আর্সেনাল অল্পের জন্য তাদের জানুয়ারি ট্রান্সফার টার্গেট মিখাইলো মুদ্রিককে দলে ভেড়াতে পারেনি। ইউক্রেনিয়ান এই যুবা তারকা শেষমেষ যোগ দিয়েছেন লন্ডনের আরেক হেভিওয়েট ক্লাব চেলসিতে। এর আগে অবশ্য আর্সেনাল এই সাইনিংটি সম্পন্ন করার জন্য বেশ অনেকটা পথই এগিয়ে গিয়েছিল, এবং বহুদিন ধরে তারাই মুদ্রিককে সাইন করানোর জন্য এগিয়ে ছিল।

তাকে সাইন করতে না পারার কারণে কিছু গানারস সমর্থক অবশ্যই অখুশি হয়েছিলেন, কারণ অঢেল অর্থ না থাকার কারণে তারা তাদের আরো একটি প্রধান ট্রান্সফার টার্গেটকে অন্য দলের কাছে হারালো। তবে, আর্সেনালও বসে থাকার পাত্র নয়। তারা সাথে সাথে তাদের নজর ঘুরালো ব্রাইটন এন্ড হোভ এলবিয়ন এর অযাচিত বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড লিয়ান্দ্রো তোসার্দ এর দিকে।

এরপর, কয়েক দিনের মধ্যেই সেই বেলজিয়ান উইংগারকে ২৬ মিলিয়ন পাউন্ডের (সূত্রমতে) দলে ভেড়ায় আর্সেনাল।

তোসার্দ হলেন এমন একজন খেলোয়াড়, যিনি আর্সেনালের ম্যাচ ট্যাকটিকের সাথে সম্পূর্ণরূপে মানানসই। এছাড়া, তিনি একদম ঠিক সময়মত ট্রান্সফার অনুরোধও রেখেছিলেন ব্রাইটনের নিকট, এবং তার বাজার মূল্যও মাত্রাতিরিক্ত ছিল না। এসকল বিষয়ই আর্সেনালের পক্ষে কাজ করেছে। শুধু এক্ষেত্রেই নয়, মৌসুমের শুরু থেকেই যেন ভাগ্য মিকেল আর্তেতা’র গানারস বাহিণীর সাথেই রয়েছে।

কেন মুদ্রিকের না আসাটা আর্সেনালের জন্য শাপে বর হয়ে দাঁড়াতে পারে? (Why Mudryk blow might have been a blessing in disguise for Arsenal)

হতে পারে মুদ্রিক একজন বিশ্বখ্যাত প্রতিভাবান যুবা ফুটবলার, যিনি কি না ভবিষ্যতে এই স্পোর্টটিকে আরো জাকজমক ও শ্বাসরুদ্ধকর করে তুলবেন, তবে প্রিমিয়ার লীগ পর্যায়ে তিনি এখনও একজন নবজাতক শিশু। সে কারণে আমরা এখনি হলপ করে বলতে পারব না যে, প্রথম মৌসুমেই তিনি প্রিমিয়ার লীগকে তার তুফানী খেলা দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারবেন কি না। দলের সাথে কোনপ্রকার প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি ছাড়াই তিনি কিভাবে অল ব্লুস শিবিরে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন সেটিও একটি মজার বিষয় হতে চলেছে।

পড়ুন:  এবছরও চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা জিততে না পারলে কি পেপ গার্দিওলাকে চাকরিচ্যুত করা উচিৎ ম্যানচেস্টার সিটি'র?

আপনি যেকোন খেলোয়াড়কে কিনতে গেলেই সেটি আপনার জন্য ঝুকিপূর্ণ হতে পারে। আর সেই খেলোয়াড়ের বয়স যদি হয় কম, তাহলে তাকে কেনাটা তো অনেকটা লটারির টিকেট কাটার মতই। আর, বর্তমান পর্যায়ে এসে আর্সেনালের ক্ষেত্রে ঐ ধরণের আরেকটি ভুল করার মত সামর্থ্যই নেই।

জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে তাদের এত ব্যস্ত থাকার মূল কারণই হল তাদের স্কোয়াডের শক্তিমত্তা বাড়ানো, এবং মৌসুমের অন্তিম ভাগের জন্য রোটেশনের অপশন বাড়ানো। এর ফলে তারা মৌসুমের শেষের দিকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় স্বাচ্ছন্দ্যে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

অন্যান্য প্রতিযোগিতায় যাই হোক না কেন, প্রিমিয়ার লীগ শিরোপাটি জেতাই হবে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য, আর সেটি করতে হলে মৌসুমের কোন না কোন পর্যায়ে গিয়ে তাদেরকে রোটেশনের আশ্রয় নিতেই হবে, কেননা ফার্স্ট টিমের খেলোয়াড়েরা নিঃসন্দেহে এক সময় গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন।

লিয়ান্দ্রো তোসার্দ শুধুমাত্র প্রিমিয়ার লীগের একজন সুপরিচিত এবং প্রমাণিত খেলোয়াড়ই নয়, তিনি গত কয়েক মৌসুম ধরেই ইংলিশ ফুটবলের টপ টিয়ারের একজন সেরা খেলোয়াড়ও বটে। এছাড়া, তিনি তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সফল সময়ও পার করছেন। নিজেদের শিরোপার আশা আরো পাকাপোক্ত করতে এমন একজন যোগ্যতাসম্পন্ন খেলোয়াড়কে দলে পেয়ে নিশ্চয় খুশিই হবে আর্সেনাল।

আর্সেনালকে যা যা দিতে পারবেন তোসার্দ (What Trossard offers to Arsenal)

লিয়ান্দ্রো তোসার্দ হলেন এমন একজন খেলোয়াড় যিনি কি না ফরোয়ার্ড লাইনের যেকোন পজিশনে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন। বিভিন্ন পজিশনে খেলার ক্ষমতাটির কারণে তাকে মিকেল আর্তেতা একজন “প্লাগ এন্ড প্লে” অপশন হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। বর্তমান আর্সেনাল দলে এমনি আরেকজন খেলোয়াড় হলেন তাকেহিরো তমিয়াসু, যিনি কি না উভয় ফুল ব্যাক পজিশন, এবং এমনকি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডেও খেলতে পারদর্শী। এছাড়া, তোসার্দের পক্ষে আরো একটি পরিসংখ্যান হল এই যে, এবারের মৌসুমে তিনি ইতিমধ্যে প্রিমিয়ার লীগে ৭টি গোল ও ২টি এসিস্ট করে ফেলছেন। একভাবে বলাই যায় যে, তিনি তার জীবনের সেরা ফর্ম পার করছেন।

পড়ুন:  ম্বাপ্পের ভুয়া নিস্পত্তি ছাড়া এর পর এখন প্যারিস সেইন্ট-জারমেনদের তারা আরও ক্যালিয়ান ম্বাপ্পের কথা স্পর্শ করতে পারেন।

যদি আর্সেনাল মিখাইলো মুদ্রিককে সাইন করাতে সক্ষম হতো, তাহলে আরেকটি দেখার বিষয় এটি হত যে, সেক্ষেত্রে তারা স্পেৎসিয়া ডিফেন্ডার ইয়াকুব কিউইয়র’কে কিনতে পারতো কি না। কারণ, লিয়ান্দ্রো তোসার্দকে কেনার পরেও তারা ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে কিউইয়রকে দলে ভেড়াতে পেরেছে। এতে করে তাদের এমন আরেকটি পজিশন কভার হয়েছে যেখানে তাদের স্কোয়াড ডেপথ পূর্বে নমনীয় ছিল।

আর্সেনাল বর্তমানে যে হারে ভালো ফলাফল উপিহার দিচ্ছে, তা হয়তো সম্ভব হতো না যদি তাদের স্কোয়াডে এমন অগণিত খেলোয়াড় থাকতো যারা প্রতি ম্যাচে স্টার্ট করার জন্য মরিয়া হয়ে থাকতো। তাদের মূল একাদশের প্রত্যেকটি খেলোয়াড়ের ধারাবাহিকতা, এবং এমন অনেক রোল খেলোয়াড়দের উপস্থিতিই (যারা জানেন দলে তাদের প্রয়োজনীয়তা কখন এবং কোথায়) আর্সেনালকে তাদের আজকের পজিশনে এনেছে।

জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে যদি তারা কোন সাইনিং নাও করাতো, তারপরেও তারাই প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে বিপজ্জনক দল হিসেবেই গণ্য হতো, এবং শিরোপা জয়ের জন্যও তারাই ফেভারিট থাকতো। তাদের দলটি এতটাই সাজানো গোছানো এবং পরিপাটি।

Share.
Leave A Reply