(Strategize Like a Pro: An Analysis of the Most Effective Soccer Formations)

ফুটবলীয় ফর্মেশন হল এমন একেকটি ছক, যার মধ্যে একজন ম্যানেজার তার দলকে বসান, যাতে করে তার দলের শক্তির জায়গাগুলি ত্বরান্বিত হয়, এবং দূর্বল জায়গাগুলি কিছুটা নিস্তার পায়। এছাড়া, প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা ও ফর্মেশন বিচার করেও অনেক সময় ম্যানেজাররা তাদের দল সাজান।

যেকোন একটি ফর্মেশনকে ফুটবলীয় দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ফর্মেশন বলে আখ্যায়িত করা সম্ভব নয়, কারণ সেরা ফুটবল দলগুলি নিজেদের ফর্মেশন ও ট্যাকটিকস প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করার মধ্য দিয়ে সবসময় নিশ্চিত করে যেন তাদের খেলা প্রেডিক্টেবল না হয়ে যায়, এবং একটি নির্দিষ্ট দলের বিপক্ষে যেন তাদের দূর্বলতা নজরে না পড়ে। একটি নির্দিষ্ট ফর্মেশন বেছে নেওয়ার মাধ্যমে একজন ম্যানেজার নিশ্চিত করেন যেন সেই নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তার দলের রক্ষণভাগ ঠিকমত চাপ সামলাতে পারে, মিডফিল্ড যেন বলের পজিশন ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এবং মাঠের তৃতীয়াংশে যেন তার আক্রমণভাগের চাকা সচল থাকে।

এই নিবন্ধে আমরা এমন কিছু ফুটবলীয় ফর্মেশন সম্পর্কে জানবো, যেগুলি বিশ্বব্যাপী অনেক অনেক বিখ্যাত, এবং যেগুলির সম্পর্কে শুধুমাত্র ফুটবল বোদ্ধারাই জানেন না, বরং সাধারণ ফুটবল প্রেমী জনতাও যেগুলির সম্পর্কে জ্ঞাত।

৪-৪-২ ফর্মেশন (4-4-2 formation)

এটি এমনি একটি বেসিক ফর্মেশন যে, যে মানুষ একবার হলেও ফুটবল খেলেছে বা দেখেছে, সে এই ফর্মেশন সম্পর্কে জানে। ফুটবল বিশ্লেষক’রা এই ফর্মেশনকে ফুটবলের সকল ফর্মেশনের “মা” বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।

৪-৪-২ ফর্মেশনের অধীনে একটি দলে গোলকিপারের পাশাপাশি ৪ জন ডিফেন্ডার, ৪ জন মিডফিল্ডার (২ জন মাঝে, ২ জন উইঙে), এবং ২ জন সেন্টার ফরোয়ার্ড খেলে থাকেন।

আক্রমণে থাকাকালীন ৪-৪-২ ফর্মেশন (4-4-2 when attacking)

যখন ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলারত অবস্থায় কোন খেলোয়াড় নিজের পায়ে বল পান, তখন তার মূল উদ্দেশ্যই থাকে কিভাবে বলটি দলের দুই সেন্টার ফরোয়ার্ড পর্যন্ত পৌছানো যায়, যাতে করে তারা গোল করতে পারবে।

দুই সেন্টার ফরোয়ার্ডের ভূমিকা কি? (What are the roles of the two centre forwards?)

সাধারণত, ৪-৪-২ ফর্মেশনে যে দুইজন সেন্টার ফরোয়ার্ড থাকে, তার মধ্যে একজন থাকেন দীর্ঘকায়, যাকে প্রধান টার্গেট ম্যান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, আর আরেকজন ফরোয়ার্ড থাকেন, যিনি আকারে ছোট হলেও অন্য ফরোয়ার্ডের পেছনে ফ্রি রোম করে বেড়ান, এবং গতিশীলতার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে কাবু করার চেষ্টা করেন।

নিজের শারিরিক গঠন এবং শক্তিমত্তার কারণে একজন টার্গেট ম্যান ফরোয়ার্ডই একটি আক্রমণভাগের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন, কারণ বেশির ভাগ লং পাস তাকে লক্ষ্য করেই দেওয়া হয়ে থাকে।

তার মূল কাজ হল প্রতিপক্ষের দুই সেন্টার ব্যাককে সবসময় চাপের মধ্যে রাখা, এবং হোল্ড-আপ ও লিঙ্ক-আপ প্লে’তে সাহায্য করা, যাতে করে তার সতীর্থরা প্রতিপক্ষের অর্ধে বল পজিশন রাখতে পারে। এতে করে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগও নিজ গোল পোস্টের কাছাকাছি অবস্থান করতে বাধ্য হয়।

যখন তার নিজ দল বল পজিশনে থাকে, তখন সেই সেন্টার ফরোয়ার্ড যদি বল রিসিভ করতে কিছুটা নেমে আসেন, তাহলে তিনি সাথে করে প্রতিপক্ষের একজন ডিফেন্ডারকেও পজিশনের বাইরে নিয়ে আসেন। এতে করে তার স্ট্রাইক পার্টনার বা অন্যান্য সতীর্থদের জন্য স্পেস তৈরি হয়, যেগুলিকে কাজে লাগিয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করা যায়।

এই পজিশনের খেলোয়াড়দের জন্য এরিয়াল দক্ষতাও অনেকটা জরুরি। এই পজিশনে দরকার একটানা বক্স উপস্থিতি। তাকে অবশ্যই হেডিং এ ভালো হতে হবে, যাতে করে তিনি সতীর্থদের দেওয়া ক্রসে মাথা লাগিয়ে গোল করতে পারেন। এছাড়া, ডিফেন্ডারদের দেওয়া লং পাসকে নিয়ন্ত্রণে এনে সতীর্থদের দিকে দিতে পারাও ভালো সেন্টার ফরোয়ার্ডদের একটি বিশেষ গুণ।

অন্যদিকে, সেকেন্ডারি যে স্ট্রাইকার এই ফর্মেশনে থাকেন, তিনি সাধারণত আকারে তুলনামূলকভাবে ছোট হোন, এবং অধিকতর গতিশীল হয়ে থাকেন। তার কাজ হল মূল সেন্টার ফরোয়ার্ড এর নিকট হতে বল সংগ্রহ করা, অথবা মূল সেন্টার ফরোয়ার্ড এর দ্বারা খালিকৃত স্পেসে দৌড় দেওয়া। তিনি সেন্ট্রাল বা ওয়াইড যেকোন জায়গায় আবির্ভূত হতে পারেন, এবং ফ্রি রোমিং লাইসেন্স পেয়ে থাকেন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, যিনি মূল সেন্টার ফরোয়ার্ড থাকেন, তার গতি কিছুটা হলেও কম থাকে।

এর মানে হল এই যে, দ্বিতীয় স্ট্রাইকারের মূল দায়িত্বই হল তার গতির সাহায্যে মূল স্ট্রাইকারের ফাঁকা করা জায়গায় অবস্থান করা, যার ফলে তিনি ফ্লিক-অন পাস, লে-অফ, ওয়ান-টু পাস, থ্রু বল ইত্যাদির জন্য উপলব্ধ থাকতে পারেন।

সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারদের কাজ কি? (The roles of the central midfielders)

৪-৪-২ ফর্মেশনে মিডফিল্ড লাইনটি হল ডিফেন্সের দ্বিতীয় লাইন। এই মিডফিল্ডে থাকেন দুইজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার, এবং দুইজন ওয়াইড মিডফিল্ডার।

যখন কোন দল এই ফর্মেশন ব্যবহার করে পজিশন ফুটবল খেলে, তখন অবশ্যই দলটির এমন দুইজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারকে প্রয়োজন যারা ডিফেন্স থেকে আসা শর্ট পাস সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, এবং ডিফেন্স ও আক্রমণভাগের মধ্যে একরকম যোগসূত্র হিসেবে কাজ করতে পারেন।

দল আক্রমণে থাকাকালীন এই দুই মিডফিল্ডার এর মধ্য থেকে একজন আক্রমণে অংশগ্রহণ করে থাকেন, অথবা উইং দিয়ে আক্রমণের সময় ওয়াইড পজিশনে উইংগার ও ফুল ব্যাকের সাথে ওভারলোডের তৈরি করেন। আরেক দিকে, অন্য সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার তার নিজস্ব পজিশনেই অবস্থান করেন, যাতে করে দল বলের পজিশন হারালেও ডিফেন্ডারদের উপর বেশি চাপ না পড়ে।

ওয়াইড মিডফিল্ডারদের কাজ (The wide midfielder roles)

অফেন্সিভ মুভের সময়ে একটি দলের ওয়াইড মিডফিল্ডারদের নিকট লাইসেন্স থাকে মাঝ মাঠ থেকে গতি ও ড্রিবলিং দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আক্রমণে যাওয়ার।

কোচের নির্দেশনা মোতাবেক, এই দুই ওয়াইড মিডফিল্ডার (যাদেরকে অনেক সময় উইংগারও বলা হয়ে থাকে) একদম কিনারা ঘেঁষে পার্শ্ববর্তী সীমারেখার পাশে দিয়ে আক্রমণে যেতে পারেন, অথবা প্রতিপক্ষের সেন্টার ব্যাক ও ফুল ব্যাকের মধ্যকার ফাঁকা স্থানটিকে কাজে লাগিয়েও আক্রমণে যেতে পারেন।

এই পজিশনের খেলোয়াড়েরা দলকে উইডথ্ অফার করে থাকেন, এবং ডি বক্সের ভেতরে ক্রস বা ডেলিভারিও সাধারণত তাদের নিকট হতেই আসে, যেগুলিকে কাজে লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন দলের দুই সেন্টার ফরোয়ার্ড।

পড়ুন:  রেলিগেশনের পর সাউদাম্পটনের কী হবে?

এছাড়া তাদেরকে নিজ নিজ পার্স্বের ফুল ব্যাকদের সাথেও যুগলবন্দী করতে হয় এবং ওভারল্যাপ ও আন্ডারল্যাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে হয়। এছাড়া, দলের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারদের সাথে নিয়ে তারা ওয়াইড ওভারলোডও তৈরি করে থাকেন।

দলের রক্ষণভাগের উপর যে যে দায়িত্ব থাকে (Role of the back four)

আধুনিক ফুটবলে ৪-৪-২ ফর্মেশনে যারা ডিফেন্ডার হিসেবে খেলেন, তাদের জন্য খুব দরকার হল বল পায়ে বেশ পরিপাটি খেলোয়াড় হওয়া, যাতে করে তার দল বল পজিশন না হারায়।

পজিশনাল সাবধানতা এবং পাসিং দক্ষতা ঠিক থাকলে একজন সেন্টার ব্যাক তার পাশের ফুলব্যাককে, সামনের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারকে, বা এমনকি দূরের ওয়াইড মিডফিল্ডারদেরকেও পাস দিতে পারেন।

এছাড়া, সুযোগ বুঝে তারা টার্গেট ম্যান বা প্রধান স্ট্রাইকারকেও লং পাস দিতে পারেন, যাতে তিনি ফ্লিক-অন হেডার দেওয়ার প্রচেষ্টা করেন। আবার, অনেক সময় প্রতিপক্ষের ব্যাক লাইনের পেছনে লং থ্রু বল দিয়েও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডাররা।

ফুল ব্যাক অর্থাৎ লেফট ব্যাক ও রাইট ব্যাক পজিশনের খেলোয়াড়েরা সাধারণত সেন্টার ব্যাক ও সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারদের নিকট হতে পাস গ্রহণ করে থাকেন। বিশেষ করে যদি বিল্ড-আপ প্লে এর সময় মিডফিল্ড এর দরজা বন্ধ থাকে, তবে পাস দেওয়ার জন্য ফুল ব্যাকেরা একটি নিরাপদ অপশনে পরিণত হোন।

এছাড়া, ফুল ব্যাকেরা প্রতিনিয়ত পার্শ্বরেখা ঘেঁষে মাঠের উপর নিচে দৌড়াতে থাকেন, এবং এসব ওভারল্যাপিং বা আন্ডারল্যাপিং দৌড়ের কারণে ওয়াইড মিডফিল্ডারদের নিকট একটি অতিরিক্ত পাসিং অপশনও যুক্ত হয়।

ডিফেন্ডিং এর সময় ৪-৪-২ ফর্মেশন (4-4-2 when defending)

ডিফেন্সিভ দিক দিয়ে দেখলে, এই ফর্মেশনটি হল সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ একটি ফর্মেশন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধার দিক হল প্রতিপক্ষের আক্রমণকে সর্বদা পার্শ্বরেখার দিকে ফোর্স করা যায়।

দুই স্ট্রাইকার সবসময় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদেরকে মিডফিল্ডে পাস দেওয়া থেকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে, প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা তাদের ফুল ব্যাকদের নিকট পাস দিতে বাধ্য হোন। বেশির ভাগ দলই ৪-৪-২ ফর্মেশনের বিপক্ষে খেলার সময় তাদের ৪ জন মিডফিল্ডারকে এড়িয়ে খেলার চেষ্টা করে থাকে, যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাদেরকে ওয়াইড পজিশন থেকে ক্রস দিয়েই খেলতে হয়। এতে করে ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলা দলের জন্য ডিফেন্ডিং করা সহজতর হয়ে থাকে, কেননা তাদের সেন্টার ব্যাকেরা প্রস্তুত থাকতে পারেন ক্রস ডিফেন্ড করার জন্য।

৪-৪-২ ফর্মেশনের দূর্বলতা কি কি? (What are the weaknesses of the 4-4-2 formation?)

এই ফর্মেশনে খেললে অনেক সময় ফলের মিডফিল্ডের উপর অনেক বেশি চাপ পড়ে যায়, এবং দুইজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের জন্য এত বড় স্পেস মিনিমাইজ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিপক্ষ যদি ৩ জন মিডফিল্ডার নিয়ে খেলে, তাহলে তারা মিডফিল্ডে অনেক বেশি সুবিধাজনক একটি অবস্থানে থাকতে পারবে। একইভাবে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে একজন বেশি থাকলেও একই রকম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেসকল দল খুবই আগ্রাসনের সাথে প্রেসিং করে থাকে, তারা মিডফিল্ডে একটি বিশাল সুবিধা পাবে, কারণ সেখানে তারা একজন খেলোয়াড় বেশি নিয়ে ৩ জন বনাম ২ জনের একটি যুদ্ধে লিপ্ত হবে।

কোন কোন দল পূর্বে ৪-৪-২ ফর্মেশন ব্যবহার করেছে বা এখনও করে চলেছে? (What teams have used or currently use the 4-4-2 formation?)

শন ডাইশের বার্নলি দলটি ডিফেন্সিভ দিক দিয়ে খুবই শক্তিশালী একটি দল ছিল, এবং তিনি দলটিতে ৪-৪-২ ফর্মেশনই ব্যবহার করতেন। এই ফর্মেশনে খেলেই তার দল অনেক মৌসুম ধরে প্রিমিয়ার লীগে টিকে ছিল।

এই দৃঢ় ফর্মেশনটি ব্যবহার করেই স্প্যানিশ লা লিগার একটি অন্যতম সেরা দলে পরিণত হয়েছে ডিয়েগো সিমিওনে’র আটলেটিকো মাদ্রিদ দলটি। ৪-৪-২ ফর্মেশনকে কাজে লাগিয়েই তারা স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপা জিতেছে, আবার একাধিক বার চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালেও উঠেছে তার দল।

৪-২-৩-১ ফর্মেশন (একজন সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার)  [4-2-3-1 formation (one central attacking midfielder)]

৪-৪-২ ফর্মেশনের মতই ৪-২-৩-১ ফর্মেশনেও ৪ জন ডিফেন্ডার থাকেন, এবং তাদের সামনে থাকেন ২ জন ডাবল পিভট বা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। তবে, দুই ফর্মেশনের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি হল এই যে, এখানে কেবলমাত্র একজন সেন্টার ফরোয়ার্ড থাকেন, এবং পেছনে থাকেন একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।

আক্রমণের সময় ৪-২-৩-১ ফর্মেশন (4-2-3-1 when attacking)

সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বা নাম্বার টেন (The central attacking midfielder or the Number 10)

ফুটবলের এই ফর্মেশনে নাম্বার টেনই হলেন প্রধান গোলের সৃষ্টিকর্তা। এই সিস্টেমে তাকে একটি ফ্রি লাইসেন্স দিয়ে রাখা হয় স্ট্রাইকারের পেছনে বিভিন্ন স্পেসে ঘুরে বেড়ানোর এবং বল রিসিভ করার। তাকে মার্কিং করা খুবই কঠিন হয়ে থাকে, এবং এভাবেই তিনি খেলায় প্রভাব ফেলেন।

নাম্বার টেন অনেক সময় প্রতিপক্ষের মিডফিল্ড লাইনের মাঝের স্পেসে বল রিসিভ করেন, আবার কখনো কখনো নিচে নেমে গিয়ে নিজ দলের ডিফেন্ডারদের নিকট হয়ে পাস গ্রহণ করেন। সময়ন্তরে তিনি আবার ওয়াইড এরয়াতে গিয়ে ফুল ব্যাক ও উইনহগারদের সাথেও যুগলবন্দি করেন, আবার অনেক নিজেই ওয়াইড এরিয়া থেকে ডি বক্সের উদ্দেশ্যে ক্রস পাঠান। সময় ও সুযোগ পেলে নাম্বার টেন নিজেই একজন স্ট্রাইকারের পজিশনে চলে যান, এবং প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভেদ করে বেহাইন্ড-দ্য-শোল্ডার দৌড় দিয়ে প্রতিপক্ষকে বোকা বানিয়ে দেন।

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারদের খেলার মধ্যে স্পেস-সংক্রান্ত সুবুদ্ধি থাকা খুবই দরকার, তার ভিশন থাকা দরকার যা দিয়ে তিনি যেকোন সময় বল রিসিভ করে সাথে সাথে অনুমান করতে পারবেন তার সতীর্থরা কোথায় এবং তৎক্ষনাৎ কোন এক টিমমেট এর নিকট একটি সুদূরপ্রসারী পাসও দিয়ে দিতে পারবেন। দলের প্রয়োজনে যেকোন পজিশনে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতা তার মধ্যে থাকাটা বাধ্যতামূলক।

অভ্যন্তরীণ ফরোয়ার্ড (Inside Forwards)

অভ্যন্তরীণ ফরোয়ার্ডদেরকে ইনভার্টেড উইংগারও বলা হয়ে থাকে। তারা হলেন উইংগারদের এমন এক জাতি, যারা কি না নিজের পছন্দের পায়ের বিপরীত উইংগে খেলে থাকেন (বাঁ-পায়ী খেলোয়াড় রাইট উইংগে, এবং ডান-পায়ী খেলোয়াড় লেফট উইংগে)।

অভ্যন্তরীণ ফরোয়ার্ডেরা উইং থেকে ভেতরের দিকে কাট-ইন করে প্রতিপক্ষের গোলে শট মারেন, অথবা মাঠের মাঝখানে স্ট্রাইকার ও নাম্বার টেন এর সাথে মিলে ওভারলোড তৈরি করে গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেন।

পড়ুন:  লিভারপুল দেরী সিদ্ধান্তে রিলিজ ক্লজ পূরণের পরে সোবোসজলাই চুক্তিতে সম্মত হয়

ইনসাইড বা অভ্যন্তরীণ ফরোয়ার্ডদের সাহায্যের জন্য থাকেন দলের ফুল ব্যাকেরা, যারা কি না তাদের বাইরের দিক দিয়ে ওভারল্যাপিং দৌড় দিয়ে একটি ডিকোয় বা ফাঁদ তৈরি করেন, অথবা একটি পাসের অপশন তৈরি করেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে দুইজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের সামনে একজন নাম্বার টেনসহ যে তিনজন স্ট্রাইকারের পেছনে খেলে থাকেন, তাদের সকলকেই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বলা হয়ে থাকে।

ডিফেন্স করার সময় ৪-২-৩-১ ফর্মেশন (4-2-3-1 formation in defending)

বল পজিশন যখন প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রণে, তখন ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে ক্রীড়ারত দল একটি প্রেসিং মডেলে চলে যায়, যেখানে দলের সেন্টার ফরোয়ার্ড এর সাথে দুই ওয়াইড মিডফিল্ডার যুক্ত হয়ে তিনজন সম্মিলিতভাবে (৪-২-১-৩) প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদেরকে প্রেসিং করতে থাকেন। কোন কোন ম্যানেজার আবার প্রেসিং এর সময় অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারকে সেন্টার ফরোয়ার্ড এর সাথে উপরে পাঠিয়ে দুই উইংগারকে নামিয়ে আনেন দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের কাতারে। ফলে দলের ফর্মেশন মুহূর্তের জন্য ৪-৪-২ এ রূপান্তরিত হয়।

এছাড়া, আরো একভাবে ডিফেন্স করা হয়ে থাকে এই ফর্মেশনে, এবং সেটি হল নাম্বার টেন স্ট্রাইকারের পেছনেই অবস্থান করেন, কিন্তু উইংগাররা শুধু মিডফিল্ডে নেমে আসেন (৪-৪-১-১)।

৪-২-৩-১ ফর্মেশনের দূর্বলতাসমূহ (The weaknesses of the 4-2-3-1 formation)

যদিও ৪-২-৩-১ একটি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ফর্মেশন, যার মাধ্যমে একটি ফুটবল দল খুবই সহজে মুহূর্তের মধ্যে ডিফেন্স থেকে আক্রমণে যেতে পারে, তবুও এটি না বললেই নয় যে, এই ফর্মেশনটি কাউন্টার অ্যাটাকের নিকট খুবই সংবেদনশীল। যখন অভ্যন্তরীণ ফরোয়ার্ডরা ভেতরের দিকে কাট-ইন করেন, এবং ফুল ব্যাকেরা ওভারল্যাপিং দৌড়ে নিজেদেরকে কমিট করেন, তখন দলের উভয় উইংগে শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয়, যেটির সদ্ব্যবহার করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকেন প্রতিপক্ষের মিডফিল্ডাররা।

এই ফুটবলীয় ফর্মেশনে কেবলমাত্র একজন সেন্টার ফরোয়ার্ড থাকেন, যিনি খেলার অনেকটা সময় জুড়ে একা পড়ে যান, কেননা তাকে মার্ক করার জন্য প্রতিপক্ষের দুইজন সেন্টার ব্যাক নিয়োজিত থাকেন।

যেহেতু দলের দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার বা ডাবল পিভট মিডফিল্ডে মার্কিং করায় ব্যস্ত থাকেন, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার স্পেসের খোঁজে ঘুরে বেড়ান, এবং দুই উইংগার ভেতরের দিকে ঢোকার জন্য মুখিয়ে থাকেন, সেহেতু প্রতিপক্ষের দুই সেন্টার ব্যাককে শুধুমাত্র একজন সেন্টার ফরোয়ার্ডকেই মার্ক করতে হয়, এবং অন্য কোনকিছু নিয়ে ওতটা মাথা না ঘামালেও চলে।

তারা দুইজন মিলে সহজেই সেন্টার ফরোয়ার্ড এর নিকট আসন্ন পাসগুলিকে স্পট করতে পারেন এবং ক্লিয়ার করে দিতে পারেন, যার ফলে কোন পাস বা ক্রস সেন্টার ফরোয়ার্ড পর্যন্ত পৌঁছানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে।

যেসকল দল ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলে থাকে (Teams that play with the 4-2-3-1 formation)

এরিক তেন হাগ এর পুন:জ্জীবিত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড দলটি ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলে এবারের মৌসুমে ইউরোপের সেরা কয়েকটি দলের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।

হোসে মোরিনহো’র রিয়াল মাদ্রিদ দল, যারা ২০১২ সালে লা লীগা শিরোপা জিতেছিল, এবং ইন্টার মিলান দল যারা ২০১০ সালে ট্রেবল জিতেছিল, তারা উভয়েই ৪-২-৩-১ ফর্মেশনটিকে বিখ্যাত করে তুলেছিল।

৪-৩-৩ (একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার) ফর্মেশন [4-3-3 (one defensive midfielder) formation)]

বর্তমানে এটিই হল ফুটবলের সবচেয়ে নামকরা ও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ফর্মেশন। আধুনিক ফুটবলে ৪-৩-৩ ফর্মেশনটি এমন অনেক দলই ব্যবহার করে, যারা কি না বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে থাকে।

এই ফুটবলীয় ফর্মেশনটিতে চারটি ডিসটিঙ্কট লাইন থাকে। এর মধ্যে রয়েছে একটি ডিফেন্সিভ লাইন যেখানে দুইজন সেন্টার ব্যাক ও দুইজন ফুল ব্যাক থাকেন, একটি সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড লাইন যেখানে কেবলমাত্র একজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার থাকেন সেন্টার ব্যাকদের একটু সামনেই, একটি অ্যাটাকিং মিডফিল্ড লাইন যেখানে দুইজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার থাকেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ঠিক সামনেই, এবং একটি অ্যাটাকিং লাইন যেখানে থাকে দুইজন উইংগার এবং (মাঝে) একজন সেন্টার ফরোয়ার্ড।

পজিশনে থাকাকালীন ৪-৩-৩ ফর্মেশন (4-3-3 in possession)

যেমনটি আমরা আগেও উল্লেখ করেছি, এই ফর্মেশনটি এমন অনেক দলই ব্যবহার করে থাকে, যাদেরকে কি না বিশ্ব ফুটবলের সবভেয়ে সুচারু ও আক্রমণাত্মক দল হিসেবে মান্য করা হয়। সাধারণভাবে দেখলে, যেসকল দল পজিশন ফুটবলে বিশ্বাসী, যারা ডিফেন্স থেকে ধীরগতিতে খেলা সাজিয়ে সামনে এগুতে পারদর্শী, এবং যারা তিনজন মিডফিল্ডারকে কাজে লাগিয়ে আক্রমণে যেতে চায়, তাদের জন্য এই ফর্মেশনটি একদম উপযোগী।

এই ফর্মেশনের অন্তর্গত উইংগাররা চাইলে কাট-ইন করে ভেতরের দিকে এসে মাঠের মাঝ বরাবর অবস্থান নিতে পারেন, আবার চাইলে পার্শ্বরেখা বরাবর ড্রিবলিং করতে পারেন এবং সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার ও ফুলব্যাককে নিয়ে ওয়াইড এরিয়াতে ওভারলোড তৈরি করতে পারেন। ওভারলোড বা ওয়াইড এই ত্রিকোণের পাশাপাশি ওভারল্যাপিং দৌড় দিয়েও উইংগারকে সাহায্য করতে পারেন দলের ফুল ব্যাক।

যদি পাসিং এংগেল এর কথা ওঠে, তাহলে হয়তো বর্তমান সময়ে ৪-৩-৩ এর থেকে ভালো কোন ফর্মেশন ফুটবলে নেই। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে সেন্ট্রাল বা ওয়াইড উভয় পজিশনেই যেকোন মুহূর্তে একটি পাসিং ত্রিকোণ তৈরি করে খেলা অগ্রসর করানো যায়।

দুইজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার এর মধ্য থেকে একজন সবসময়ই উইংগার এবং ফুল ব্যাকের সাথে যুক্ত হয়ে ওয়াইড পজিশনে ওভারলোড তৈরি করতে পারেন, এবং এমন এমন শেইপে পাসিং করতে পারেন যা প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দিতে পারে, এবং গোলের সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।

সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের কর্তব্যসমূহ (The role of the central defensive midfielder)

যেখানে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে নাম্বার টেন এর নিকট ফ্রি রোমিং লাইসেন্স থাকে, সেখানে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দুইজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের পেছনে থাকেন একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। তিনিই হলেন এই ফর্মেশনের মূল পার্থক্য তৈরিকারী।

এই সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এর দায়িত্ব হল মূলত চাপের মুখে তার ডিফেন্ডারদের নিকট হতে পাস গ্রহণ করা, এবং ফরোয়ার্ড পজিশনে থাকা তার সতীর্থদের নিকট পাস দিয়ে বল পৌঁছিয়ে দেওয়া।

এই পজিশনের যেকোন খেলোয়াড়কেই সবসময় সজাগ থাকতে হয়, এবং বল গ্রহণের সাথে সাথেই তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে তিনি বলটি কাকে পাস করবেন। এছাড়া, তাকে আরো জানতে হয় যে কোন পরিস্থিতিতে কাকে পাস দেওয়া উচিৎ, এবং কিভাবে প্রতিপক্ষের তৈরি করা প্রেসিং এর মধ্যে ঠিকমত খেলতে হয়।

পড়ুন:  গেমসপ্তাহ 32 এর জন্য FPL সেরা বাছাই

দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ড খেলোয়াড়ের (নাম্বার এইট) দায়িত্বসমূহ [The role of the two central midfield players (number 8’s)]

এই পজিশন দুইটি হল এই ফর্মেশনের মূল চালিকাশক্তি। খুবই চাহিদাসম্পন্ন এই পজিশনে খেলতে হলে একজন খেলোয়াড়কে হতে হয় সুচতুর, বুদ্ধিদীপ্ত, এবং গতিশীল। এর পাশাপাশি তাদের ভালো ফিজিক্যাল ও টেকনিক্যাল দক্ষতাও থাকা খুব জরুরি।

নাম্বার এইট খ্যাত এই পজিশনের খেলোয়াড়দের সবসময় চৌকান্না থাকতে হয়। তারা মূলত তাদের দলের ডিফেন্ডারদের বা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের নিকট হতে বল গ্রহণ করে থাকেন। তবে, তাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন বিষয় হল বল রিসিভ করার সাথে সাথে টার্ন করা এবং কোন এক সতীর্থের নিকট পাস দেওয়া।

এছাড়া, এই পজিশনের খেলোয়াড়দেরকে বক্স-টু-বক্স খেলায় পারদর্শী হতে হয়, অর্থাৎ প্রয়োজন অনুসারে তাদেরকে নিজেদের ডিফেন্সিভ থার্ড বা প্রতিপক্ষের ডিফেন্সিভ থার্ড উভয় স্থানেই পৌঁছে যেতে হয়। অর্থাৎ, এই পজিশনের খেলোয়াড়দের প্রচুর দম এবং মানসিক শক্তিও প্রয়োজন হয়।

যেহেতু নাম্বার এইট’রা প্রতিপক্ষের ডিফেন্সিভ এবং মিডফিল্ড লাইনের মাঝামাঝি অবস্থান করে থাকেন, সেহেতু তাদের দলের খেলোয়াড়েরা বার বার তাদের নিকটই পাস দেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় যে, যখন তারা সেসকল পজিশনে বল রিসিভ করেন, সাথে সাথেই প্রতিপক্ষের কোন এক খেলোয়াড় এসে তাদেরকে ক্লোজ-ডাউন করে ফেলে। তাই, সেক্ষেত্রে এমন চাপের মধ্যে বল পজিশন রক্ষার্থে তাদেরকে খুবই বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হয়।

এছাড়া, এই পজিশনের খেলোয়াড়দের আরো সজাগ থাকতে হয় এই ব্যাপারে যে, কখন তারা বক্সে ঢুকবে, যাতে করে তারা তাদের একমাত্র স্ট্রাইকারকে বক্সের মধ্যে কিছুটা সঙ্গ দিতে পারে, বা ক্রস থেকে বলে পা বা মাথা ঠেকানোর ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে। নাম্বার এইট’রা সজাগ না থাকলে সাধারণত আক্রমণে থাকা দল খুব বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারে না।

এছাড়াও, নাম্বার এইট’দেরকে মাঝে মাঝে ওয়াইড এরিয়াগুলিতেও ভ্রমণ করতে হয়, যাতে করে তারা উইংগার ও ফুল ব্যাকদের সাথে মিলে ওয়াইড ওভারলোড তৈরি করতে পারে। যেসকল দল ডিফেন্সিভ মানসিকতা নিয়ে খেলতে নামে, তারা সাধারণত মাঠের মধ্যভাগকে খুবই জড়সড় করে রাখে। সেক্ষেত্রে, তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার শ্রেষ্ঠ পন্থা হল উইং দিয়ে আক্রমণ করা।

ডিফেন্সিভ দিক দিয়ে ৪-৩-৩ ফর্মেশন (4-3-3 in defending)

যেহেতু এই ফর্মেশনে ফরোয়ার্ড লাইনে তিনজন খেলোয়াড় বিদ্যমান, সেহেতু যেসকল দল মাঠের উপরিভাগে অধিক পাসের মাধ্যমে গোল করতে বিশ্বাসী, তাদের জন্য এই ফর্মেশনটি একদমই মানানসই।

সেই তিনজন ফরোয়ার্ড লাইনের খেলোয়াড়েরা চাইলে মাঝের দিকে খেলা কম্প্রেস করতে পারেন, এবং প্রতিপক্ষকে বাধ্য করতে পারেন উইং দিয়ে আক্রমণ করতে। অন্যথা, তারা ওয়াইড পজিশনেই থেকে খেলা মাঝমাঠের দিকে ত্বরান্বিত করতে পারেন, যা একটি ফাঁদ হিসেবে কাজ করতে পারে, কেননা সেখানে তিনজন মিডফিল্ডার প্রতিপক্ষের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে।

সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করেন। তিনি মূলত ডিফেন্সের খেলোয়াড়দের বর্ম হিসেবে কাজ করেন। প্রতিপক্ষের পাসে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো এবং তার নিজের ডিফেন্ডার যদি জায়গাচ্যুত হয়ে পড়েন, তাহলে তার হয়ে পজিশনটি কভার করা বা মপ-আপ করাটাই হল তার প্রধান ডিফেন্সিভ দায়িত্ব।

যদি দলটি ডিফেন্সিভ মাইন্ডসেটে চলে যায়, তাহলে তারা মুহূর্তের মধ্যেই দুই উইংগারকে পেছনের দিকে বা ভেতরের দিকে ঠেলে দিয়ে একটি ৪-৫-১ বা ৪-১-৪ ফর্মেশন তৈরি করে নিতে পারে, যা ডিফেন্সে অনেক সাহায্য করতে পারে।

৪-৩-৩ ফর্মেশনের দূর্বলতাসমূহ (The weaknesses of the 4-3-3 formation)

৪-২-৩-১ ফর্মেশনের মতই ৪-৩-৩ ফর্মেশনও হল খুবই আক্রমণাত্মক একটি ফর্মেশন, যা খুবই দক্ষ ও তারকাসম্বলিত দলগুলির জন্যই মানানসই, কেননা তারাই বল পজিশন ভালোভাবে রক্ষা করতে পারেন। দুই উইংগার, দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার এবং দুই ফুলব্যাক আক্রমণে থাকাকালীন যদি তারা বল পজিশন হারায়, সেক্ষেত্রে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল খাওয়ার একটি সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায়।

৪-৩-৩ ফর্মেশনেও দলে কেবলমাত্র একজন সেন্টার ফরোয়ার্ডই থাকেন। দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার এবং দুই উইংগার যদি তাকে ঠিকমত সঙ্গ দেওয়ার সুযোগ না পান, তাহলে তাকে খুবই আইসোলেটেড অবস্থায় বক্সের মধ্যে অবস্থান করতে হয়।

যেসকল বিখ্যাত দল ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলেছে বা এখনো খেলে থাকে (Famous teams that use the 4-3-3 formation in football)

পেপ গার্দিওলা’র বিখ্যাত বার্সেলোনা দলটি এই ফর্মেশনকে নাম এনে দিয়েছিল। এই ফর্মেশনে খেলেই তার সেই দলটি ৩ বছরে ২টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা জিতেছিল, এবং নিজেদের তিকি তাকা ফুটবল দিয়ে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। এছাড়া, তার বর্তমান দল ম্যানচেস্টার সিটিও একই ফর্মেশনে খেলে গত ৫টি মৌসুমের মধ্যে ৪টিতেই প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জয় করেছে।

৩-৫-২ বা ৫-৩-২ ফর্মেশন (The 3-5-2 or 5-3-2 formation)

যদিও এই জনপ্রিয় ফর্মেশনটিকে অনেকেই একটি ডিফেন্সিভ ফর্মেশন বলে আখ্যা দেন, তবুও ৩-৫-২ ফর্মেশনটি বার বার একটি ভালো আক্রমণাত্মক ফর্মেশন হিসেবেও প্রমাণিত হয়েছে, যা বিশ্বের সেরা সেরা অনেক ম্যানেজারকেই ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে। এই ফর্মেশনটির মাধ্যমে তারা তাদের দলের ডিফেন্স ও অ্যাটাকের মধ্যে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে থাকেন।

পজিশনে থাকাকালীন ৩-৫-২ ফর্মেশন (3-5-2 in possession)

৩-৫-২ ফর্মেশনের ব্যাক লাইনে থাকেন তিনজন সেন্টার ব্যাক। উভয় পার্শ্বের দুই সেন্টার ব্যাককে হাফ-ব্যাক বলা হয়ে থাকে, যারা কি না সাধারণত বল নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে থাকেন, এবং প্রয়োজনে ওয়াইড এরিয়াতেও পজিশন নিয়ে থাকেন।

তবে, প্রাকৃতিকভাবে উইডথ্ এর চাহিদা পূরণ করে থাকেন উইং ব্যাকেরা। এই ফর্মেশনটি তাদের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, তারাই এন্ড-প্রোডাক্ট তৈরি করছেন, বা বক্সে ডেলিভারি দিচ্ছেন। তাদেরকে এসকল দলের ক্রিয়েটিভ হার্টও বলা হয়ে থাকে। চেলসিতে রিস জেমস, টটেনহ্যামে ইভান পেরিসিচ বা ইন্টার মিলানে ডেঞ্জেল ডাম্ফ্রিস এর কথাই ধরুন। এই ফর্মেশনে খেললে অনেক সময় গোলের দেখা পেতে বেগ পেতে হয় ঠিকই, কিন্তু ডিফেন্সিভ দৃঢ়তা অর্জনে এই ফর্মেশনটির কোনই জুড়ি নেই।

Share.
Leave A Reply