এতিহাদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এমিরেটস এফএ কাপের ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটি’র নিকট বড় ব্যবধানে হারার মধ্য দিয়ে অল ব্লুস’রা সিটিজেনদের বিপক্ষে সকল প্রতিযোগিতায় পর পর দু’টি ম্যাচ হেরেছে, এবং তাদের খেলা সর্বশেষ ৯টি ম্যাচের মধ্যে মোট ৭টিতেই হেরেছে। ব্লুস শিবিরে নিঃসন্দেহে দুর্যোগের ঘনঘটা।

    অতি শোচনীয় এই ধারাটির কারণে বিশ্বব্যাপী চেলসি সমর্থক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে প্রচুর কানাঘুষো শুরু হয়েছে। সেসকল সমর্থকদের মধ্যে একদল এমন রয়েছেন যারা কি না চেলসি’র এমন পরাজয় কখনোই দেখেননি, তাই তাদের প্রানপ্রিয় দলটির এমন পরিণতি মেনেও নিতে পারছেন না। সমর্থকরা তাই পুরো দলের উপরেই ক্ষুব্ধ, কিন্তু খেলোয়াড়েরা মাঠে নিজেদেরকে কোনভাবেই প্রমাণ করতে পারছেন না। এবং, এ সবকিছুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে কেবল সয়েই যাচ্ছেন গ্রাহাম পটার।

    একজন ফুটবল ম্যানেজার হিসেবে পটার একদম তলানি থেকে শুরু করেছিলেন, এবং খুব দ্রুতই সকলের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়নে তার অসাধারণ কৃতিত্বের পর গত সেপ্টেম্বরে তাকে বিশ্ব ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে দামী এবং চাহিদাসম্পন্ন একটি পদ অফার করা হয় — চেলসি ফুটবল ক্লাবের ম্যানেজার। তিনি অফারটি সাদরে গ্রহণ করেন, এবং চেলসি শিবিরে যোগদান করেন।

    চেলসি সমর্থকরা অবশ্য তার নিয়োগকে কেন্দ্র করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রদান করেন। কেউ কেউ তো তখনো এটিই বুঝতে পেরেছিলেন না যে থমাস টুখেলকে হঠাৎ করে চাকরিচ্যুতই বা কেন করা হয়েছিল, কারণ তার ঠিক ১২ মাস আগেই তিনি স্ট্যাম্ফোর্ড ব্রিজকে চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা দিয়ে সজ্জিত করেছিলেন। তবে, এমনও অনেকেই ছিলেন যারা পটারের নিয়োগটি নিয়ে খুশি ছিলেন, কারণ তারা মনে করতেন যে, নিজের মত করে দলটিকে সাজিয়ে নেওয়ার সময় পেলে গ্রাহাম পটার অল ব্লুস’দের হয়েও সাফল্য অর্জন করতে পারবেন।

    শুরুতে সবকিছু ভালোই যাচ্ছিল, কারণ গ্রাহাম পটারের অধীনে চেলসি তাদের খেলা প্রথম ৯টি ম্যাচের মধ্যে ৬টিতেই জয়লাভ করেছিল। সেই অসাধারণ ধারাটির মাঝে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগে দুইটি অনবদ্য ও স্মরণীয় জয়ও ছিল — ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন এসি মিলানের বিপক্ষে (হোম এবং অ্যাওয়ে)।

    একটি শোচনীয় ধারার সূচনা (Start of a awful run)

    একটি শুভ সূচনার পর মনে হচ্ছিল যে পটারের জন্য সবকিছু ভালোই যাচ্ছে। আর তখনই চেলসিকে সফর করতে হল পটারের সাবেক দল ব্রাইটনের মাঠ অ্যামেক্স স্টেডিয়াম। পতনের শুরুটা হয়েছিল সেখানেই।

    চেলসিকে মাঠের সকল পজিশনে আউটক্লাস করে এবং পুরো ম্যাচ ডমিনেট করে ৪-১ গোলের ব্যবধানে ম্যাচটি জিতে নেয় ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়ন। দুই পায়ের মাঝে লেজ গুটিয়ে সেদিন ঘরে ফিরতে হয়েছিল চেলসি ও পটারকে। তারপর থেকে চেলসি’র ফর্মের গ্রাফ নিম্নমুখে পতিত হয়।

    বিশ্বকাপের পূর্বেই চেলসি আরো তিনটি ম্যাচে পরাজিত হয়, এবং সকলে ভেবেছিল যে, বিশ্বকাপের বিরতিটি তাদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে আনবে, এবং পুনরায় খেলা শুরু হওয়ার পর তারা আবার নতুন উদ্যমে জ্বলে উঠবে।

    বিরতির পর প্রথম ম্যাচে তারা একটি স্ট্রাগলিং বোর্নমাউথের বিপক্ষে মাঠে নামে, এবং বেশ সহজেই ২-০ গোলের ব্যবধানে একটি জয় হাসিল করে নেয়। তবে, সেই ম্যাচেও বোর্নমাউথ তাদের বিপক্ষে ৪টি শট অন টার্গেটে মারতে সমর্থ হয়। তাদের সর্বশেষ ম্যাচে ক্রিস্টাল প্যালেসকে ১-০ গোলে হারানোর আগে পর পর তিনটি ম্যাচে তারা পরাজিত হয়েছিল, এবং এফএ কাপে সিটি’র বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারার পর থেকে গ্রাহাম পটারকে চাকরিচ্যুত করার জন্য চেলসি সমর্থকদের প্ররোচনা শুরু হয়।

    পড়ুন:  কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ঃ যা যা আপনার জানা প্রয়োজন (Qatar World Cup 2022: All you need to know)

    গ্রাহাম পটার শুরু থেকেই একটি কঠিন পরীক্ষার মধ্যে রয়েছেন, যেখানে তাকে এমন একজন ম্যানেজারের পদচিহ্ন অনুসরণ করতে হচ্ছে, যিনি কি না ক্লাবটিকে একটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা এনে দিয়েছেন। চেলসি’র সমর্থক গোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ থমাস টুখেলকে অন্ধভাবে সমর্থন দিয়েছিল, এবং তার চাকরিচ্যুত হওয়াটাকে তারা ভালো নজরে কখনোই দেখেননি।

    তবে, বলাই বাহুল্য যে, থমাস টুখেলের চাকরিচ্যুত হওয়ার পেছনে গ্রাহাম পটারের কোনই হাত ছিল না, এবং সত্যি বলতে, টুখেলের অধীনে থাকাকালীন শেষ কিছু দিনেই চেলসি’র অধঃপতন শুরু হয়ে গিয়েছিল।

    আপনি যদি চেলসি ম্যানেজার হিসেবে থমাস টুখেলের শেষ ১৮টি ম্যাচ এবং গ্রাহাম পটারের প্রথম ১৮টি ম্যাচের ফলাফলকে পাশাপাশি রাখেন, তাহলে দেখা যায় যে, সেই দুইটি পরিসংখ্যানের মধ্যে অনেক সাদৃশ্যতা রয়েছে। উভয় ম্যানেজারই শতকরা ৪৪% ম্যাচে জয়ের দেখা পেয়েছেন। টুখেলের অধীনে চেলসি অধিক গোল (২৪টি) করলেও, গ্রাহাম পটারের অধীনে তারা তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক গোল (১৯টি) হজম করেছে। উভয় ম্যানেজারই এই সময়কালে একই সংখ্যক ম্যাচে জয়লাভ করেছেন (৮টি)।

    অর্থাৎ, দুই ম্যানেজারের রেকর্ডকে এক করলে দেখা যায় যে, এই সময়কালে চেলসি মোট ৩৬টি ম্যাচ খেলে কেবলমাত্র ১৬টিতে জয়লাভ করতে সমর্থ হয়েছে। এর মানে এটিও হতে পারে যে, হয়তো চেলসি’র এত শত সমস্যার পেছনে থমাস টুখেল বা গ্রাহাম পটারের মধ্যে কেউই দায়ী নন।

    এবারের মৌসুমের বিভিন্ন পর্যায়ে চেলসি’র গুরুত্বপূর্ণ সব খেলোয়াড়দের ইঞ্জুরিতে পড়ার কারণে তাদের দলের ভারসাম্য ও খেলার গতিতে অনেক অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়েছে। মূল দলের খেলোয়াড়দের ব্যাক আপ হিসেবে যেসকল খেলোয়াড়েরা খেলতে নেমেছেন, তাদের পারফর্মেন্সও ছিল ভুলে যাওয়ার মত। পটার তার পছন্দসই মূল একাদশটি মাঠে নামাতে না পারায় দলের স্বাভাবিক তালমিল কোনক্রমেই খুঁজে পাচ্ছেন না।

    গ্রাহাম পটারের নিকট কি কি অর্জন রয়েছে? (What are Graham Potter’s achievements?)

    খুব বেশি কিছু নয়। তার দল বর্তমানে প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের ১০ম স্থানে অবস্থান করছে, এবং ৪র্থ ও শেষ চ্যাম্পিয়নস লীগ স্পটে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের থেকে ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে।

    এমিরেটস এফএ কাপ এবং কারাবাও কাপ থেকে তাদেরকে বিদায় করেছে একই দল (ম্যান সিটি)। তাই, এমনটি বলাই যায় যে, এবারের মৌসুমে তাদের আর একটি মাত্র শিরোপা জয়ের স্বপ্নই আর বেঁচে রয়েছে, এবং সেটি হল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা।

    এছাড়া, আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লীগে খেলতে চাইলেও তাদেরকে এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লীগের চ্যাম্পিয়নই হতে হবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে। তবে, তাদের খেলা দেখে মোটেও মনে হচ্ছে না যে তারা তাদের সেই স্বপ্নটি পূরণের ধারে কাছেও যেতে পারবে।

    চেলসি ম্যানেজার হিসেবে এখন পর্যন্ত পটারের সবচেয়ে বড় অর্জন সম্ভবত চ্যাম্পিয়নস লীগে এসি মিলানের বিপক্ষে হোম ও অ্যাওয়ে লেগে’র জয় দুইটি। স্ট্যাম্ফোর্ড ব্রিজে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে তাদের ৩-০ গোলের জয়টিই বলে দেয় যে, সকল খেলোয়াড় ফিট থাকলে এবং কিছুটা ফর্ম ফিরে পেলে গ্রাহাম পটারের দলটি একটি অনবদ্য দলে পরিণত হবে।

    পড়ুন:  প্রিমিয়ার লিগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা

    গ্রাহাম পটারের অধীনে চেলসি কি ধরণের ফুটবল খেলে থাকে? (How do Chelsea play under Graham Potter?)

    একজন ম্যানেজার হিসেবে গ্রাহাম পটারের সবচেয়ে বড় কোয়ালিটি হল এই যে, তিনি যে দলের সম্মুখীনই হোন না কেন, এবং সেই দল যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের জন্য একটি আলাদা গেমপ্ল্যান তিনি তৈরি করে ফেলতে পারেন।

    চেলসিতেও তিনি তার আগের বেশির ভাগ কার্যকরী নির্দেশনাই অনুসরণ করেন। অল ব্লুস’দের হয়ে তিনি ইতিমধ্যে ব্যাক ফোর এবং ব্যাক থ্রি/ফাইভ উভয় ফর্মেশনই ব্যবহার করে দেখেছেন। তার দলগুলির মূল উদ্দেশ্যই হয় বল পজিশনের নিয়ন্ত্রণ রাখা, উইং ব্যাকদের মধ্য দিয়ে মাঠের প্রস্থ বা চওড়াই বজায় রাখা, এবং যত সম্ভব গোল করতে থাকা।

    তিনি চেলসি’র হয়ে কোন প্রকৃত প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি নিতে পারেননি, এবং দলটি একই সাথে অনেকগুলি ইঞ্জুরিরও শিকার হয় (বিশেষ করে রিস জেমস)। ফলে, পটারকে প্রতিনিয়তই ফর্মেশন পরিবর্তন করতে থাকতে হয়, যদিও চেলসিতে তাকে সেটি করতে হয়েছে তার নিকট উপলব্ধ খেলোয়াড়দের উপর ভিত্তি করে, পূর্বের মত প্রতিপক্ষ বিচার করে নয়।

    রিস জেমস ইঞ্জুরিতে পড়ার পর গ্রাহাম পটার একটি বড়সড় সমস্যায় পড়ে, কেননা জেমসই দলটির সেরা খেলোয়াড় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন এবারের মৌসুমের শুরু থেকেই। তখন পটার চেলসি’র ডিফেন্সে তিনজন করে সেন্টার ব্যাক খেলাতে শুরু করেন, এবং রাহিম স্টার্লিং ও ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচ এর মত আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়দেরকে উইং ব্যাক পজিশনে খেলাতে শুরু করেন। সেই ট্যাকটিকটি অবশ্য যতটা না তার কাজে দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি ব্যাকফায়ার করেছে। দলটির ডিফেন্সিভ ভঙ্গুরতা খুব নিয়মিতই নজরে পড়েছে সকলের। ব্রাইটনের বিপক্ষে তাদের সেই বাজে পরাজয়টি এটির একটি বড়সড় উদাহরণ।

    জেমস যখন খেলেন, তখন পটার ডিফেন্সে চার জন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার খেলাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন। তখন দলের পুরো ফর্মেশনটি তিনি সাধারণত এই তিন রূপে সাজিয়ে থাকেন (প্রতিপক্ষভেদে) — ৪-৩-৩, ৪-২-৩-১, এবং ৪-৪-২। তাদের এই তারকা উইং ব্যাক/ ফুল ব্যাকের উপস্থিতি চেলসি’র জন্য সুখকরই হয়েছে বটে, কারণ এই মৌসুমে যে ১২টি ম্যাচে তিনি খেলেছেন, তার মধ্য থেকে মাত্র ২টিতে হেরেছে চেলসি।

    সাম্প্রতিক কিছু ম্যাচে তাদের খেলা দেখে এমনটিই মনে হয়েছে যে, তারা জেমস এর উপর যেন একটু বেশিই ভর করে ফেলেছে, এবং তার অনুপস্থিতি বা ঘাটতি কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না। তবে, রিস জেমস এই দীর্ঘকালীন ইঞ্জুরি থেকে খুব তাড়াতাড়ি সেড়েও উঠতে পারবেন না। ফলে, চেলসি’র ব্যাকলাইন এখন আরো দুর্যোগের সম্মুখীন। আর তার সাথে তাদের ফরোয়ার্ডদের গোল খরা তো রয়েছেই।

    জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে কি কি করণীয় রয়েছে চেলসি’র? (What does the January transfer window hold for Chelsea?)

    চেলসিকে সম্প্রতি ট্রান্সফার মার্কেটে খুবই কর্মঠ ভূমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছে, এবং ইতিমধ্যে তারা এই উইন্ডোতে তিন জন খেলোয়াড়কে সাইনও করে ফেলেছে। এফসি মোল্ডে থেকে তারা ২০ বছর বয়সী আইভোরিয়ান ফরোয়ার্ড ডেভিড ড্যাট্রো ফোফানাকে সাইন করিয়েছে। রক্ষণভাগে শক্তিমত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে তারা এএস মোনাকো থেকে দলে ভিড়িয়েছে বেনোয়া বাদিয়াশিলকে। এছাড়া, ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ভাস্কো দা গামা থেকে এসেছেন আন্দ্রে সান্তোস নামক এক ব্রাজিলিয়ান যুবা।

    পড়ুন:  জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডো থেকে যা যা প্রত্যাশা করা যায়

    এই তিনটি সাইনিংয়ের মধ্যে অন্ততপক্ষে দুইজন সরাসরি ফার্স্ট টিমে খেলার সুযোগ পেতে পারেন, এবং সান্তোস হলেন মূলত একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রজেক্ট। এবারের শীতকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে অবশ্য চেলসি’র লেনদেন এখনও শেষ হয়নি বলেই মনে হচ্ছে।

    আর্সেনালকে বাজিমাত করে শাখতার দোনেৎস্ক থেকে হাইলি-রেটেড ইউক্রেনিয়ান ফরোয়ার্ড মিখাইলো মুদ্রিককে দলে ভেড়ানোর দ্বারপ্রান্তে রয়েছে অল ব্লুস’রা। এছাড়া বিশ্বকাপজয়ী মিডফিল্ডার এঞ্জো ফার্নান্দেজকে দলে নেওয়ার ক্ষেত্রেও তারা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আবার, বরুশিয়া মুঞ্চেনগ্লাদবাখ মিডফিল্ডার মার্কাস থুরামকে দলে নেওয়ার ব্যাপারেও তারা ভাবছেন বলে জানা গিয়েছে।

    এছাড়াও, আটলেটিকো মাদ্রিদ এর সাথে তারা মৌখিকভাবে একটি চুক্তি সম্পন্ন করে ফেলেছে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড জাঁও ফেলিক্স এর জন্য। তবে, এটি কোন দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি নয়, বরং ৬ মাসের একটি লোন চুক্তি, যার জন্য চেলসিকে গুনতে হচ্ছে সর্বমোট ১৭ মিলিয়ন পাউন্ড।

    তবে আর যাই হোক না কেন, নিজেদের মৌসুমকে সঠিক পথে ফেরাতে হলে চেলসিকে আরো কিছু সাইনিং অবশ্যই করাতে হবে, বিশেষ করে তাদের মিডফিল্ডে।

    গ্রাহাম পটারকে নিয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য (Final verdict on Graham Potter)

    এই পর্যায়ের ক্লাব গ্রাহাম পটারের জন্য অবশ্যই একটি নতুন বিষয়। এ ধরণের ক্লাবে সাধারণত যিনিই ম্যানেজার হিসেবে আসুক না কেন, সাথে সাথে তার উপর ভালো ফলাফল অর্জনের একটি চাপ থাকেই, এবং কোন না কোন শিরোপা জেতারও দায় থাকে। এটিও পটারের জন্য নতুন।

    বর্তমানে তার দলটি তিনি যেমনটি চেয়েছিলেন তেমন পরিস্থিতিতে নেই। ইঞ্জুরি ও ফর্মজনিত কারণে দলের সকল পজিশনেই নানা ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এই দলটির যা প্রয়োজন তা হল একটি সম্পূর্ণ রিবিল্ড। আধুনিক সময়ে চেলসি’র সমর্থকরা হয়তো এমন কিছু আগে অবলোকন করেননি। তবে, সাফল্য অর্জন করতে হলে সেটি করার বিকল্প তাদের নিকট বর্তমানে আর নেই।

    গ্রাহাম পটার একজন অনবদ্য ম্যানেজার, যাকে তার সাবেক দল ব্রাইটন তার নিজের মত করে দল সাজিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাটি প্রদান করতো। তাদের সেই ভরসার বিনিময়ে তিনি ক্লাবটিকে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর ও সফল একটি দল প্রদান করেছিলেন। তার অধীনেই ব্রাইটন তাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ পয়েন্ট ট্যালি ও সর্বোচ্চ লীগ ফিনিশ অর্জন করেছিল।

    এমন অনেক সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে, যার ভিত্তিতে বলাই যায় যে, তাকে সময় দিলে তিনি চেলসিতেও সাফল্যের মুখ দেখবেন। তাকে নিয়োগ দেওয়ার কয়েক মাসের মাথায়, এবং তাকে নিজের মত করে দলটি গড়ে নেওয়ার সুযোগ না দিয়েই তাকে চাকরিচ্যূত করা হলে তা চেলসি কর্তৃপক্ষের অপরিপক্কতা ও বোকামিই প্রকাশ করবে।

    পটারের দরকার সময়, এবং সময়ের সাথে সাথে আসবে আরো বেশ কিছু ট্রান্সফার উইন্ডো। এছাড়া, তিনি যখন একটি প্রি-সিজন দলের সাথে কাটাতে পারবেন, তখন তার চিন্তাধারাগুলি তিনি খেলোয়াড়দের মাঝে আরো ভালোভাবে ছড়িয়ে দিতে পারবেন।

    এই মুহূর্তে তাকে চাকরিচ্যুত করাটা কোন সমাধানের মধ্যে পড়ে না, বরং তা করলে সেটি এই দলের সমস্যাগুলি কেবলমাত্র আরেকজন ম্যানেজারের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়াই হবে, এবং সেই ম্যানেজারও সেগুলির সমাধান করতে হিমসিম খেয়ে যাবেন। এবারের মত তাই চেলসি’র উচিৎ পুরো প্রক্রিয়াটির উপর ভরসা রাখা, এবং পটারকে আরো সময় দেওয়া নিজেকে প্রমাণ করার জন্য।

    Share.
    Leave A Reply