এবারের ফিফা বিশ্বকাপ আসরটি ছিল ফুটবলের একটি শ্বাসরুদ্ধকর মিলনমেলা। পুরো টুর্নামেন্টটিই ছিল আকষ্মিক সব ফলাফল ও পারফর্মেন্সে ভরা, যেখানে একের পর এক নাটকীয়তা ও অঘটন ঘটেছে। মাঠে দেখা মিলেছে অসাধারণ ফুটবলের, মনমুগ্ধকর সব গোলের, বার বার রচিত হয়েছে ইতিহাস, এবং অবিস্মরণীয় একটি ফাইনাল ম্যাচও আমরা উপভোগ করেছি।

গত রবিবারের ফাইনাল ম্যাচটির পর বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ফুটবলাররা বরাবরের মত কোন গ্রীষ্মকালীন ছুটি উপভোগ করতে পারবেন না, এবং নিজেদের ব্যাটারি পুনরায় রিচার্জ করে নেওয়ার কোন সুযোগও পাবেন না। বরং, বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার মাত্র ৬-৭ দিনের মাথায়ই তাদেরকে নিজ নিজ লীগ মৌসুমে ফেরত যেতে হবে।

ইংল্যান্ডে উৎসবমুখর ক্রিস্টমাস সিজনে আগামী ২৬ই ডিসেম্বর বা বক্সিং ডে’র মুহূর্তে লীগ মৌসুম পুনরায় শুরু হতে চলেছে, তবে তার আগে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার মাত্র কয়েকদিনের মাথায়ই তাদেরকে নামতে হবে ইএফএল কাপের ফিক্সচার খেলতে।

নিশ্চিতরূপেই, প্রিমিয়ার লীগের খ্যাতনামা “শীর্ষ ছয়” দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই এবার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে, এবং সেসকল খেলোয়াড়দের মধ্যে অনেকেই গত রবিবারের বিশ্বকাপ ফাইনালের পর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাবও অর্জন করতে পেরেছেন।

বিশ্বকাপে তাদের অংশগ্রহণের কারণে তারা এখন খুব সহজেই ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনায় রয়েছেন। এছাড়া, শারিরীক এবং মানসিক ক্লান্তিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও তাদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি। মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এমন বিশাল একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে তার কিছু বিরূপ প্রভাব সকল ক্লাবের উপরেই পড়বে, সেটিই স্বাভাবিক। এখন আমরা অবলোকন করতে পারব যে সেই বিরূপ প্রভাবগুলি কি কি, এবং তার ফলে সেসকল দলের প্রকৃত লক্ষ্য বিচ্যূত হয় কি না।

এই নিবন্ধটিতে আমরা সেই ছয়টি দলের দিকে তাকাবো, এবং দেখব যে সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপ আসরটি তাদের স্কোয়াডের উপর কি ধরণের প্রভাব ফেলেছে, বা ফেলতে চলেছে।

আর্সেনাল (Arsenal)

প্রিমিয়ার লীগে যদি এমন কোন দল থেকে থাকে যারা চেয়েছিল যেন মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে নিশ্চিতরূপে সেই দলটি হল বর্তমান প্রিমিয়ার লীগ লিডার্স আর্সেনাল।

লীগ মৌসুমের ১৪টি ম্যাচ খেলার পরে প্রিমিয়ার লীগের আকষ্মিক লিডার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে গানারস’রা, এবং এখন তাদেরকে আটকানোর লক্ষ্যেই খেলবে অন্যান্য সকল দল, বিশেষ করে ম্যানচেস্টার সিটি।

১২টি জয়, ১টি ড্র, এবং ১টি পরাজয় নিয়ে এখন গানারস’রা সিটিজেন’দের থেকে ৫ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছে প্রিমিয়ার লীগ টেবিলে। লীগ মৌসুম বিরতিতে যাওয়ার পূর্বে মিকেল আর্তেতা’র দলটি টানা ৮টি ম্যাচে অপরাজিত থাকার একটি ধারায় অবস্থান করছিল। সে যাত্রায় তারা প্রায় টানা ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে কোন প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচেই পরাজিত হয়নি।

বিশ্বকাপে তাদের নিজ নিজ জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য মোট ১০ জন আর্সেনাল খেলোয়াড় ডাক পেয়েছিলেন। সেই ১০ জনের মধ্য থেকে শুধুমাত্র ফ্রান্সের উইলিয়াম স্যালিবাই শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন, যদিও ফ্রান্সের হয়ে কোন প্রকার ফুটবলই তিনি খেলার সুযোগ পাননি পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে। গত উইকেন্ডে তিনি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নের খেতাবটিও অর্জন করতে পারেননি।

ফ্রান্সের বিপক্ষে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যায় থেকে বাদ পড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ইংল্যান্ডের সেরা পারফর্মার ছিলেন রাইট উইংগার বুকায়ো সাকা, এবং সকল গানারস সমর্থকরাই চাইবেন যেন সেই অসাধারণ ক্রীড়ানৈপূণ্য থেকে তিনি আরো আত্মবিশ্বাস পাবেন, এবং বাদ বাকি লীগ মৌসুমে আর্সেনালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবেন।

যদিও গানারস শিবিরে তাদের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই সুস্থভাবে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন, তবুও তারা একটিমাত্র বড়সড় ইঞ্জুরি সমস্যার সম্মুখীন হতে চলেছে। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারার দিনে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুস নিজের হাঁটুতে মারাত্মক চোট পান, এবং তারপর থেকে তিনি আর বিশ্বকাপের কোন ম্যাচেই অংশ নিতে পারেননি।

২৫ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার তারপর তার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, এবং এখন তাকে তিন মাসের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে বলে জানা গিয়েছে। এটি গানারস’দের জন্য একটি বিশাল ঝটকা, কেননা এবারের মৌসুমে তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়টিই ছিলেন তিনি।

এই ইঞ্জুরিটির কারণে আর্সেনালকে ফেরত যেতে হচ্ছে ট্রান্সফার মার্কেটে, এবং তাদের তালিকার সম্ভাব্য দুইজন স্ট্রাইকার হলেন আটলেটিকো মাদ্রিদের দুই স্ট্রাইকার জাঁও ফেলিক্স, এবং ম্যাটিয়াস কুনিয়া। এমনটি বার বার শোনা গিয়েছে যে, এই দুই ফরোয়ার্ডই তাদের বর্তমান ক্লাবে খুব একটা খুশি নেই, এবং তাই আর্সেনাল তাদের মধ্য থেকে যেকোন একজনকে বেশ সহজেই দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করতে পারে।

পড়ুন:  হ্যারি কেন এর প্রতিস্থানে টোটেনহ্যাম আর্সেনাল থেকে যে নিষিদ্ধ তার উদ্ধারের জন্য চিন্তা করছে

তবে, তারা যদি কোন স্ট্রাইকারকে দলে নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদেরকে ভরসা রাখতে হবে ২৩ বছর বয়সী এডি এনকেটিয়া’র উপর, যদিও তিনি এবারের মৌসুমে গানারস’দের হয়ে এখন পর্যন্ত একটি গোলও করতে পারেননি। জেসুসের ফেলে যাওয়া শূন্যস্থানটি পূরণ করতে হলে তাকে অবশ্যই নিজের খেলায় অনেকটা উন্নতিসাধন করতে হবে। 

বক্সিং ডে’তে যখন প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমের পুনঃসূচনা হবে, আর্সেনাল সেদিন চেষ্টা করবে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডকে হারিয়ে শিরোপার লড়াইয়ে টিকে থাকতে।

ম্যানচেস্টার সিটি (Manchester City)

যদিও তারা লীগ লিডার্স আর্সেনালের থেকে ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে, তবুও নিজেদের টানা তৃতীয় প্রিমিয়ার লীগ শিরোপাটি জেতার জন্য ফেভারিট দলটি হল ম্যানচেস্টার সিটিই।

আর্সেনালের থেকে সম্পূর্ণরূপে বিপরীতভাবে, বিশ্বকাপ বিরতিটি আসার কারণে বেশ খুশিই হয়েছিল ম্যান সিটি, কেননা তার আগে তাদের খেলা সর্বশেষ ম্যাচটিতে তারা ঘরের মাঠে ব্রেন্টফোর্ডের নিকট পরাজিত হয়েছিল ২-১ গোলের ব্যবধানে। তার আগে অবশ্য ম্যান সিটি প্রিমিয়ার লীগে টানা তিনটি ম্যাচে জয়লাভ করেছিল, যদিও সেসকল ম্যাচে তাদের পারফর্মেন্স মোটেও আশানুরূপ ছিল না। এমনটি ধারণাই করা যাচ্ছিল যে, তারা যেকোন মুহূর্তে পয়েন্ট হারাতে চলেছে, এবং ব্রেন্টফোর্ডের বিরুদ্ধে সেটি হয়েছিল। 

এবারের ফিফা বিশ্বকাপ আসরে ম্যানচেস্টার সিটি’র প্রতিনিধিত্ব করেছেন মোট ১৬ জন ফুটবলার। নিশ্চিতরূপেই, প্রিমিয়ার লীগের অন্য কোন দল থেকে এর চেয়ে বেশি খেলোয়াড় বিশ্বকাপ খেলতে যাননি। সেসকল খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে বেশ যুবা একজন খেলোয়াড়, আর্জেন্টিনার হুলিয়ান আলভারেজ, এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাবটি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। পুরো আসর জুড়েই সকলের মন কাড়তে সক্ষম হয়েছেন এই সিটিজেন তারকা।

ম্যানচেস্টার সিটি কর্তৃপক্ষ নিজেদেরকে অনেক ভাগ্যবান মানতে পারেন, কেননা ক্লাবটি থেকে বিশ্বকাপ খেলতে যতজন খেলোয়াড় কাতারে গিয়েছিলেন, তার মধ্য থেকে কেউই কোন প্রকার ইঞ্জুরির সম্মুখীন হোননি। বরং, বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে ইংলিশ রাইট ব্যাক কাইল ওয়াকার উল্টো ম্যাচ ফিটনেস অর্জন করে ফিরেছেন। এর আগে, কাতার যাওয়ার পূর্বে, তিনি হাঁটুর সার্জারির কারণে সাইডলাইনে ছিলেন।

সম্ভবত, ম্যানচেস্টার সিটি’র জন্য সবচেয়ে সুখকর ব্যাপারটি হল এই যে, পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই বিরতি বা বিশ্রামে ছিলেন তাদের অনবদ্য স্ট্রাইকার আর্লিং হাল্যান্ড।

নরওয়েজিয়ান এই তারকা ফরোয়ার্ড তার জাতীয় দলকে এবারের বিশ্বকাপ অংশগ্রহণ করাতে পারেননি, তাই পুরো বিশ্বকাপ আসর জুড়েই তিনি ছুটি কাটিয়েছেন, এবং তার ক্লাবে অন্যান্যদের সাথে অনুশীলন করেছেন। এটি পুরো প্রিমিয়ার লীগের জন্যই একটি আতঙ্কের বিষয়, কেননা বেশির ভাগ খেলোয়াড়েরাই বর্তমানে ক্লান্ত হয়ে রয়েছেন। এছাড়া, আর্সেনালও ব্যাপারটিতে কিছুটা হলেও শঙ্কিত হবে, কারণ তাদের প্রধান স্ট্রাইকার নিজেই ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।

এবারের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমে ইতিমধ্যে ১৩টি ম্যাচ খেলে ১৮টি গোল করে ফেলেছেন হাল্যান্ড। এই যাত্রায় তিনি অসংখ্য রেকর্ডও ভেঙে ফেলেছেন। সেই গোল ট্যালিতে আরো গোল যোগ করার জন্য নিশ্চয় মুখিয়ে রয়েছেন তিনি। এছাড়া, নিজের দলকে টানা অনেকগুলি ম্যাচে জিতিয়ে প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের শীর্ষস্থানটি পুনরুদ্ধার করতে সহযোগিতা করাও হল তার লক্ষ্য।

বিশ্বকাপের পর নিজেদের প্রথম ম্যাচে আগামী ২২ই ডিসেম্বর রাতে ইএফএল লীগের ম্যাচে লিভারপুলের মুখোমুখি হতে চলেছে সিটিজেন’রা। এরপর, আগামী ২৮ই ডিসেম্বর লিডস ইউনাইটেডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচটির মধ্য দিয়ে তাদের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমের পুনঃসূচনা ঘটবে। 

টটেনহ্যাম হটস্পার্স (Tottenham Hotspurs)

ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী শীর্ষ ছয়টি দলের মধ্য থেকে বর্তমানে প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ চারে তৃতীয় দল হিসেবে রয়েছে এন্তোনিও কন্তে’র দল স্পার্স। তৃতীয় স্থানে থাকা নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের থেকে তারা কেবলমাত্র একটি পয়েন্ট পেছনে রয়েছে, এবং লীগ টেবিলের শীর্ষে থাকা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্সেনালের সাথে তাদের পয়েন্টের ব্যবধান বর্তমানে ৭।

আবারো চ্যাম্পিয়নস লীগ পজিশনগুলিতে অবস্থান ধরে রাখতে পারলে সেটি স্পার্সের জন্য একটি বিশাল অর্জন হবে, কেননা সেটি করতে পারলে তারা ইউরোপের শ্রেষ্ঠ ক্লাব কম্পিটিশনটিতে টানা দ্বিতীয়বারের মত অংশগ্রহণ করতে পারবে। তার ফলে তারা আরো বেশ কিছু বড় বড় খেলোয়াড়দের দলে ভেড়াতে পারবে, এবং পরবর্তী মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখতে পারবে।

পড়ুন:  কেন এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি তুলবে আর্সেনাল

টটেনহ্যাম হটস্পার্স শিবির থেকে মোট ১১ জন খেলোয়াড় এবারের বিশ্বকাপ আসরে অংশ নিতে কাতারে গমণ করেছিলেন। তার মধ্য থেকে বিশ্বকাপের সেমি ফাইনাল খেলেছেন মোট ৩ জন। আর্জেন্টিনা এবং ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার সেমি ফাইনাল ম্যাচটিতে স্পার্সের ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো’র মুখোমুখি হয়েছিলেন ইভান পেরিসিচ। সেই ম্যাচটিতে জিততে না পারলেও তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটিতে মরক্কোকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ মেডেল অর্জন করে নেন পেরিসিচ। বিশ্বকাপের ফাইনালে আবার সেই রোমেরো’র সম্মুখীন হোন তার আরেক স্পার্স সতীর্থ, এবং ফ্রেঞ্চ অধিনায়ক হুগো লরিস। এবারও জয়ী হয়েই মাঠ ছাড়েন ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো এবং তার দল আর্জেন্টিনা। স্পার্স শিবিরেও এখন তাই এক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বসবাস।

কাতারে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া তাদের ১১ জন খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে ১০ জনই স্পার্স শিবিরে ফিরছেন সুস্থ অবস্থায়। শুধুমাত্র ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রিচার্লিসন একটি হ্যামস্ট্রিং ইঞ্জুরি নিয়ে লন্ডনে ফিরেছেন। তার দলে ফিরতে আরো কয়েক সপ্তাহ সময় প্রয়োজন বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।

টটেনহ্যাম হটস্পার্স আরো যে একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, সেটি হল তাদের স্ট্রাইকার এবং ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইনকে নিয়ে। হুগো লরিস এর ফ্রান্সের বিপক্ষে এই ট্যালিসমানিক ইংলিশ ফরোয়ার্ড একটি পেনাল্টি মিস করেন, যার ফলে আবারো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যায় থেকে বিদায় নিতে হয় ইংল্যান্ডকে।

ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই অসাধারণ ক্রীড়ানৈপূণ্য প্রদর্শন করেছেন হ্যারি কেইন, এবং থ্রি লায়নস’দের হয়ে ওয়েইন রুনি’র গোলের রেকর্ডটিও ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। তবে, সেই পেনাল্টি মিস’টির কথা ভুলতে তার আরো খানিকটা সময় লাগতে পারে। সেই ম্যাচটি শেষে ইংলিশ অধিনায়ক কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।

এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকেই দেখতে পাচ্ছেন যে, সেই হতাশার রেশ তার ক্লাব পারফর্মেন্স এর উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, কিন্তু স্পার্স অবশ্যই চাইবে তেমনটি যেন না হয়। কি হবে কেইনের জবাব, তা সময়ই বলে দিবে।

বক্সিং ডে’তে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমের পুনঃসূচনা করবে স্পার্স।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (Manchester United)

মাঠে এবং মাঠের বাইরে প্রচুর উথান পতনের মধ্য দিয়ে এবারের মৌসুমটি পার করছেন এরিক তেন হাগ এবং তার দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তবে, অনেকেই মনে করছেন যে, অন্তত মাঠের খেলায় রেড ডেভিলরা সঠিক দিকেই এগুচ্ছে।

বর্তমানে প্রিমিয়ার লীগ টেবিলে পঞ্চম পজিশনে রয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। চতুর্থ অবস্থানে থাকা টটেনহ্যাম হটস্পার্স থেকে তারা মাত্র ৩ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে, এবং ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা লিভারপুলের থেকে তারা ৪ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছে। চ্যাম্পিয়নস লীগ স্পটগুলিতে ফিনিশ করার জন্য তাদেরকে কেউই ফেভারিটস মানছেন না, তবুও তারা বেশ ভালোভাবেই লড়াই করে যাবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে। 

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে মোট ১৪ জন খেলোয়াড় কাতার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করলেও তার মধ্য থেকে মাত্র ২ জন খেলোয়াড় বিশ্বকাপের ফাইনাল অবধি পৌঁছাতে পেরেছিলেন। আর্জেন্টিনার লিসান্দ্রো মার্তিনেজ এবং ফ্রান্সের রাফায়েল ভারানের মধ্যকার সেই লড়াইয়ে অবশ্য মার্তিনেজই জয়লাভ করেছেন, এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।

 

এবারের বিশ্বকাপ আসরটি ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড খেলোয়াড়দের জন্য একটি ফলপ্রসূ টুর্নামেন্ট। ব্রুনো ফার্নান্দেজ, ডিয়োগো ড্যালো, মার্কাস র‍্যাশফোর্ড, লুক শ, হ্যারি ম্যাগুয়ায়ার, রাফায়েল ভারানসহ আরো অনেক রেড ডেভিল খেলোয়াড়ই কাতারে নিজ নিজ দলের হয়ে অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়েছেন। তেন হাগ আশা করবেন যেন সেই ফর্মকে তারা ক্লাব ফুটবলেও নিয়ে আসতে পারেন।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো’র বিতর্কিত প্রস্থানের পর এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আর তেমন কোন পরিচিত স্ট্রাইকারই নেই (এন্থোনি মার্শিয়াল ব্যতীত)। তাই, আগামী জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে তারা একজন স্ট্রাইকারকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করবেন বলেই ধারণা করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা পিএসভি এবং নেদারল্যান্ডস স্ট্রাইকার কোডি গাকপোকে দলে নেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে, যদিও তাকে কেনার একটি সুবর্ণ সুযোগ তারা হাতছাড়া করেছিল গত গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে। এছাড়া, বার্সেলোনা তারকা মেম্ফিস ডেপায়কেও কেনার চেষ্টা চালাতে পারে রেড ডেভিল’রা। 

সম্প্রতি খবর বাইরে এসেছে যে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আমেরিকান মালিক গ্লেজার্স পরিবার ক্লাবটিকে নিলামে তুলতে চলেছে, এবং এই খবরের পর থেকেই অনেকে সন্দীহান এই ব্যাপারে যে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আদৌ জানুয়ারিতে কোন খেলোয়াড়কে কিনতে পারবে কি না। তবে, ম্যানেজার তেন হাগ ইউনাইটেড সমর্থকদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, তিনি এবং ক্লাব কর্তৃপক্ষ নতুন সাইনিংসমূহ করানোর জন্য প্রস্তুত।

পড়ুন:  পেলে'র প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিঃ ফুটবলের চেহারা বদলে দেওয়া এক ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির কাহিণী

২১ই ডিসেম্বর কারাবাও কাপের ম্যাচে বার্নলি’র মুখোমুখি হবে রেড ডেভিলরা। এরপর আগামী ২৭ তারিখ প্রিমিয়ার লীগের ফিরতি ম্যাচে নটিংহ্যাম ফরেস্ট এর মুখোমুখি হবে তারা।

লিভারপুল (Liverpool)

বিশ্বকাপের পূর্বে এমনটি মনে হচ্ছিল যে, লিভারপুলের হতাশাজনক লীগ মৌসুমটি শেষমেষ সঠিক দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। বিশ্বকাপের বিরতিতে যাওয়ার পূর্বে অল রেডস’রা প্রিমিয়ার লীগে টানা দুই ম্যাচে জয়লাভ করেছিল। বর্তমানে তারা লীগ টেবিলের ৬ষ্ঠ পজিশনে অবস্থান করছে, এবং চতুর্থ স্থানে থাকা টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর থেকে ৭ পয়েন্টের ব্যবধানে অবস্থান করছে। তবে, এবারও শীর্ষ চারে প্রবেশের ব্যাপারে তারা যথেষ্ট আত্নবিশ্বাসী হবে, কেননা এর আগেও তারা এরকম অবস্থান থেকে তেমনটি অর্জন করতে পেরেছিল।

তাদের দল থেকে মোট ৭ জন খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন কাতারে নিজ নিজ দেশের হয়ে লিভারপুলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। তাদের মধ্য থেকে কেবলমাত্র একজনই পেরেছিলেন বিশ্বকাপের ফাইনাল পর্যন্ত টিকে থাকতে, যদিও সেমি ফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষে ফ্রান্সের হয়ে অসাধারণ পারফর্ম করার পরও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে দলে জায়গা করে নিতে পারেননি লিভারপুলের ইব্রাহিম কোনাতে। 

লিভারপুলের দুই ফরোয়ার্ড লুইস ডিয়াজ (যিনি ইঞ্জুরির কারণে আরো তিন মাস মাঠের বাইরে থাকবেন), এবং ডিয়োগো জতা (যার মাঠে ফিরতে লাগবে আরো প্রায় দুই মাস) ইতিমধ্যে আয়াইডলাইনে অবস্থান করছেন। লিভারপুল নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করতে পারে, কেননা সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপ জুড়ে তাদের সেই বিশাল ইঞ্জুরি তালিকায় আর কোন খেলোয়াড়ের নাম যুক্ত হয়নি।

এছাড়া, এবারের বিশ্বকাপ আসরে লিভারপুল পেরেছে তাদের একজন প্রধান ট্রান্সফার টার্গেট (বেনফিকা ও আর্জেন্টিনা মিডফিল্ডার) এনজো ফার্নান্দেজ এর উপর নজর রাখতে, যিনি কি না পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই খেলেছেন অনবদ্য ফুটবল। এছাড়া, বিশ্বকাপে তাদের দীর্ঘকালীন ট্রান্সফার টার্গেট ইংলিশ মিডফিল্ডার জুড বেলিংহ্যামের পারফর্মেন্সও তাদের মন কেড়েছে বলেই ধারণা করা যায়।

আগামী ২২ই ডিসেম্বর কারাবাও কাপের হাই ভোল্টেজ ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটি’র মুখোমুখি হবে লিভারপুল। তারপর, বক্সিং ডে’তে ভিলা পার্কে ভ্রমণ করবে অল রেডস’রা, উনাই এমারি’র এস্টন ভিলা’র মুখোমুখি হওয়ার লক্ষ্যে।

চেলসি (Chelsea)

যেহেতু চেলসি বর্তমানে প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের ৮ম পজিশনে অবস্থান করছে, সেহেতু বলতেই হয় যে, বিশ্বকাপের এই বিরতিটি গ্রাহাম পটারের দলটির জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে এনেছে। অল ব্লুস’রা বর্তমানে চতুর্থ স্থানে থাকা টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর থেকে ৮ পয়েন্ট পিছয়ে রয়েছে, এবং প্রিমিয়ার লীগে তাদের খেলা সর্বশেষ ৩টি ম্যাচেই তারা পরাজিত হয়েছে।

নতুন ম্যানেজারের অধীনে বেশ ভালো সূচনা করলেও তা ধরে রাখতে পারেনি চেলসি, এবং গ্রাহাম পটারকে চেলসি কর্তৃপক্ষ আরো সময় দিয়েছে তার দলের সমস্যার জায়গাগুলিতে সমাধান আনয়নের জন্য। 

প্রিমিয়ার লীগের ঐতিহ্যবাহী শীর্ষ ছয়টি দলের মধ্যে শুধু চেলসিই এমন একটু দল, যাদের দল থেকে কোন খেলোয়াড়ই এবারের বিশ্বকাপ ফাইনালে অংশ নিতে পারেননি, যদিও অল ব্লুস শিবির থেকে মোট ১২ জন খেলোয়াড় এবারের বিশ্বকাপ আসরে অংশ নিয়েছিলেন। 

ক্রোয়েশিয়ার ম্যাটেও কোভাচিচ এবং মরক্কো’র হাকিম জিয়েশ, এবং তাদের নিজ নিজ দল অবশ্য যথাক্রমে এবারের বিশ্বকাপে ৩য় ও ৪র্থ স্থান অর্জন করতে পেরেছেন। গত শনিবারের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটিতে জয়লাভ করে কোভাচিচ এর ক্রোয়েশিয়া।

ইঞ্জুরির কারণে এবারের বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেননি চেলসি’র ইংলিশ রাইট উইং ব্যাক রিস জেমস, তবে সম্প্রতি তিনি অনুশীলনে ফিরেছেন। তবে, নিজের এন্টেরিয়র ক্রুশিয়েট লিগামেন্টে আঘাত পেয়ে বাকি মৌসুম থেকে ছিটকে পড়েছেন চেলসি’র ব্যাক আপ স্ট্রাইকার আর্মান্ডো ব্রোহা।

চেলসি অবশ্য তার রিপ্লেসমেন্ট খুঁজেও বেশি সময় ব্যয় করেনি। বেশ কিছু রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে যে, আগামী জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে নরওয়ের ক্লাব মোলদে থেকে আইভোরিয়ান স্ট্রাইকার ডেভিড ডাট্রো ফোফানাকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে কথাবার্তায় অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে অল ব্লুস’রা।

আগামী ২৭ই ডিসেম্বর, রোজ মঙ্গলবার, এএফসি বোর্নমাউথের বিপক্ষে নিজেদের প্রিমিয়ার লীগ মৌসুমের পুনঃসূচনা করতে চলেছে গ্রাহাম পটারের শিষ্যরা।

Share.
Leave A Reply