চ্যাম্পিয়নস লীগে টটেনহ্যাম হটস্পার্স তাদের রাউন্ড অব ১৬ এর প্রথম লেগের ম্যাচ খেলতে ইতালি যাবে, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হবে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিরোপাধারী এসি মিলান। এবারের নক আউট রাউন্ডের শুরুটা তাই বেশ কঠিনই হবে স্পার্সের জন্য।

    এবারের দ্বিতীয় রাউন্ডের ড্র’য়ে এই ফিক্সচারটিই ছিল সবচেয়ে আনপ্রেডিক্টেবল, কেননা গ্রুপ পর্যায়ের ফর্মের বিচারে এই দুই দলের কোনটির ইউরোপীয় ফর্মকেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।

    টটেনহ্যাম হটস্পার্স তাদের গ্রুপে আইন্ত্রাখত ফ্র‍্যাঙ্কফুর্ট এবং স্পোর্টিং লিসবন এর নিকট প্রতিহত হওয়ার পর নিজেদের সবশেষ গ্রুপ ম্যাচে গিয়ে রাউন্ড অব ১৬ এর টিকেট নিশ্চিত করতে পেরেছিল।

    আগামী ভালোবাসা দিবস ২০২৩ এ সাতবারের চ্যাম্পিয়নস লীগজয়ী এসি মিলানের বিপক্ষে ইতালি যাত্রাটি স্পার্সের উত্থান পতনে ভরা ইউরোপীয় মৌসুমকে ঠিক পথে ফেরানোর লক্ষ্যেই শুধু কাজে দিবে না, বরং তাদের পুরো মৌসুমটিকেই আবার নতুন রঙে রাঙাতে সাহায্য করবে। তবে, মিলান, যারা কি না নিজেরাও ঘরোয়া লীগে টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর মতই একটি মৌসুম পার করছে (যদিও তারা সিরি আ’তে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে), ঘরের মাঠে নিজেদের দর্শকদের সামনে অবশ্যই অনেকটা বেশি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হবে স্পার্সের জন্য।

    টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর আদ্যপান্ত বিশ্লেষণ (SWOT analysis of Tottenham Hotspurs)

    শক্তি (Strengths)

    টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর নিকট এমন একটি ফরোয়ার্ড লাইন রয়েছে, যেটিকে অনেক সময় অনেক প্রতিপক্ষ খুব একটা গুরুত্ব না দেওয়ার ভুলটি করে বসে। হ্যারি কেইন, হিউং মিন সন, রিচার্লিসন, লুকাস মুরা, এবং ডেয়ান কুলুসেভস্কি’রা তাদের নিজ নিজ দক্ষতা দিয়ে যেকোন সময় একটি খেলা নিজেদের দখলে করে নিতে পারেন।

    এই ফরোয়ার্ড লাইনের মধ্যে সবচেয়ে সুচতুর খেলোয়াড় বলা যায় ডেয়ান কুলুসেভস্কি’কে, যিনি এন্তোনিও কন্তে’র গেমপ্ল্যানের জন্য একদম মানানসই একজন খেলোয়াড়, এবং যিনি এসি মিলান সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা রাখেন, কেননা কেবলমাত্র এক মৌসুম আগেও তিনি ইতালিয়ান সিরি আ’তে খেলতেন। স্পার্স তাদের অন্যান্য পজিশনে (যেমন মিডফিল্ড, ডিফেন্স) কোন ভুল না করলে তাদের ফরোয়ার্ডেরা তাদেরকে ম্যাচ জেতাতে পারবে বলেই ধারণা করা যায়।

    পড়ুন:  লিভারপুল বনাম উলভস: রেডরা শীর্ষ অর্ধে থাকার জন্য লড়াই করে

    দূর্বলতা (Weaknesses)

    ইউরোপে এবারের মৌসুমে স্পার্সের অ্যাওয়ে ফর্ম সত্যি খুবই দুশ্চিন্তামূলক। তাদের নিজেদের সমর্থকদের থেকে অনেকগুণে বেশি সক্রিয় ফরাসি, পর্তুগিজ, এবং জার্মান সমর্থকদের বিপক্ষে মাঠে নেমে ভালো পারফর্ম করতে তারা যথারীতি হিমসিম খেয়েছে।

    তারা তাদের গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচগুলির মধ্য থেকে কেবলমাত্র একটি অ্যাওয়ে ম্যাচই জিততে পেরেছিল, এবং সেটিও ছিল অলিম্পিক মার্সেই এর বিপক্ষে, যখন জেতাটা অনেকটা বাধ্যতামূলকই হয়ে পড়েছিল স্পার্সের জন্য। ম্যাচটিতে তারা এক গোলে পেছনে পড়েও শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জিতে নিতে সক্ষম হয়েছিল।

    স্যান সিরো’তে আবহাওয়া আরো জটিল ও শত্রুভাবাপন্ন হতে পারে স্পার্সের জন্য। যদিও নিজে ইতালিয়ান হওয়ায় এসি মিলান সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য তার খেলোয়াড়দেরকে জানাতে পারবেন কন্তে, তারপরও এমন শত্রুভাবাপন্ন স্টেডিয়ামে সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে কিছুটা হলেও হিমসিম খাবেই তার শিষ্যরা। সেই চাপ ঠিকমত সামাল দিতে না পারলে ম্যাচটি তাদের জন্য শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে।

    সুযোগ (Opportunities)

    প্রথম লেগে ঘরের বাইরে খেলতে পারায় স্পার্স নিজেদেরকে ভাগ্যবানই দাবি করতে পারে। তারা যদি স্যান সিরোতে এসি মিলান ও তাদের দর্শকদের চাপ কোনভাবে সামলিয়ে একটি ভালো ফলাফল নিয়ে ঘরে ফিরতে পারে, তাহলে আগামী ৮ই মার্চ, ২০২৩ তারা ভালো কিছু আশা করতেই পারে, যখন নর্থ লন্ডনে সফর করবে এসি মিলান।

    রসোনেরি খ্যাত এসি মিলান নিজেরাও এবারের চ্যাম্পিয়নস লীগ মৌসুমে নিজেদের অ্যাওয়ে ম্যাচগুলিতে অধারাবাহিক ছিল। স্পার্সের জন্য সেটি একটি বিশাল সুখবর। এন্তোনিও কন্তে’র উচিৎ হবে সেই দিকগুলি মাথায় রেখেই নিজের চূড়ান্ত দলটি ঠিক করা। তবেই তারা নিজেদের দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনালের দিকে আরো এক ধাপ এগুতে পারবে।

    হুমকি (Threats)

    একটি ইংলিশ ক্লাব হিসেবে এবারের মৌসুমে টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর এখনো অনেক ম্যাচ খেলা বাকি।

    বিশেষ করে, মৌসুমের দ্বিতীয় অংশে খুবই কম সময়ের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে ম্যাচ খেলতে হয় ইংলিশ দলগুলিকে। ফলে এসকল দলকে নিজেদের স্কোয়াডে অনেক বেশি রোটেশনও করতে হয়, যা দলের ভারসাম্য ও ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে।

    পড়ুন:  ফুলহ্যাম বনাম ব্রাইটন প্রিভিউ

    এর ফলে তাদের দলে বিশ্রামের অভাবের কারণে ক্লান্তি দেখা দেয়, যা তাদের প্রতিপক্ষের জন্য অত্যন্ত শান্তির একটি ব্যাপার। এসকল কারণে তারা এসি মিলানের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে পারবে কি না, তাও একটি চিন্তার বিষয়।

    এই বিষয়ে আরো একটি হুমকি হল তাদের ইঞ্জুরি সমস্যা। এই খেলোয়াড়কে ঠিকমত নাড়াচাড়া করতে না পারলে তাদের মধ্য থেকে অনেকেই ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন। কন্তে কিভাবে তার দলকে সাজান এবং ইঞ্জুরিমুক্তও রাখেন, সেটিই এখন দেখার পালা।

    টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর নিকট কি প্রত্যাশা করা যায়? (What to expect from Tottenham Hotspurs)

    এন্তোনিও কন্তে তার এই স্পার্স দলটির মধ্যে অনেক বেশি লড়াকু মনোভাব ঢুকিয়েছেন, যা সত্যিই অনেক প্রশংসার দাবিদার। তাই আমরা এমনটিই প্রত্যাশা করছি যে, যেভাবে তারা একটি ডু-অর-ডাই পরিস্থিতিতে মার্সেইকে পরাজিত করেছিল, ঠিক একইভাবে তারা এই ফিক্সচারটিতেও বাজিমাত করে দিতে পারবে।

    Share.
    Leave A Reply