এক মাসের অবাধ ও নিশ্ছিদ্র বিনোদন নিয়ে খুব দ্রুতই এগিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২, যা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

মূল টুর্নামেন্টের পাশাপাশি দর্শক ও সমর্থকদের আরো বেশি উত্তেজনায় বুদ করে রাখতে আয়োজক ফিফা একটি ফ্যান্টাসি ফুটবল প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছে, যদিও সংশ্লিষ্ট অ্যাপ বা ওয়েবসাইটটি এখনো তারা রিলিজ করেনি।

ধারণা করা যাচ্ছে যে, গত বিশ্বকাপ ও উয়েফা ইউরো প্রতিযোগিতার সাথে মিল রেখে এবারও মূল প্রতিযোগিতা শুরুর এক সপ্তাহ আগে ফ্যান্টাসি ফুটবল গেইমটি রিলিজ করা হবে, কারণ মাঠের খেলার পাশাপাশি এই খেলাটিও ফুটবল সমর্থকরা অনেক বেশি পছন্দ করে থাকেন।

কাতারে এবারের বিশ্বকাপের আসরটি শুরু হতে যাচ্ছে ২০ই নভেম্বর। অর্থাৎ, অতীতের টুর্নামেন্টগুলির সাথে যদি মিল রাখা হয়, তাহলে বিশ্বকাপের ফ্যান্টাসি ফুটবল গেইমটি রিলিজ করা হবে ৮ থেকে ১৩ই নভেম্বরের মধ্যেই। তবে, আই যাই হোক না কেন, এই অফিশিয়াল গেইমটি রিলিজ না করার বা টুর্নামেন্ট শুরুর একদম আগে রিলিজ করার কোন কারণই কিন্তু নেই।

বিগত কয়েকটি ফুটবল বিশ্বকাপে ফ্যান্টাসি টুর্নামেন্টের নাম ছিল “ম্যাকডোনাল্ড’স ফিফা বিশ্বকাপ ফ্যান্টাসি”। এবং এবারও ২০ই নভেম্বর (১৬ঃ০০ জিএমটি) স্বাগতিক কাতার ও ইকুয়েডরের মধ্যকার ম্যাচটি শুরুর বেশ কয়েকদিন আগেই এই গেইমটি রিলিজ করার কথা রয়েছে।

গেমপ্লে এর দিক থেকে এই গেইমটির প্রচন্ড মিল রয়েছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ ফ্যান্টাসির সাথে। সেটির মত এখানেও দুইটি ম্যাচডে’র মাঝে যেকোন সময় দলের অধিনায়ক পরিবর্তন করা যাবে, এবং সাবস্টিটিউশনও করা যাবে। গেইমটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করে বা ফিফা’র ওয়েবসাইটেও খেলা যাবে, এবং টুর্নামেন্ট শেষে শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের জন্য থাকবে আকর্ষণীয় সব পুরষ্কার।

এবারের বিশ্বকাপ ফ্যান্টাসি ফুটবলে ভালো করার জন্য আপনার দলে কোন কোন সুপারস্টার ও উদীয়মান খেলোয়াড়দের রাখা দরকার? শুধু সুপারস্টার খেলোয়াড়দের নিয়ে দল ভারি করলেই চলবে না, বরং বুঝতে হবে কোন দেশগুলি গ্রুপ পর্যায় পার করার ক্ষমতা রাখে এবং সেসকল দল থেকে সেরা খেলোয়াড়দের বাছাই করে দলে নিতে হবে। আবার, বিশ্বকাপে উদীয়মান সব খেলোয়াড়দের পসরা সাজে, এবং তাদেরকে আগে থেকে যাচাই করে দলে রাখতে পারলে আপনারই লাভ। এছাড়া, এমন খেলোয়াড়দেরকেই দলে নেওয়া উচিৎ যারা ইঞ্জুরিতে কম পড়েন, এবং প্রত্যেকটি ম্যাচ খেলার গ্যারান্টি দিতে পারেন।

আমরা ২০২২ কাতার বিশ্বকাপকে ঘিরে বুকমেকারদের প্রেডিকশন, অডস এবং আমাদের নিজস্ব যুক্তি দিয়ে সেসকল খেলোয়াড়দের একটি তালিকা তৈরি করেছি, যাদেরকে দলে নিলে আপনাদের ক্ষতি হওয়ার সুযোগ খুব কম। চলুন, দেখে নেওয়া যাক তালিকাটি।

গোলকিপার (Goalkeepers)

এলিসন বেকার – ব্রাজিল (Allison Baker – Brazil)

ম্যানচেস্টার সিটি’র এডারসন তাকে প্রচন্ড প্রতিযোগিতায় রাখলেও শেষ পর্যন্ত লিভারপুলের এলিসনকেই ব্রাজিলের হয়ে গোল পোস্টের নিচে দেখতে পাওয়া যাবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।

তার বল ডিস্ট্রিবিউশন এবং প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সাথে ওয়ান-অন-ওয়ান পরিস্থিতিতে তার অশেষ দক্ষতার কারণে এই ৩০ বছর বয়সী গোলকিপারকে বর্তমানে বিশ্বের সেরা গোলকিপারদের মধ্যে একজন মানা হয়। এলিসন হলেন একজন আধুনিক অল-রাউন্ডার গোলকিপার, যিনি প্রায় সব দিকেই পারদর্শী। এছাড়া, ২০১৯ সালে যখন ব্রাজিল কোপা আমেরিকা জিতেছিল, সেবার টুর্নামেন্টটির সেরা গোলকিপারের খেতাবটিও এলিসনই জিতেছিলেন।

গোলকিপার হয়েও এসিস্ট তুলে নেওয়ার একটি অভ্যাস তার রয়েছে। এছাড়াও, ইউরোপের শীর্ষ ৫টি লীগে ২০১৭-১৮ মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১৫টির বেশি পেনাল্টির সম্মুখীন হয়েছে এমন গোলকিপারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পেনাল্টি আটকানোর রেকর্ড রয়েছে এই এলিসনেরই।

সার্বিয়া, সুইজারল্যান্ড, এবং ক্যামেরুন এর বিপক্ষে ম্যাচগুলিতে তিনি প্রচুর ফ্যান্টাসি পয়েন্ট অর্জন করবেন বলেই ধারণা করা যাচ্ছে, কারণ তার দল ব্রাজিল হল এবারের বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার জন্য অন্যতম ফেভারিট একটি দল।

ক্যাস্পার স্মাইকেল – ডেনমার্ক (Kasper Schmeichel – Denmark)

এই দানবাকৃতির শটস্টপার তার দেশ ডেনমার্কের জন্য একটি বিশাল ভরসার জায়গা। তিনি যদি গত রাশিয়া বিশ্বকাপে (যেখানে ডেনমার্ক রাউন্ড অব ১৬ তে পৌঁছেছিল) এবং গত উয়েফা ইউরোতে (যেখানে ডেনমার্ক সেমি ফাইনাল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল) নিজের পারফর্মেন্সগুলির পুনরাবৃত্তি এবারের ফিফা বিশ্বকাপে করতে পারেন, তাহলে ডেনমার্কও একটি ভালো পজিশনে পৌঁছাবে, আবার তাকে যারা ফ্যান্টাসি দলে রাখবে তারাও বেশ লাভবান হবে।

একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রায় ১১ বছর লেস্টার সিটিতে কাটানোর পর এবারের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে ক্লাবটি ছেড়ে তিনি ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছেন। সেখানে এখন তিনি নিস নামক একটি দলে খেলছেন। নতুন ক্লাবে নতুন উদ্যমে খেলতে থাকা ড্যনাইশ ডাইনামাইট খ্যাত স্মাইকেল এবার বিশ্বকাপ কাঁপাতে প্রস্তুত।

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ১০টি ম্যাচ খেলে মাত্র ৩টি গোল হজম করেছেন এই সিনিয়র গোলকিপার, এবং ডেনমার্কের স্বর্ণযুগের দলটির অর্জিত যেকোন ভবিষ্যৎ সাফল্যের পেছনে এই চমৎকার গোলকিপারের বিশাল একটি হাত থাকবেই থাকবে। আন্তর্জাতিক ফুটবল যেন তার বাম হাতের খেল!

ডিফেন্ডার (Defenders)

থেও হার্নান্দেজ – ফ্রান্স (Theo Hernandez – France)

বর্তমানে বিশ্বের সেরা লেফট ব্যাক বা লেফট উইং ব্যাক হিসেবে যাকে গণ্য করা হয়ে থাকে, সেই ফরাসি থেও হার্নান্দেজকে ফ্যান্টাসি দলে না রাখলে আপনারই ক্ষতি। বাম পার্স্বের উইং দিয়ে তার ওঠা নামার গতি সত্যিই অসাধারণ, এবং সেটিই তাকে করে তোলে অন্যান্য ফুল ব্যাক বা উইং ব্যাকদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

পড়ুন:  এরলিং হ্যাল্যান্ড প্রিমিয়ার লিগের রেকর্ড ভেঙেছে: নরওয়েজিয়ান গোল মেশিনের পরবর্তী কী?

ফ্যান্টাসি ফুটবল এর জন্য তিনি একদমই মানানসই একজন খেলোয়াড়, কেননা গত মৌসুমে একজন ডিফেন্ডার হিসেবে তিনিই ইউরোপের শীর্ষ ৫টি লীগে সবচেয়ে বেশি এসিস্ট প্রদান করতে পেরেছিলেন। বহু বছর পর এসি মিলানের সিরি আ শিরোপা জেতার পেছনেও তাই তার অবদান অপরিসীম। ফ্রান্সের হয়েও একটি ভরসাবান খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন থেও, এবং বিশ্বকাপের মূল পর্বে তাকে ফ্রান্স দলে তার আপন ভাই লুকাস হার্নান্দেজ (সেন্টার ব্যাক) এর পাশে খেলতে দেখা যেতে পারে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন দৃশ্য অনেকটাই বিরল।

আশরাফ হাকিমি – মরক্কো (Achraf Hakimi – Morocco)

২৩ বছর বয়সী এই পিএসজি ফুল ব্যাক বর্তমানে বিশ্বের সেরা ফুল ব্যাকদের মধ্যে একজন, এবং তার নিকট যে নানান প্রকারের প্রতিভার পসরা সাজানো রয়েছে, শুধুমাত্র সেটির কারণে হলেও তাকে আপনার ফ্যান্টাসি বিশ্বকাপ দলে সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

হাকিমি হলেন একজন দ্রুতগামী এবং আক্রমণাত্মক ফুল ব্যাক, যিনি কি না যেমনি আক্রমণে যোগ দিয়ে থাকেন, তেমনি ডিফেন্সেও ঠিক সমানভাবেই পারদর্শী। এছাড়া, মরক্কোর হয়ে বেশ কিছু বড় বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলার অভিজ্ঞতাও তার ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ায় ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ফিফা বিশ্বকাপ, ২০১৯ ও ২০২১ সালের আফ্রিকান কাপ অব নেশনস ইত্যাদি। এর প্রত্যেকটিতেই তিনি অসাধারণ ক্রীড়ানৈপূণ্য প্রদর্শন করেছেন।

এটলাস লায়নস খ্যাত মরক্কোর হয়ে এই দমদার ফুল ব্যাক ইতিমধ্যে ৫৩টি ম্যাচ খেলেছেন, এবং এবারের বিশ্বকাপে বেলজিয়াম, কানাডা ও ক্রোয়েশিয়া সমৃদ্ধ একটি গ্রুপে তিনি ভালো করবেন বলের আশা করা যায়।

ডেঞ্জেল ডাম্ফ্রিস – নেদারল্যান্ডস (Denzel Dumfries – Netherlands)

গতিশীল এই ডাচ উইং ব্যাক বার বার ডান পার্শ্বের টাচলাইন বরাবর ওঠা নামা করার জন্য বিখ্যাত। তিনি যেকোন ডাচ ফুল ব্যাকের মতই আক্রমণাত্মক এবং দলের অনেক মিডফিল্ডারের চেয়েও বেশি গোল করে থাকেন।

২৬ বছর বয়সী এই ইন্টার মিলান ফুল ব্যাক ডাচ দলে রাইট ব্যাক বা রাইট উইং ব্যাকের পজিশনটি একদমই নিজের করে নিয়েছেন, এবং তিনি ফিট থাকলে এই পজিশনে আর অন্য কাউকে দেখা যাবে না, যা ফ্যান্টাসি লীগে তার কদর আরো বাড়িয়ে দিবে।

ডেঞ্জেল ডাম্ফ্রিস নেদারল্যান্ডস এর হয়ে তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোলটি করেছিলেন ২০২০ সালের উয়েফা ইউরোতে। এখন তার মোট আন্তর্জাতিক গোল সংখ্যা ৫। অর্থাৎ, তার আক্রমণাত্মক দিকটি তার দলের জন্য বেশ কার্যকরী, এবং সেজন্যই বিশ্বকাপের গ্রুপ এ’তে স্বাগতিক কাতার, ইকুয়েডর, এবং সেনেগাল এর বিপক্ষে তার ভালো করার সম্ভাবনাও বেশি।

জাঁও ক্যান্সেলো – পর্তুগাল (Joao Cancelo – Portugal)

ম্যানচেস্টার সিটি’র এই দূর্দান্ত ফুল ব্যাক সম্ভবত বর্তমানে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ফুল ব্যাক, কারণ তিনি লেফট ও রাইট উভয় ফ্ল্যাংকেই তার অসাধারণ ড্রিবলিং ও ফ্লেয়ার প্রদর্শনের পাশাপাশি চমৎকার ডিফেন্সিভ দক্ষতাও প্রদর্শন করে থাকেন।

ক্যান্সেলো পর্তুগালের জন্য একটি অসাধারণ হাতিয়ার, কারণ যখনই তাদের মিডফিল্ডাররা গোল তৈরি করতে ব্যর্থ হোন, তখনই তাদের অসম্ভব প্রতিভাবান সব ফরোয়ার্ডদের জন্য গোল তৈরি করার সামর্থ্য তিনি রাখেন। ডিফেন্ডার হয়েও প্রচুর এসিস্ট পাওয়ার কারণেই ফ্যান্টাসি লীগে তিনি একজন আদর্শ খেলোয়াড়।

এবারের বিশ্বকাপে পর্তুগালের গ্রুপে আরো রয়েছে উরুগুয়ে, ঘানা, এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মত শক্ত প্রতিপক্ষ। তবে, প্রত্যেকটি ম্যাচেই কোন না কোন সাইডে ফুল ব্যাক হিসেবে ক্যান্সেলোকে দেখা যাবে, সেটি অনেকটাই নিশ্চিত।

হোয়াকিম মায়েলা – ডেনমার্ক (Joachim Maehler – Denmark)

আপনার ফ্যান্টাসি দলের জন্য আরেকটি অসাধারণ অপশন হলেন ড্যানিশ উইং ব্যাক হোয়াকিম মায়েলা, যিনি কি না গত উয়েফা ইউরো ২০২০ এ প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ডেনমার্কের সেমি ফাইনালের যাত্রায় তিনি মোট দুইটি গোল এবং একটি এসিস্ট দিয়ে বিশালভাবে সাহায্য করেছিলেন।

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে মায়েলা ড্যানিশদের হয়ে মোট ৫টি গোল করেছিলেন, এবং বল পায়ে তার দক্ষতা ও ট্যাকটিক্যাল গঠন তাকে আক্রমণে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সহযোগিতা করে, ফলে তিনি ডেনমার্কের হয়ে আক্রমণে প্রচুর প্রভাব ফেলতে পারেন।

বিশ্বকাপের গ্রুপ ডি’তে ক্যাস্পার হিউলম্যান এর ডেননার্ক দলটি মুখোমুখি হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, তিউনিশিয়া, এবং অস্ট্রেলিয়ার মত দলের। তাদের সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনা করলে তারা এই গ্রুপ থেকে কোয়ালিফাই করার জন্য অন্যতম ফেভারিট।

মিডফিল্ডার (Midfielders)

কেভিন ডি ব্রুয়না – বেলজিয়াম (Kevin De Bruyne – Belgium)

বর্তমানে বিশ্ব ফুটবলে নিঃসন্দেহে কেভিন ডি ব্রুয়না’র থেকে ভালো মিডফিল্ডার পাওয়া বড় দায়। এছাড়া, তিনি এবার অবশ্যই চাইবেন তার অসাধারণ বেলজিয়াম দলটিকে একটি শিরোপা জেতাতে। তাই, আপনার ফ্যান্টাসি দলে তার জন্য একটি জায়গা রাখা চাই ই চাই!

ডি ব্রুয়না’র পাসিং, দূরদর্শিতা, বুদ্ধিদীপ্ততা, এবং টেকনিক্যাল দক্ষতা সত্যিই বিশ্বমানের এবং খুব বৈচিত্র্যময়ও বটে। এবং, তিনি রেড ডেভিলস খ্যাত বেলজিয়ামের বেশির ভাগ আক্রমণেই উপস্থিত থাকবেন বলেই ধারণা করা যায়। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে এই ৩১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার এর ঘাড়ে চড়েই বেলজিয়াম ৩য় স্থান অধিকার করেছিল। এবার আরও ভালো করার জন্যও তারা তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে

পড়ুন:  প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে সবচেয়ে সুলভ মূল্যে করা শীর্ষ ১০টি সফল সাইনিং

থমাস মুলার – জার্মানি (Thomas Mueller – Germany)

৩৩ বছর বয়সে এসেও রাউমডোয়টার খ্যাত এই বায়ার্ন মিউনিখ মিডফিল্ডার এখনো জার্মান দলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হয়েই রয়েছেন। দেশের হয়ে তিনি ইতিমধ্যে ৩২টি শিরোপা জিতেছেন, যা তাকে ইতিমধ্যে একজন জার্মান কিংবদন্তিতে পরিণত করেছে।

বায়ার্ন মিউনিখে পুরো ক্যারিয়ার কাটানো এই খেলোয়াড় তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কোন পুরষ্কার জেতাই বাকি রাখেননি যেন। এর আগে তিনি স্বয়ং বিশ্বকাপ শিরোপা ছাড়াও বিশ্বকাপে সেরা যুবা খেলোয়াড়, গোল্ডেন বল, গোল্ডেন বুট, সিলভার বুট ইত্যাদি পুরষ্কার জিতেছেন।

মুলারের পজিশনিং, টিমওয়ার্ক, এবং গোল তৈরি ও স্কোরিং এর দক্ষতা সত্যিই প্রশংসনীয়। বর্তমানে তিনিই জার্মান বুন্দেসলিগা’র ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি এসিস্টদাতা। কাতারে আবারও তিনি অসাধারণ পারফর্ম করবেন, এ ব্যাপারে খুব কম মানুষেরই সন্দেহ রয়েছে। তাই, আপনার দলে তাকে নিঃসন্দেহে জায়গা করে দিতেই পারেন।

নেইমার – ব্রাজিল (Neymar – Brazil)

যেহেতু ব্রাজিলের পোস্টার বয় খ্যাত নেইমার এবারও তাদের আক্রমণের নেতৃত্ব দেবেন, সেহেতু ফ্যান্টাসি লীগে তার ভালো পয়েন্ট স্কোর করার সম্ভাবনাও আকাশচুম্বী।

নেইমার ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে, এটিই হবে তার অসাধারণ ক্যারিয়ারের সর্বশেষ বিশ্বকাপ, এবং অবশ্যই বিদায়ের আগে তিনি তাদের প্রাণপ্রিয় সেলেসাও’দেরকে তাদের ৬ষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা জিতিয়েই যেতে চাইবেন।

ফরোয়ার্ড থেকে একরকম অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারে পরিণত হওয়া নেইমার এবারের কাতার বিশ্বকাপে প্রায় নিঃসন্দেহেই ব্রাজিলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হতে চলেছেন, কারণ তিনি কিংবদন্তি পেলে’র থেকে আর মাত্র দুই গোল পিছিয়ে রয়েছেন। নেইমার এবং ব্রাজিল এবারের বিশ্বকাপে বহুদূর যাবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে, এবং সেজন্যই তাকে দলে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে।

সাদিও মানে – সেনেগাল (Sadio Mane – Senegal)

সেনেগাল এর বামবালি ট্রাইবের সদস্য এই চমৎকার উইংগার একটি অসাধারণ বছর পার করেছেন (সেনেগাল, লিভারপুল ও বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে)। এমন অসাধারণ একটি বছরের শেষটাও তাই তিনি ভালোভাবেই করতে চাইবেন।

সানে এবছরের শুরুতেই মিশরকে হারিয়ে তার দল সেনেগালকে আফ্রিকান কাপ অব নেশনস (আফকন) জেতান। আবার, তার ঠিক এক মাস পরেই বিশ্বকাপের প্লে অফে সেই মিশরকে হারিয়েই তারা বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাই করে। সফলতায় ভরা এমন একটি বছর কাটানোর পর সেনেগালের সর্বকালের সর্বোচ্চ এই গোলদাতা ব্যালন ডি’অর এ দ্বিতীয় স্থান দখল করতে সক্ষম হোন। বায়ার্ন মিউনিখের এই দূর্দান্ত ও বিপজ্জনক উইংগার তার বিশ্বকাপ গ্রুপের অন্যান্য দল অর্থাৎ স্বাগতিক কাতার, নেদারল্যান্ডস, এবং ইকুয়েডরের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। তিনি আপনার ফ্যান্টাসি দলের কান্ডারী হয়ে উঠতে পারেন।

ব্রুনো ফার্নান্দেজ – পর্তুগাল (Bruno Fernandez – Portugal)

নর্থ ম্যাসেডোনিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে পর্তুগালের সর্বশেষ প্লে অফ ম্যাচে ব্রুনো ফার্নান্দেজই দুইটি গোল করেছিলেন, নতুবা হয়তো তারা বিশ্বকাপে খেলার সুযোগটিই পেতো না। কাতারে অনুষ্ঠিতব্য এই বিশ্বকাপে তিনি অবশ্যই চাইবেন ভালো কিছু অর্জন করে নিজের নামটি ইতিহাসের পাতায় লিখাতে।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডার এবারের বিশ্বকাপে পর্তুগালের জন্য হবেন একজন মোক্ষম হাতিয়ার, এবং তার পাসিং, বুদ্ধিদীপ্ততা ও গোলস্কোরিং এর দক্ষতা তাকে ফ্যান্টাসি ফুটবলের জন্য একজন আদর্শ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে। তাকে দলে রাখলে আপনার দলে পয়েন্টের বন্যা ঘটে যেতেই পারে!

সন হিউং মিন – দক্ষিণ কোরিয়া (Son Heung Min – South Korea)

সন হিউং মিন হলেন সর্বকালের সেরা এশিয়ান ফুটবলারদের মধ্যে একজন। তাকে অন্য যেকোন উইংগারের থেকে আলাদা করে তার গতি, লিংক-আপ প্লে’তে তার পারদর্শীতা, এবং দুই পায়ের সমান ক্ষমতা।

গত মৌসুমে লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহ্ এর সাথে সম্মিলিতভাবে প্রিমিয়ার লীগের গোল্ডেন বুট জেতেন সন হিউং মিন। এই পুরষ্কারটি জেতা প্রথম এশিয়ান খেলোয়াড় হলেন তিনিই। এছাড়া, তিন গোল নিয়ে আরেকজনের সাথে সম্মিলিতভাবে বিশকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনিই। এবারের বিশ্বকাপটি হবে তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় বিশ্বকাপ, এবং এবার অবশ্যই তিনি উপরিউক্ত রেকর্ডটি শুধু তার একার নামে করে নেওয়ার চেষ্টাই করবেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বকাপ গ্রুপে পর্তুগাল, ঘানা ও উরুগুয়ের মত বাঘা বাঘা দল থাকলেও বিশ্বমানের উইংগার সন হিউং মিনকে আটকাতে তাদের সকলকেই বেগ পেতে হতে পারে। গোল করার পাশাপাশি গোল তৈরি করাতেও পারদর্শী হওয়ায় আপনার ফ্যান্টাসি দলের জন্য তিনি একজন আদর্শ খেলোয়াড় হতে পারেন।

তবে, তিনিই হলেন এই তালিকার একমাত্র খেলোয়াড় যার জন্য এবারের বিশ্বকাপ খেলাটি পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত নয়, কারণ খুব শীঘ্রই তিনি তার বাম চোখের নিচের একটি ফাটল দূর করার জন্য অস্ত্রোপচারের সম্মুখীন হবেন, যা তাকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিতে পারে।

ফরোয়ার্ড (Forwards)

হ্যারি কেইন – ইংল্যান্ড (Harry Kane – England)

ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেইন একজন প্রমাণিত গোলস্কোরার, এবং যারা এর আগে ফ্যান্টাসি প্রিমিয়ার লীগ খেলেছেন, তাদের জন্য আর নতুন করে তার কথা বলারই দরকার নেই, কারণ সেখানে তিনি নিয়মিত হারে পয়েন্ট এর বন্যা ঘটান।

পড়ুন:  ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপঃ কাতারের ৮টি স্টেডিয়াম সম্পর্কে আপনার যা কিছু জানার আছে

বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরে হ্যারি কেইন থ্রি লায়নস’দের ৪র্থ স্থান দখলের পেছনে প্রধান কারণ ছিলেন। সেটিই ছিল গত ২৮ বছরে বিশ্বকাপ ফুটবলে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ অর্জন। সেবার তিনি বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট বিজয়ীও ছিলেন। ১৯৬৬ সালের পর প্রথমবারের মত গত উয়েফা ইউরো ২০২০ এই কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালেও ইংল্যান্ড উঠেছে তারই অধিনায়কত্বে। এবারের ডিসেম্বরে তাই তিনি চাইবেন ইংল্যান্ডের হয়ে তার অর্জনকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে, এবং শেষ পর্যন্ত একটু শিরোপা ঘরে তুলতে।

ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার জন্য তার দরকার আর মাত্র তিনটি গোল, যা তাকে ওয়েইন রুনি’র গোল ট্যালিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। তাকে আপনার ম্যাচডে ১ এর ফ্যান্টাসি দলে রাখা একপ্রকার বাধ্যতামূলক হিসেবেই ঘোষণা দিলাম আমরা।

কারিম বেঞ্জেমা – ফ্রান্স (Karim Benzema – France)

গত ২৪ বছরের মধ্যে প্রথম ফ্রেঞ্চ খেলোয়াড় হিসেবে এবারের ব্যালন ডি’অর পুরষ্কারটি জিতেছেন রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড কারিম বেঞ্জেমা। কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এ গোল্ডেন বুট জেতার জন্য কেউ ফেভারিট হয়ে থাকলে তাহলে সেটি তিনিই।

ক্লাব ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদ বা আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফ্রান্স এর হয়ে প্রায় সবকিছু জিতলেও একটি শিরোপা তার জন্য এখনও অধরাই রয়ে গিয়েছে। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপটি ফ্রান্স জিতলেও ইঞ্জুরির কারণে পুরো আসরেই মাঠের বাইরে ছিলেন বেঞ্জেমা। তবে, এবার ফ্রান্স দলের আক্রমণের কান্ডারি হয়ে আবার ফিরে এসেছেন তিনি, এবং গোলের জন্য তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে পুরো ফ্রান্স জাতি।

গত বিশ্বকাপে খেলতে না পারার ক্ষোভ তিনি ঝেরেছেন গত উয়েফা ইউরোতে, যেখানে রাউন্ড অব ১৬ তে বাদ পড়ার আগেই তিনি ৪টি গোল করেছিলেন। এবারের বিশ্বকাপেও তিনি গোলের জন্য হন্যে হয়েই নামবেন বলেই ধারণা করা যাচ্ছে। ৩৪ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড দলের অন্যান্যদের জন্য গোল তৈরি করতেও বেশ পারদর্শী।

লিওনেল মেসি – আর্জেন্টিনা (Lionel Messi – Argentina)

কোন মানুষ ফুটবল খেলা জীবনে কোনদিন না দেখে থাকলেও, লিওনেল মেসিকে নিশ্চয় চেনেন। আর কোনদিন ফ্যান্টাসি ফুটবল খেলেছেন, এরকম কেউ তো লিওনেল মেসিকে কোনদিন ভুলতেই পারবেন না। বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা মেসি তাই আপনার ফ্যান্টাসি দলের জন্য একজন আদর্শ খেলোয়াড়।

মেসি হলেন সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে একজন। এর আগে বিশ্বকাপ ফুটবলে তিনি গোল্ডেন বল জয়সহ একবার রানার্স আপ হওয়ার খ্যাতিও অর্জন করেছেন। তবে, ফুটবল বিশ্বের সকল শিরোপা জিতলেও বিশ্বকাপ শিরোপাটি তার জন্য অধরাই থেকে গিয়েছে। এবারের কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এ তাই তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে তার পূর্বের সকল পারফর্মেন্স এর চেয়ে ভালো পারফর্মেন্স দেওয়ারউ চেষ্টা করবেন।

বিশ্বকাপ আসরে এবারই শেষ বারের মত দেখা যাবে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সর্বোচ্চ এই গোলদাতাকে, এবং সবকিছু ঠিক থাকলে টুর্নামেন্ট শেষে তিনি শিরোপাটি ঘরে তুলতেও পারেন।

গোল করেই হোক, বা গোল তৈরি করে, দলের জয়ে তিনি সবসময়ই কোন না কোন ভূমিকা নিশ্চয় পালন করেন। তাই, তাকে দলে রাখলে আপনি কোনভাবেই হতাশ হবেন না বলেই আমরা মনে করি।

আলেকজান্ডার মিত্রোভিচ – সার্বিয়া (Aleksandr Mitrovic – Serbia)

সার্বিয়ার দূর্দান্ত এই দীর্ঘকায় স্ট্রাইকার তার অসাধারণ ক্লাব ফর্মকে আন্তর্জাতিক ফুটবলেও বয়ে এনেছেন। ঈগলস খ্যাত সার্বিয়ান জাতীয় দলকে বিশ্বকাপে আনার পেছনে তিনিই ছিলেন মূল হোতা। কোয়ালিফায়ারসে তিনি করেছেন অসংখ্য গোল।

পর্তুগালের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচটিতে একদম শেষ মুহূর্তের গোলে দলকে ম্যাচ জিতিয়ে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেন তিনি। সার্বিয়া দলটি গত কয়েক বছরে অনেক উন্নতিসাধন করেছে, এবং সেটি তারা আগামী বিশ্বকাপে অবশ্যই প্রমাণ করে দেখাতে চাইবেন।

তবে আর যাই হোক, মিত্রোভিচই থাকবেন তাদের আক্রমণ এবং পুরো দলেরই কেন্দ্রবিন্দু হয়ে। তার আশেপাশে থাকবেন বেশ কিছু মানসম্পন্ন ফরোয়ার্ড ও মিডফিল্ডার, যারা তার জন্য গোলের সুযোগও তৈরি করবেন, আবার প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে স্পেসেরও জোগান দিবেন।

রিচার্লিসন – ব্রাজিল (Richarlison – Brazil)

২০২২ সালে ব্রাজিলের হয়ে দূর্দান্ত ফর্ম পার করছেন এই টটেনহ্যাম হটস্পার্স ফরোয়ার্ড, এবং গ্যাব্রিয়েল জেসুসের চেয়ে রিচার্লিসন এর উপরেই ব্রাজিল কোচ তিতে অধিক ভরসা স্থাপন করতে পেরেছেন বলেই মনে হচ্ছে।

ব্রাজিলের খেলা সর্বশেষ ৬টি মুয়াচে রিচার্লিসন মোট ৭টি গোল এবং ২টি এসিস্ট প্রদান করতে সক্ষম হয়েছেন। এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের প্রতিভায় ভরা আক্রমণভাগের কেন্দ্রবিন্দু তাই তিনিই হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফাইল, ফ্যান্টাসি ফুটবলেও এই ২৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের চাহিদা অনেক বেশি হবে, সেটিই স্বাভাবিক।

ব্রাজিল তাদের ৬ষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের জন্য ফেভারিটস গণ্য হওয়ায় টুর্নামেন্টের শেষ অবধি তারা খেলে যেতে পারে। তাই, রিচার্লিসনও অধিক ম্যাচ খেলে আপনাকে অধিকতর পয়েন্ট এনে দিতে পারেন।

Share.
Leave A Reply