ফিফা বিশ্বকাপের ২০২২ সালের আসর শুরু হতে এখন আর এক মাসেরও কম সময় বাকি। এই শোপিছ ইভেন্টটি অন্য যেকোন টুর্নামেন্টের থেকে আলাদা, এবং এটি দুয়ারের গোড়ায় চলে আসার মানে হচ্ছে, এখন কেউ কেউ খুশিতে আত্মহারা হবে, আবার একইসাথে কেউ কেউ আবার হৃদয় ভাঙার কষ্টে পুড়বে। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই অনেকের অনেক গল্প রচিত হবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গিয়ে কেবলমাত্র একটি দলই পারবে ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের শিরোপাটি ঘরে তুলতে।

সর্বমোট যে ৩২টি দল এই টুর্নামেন্টে অংশ নিবে, তাদেরকে একটি ড্র এর মধ্য দিয়ে ৮টি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছে। সেই গ্রুপগুলি নিম্নরূপঃ

গ্রুপ এঃ কাতার, ইকুয়েডর, সেনেগাল, নেদারল্যান্ডস

গ্রুপ বিঃ ইংল্যান্ড, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, ওয়েলস

গ্রুপ সিঃ আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, মেক্সিকো, পোল্যান্ড

গ্রুপ ডিঃ ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, তিউনিশিয়া

গ্রুপ ইঃ স্পেন, কোস্টা রিকা, জার্মানি, জাপান

গ্রুপ এফঃ বেলজিয়াম, কানাডা, মরক্কো, ক্রোয়েশিয়া

গ্রুপ জিঃ ব্রাজিল, সার্বিয়া, সুইজারল্যান্ড, ক্যামেরুন

গ্রুপ এইচঃ পর্তুগাল, ঘানা, উরুগুয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া

যদিও আমরা এ ধরণের টুর্নামেন্ট বা প্রতিযোগিতায় বেশির ভাগ সময়ই দেখতে পাই যে, নক আউট পর্বে গিয়েই ম্যাচগুলির উত্তেজনা ও উন্মাদনা অনেকাংশে বেড়ে যায়, তবুও গ্রুপ পর্যায়েও এমন কিছু ম্যাচ সাধারণত থাকে যেগুলি বেশ মজার হয়ে থাকে, এবং নানা ধরণের অঘটনের জন্ম দিয়ে থাকে। অযাচিত প্রতিপক্ষের নিকট পয়েন্ট হারানো, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নের গ্রুপ পর্যায় থেকেই বিদায় নেওয়া — এ ধরণের নানারকম গোলযোগই তৈরি গ্রুপ পর্যায়ে, যা টুর্নামেন্টকে করে তোলে আরও উপভোগ্য। গ্রুপ পর্যায়ে আচমকা সব ফলাফল উঠে আসার সম্ভাবনাও থাকে বেশি। তাছাড়া, আকাশচুম্বী শক ভ্যাল্যু তো আছেই (২০১৮ সালে জার্মানি বা ২০১৪ সালে স্পেনের কথাই ভাবুন!)।

তাই, আমরা আজ আগামী বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের এমন ১০টি ম্যাচ নিয়ে আলোচনা করব যেসব ম্যাচ আপনার অবশ্যই দেখা উচিৎ।

কাতার বনাম ইকুয়েডর, গ্রুপ এ, ২০ই নভেম্বর (Qatar Vs Ecuador, Group A, November 20)

কাতার বনাম ইকুয়েডর হল এমন একটি ফিক্সচার যা উপভোগ করার জন্য পুরো পৃথিবী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। এই ম্যাচের মধ্য দিয়েই শুরু হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ ২০২২। সারাদিন ব্যাপি নানা ধরণের আনুষ্ঠানিকতা, প্রচন্ড উদ্দীপনা নিয়ে অপেক্ষা করা, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অসাধারণ সব পারফর্মেন্স, এবং সবশেষে প্রকৃত ফুটবল ম্যাচটি শেষ হওয়া পর্যন্ত — আগামী নভেম্বরের ২০ তারিখ পুরো বিশ্বের নজরই থাকবে কাতারের দিকে। এই ম্যাচটিই আমাদেরকে বলে দিবে হোস্ট দেশ কাতার টুর্নামেন্টটিতে কতদূর এগুনোর সামর্থ্য রাখে।

সেনেগাল বনাম নেদারল্যান্ডস, গ্রুপ এ, ২১ই নভেম্বর (Senegal Vs Netherlands, Group A, November 21)

বর্তমান আফ্রিকান কাপ অব নেশনস এর চ্যাম্পিয়ন সেনেগাল এবনফ ইউরোপীয় পাওয়ারহাউজ নেদারল্যান্ডস এর মধ্যকার এই ম্যাচটি যেকোন নিরপেক্ষ দর্শকের জন্যই খুবই বিনোদনমূলক হবে বলেই আমরা মনে করি।

অরানিয়া খ্যাত নেদারল্যান্ডস কোয়ালিফাই না করতে পারায় ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে অনুপস্থিত ছিল, এবং তার দুই বছর আগের উয়েফা ইউরোতেও তারা অংশ নিতে পারেনি। সেটি ছিল ফুটবলের দিক দিয়ে দেশটির জন্য একদম তলানিতে পৌঁছে যাওয়ার মত একটি মুহূর্ত। তবে, ২০২০ সালের উয়েফা ইউরো এবং এবারের বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার মধ্য দিয়ে তারা ধীরে ধীরে নিজেদের পুরনো রূপে ফিরে আসছে। তারা তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার একটি দূর্দান্ত মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি শক্তিশালী দল গঠন করে ফেলেছে, যারা কি না সেই পুরনো ডাচ পন্থাতে খেলতেই পারদর্শী। বিশ্ব ফুটবলের দরবারে নিজের হারানো স্থান পুনরুদ্ধার করার উদ্দেশ্যে বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচে সেনেগালের বিরুদ্ধে জয়ের চেয়ে ভালো পদক্ষেপ আর কিই বা হতে পারে?

পড়ুন:  প্রিমিয়ার লীগের কোন কোন খেলোয়াড় এবার ইঞ্জুরির কারণে বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন না?

আফ্রিকান চ্যাম্পিয়নরা এবার কেবলমাত্র তৃতীয় বারের মত বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য কোয়ালিফাই করতে পেরেছে, এবং তারা অবশ্যই চাইবে এবার অন্তত গ্রুপ পর্যায় পার করতে। তেরাংগা লায়নস খ্যাত সেনেগালের নেতৃত্ব দেবেন বায়ার্ন মিউনিখের দুর্ধর্ষ ফরোয়ার্ড সাদিও মানে, এবং তাদেরকে ছোট করে দেখলে নেদারল্যান্ডস একটি বিশাল বড় ভুল করে বসবে বলেই আমাদের ধারণা।

ব্রাজিল বনাম সার্বিয়া, গ্রুপ জি, ২১ই নভেম্বর (Brazil Vs Serbia, Group G, November 21)

ব্রাজিল বনাম সার্বিয়ার এই ম্যাচটি বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ব্রাজিল ভক্তের জন্য একটি বিশাল ম্যাচ। এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে ফেভারিট যে দল, এবং বর্তমানে ফিফা’র বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে ১ নম্বরে আছে যে দল, সেই ব্রাজিল এই ম্যাচটির মধ্য দিয়েই এবারের কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এ নিজেদের যাত্রা শুরু করবে। এই ব্রাজিল দলটি যে পরিমাণে প্রতিভায় পরিপূর্ণ, এবং সব দিক দিয়েই তারা যেভাবে পারদর্শী, তা নিয়ে ইতিমধ্যে সকলেরই ধারণা রয়েছে।

অনেকেই বলছেন যে, অন্তত বিগত এক দশকের মধ্যে এটিই ব্রাজিলের সবচেয়ে শক্তিশালী দল, এবং সেজন্যই তাদের ঘাড়ে রয়েছে প্রচন্ড প্রত্যাশার চাপ। তাদের শুধু সবচেয়ে বিনোদনকারী দল হলেই চলবে না, বরং সবচেয়ে বেশি জয়ী দলও হতে হবে।

তারা বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচে এমন এক সার্বিয়ান দলের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, যারা কি না কোনক্রমেই সহজে হার মানার মত দল নয়। ইউরোপের এই দেশটির নিকট রয়েছে মহাদেশীয় পর্যায়ে লীগ ফুটবল খেলা বেশ কিছু অসাধারণ খেলোয়াড়, যারা কি না ইউরোপের শীর্ষ সব লীগের শীর্ষ সব দলে খেলে থাকেন। যদি তাদের শক্তিমত্তা ব্রাজিলের ধারেকাছেও না, তবুও এটি বলতেই হয় যে, নিজেদের দিনে তারা পৃথিবীর যেকোন দলকেই হারিয়ে দেওয়া সামর্থ্য রাখে। সবার জন্য মাস্ট-ওয়াচ এই ম্যাচটিতে সার্বিয়া অবশ্যই চেষ্টা করবে ব্রাজিলের বাড়া ভাতে পানি ঢালার, আর ব্রাজিল চাইবে জয়ের মাধ্যমে টুর্নামেন্টটিতে একটি ভালো সূচনা করার।

ইংল্যান্ড বনাম যুক্তরাষ্ট্র, গ্রুপ বি, ২৫ই নভেম্বর (England Vs USA, Group B, November 25)

ইংল্যান্ড বনাম যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচটি এমন একটি ম্যাচ হতে চলেছে যা শুধু মাঠেই নয়, বরং মাঠের বাইরেও (বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে) বেশ জমজমাট হতে চলেছে। বিশ্ব দরবারের দুই পাওয়ারহাউজ দেশ আগামী ২৫ই নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এই ম্যাচটিতে অংশ নিবে, যেখানে ফেভারিট হিসেবে অবশ্যই থাকবে থ্রি লায়নস খ্যাত ইংল্যান্ড।

তবে, তা যাই হোক না কেন, বর্তমানের আমেরিকান পুরুষ জাতীয় দলটি বেশ কিছু বিশ্বমানের যুবা তারকা দিয়ে খচিত, অর্থাৎ তাদেরকে হাতের ধুলো ভেবে তুচ্ছ মনে করবার কোন কারণই নেই। বিশ্ব ফুটবলে তারাও নিজেদের পদচিহ্ন রেখে যাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টাই করবে, এবং তেমনটি করার শ্রেষ্ঠ পন্থাই হল বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা দেশগুলির একটিকে হারানো, যেমন ইংল্যান্ড।

এটি শুধুমাত্র একটি ফুটবল ম্যাচ নয়, বরং মাঠের ভেতরে ও বাইরে ব্র‍্যাগিং রাইটস অর্জন করার একটি সেরা মাধ্যম।

ফ্রান্স বনাম ডেনমার্ক, গ্রুপ ডি, ২৬ই নভেম্বর (France Vs Denmark, Group D, November 26)

বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স তাদের বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধারের মিশনটি শুরু করতে যাচ্ছে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ম্যাচের মধ্য দিয়ে। যে বিশ্বকাপ শিরোপাটি ফরাসিরা পর পর দুইবার জেতার পরিকল্পনা করছে, সেটি জেতার পথে প্রথম বড় ম্যাচ হতে চলেছে ডেনমার্কের বিপক্ষে এই ম্যাচটি।

পড়ুন:  ওলেক্সান্ডার জিনচেঙ্কোর নিকট হতে আর্সেনালের কেমন প্রত্যাশা রাখা উচিৎ?

ডেনমার্কের দিক থেকে দেখলে, তাদের নিকট একটি প্রতিভাবান দল রয়েছে, যা যেকোন দিন ফ্রান্সকে হারিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে। শ্বাসরুদ্ধকর এই ম্যাচটিতে ডেনমার্কের মূল ভরসা হয়ে মাঠে নামবেন তাদের ট্যালিসমানিক মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন।

স্পেন বনাম জার্মানি, গ্রুপ ই, ২৭ই নভেম্বর (Spain Vs Germany, Group E, November 27)

উভয় দেশের ফুটবলীয় মর্যাদা মাথায় রেখে অবশ্যই বলতে হয় যে, এই ফিক্সচারটিই হতে চলেছে এবারের কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। সর্বশেষ ৩টি বিশ্বকাপের মধ্যে ২টির বিজয়ী দেশ এর মধ্যকার এই ম্যাচটিই হয়তো নির্ধারণ করে দেবে যে, গ্রুপ ই এর চ্যাম্পিয়ন কে হবে।

২০১৮ সালের বিশ্বকাপে তারা যতটা শক্তিশালী ছিল, এবারের বিশ্বকাপে তার থেকে কয়েক গুণ বেশি শক্তিশালী হয়েই প্রবেশ করছে স্পেন। তাদের দলের হৃদপিণ্ডে যেমনি রয়েছেন যুবা সব প্রতিভা, তেমনি রয়েছেন বেশ কিছু অভিজ্ঞ তারকারাশিও। তারা শুধু অংশগ্রহণ করার উদ্দেশ্যেই কাতারে যাচ্ছে না, বরং সেখানে তারা যাচ্ছে ভালো খেলা উপহার দেওয়ার মাধ্যমে এটি প্রমাণ করার জন্য যে, তারা আবারও বিশ্ব ফুটবলের রুই কাতলাদের মধ্যে গণ্য হওয়ার যোগ্য হয়ে উঠেছে।

রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে জার্মানি গ্রুপ পর্যায় থেকেই বিদায় নিয়েছিল। এবারের বিশ্বকাপে ভালো কিছু অর্জন করতে চাইলে জার্মানদেরকে অবশ্যই সেবারের চেয়ে ভালো পারফর্ম করতে হবে, কারণ তাদের গ্রুপটিও এবার ডেথ গ্রুপ বলেই আখ্যায়িত হচ্ছে। তবে, গত কয়েক বছরে তারা বেশ কিছু ইতিবাচক ধাপ ফেলেছে, এবং স্পেনের পথ অনুসরণ করে তারাও তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার একটি মিশ্রণ ঘটিয়েছে তাদের দলে।

যখন এই দুই বিশাল দল একে অপরের মুখোমুখি হবে, তখন সেটি সেটি শুধু গ্রুপ পর্যায়ের নয়, বরং পুরো টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় ম্যাচগুলির মধ্যে একটি হিসেবেই গণ্য হবে। আমি অন্তত সেদিন আমার টিভি সেটের সামনে থেকে উঠছি না!

পর্তুগাল বনাম উরুগুয়ে, গ্রুপ এইচ, ২৮ই নভেম্বর (Portugal Vs Uruguay, Group H, November 28)

গ্রুপ এইচ এর দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচগুলির মধ্যে একটিতে একে অপরের মুখোমুখি হবে পর্তুগাল এবং উরুগুয়ে। গত বিশ্বকাপেও এই দুই দল একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল, এবং সেই ম্যাচটিতে ২-১ গোলের ক্ষুদ্র ব্যবধানে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল উরুগুয়ে। এবারের বিশ্বকাপে অবশ্য পর্তুগালের দলটি অত্যন্ত শক্তিশালী, এবং বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের জন্যও তারাই অন্যতম ফেভারিটস। এই দুই দলের মধ্যে তাই তাদেরকে কিছুটা এগিয়ে রাখতেই হবে।

এটি আরেকটি দিক দিয়েও বেশ স্মরণীয় ম্যাচ হতে চলেছে। এটিই হতে পারে এডিনসন কাভানি (৩৫ বছর), লুইস সুয়ারেজ (৩৫ বছর), এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো’র (৩৭ বছর) মত বিশ্ব কাঁপানো কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের জন্য বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে সর্বশেষ বড় ম্যাচ। এটিই তাদের জন্য শেষ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ হতে চলেছে, এবং যে করেই হোক তারা এটিকে স্মরণীয় করেই রাখতে চাইবেন। ব্যক্তিগতভাবে এবং তাদের দেশের জন্যও ভালো কিছু অর্জন করেই তারা আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায় নিতে চাইবেন।

ক্রোয়েশিয়া বনাম বেলজিয়াম, গ্রুপ এফ, ১লা ডিসেম্বর (Croatia Vs Belgium, Group F, December 1)

এটি হল এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের সেরা কয়েকটি ম্যাচের মধ্যে একটি। এক দিকে রয়েছে ক্রোয়েশিয়া, যারা কি না সর্বশেষ ফিফা বিশ্বকাপে রানার্স আপ এর খেতাব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। গত বিশ্বকাপে তাদের হয়ে খেলা বেশ কিছু খেলোয়াড় অবসরে যাওয়ায় তাদেরকে দলটি আবার নতুন করে সাজাতে হয়েছে, এবং বেশ কিছু যুবা খেলোয়াড়কে একসাথে দলে ঢুকাতে হয়েছে। তারুণ্যে ভরপুর হলেও এই টুর্নামেন্টের গভীর পর্যন্ত পৌঁছানোর সামর্থ্য তাদের রয়েছে।

পড়ুন:  প্রিমিয়ার লিগে শেফিল্ড ইউনাইটেড থেকে কী আশা করা যায়

আরেক দিকে রয়েছে বেলজিয়াম এবং তাদের ফুটবলীয় স্বর্ণযুগ। তাদের নিকট রয়েছে এখনকার সময়ে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে নামীদামী এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের নিয়ে তৈরি একটি দল, এবং এসকল খেলোয়াড়দের জন্য বিশ্বকাপ জেতার হয়তো এটিই শেষ সুযোগ, কারণ তাদের বেশির ভাগের বয়সই ৩০ পেরিয়েছে। সর্বশেষ বিশ্বকাপ আসরে তারা সেমি ফাইনালিস্ট ছিল, এবং এবারের আসরে তাই তারা আরো দূর পর্যন্ত যাওয়ার স্বপ্নই দেখবে।

এই ম্যাচটি কোনভাবেই হতাশ করবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।

ঘানা বনাম উরুগুয়ে, গ্রুপ এইচ, ২রা ডিসেম্বর (Ghana Vs Uruguay, Group H, December 2)

ঘানা সমর্থকরা আর যাই করুক না কেন, এই ম্যাচটিতে তারা উরুগুয়ে স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ এর জন্য যে করতালি বাজাবে না, সে ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে হাত দিয়ে বল ধরার মাধ্যমে ঘানাকে সেমি ফাইনালে ওঠা থেকে বিরত রেখেছিলেন লুইস সুয়ারেজ। সেই ঘটনাটির পর থেকে এবারই প্রথম এই দুই দল একে অপরের মুখোমুখি হতে চলেছে।

ঘটনাটি ঘটার পর প্রায় ১২ বছরেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে, কিন্তু ঘানা সমর্থকরা নিশ্চয় এখনো ভোলেননি ২০১০ সালের সেই দিনটিতে তাদের নিকট হতে কি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তারা অবশ্যই প্রতিশোধ নিতেই চাইবে। এটি হবে উভয় দলের জন্যই গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচ। যদি এমনটি ধরে নেওয়া হয় যে, শক্তিশালী পর্তুগাল এই গ্রুপটির চ্যাম্পিয়ন হবে, তাহলে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান দখলের জন্য ঘানা বনাম উরুগুয়ের মধ্যকার এই ম্যাচটির গুরুত্ব হবে অপরিসীম।

এই ম্যাচের কথা ভাবলে কোনক্রমেই মনে হচ্ছে না যে এটি গ্রুপ পর্যায়ের একটি সাধারণ ম্যাচ হতে চলেছে। বরং, এমনটিই মনে হচ্ছে যে, একটি যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে সেদিন কাতারে।

সার্বিয়া বনাম সুইজারল্যান্ড, গ্রুপ জি, ২রা ডিসেম্বর (Serbia Vs Switzerland, Group G, December 2)

এবারের কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের সমাপ্তিসূচক ম্যাচটিতে মুখোমুখি হবে দুই ইউরোপীয় দেশ সার্বিয়া এবং সুইজারল্যান্ড। দল দু’টিকে মহাশক্তি না বলা গেলেও কোন অংশেই তাদেরকে চুনোপুটিও বলা যাবে না। তবে, যেহেতু গ্রুপটিতে ব্রাজিলও রয়েছে, সেহেতু ধরেই নিতে হবে যে গ্রুপ পর্যায়ের শেষে ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এই দলটিই এই গ্রুপের শীর্ষে অবস্থান করবে, এবং ক্যামেরুন, সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ডের মধ্য থেকে যেকোন একটি দল দ্বিতীয় স্থান দখল করার সুযোগ পাবে। সে সময় তাদের পয়েন্ট ট্যালি কোন অবস্থায় থাকবে সেটির উপর ভিত্তি করে হয়তো এই ম্যাচটিই এই গ্রুপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হিসেবে পরিলক্ষিত হবে।

গুণমানের দিক দিয়ে উভয় দলই প্রায় একে অন্যের পিঠ ঘেঁষেই অবস্থান করছে, এবং এমনটি আশা করাই যায় যে, তারা একটি দূর্দান্ত ও রোমাঞ্চকর ম্যাচের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের ইতি টানতে পারবে।

Share.
Leave A Reply