তিন খেলোয়াড় বিশিষ্ট মিডফিল্ড তৈরি করেন। এতে করে একটি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ২-৩-৫ ফর্মেশনের সৃষ্টি হয়, যাকে বলা হয় প্রতিপক্ষের ডি বক্সকে ওভারলোড করা।

পড়ুন:  টটেনহ্যামকে কি আসলেও একটি বড় ক্লাব হিসেবে গণ্য করা উচিৎ?

এই ২-৩-৫ ফর্মেশনটি তৈরি করার আরেকটি বিশাল কারণ হল মিডফিল্ড এবং অ্যাটাকের সকল শূন্যস্থান পূরণ করা, যাতে করে দলটি তাদের প্রতিপক্ষকে পেছনে ফিরতে বাধ্য করতে পারে এবং এক রকম কোণঠাসাই করে ফেলতে পারে। দলের উইংগাররা ওয়াইড পজিশনগুলিতেই অবস্থান করেন এবং প্রতিপক্ষের ফুলব্যাকদের ব্যস্ত রাখেন। দলের সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডাররা (নাম্বার ৮) সামনে এগিয়ে গিয়ে প্রতিপক্ষের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার ও ফুলব্যাকদের মাঝের শূন্যস্থানগুলি দখল করেন। এছাড়া, দলের স্ট্রাইকার (বা ফলস নাইন) অবস্থান করেন প্রতিপক্ষের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারদের ঠিক মাঝ বরাবর।

পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে খেলোয়াড়েরা নিজেদের মধ্যে পজিশন অদলবদল করে নিতে পারেন, কিন্তু পজিশন-ভিত্তিক ফুটবলের কার্যবিধি সেই একই থাকবে।

শুরুতেই আমরা আপনাদেরকে দেখাব যে, গত উইকেন্ডে নর্থ লন্ডন ডার্বিতে টটেনহ্যাম হটস্পার্সকে ৩-১ গোলে হারানো ম্যাচটিতে আর্সেনাল পজিশন-ভিত্তিক ফুটবলের কি দারুণ নিদর্শনটিই না উপস্থাপন করেছিল! এখানে আমরা আপনাদেরকে ছবির মধ্য দিয়ে আরো দেখাব যে, কিভাবে আর্সেনাল, বার্সেলোনা, এবং ম্যানচেস্টার সিটি একই রকমের পন্থা অবলম্বন করে ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করে থাকে।

দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার নিজ নিজ পজিশনে অটল, কিন্তু দুই ফুলব্যাক (বেন হোয়াইট, এবং জিনচেঙ্কো) মিডফিল্ডে ঢুকে পড়েছেন। (এখানে বলের নিয়ন্ত্রণে থাকা বেন হোয়াইটের দিক থেকে নিচে সুদূর ডান পার্শ্বে থাকা ওলেক্সান্ডার জিনচেঙ্কো’র দিকে তীরচিহ্ন প্রদর্শন করা হল।)

থমাস পার্টে’র করা গোলটির ঠিক আগ মুহূর্ত। আপনারা কিছুটা খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন যে, আর্সেনালের ফ্রন্ট লাইনে ৫ জন খেলোয়াড় অবস্থান করছেন, এবং তাদের ঠিক পেছনেই শিল্ড হিসেবে রয়েছেন তিন জন, যারা হলেন ওলেক্সান্ডার জিনচেঙ্কো, থমাস পার্টে, এবং বেন হোয়াইট। (আর্সেনালের ফ্রন্ট লাইনে পাঁচজন খেলোয়াড়কেই চিহ্নিত করা হল।)

চলুন এবার একটু স্পেন থেকে ঘুরে আসা যাক, যেখানে বার্সেলোনার হয়ে তাদের ম্যানেজার জাভি হার্নান্দেজও একই ধরণের খেলা উপহার দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, বার্সেলোনার আক্রমণেও রয়েছেন পাঁচ জন খেলোয়াড়, এবং তাদের পেছনেই অবস্থান করছেন তিন জন খেলোয়াড়। (আবারও আক্রমণভাগের সেই ৫ জনকে চিহ্নিত করা হল।)

(এখানে জাঁও ক্যান্সেলোকে দূরপাল্লা থেকে একটি শট নিতে দেখা যাচ্ছে, এবং তাকে কিভাবে অনেক দেরিতে ক্লোজ ডাউন করা হয়েছে সেটিও দেখা যাচ্ছে। এখানে আমরা আবারও দেখতে পাচ্ছি যে, এমতাবস্থায় ক্যান্সেলো ভেতরের দিকে সরে এসে রদ্রিগো এবং জন স্টোনসকে সংগ দিচ্ছিলেন। এছাড়া, সিটি’র ফ্রন্ট লাইনেও সেই পাঁচজনকেই দেখা যাচ্ছে। (ফ্রন্ট ফাইভ’কে হাইলাইট করা হল এবং একটি তীরচিহ্ন দিয়ে ক্যান্সেলো’র করা শটটির ডিরেকশন দেখানো হল।)

ছবিগুলো থেকে আপনি স্পষ্ট ধারণা করতে পারেন যে, এসকল খেলোয়াড়েরা সেন্ট্রাল, হাফ এবং ওয়াইড পজিশনগুলিতেই খেলে থাকেন, এবং কোন দুইজন খেলোয়াড় কখনোই একই লাইনে অবস্থান করেন না। এমনটি করার মূল উদ্দেশ্যই হল বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে অসাধারণ একেকটি পাসিং এংগেল তৈরি করা।

এরপর সেসকল ফুলব্যাকেরা তাদের নিজ নিজ পজিশন থেকে বিভিন্ন অপশন প্রদান করেন। এই দায়িত্ব নিয়ে খেলার সময় তারা একজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের কাজই করেন, অর্থাৎ পজিশন পুনরুদ্ধার করেন, গভীর থেকে ক্রসিং এর একটি অপশন তৈরি করেন (উদাহরণস্বরূপ, চ্যাম্পিয়নস লীগে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিরুদ্ধে আর্লিং হাল্যান্ডের জন্য জাঁও ক্যান্সেলো’র দেওয়া ক্রস), দূর থেকে শুটিং এর অপশন প্রদান করেন (উদাহরণস্বরূপ, একই ম্যাচে জন স্টোনস এর করা অসাধারণ গোল), প্রতিপক্ষ বিচার করে সাধারণ ফুলব্যাকদের মত করে উইং দিয়ে ঝোড়ো গতির ওভারল্যাপিং দৌড় দিতে পারেন, এবং আক্রমণে যোগদান করে প্রতিপক্ষের ডিফেমসকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়েও দিতে পারেন (উদাহরণস্বরূপ, টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর বিরুদ্ধে গ্যাব্রিয়েল জেসুস এর করা গোলটির ঠিক পূর্ব মুহূর্ত)।

পড়ুন:  গার্দিওলা এবং সিটির জন্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা এখন বা কখনই নয়

বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিরুদ্ধে জন স্টোনস এর করা দূর্দান্ত দূরপাল্লার গোলটির ঠিক পূর্ব মুহূর্ত। তিনি ছিলেন অগাধ স্পেস এ। (বল পায়ে স্টোনসকে চিহ্নিত করা হল।)

সাকা বলের নিয়ন্ত্রণ নেন, এবং স্পার্সের দু’জন ডিফেন্ডার তার পেছনে লেগে পড়ে। ফাঁকায় থেকে যান ফুলব্যাক বেন হোয়াইট। (উপরের বাম পাশে সাকা এবং তার পেছনে বেন হোয়াইটকে চিহ্নিত করে দেওয়া হল।)

বেন হোয়াইট ওভারল্যাপিং দৌড় দিয়ে এগিয়ে যান, এবং স্পার্সের একজন ডিফেন্ডার তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। (আবারও সাকা এবং তার পেছনে থাকা বেন হোয়াইটকে চিহ্নিত করা হল।)

যেহেতু একজন ডিফেন্ডার হোয়াইটকেই অনুসরণ করছিলেন, তাই সাকা কিছুটা স্পেস পেয়ে শট মারার সুযোগ পেয়ে যান। (সাকাকে হাইলাইট করা হল, কিন্তু তীর চিহ্ন দেওয়া হল থমাস পার্টে’র দিকে, যিনি কি না এখন অগাধ স্পেসে রয়েছেন, এবং গোলের দিকে নজর দিয়ে রেখেছেন।)

পার্টে’র করা গোলের ঠিক আগ মুহূর্ত। উইংগে দুইজন ডিফেন্ডার এর মুখোমুখি হওয়ার পর সাকা বলটি পাস করে দেন হোয়াইটকে। সেটিকে তিনি একটি নিরাপদ অপশন হিসেবেই বেছে নেন।

তারপর বেন হোয়াইট পাস করে বলটি দিয়ে দেন থমাস পার্টেকে, এবং তিনি স্কোর করেন একটি বিশ্বমানের গোল। (পার্টে’র পজিশন থেকে গোলের দিকে তীর দিয়ে চিহ্নিত করা হল।)

ডিফেন্সিভ দিক ফিয়ে দেখলে, ইনভার্টেড ফুলব্যাকেরা রক্ষণভাগেও অনেক অবদান রাখেন, তা ডিফেন্সিভ কভার দেওয়ার ক্ষেত্রেই হোক, বা কাউন্টার অ্যাটাক থামানোর ক্ষেত্রেই হোক, যখন কি না প্রতিপক্ষ তাদের বহু খেলোয়াড়দের আক্রমণে পাঠিয়ে দেয়। একটি ২-৩-৫ ফর্মেশনের মানেই হল এই যে, পাঁচজন খেলোয়াড় ফ্রন্ট লাইনে থাকবেন গোল করার উদ্দেশ্য নিয়ে, এবং বাকি পাঁচজন খেলোয়াড় তাদের পজিশনে থাকবেন ডিফেন্ড করার জন্য, এবং কাউন্টার প্রেসিং করে বল পুনরুদ্ধার করার জন্য।

আক্রমণ এবং ডিফেন্স উভয় দিক দিয়েই এই পজিশনটির বেশ ভালো চাহিদা থাকায় এই পজিশনটিতে বিভিন্ন ধরণের খেলোয়াড়েরা খেলে থাকেন। আমরা দেখেছি যে জন স্টোনস, বেন হোয়াইট, নাথান আকে, জুলস কুন্দ, রোনাল্ড আরাউহো প্রমুখ সেন্ট্রাল ডিফেন্ডাররাও ইনভার্টেড ফুলব্যাকের দায়িত্ব বেশ দাপটের সাথেই পালন করেছেন। তারা শুধু তাদের ডিফেন্সিভ কোয়ালিটির কারণেই এই পজিশনটিতে খেলেন না, বরং তাদের অফেন্সিভ দক্ষতাও এখানে সমানভাবে জরুরি।

জন স্টোনস, জুলস কুন্দ, রোনাল্ড আরাউহো এবং নাথান আকে এর মত খেলোয়াড়েরা আগে অন্য দলের হয়েও এমন পজিশনে খেলায় তারা এই পজিশনটির চাহিদা ও সমস্যাদি সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত। এ কারণে তাদেরকে যেকোন সময়ই তাদের ম্যানেজারেরা সেন্ট্রাল ডিফেন্স থেকে তুলে এনে ইনভার্টেড ফুলব্যাকের পজিশনে প্রতিস্থাপন করতে পারেন।

ওলেক্সান্ডার জিনচেঙ্কো আগে ছিলেন একজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার যাকে কি না ম্যান সিটিতে থাকাকালীন পেপ গার্দিওলা একটি ইনভার্টেড ফুলব্যাকে পরিণত করেন। এখন তিনি আর্সেনালেও একই পজিশনেই খেলছেন। সার্জিও গোমেজ, যাকে কি না এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোতেই কিনেছে ম্যান সিটি, তিনিও সেন্ট্রাল মিডফিল্ড থেকে ডিফেন্সে যোগ দিয়েছেন।

 

প্রেসিং এবং কাউন্টার-প্রেসিং (Pressing and Counterpressing)

যখন আপনি এই দলগুলির মত করে উঁচু ডিফেন্সিভ লাইন বজায় রাখবেন, তখন আপনাকে অবশ্যই প্রেসিং এ অধিক মনযোগ দিতে হবে। প্রতিপক্ষকে চাপের মধ্যে রাখার জন্য যখনই বল হারাবে তখনই দলটি বলের পেছনে হন্যে হয়ে দৌড়াবে। এটিকেই বলে কাউন্টার-প্রেসিং। এটির ফলে ডিফেন্সিভ লাইনের পেছনের সেসকল স্পেস কভার হয়, যেখানে প্রতিপক্ষ পাস দিলেই বিপদ অবধারিত।

পড়ুন:  ২০২২-২৩ মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে ফুলহ্যামের টিকে থাকার সুযোগ নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ

উঁচু ডিফেন্সিভ লাইন নিয়ে খেলার সময় একেবারে প্রতিপক্ষের গোলের সামনে থেকে প্রভাবশালী প্রেসিং সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। তবে, এই ক্রীড়াকৌশলটির মূল উদ্দেশ্যই হল এটি নিশ্চিত করা যে, প্রতিপক্ষ যেন স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে নিজেদের ডিফেন্স থেকে প্লে-আউট করতে না পারে। এছাড়া, পাস প্রতিহত (ইন্টারসেপ্ট) করে৷ ট্যাকেল করে, বল ক্লিয়ার করে অথবা কিক মেরে বলকে সাইডলাইন এর বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে টার্নওভার সম্পন্ন করাও তাদেরই দায়িত্ব।

রোমেরো’র পায়ে বল, কিন্তু আর্সেনালের দূর্দান্ত প্রেসিং এর ফলে তাকে বলটিকে ক্লিয়ার করে দিতে হয়, এবং বলটি যেয়ে পড়ে আর্সেনাল মিডফিল্ডার থমাস পার্টে’র পায়ে।

 

গোলকিপিং (Goalkeeping)

গোলকিপারদের মৌলিক রিকোয়ারমেন্টস এখন বেশ কিছু দিক দিয়ে বেড়ে গিয়েছে। এমন সকল গোলকিপার যারা কি না সবচেয়ে বড় পর্যায়ে এবং সবচেয়ে বড় ক্লাবগুলির হয়ে খেলতে চান, তাদের সকলকেই এখন সেসকল বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে হয়। দুই দশক আগেও কোন গোলকিপারের মধ্যে এসকল বৈশিষ্ট্য একরকম বোনাস হিসেবেই পরিলক্ষিত হত, এবং পেশাদার গোলকিপার হওয়ার জন্য মৌলিক রিকোয়ারমেন্ট হিসেবে মোটেও পরিলক্ষিত হত না। কিন্তু এখন বিষয়টি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।

পাসিং দক্ষতা, ছোট বা বড় দূরত্বে পাসিং এর ক্ষমতা, যেকোন সময় খেলা পর্যবেক্ষণ করে ডিফেন্ডারদের পেছন থেকে উঠে গিয়ে বল ক্লিয়ার করা (যেটিকে সুইপার কিপিংও বলা হয়ে থাকে) ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলোও একজন আধুনিক গোলকিপারের জন্য ন্যূনতম রিকোয়ারমেন্টে পরিণত হয়েছে। সফলতা পেতে হলে তাদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলি থাকা এখন আবশ্যকই বলা চলে।

সেই দিক দিয়ে উপরে উল্লিখিত তিনটি দলেই বেশ বড় বড় নাম উপস্থিত রয়েছে। মার্ক আন্দ্রে তের স্তেগেন, এরোন র‍্যামসডেল, এবং এডারসন’রা হলেন বর্তমানে ইউরোপের সেরা গোলকিপারদের মধ্যে তিনজন, এবং শট থামানোর পাশাপাশি বল পায়েও (পাসিং এর ক্ষেত্রে) তারা সমান পারদর্শী।

তাদের সুইপিং এর ক্ষমতাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেটির ফলে তারা তাদের দলকে একটি উঁচু ডিফেন্সিভ লাইন বজায় রাখতে সাহায্য করেন। এছাড়া, কোন খেলোয়াড় মাঝ মাঠে বা নিজের অর্ধে বল হারালেও সুইপার কিপিং এর মাধ্যমে সেটি কভার করা সম্ভব, এবং প্রতিপক্ষকে সুযোগের সদ্ব্যবহার করা থেকে রুখে দেওয়াও সম্ভব।

এমনটি অনেকেই দাবি করছেন যে, এই তিনটি দলই বর্তমানে বিশ্বের সব দলের চেয়ে অধিকতর সুন্দর ফুটবল খেলে চলেছে, এবং পাশাপাশি সফলতাও অর্জন করে চলেছে। বল নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে তাদের এই নাছোড়বান্দা আচরণ, এবং অফেন্সিভ ও ডিফেন্সিভ উভয় ক্ষেত্রেই তাদের টেরিটরি দখল ও ডমিনেট করার প্রতি আগ্রহই তাদেরকে করে তুলেছে অপ্রতিরোধ্য। এতে করে তাদের জেতার সম্ভাবনাও যেমন বাড়ে, তেমনি বাড়ে তাদের প্রতিপক্ষকে রুখে দেওয়ার সুযোগও। তারা অজেয় নয়, এবং বহু খেলায়ই দেখা গিয়েছে যে, প্রতিপক্ষ তাদেরকে নাস্তানাবুদ করে ফেলেছে, এবং ম্যাচ জিতে নিয়েছে। তবে, তারা এটি ভালোভাবেই নিশ্চিত করেছে যেন তেমন ঘটনাগুলি তাদের সাথে খুব বেশি সংখ্যক বার না ঘটে। এবং, সে কারণেই তারা হল বর্তমানে ফুটবল বিশ্বের সেরা তিনটি দল।

Share.
Leave A Reply