গত বেশ কিছু সপ্তাহ ধরেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে নিয়ে ট্রান্সফার জগতে প্রচুর গুজব ছড়াচ্ছে এবং টানা হেঁচড়া চলছে। এর ফলে যতটা না উত্তর পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি শুধু প্রশ্নই উঠে আসছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে ফেরার মাত্র ১২ মাসের মধ্যেই এই ৩৭ বছর বয়সী পর্তুগিজ কিংবদন্তি ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি ক্লাবটি ছাড়তে চান। নানা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থার রিপোর্ট যদি বিশ্বাস করে নেওয়া হয়, তাহলে এমনটিই মনে হয় যে, রোনাল্ডোর এজেন্ট হর্গে মেন্ডেস তার ট্রান্সফারটি সম্পন্ন করার জন্য ডানে, বামে, সামনে, পেছনে যত ভালো ক্লাব রয়েছে সবার দুয়ারেই যাওয়া আসা চালু রেখেছেন।

এই বিষয়টির কারণে বিগত কয়েক সপ্তাহ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মত ইংলিশ জায়ান্টদের জন্য খুবই হতাশাজনক এবং বিদ্রুপাত্মকই গিয়েছে বললেও ভুল বলা হবে না। তার উপর আবার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং এর ট্রান্সফারটি নিয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও আসছে না। এমন মুহূর্তে রেড ডেভিলদের জন্য সবচেয়ে অযাচিত হয়তো এটিই ছিল যে, তাদের গত মৌসুমের ‘প্লেয়ার অব দ্য সিজন’ ক্লাবটি ছেড়ে যেতে চাইবেন, তাও আবার অনেকটা জোড় করেই। এখানে তারা অসুবিধার যে বিষয়টি তা হল যে, ৩৭ বছর বয়সী এই লিজেন্ড ২ মাসেরও বেশি সময় পেয়েছিলেন তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য। কিন্তু, প্রি সিজন প্রস্তুতি শুরু হওয়ার সময়ই এসে তার এমন বক্তব্য বা ঘোষণা ক্লাবটিতে একটি অস্বস্তির মনোভাব তৈরি করে ফেলেছে। তবে, কেন এমন করলেন রোনাল্ডো?

বিভিন্ন রিপোর্টের মোতাবেক আরো জানা গিয়েছে যে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে তার সুপার এজেন্ট হর্গে মেন্ডেস যেসকল ক্লাবেই অফার করেছেন, সেসকল ক্লাবই তাকে দলে নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে, অর্থাৎ তারা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে, যেসব ক্লাবের নাম না নিলেই নয়, সেসব ক্লাব হল বায়ার্ন মিউনিখ, পিএসজি, এবং চেলসি। রোনাল্ডোকে এরা সবাই না করে দিয়েছেন।

পুরো ২০২১-২২ মৌসুম জুড়েই এই পর্তুগিজ কিংবদন্তি ফুটবলার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব নিজের ঘাড়েই তুলে নিয়েছিলেন। ক্লাবটির বেশির ভাগ খারাপ সময়েই তিনি ক্লাবকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন, এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছিলেন। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগে আটালান্টা এবং ভিয়ারিয়াল এর বিরুদ্ধে করা তার শেষ মুহূর্তের গোলগুলিই বার বার আমাদের চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, ক্লাবটির জন্য ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মাহাত্ব্য কতটা বেশি। প্রিমিয়ার লীগে নরউইচ সিটি এবং টটেনহ্যাম হটস্পার্স এর বিরুদ্ধে তার করা হ্যাট্রিক দু’টি আরো ভালো করে আমাদের বুঝিয়েছে যে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এখনও শেষ হয়ে যাননি, বরং যে দলের জন্যই তিনি খেলবেন, সে দলেরই কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে যাবেন।

গত মৌসুমে এই কিংবদন্তি ও আইকনিক খেলোয়াড় যত স্মরণীয় মুহূর্ত সমর্থকদের উপহার দিয়েছেন তা আমরা হাতে গুনে শেষ করতে পারব না। তবে, তারপরও কিছু প্রশ্ন সবার মনেই জেগে ওঠে বার বারঃ ইউনাইটেড কি এই পর্তুগিজ সুপারস্টারকে ছাড়াই বেশি ভালো করতে পারবে? তিনি দলে না থাকলে কি আগামী মৌসুমে ওল্ড ট্রাফোর্ডে কোনপ্রকার সাফল্য আশা করা যায়? রোনাল্ডো না থাকলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হাল কি অনেক বেশি করুণ হবে? ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাম্প্রতিক কার্যক্রম সমর্থকদের মনে এসকল প্রশ্ন ছাড়াও আরো অনেক প্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছে।

পড়ুন:  ফ্যান্টাসি প্রিমিয়ার লীগঃ এমন ১০ জন খেলোয়াড় যাদেরকে আপনার এখনই দলে নেওয়া উচিৎ

রোনাল্ডো বিদায় নিলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের হাই প্রেসিং এর লক্ষ্যটি অর্জন করতে পারবে (His departure will aid Manchester United’s pressing ambitions)

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নতুন ম্যানেজার এরিক তেন হাগ এর আগমণকে ক্লাবটির মালিক, কর্মকর্তা ও সমর্থকরা সবাই খুব উষ্মভাবে স্বাগত জানিয়েছেন, এবং ওল্ড ট্রাফোর্ডে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সূচনা হতে চলেছে এমনটিই তারা সবাই আশা করছেন। তেন হাগ এর নিয়োগের পূর্বে ক্লাবটিতে ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন রাল্ফ রাঙনিক, যার কাজই ছিল দলটিকে তেন হাগের জন্য প্রস্তুত করে দেওয়া, এবং তার সময়কালে তার প্রথম প্রেস কনফারেন্সেই তিনি একটি কথার উপর অনেক জোড় দিয়েছিলে, যা হল ‘প্রেসিং’। ইউনাইটেড তাকে নিয়োগই দিয়েছিল খেলোয়াড়দের ফিটনেস লেভেল বাড়ানোর জন্য এবং আরো বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল প্রোমোট করার জন্য। যদিও দলের সেই প্রয়োগটি খুব একটা সফল হয়নি, তারপরও বিভিন্ন সূত্রে এমন একটি মন্তব্য প্রায়ই ভেসে আসছিল যে, রোনাল্ডো সেই সিস্টেমটিতে তেমন একটা কার্যকরী ছিলেন না, কারণ তিনি প্রেসিং এ খুব একটা উৎসাহী নন।

এই ৫ বারের ফিফা ব্যালন ডি’অর জয়ী সুপারস্টার অনেক আগেই ৩০ এর কোঠা ছুঁয়েছেন, এবং এখন ৩৭ বছরে পা দিয়েছেন। তাই অসম্ভব সব ট্রেনিং ড্রিল এবং ফিটনেস প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও বয়স তার উপর জেঁকে বসেছে।

রোনাল্ডোর পক্ষে বলতে গেলে, গত বছর নির্দ্বিধায় তিনিই ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সবচেয়ে সেরা ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ খেলোয়াড়। কিন্তু পরিসংখ্যান কখনোই মিথ্যা বলে না, এবং পরিসংখ্যান বলছে যে, গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগের সকল স্ট্রাইকারদের মধ্যে তারই প্রেসিং এর হার সবচেয়ে কম ছিল। তাই, পরিসংখ্যান মোতাবেক, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যদি তেন হাগের ভিশন অর্জন করতে চায়, তাহলে রোনাল্ডো দলে থাকলে তা অর্জন করা খুবই কঠিন হবে বলেই মনে হচ্ছে।

কিছুদিন আগে একটি রিপোর্টে এমন একটি তথ্য প্রকাশ পায় যে, রাল্ফ রাঙনিক নাকি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন রোনাল্ডোকে চলতি বছরের জানুয়ারিতেই বিক্রি করে দিতে, কারণ এই পর্তুগিজ ট্যালিসম্যান তার ফুটবলীয় দর্শনকে একদমই অনুসরণ করতে চাইতেন না, যা যেকোন কোচের জন্যই হতাশাজনক হওয়ার কথা।

দলে প্রেসিং এর প্রোমোশন করার জন্য এই জার্মান কোচ তখন এন্থোনি এলাংগাকে দলে ঢুকান, যদিও অবশ্যই তিনি প্রতিভাবান হলেএ ক্যালিবার বা অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে মার্কাস র‍্যাশফোর্ড (যাকে এলাংগা রিপ্লেস করেছিলেন) এর চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। রাঙনিক তার এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছিলেন যে পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড় না হলে হয়তো রোনাল্ডোর সাথেও তিনি এমনি কিছু করতেন।

যদিও এলাংগাকে দলে নেওয়ার কারণ শুধু তার প্রেসিং ক্ষমতাই ছিল না, বরং তিনি একজন অসাধারণ ড্রিবলার ও ক্রসারও বটে, তবে দলটির ফরোয়ার্ডদেরও যে প্রেসিং এ অংশ নিতে হবে, এলাংগাকে দলে ঢুকানোটা ছিল সেদিকেই একটি নির্দেশ।

পড়ুন:  টটেনহ্যামের পরাজয় দেখায় কেন এই গ্রীষ্মে হ্যারি কেনকে চলে যেতে হবে

তবে, যদি এরিক তেন হাগ তার প্লেয়িং সিস্টেমটি কিছুটা অন্যভাবে সাজিয়ে রোনাল্ডোর জন্য আলাদাভাবে তৈরি করে নিতে পারেন, তাহলে উভয়পক্ষই খুশি থাকতে পারেন৷ কিন্তু, তার অতীতের ক্রীড়াকৌশল অনুসারে রোনাল্ডোর কোন জায়গা এই দলে হওয়ার কথা না।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রি-সিজনের পারফর্মেন্সগুলি অনেক কিছু বলে (Manchester United’s pre-season performances say a lot)

এটি বলাই বাহুল্য যে, প্রি সিজন এর খেলাগুলি একধরণের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া কিছুই নয়, তবে এটিও অমান্য করলে চলবে না যে, এসকল ম্যাচ থেলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে একটি দল সামনের দিকে এগুচ্ছে, নাকি পেছনের দিকে পেছাচ্ছে। ব্যাংককে একটি বিশাল মাপের ফ্রেন্ডলি ম্যাচে এবার মুখোমুখি হয়েছিল লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ম্যাচটি শুরুর আগে বেশির ভাগ ফুটবল অনুসারীরাই ভেবেছিল যে, এবারও গত মৌসুমের মতই লিভারপুলের হাতে নাকানিচুবানি খেতে হবে রেড ডেভিলদের।

২০২১-২২ মৌসুমটিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য ছিল খুবই কম সংখ্যক ইতিবাচক দিক। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা একটি ইউরোপা লীগ স্পট দখল করতে সক্ষম হয়, তবুও মৌসুমটি তাদের জন্য ছিল একটি দূর্যোগের মত। ইয়ুর্গেন ক্লপের সৈন্যরা প্রিমিয়ার লীগের দুই লেগ মিলিয়ে ইউনাইটডে ৯-০ গোলে (৫-০ ও ৪-০) ধরাসয়ী করে, এবং ওল্ড ট্রাফোর্ডের মত ফুটবলীয় মন্দিরকে পুরোপুরিভাবে নিশ্চুপ করে দেয়। 

তবে, কিছুদিন আগে ব্যাংককে চিত্রটা ছিল অনেকটাই আলাদা। সেখানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলা দেখে মনে হয়েছে তারা নতুন করে জন্ম নিয়েছে। তারা ছিল নির্ভয়, নব্য শক্তিতে ভরপুর, এবং নতুন আলোয় উদ্দীপ্ত। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ দলের মতই খেলেছে এবং প্রেস করেছে। এ থেকেই বোঝা যায় যে, তেন হাগের কঠিন সব ট্রেনিং ড্রিল এখন কাজে দিচ্ছে, এবং খেলোয়াড়েরাও তার সিস্টেমটির সাথে ভালো করেই মানিয়ে নিচ্ছেন। আমরা এই ব্যাপারটি ভুলে গেলেও চলবে না যে, হুবহু এই দলটি বা এই খেলোয়াড়গুলিই গত বছরও এই দলে খেলেছে, এবং তারাই তখন বর্তমানের মত জোড়ালো প্রেসিং করতে নারাজ ছিলেন। যদিও আমাদের একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচের উপর ভিত্তি করে এতকিছু বলাও হয়তো উচিৎ নয়, তবুও দলটির গঠন ও উদ্দীপনা দেখে মনে হচ্ছে যে গত মৌসুমের চেয়ে তারা ভালো কিছুই করতে যাচ্ছে।

যদিও এ ব্যাপারটি বিতর্কের অধীন, তবুও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে অনেকেই ধরেন পৃথিবীর সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে। তবুও, এই দলটিতে তার উপস্থিতি হল একটি মিঠা জলের পুকুরের মধ্যে একটি দুর্ধর্ষ টর্নেডোর মত। যদিও এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই যে, এই ইউনাইটেড দলটি থেকে প্রতিভা উপচে উপচে পড়ছে, তবু এটি মানতেই হবে যে, গত মৌসুমে দলটির আত্মবিশ্বাস ছিল একদম তলানিতে, আর সেটি হয়েছিল রোনাল্ডো দলটিতে যোগ দেওয়ার পরেই।

প্রি সিজনে অবশ্য দলটি সবার মন জয় করে নিচ্ছে, এবং এমনটিই মনে হচ্ছে যে তারা তাদের হারানো আত্মবিশ্বাস আবারও অনেকটাই ফিরে পেয়েছে, এবং তারা ক্রমেই উন্নতির পথে রয়েছে। মার্কাস র‍্যাশফোর্ড, জ্যাডোন স্যাঞ্চো এবং এন্থোনি মারশিয়ালদের মত খেলোয়াড়েরা তাদের উদ্যম ফিরে পেয়েছেন, এবং তাদের সেরা ফর্মে ফিরতে পারবেন বলেই মনে হচ্ছে। আর এর পেছনে মূল হোতা হলেন এরিক তেন হাগ নিজে, এবং তার দূরদর্শী চিন্তাভাবনা। যদিও এমনও হতে পারে যে, রোনাল্ডো দলে থাকার ফলে অন্যান্য খেলোয়াড়দের সেই উদ্দীপনা আরো বৃদ্ধি পাবে, তবে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে হচ্ছে যে, রোনাল্ডো দলে থাকলে তার ঠিক উল্টোটাই হবে।

পড়ুন:  মিড-সিজন পর্যালোচনাঃ হাল্যান্ড কি ম্যানচেস্টার সিটি'র উন্নতিসাধন করতে পেরেছেন?

একটি মজার তথ্য রোনাল্ডোর বিপক্ষে তর্কটি আরো জোরদার করছে (An interesting stat adds more volume)

আমরা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর অসাধারণ ক্রীড়ানৈপূণ্য এবং বুদ্ধিদীপ্ততা সম্পর্কে আগেই বলেছি, যার পেছনে প্রধান কারণ হল তার গোলস্কোরিং ক্ষমতা এবং ডি বক্সের মধ্যে তার ঘাতক মুভমেন্ট, যার আসলেও বিশ্বব্যাপী কোন তুলনা নেই। একটি অতি সাধারণ দৃশ্যপটে একজন অনবদ্য স্ট্রাইকার দলে যোগ দিলে পুরো দলের মোট গোলসংখ্যা বাড়ারই কথা, কারণ সেই স্ট্রাইকার নিজেও অনেক গোল করবেন, আবার তার দলের অন্যান্য সদস্যদের জন্যও গোল করার অনেক সুযোগ তৈরি করে দিবেন। 

তবে, বিষ্ময়কর হলেও সত্য যে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সম্পূর্ণই উলটো; পরিসংখ্যান বলছে যে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর উপস্থিতি তার সর্বশেষ দুই ক্লাবেই অন্যান্য খেলোয়াড়দের গোল আউটপুট কমিয়ে দিয়েছে। এমনটি হওয়ার কারণ কি তার অসীম তারকাময় খ্যাতি, যা সবার ফোকাস তার উপরেই নিয়ে যায় এবং দলের সবকিছুর কেন্দ্রে তিনিই থাকেন? এই ব্যাপারে কোন স্পষ্ট উত্তর এখনো দেওয়াটা সম্ভবপর নয়।

ওল্ড ট্রাফোর্ডে তার পুনরায় আগমণের সাথে সাথে তিনিই পরিণত হোন ক্লাবটির মূল আক্রমণাত্মক অস্ত্রে। যার ফলে আবারো তিনিই তাদের সকল আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়েন, এবং মৌসুমের শেষে তার ঝুলিতে চলে আসে ২৪টি গোল।

তবে, পরিসংখ্যান আরো বলছে যে, রোনাল্ডো ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার পূর্বেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড গোলের সামনে বেশি কার্যকর ছিল। ২০২০-২১ মৌসুমে দলটি সর্বমোট ৭৩টি গোল করতে সক্ষম হয়েছিল, অথচ এই পর্তুগিজ বিশ্ব তারকা দলে যোগ দেওয়ার পর ২০২১-২২ মৌসুমে দলটির করা মোট গোলের সংখ্যা মাত্র ৫৭টি।

এমন প্যাটার্ন যে শুধু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেই দৃশ্যমান তাও কিন্তু নয়। এর আগে যখন তিনি ইতালিয়ান জায়ান্টস জুভেন্টাসে যোগ দিয়েছিলেন, তার আগের মৌসুমেই তারা গোলের সামনে অধিক কার্যকর ছিলেন, এবং তাদের গোল সংখ্যা ছিল ৮৮। কিন্তু, রোনাল্ডো যোগ দেওয়ার পর থেকে তিন মৌসুমে তাদের গোল ট্যালি ছিল যথাক্রমে ৭০, ৭৬ ও ৭৭।

এই দূর্দান্ত স্ট্রাইকার যে ক্লাবেই যোগ দেন না কেন, সে ক্লাবের জন্যই তিনি সবচেয়ে বড় একজন ব্যবসায়িক এসেট এ পরিণত হোন। কিন্তু, যেহেতু বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন বড় দলই (চ্যাম্পিয়নস লীগে অবস্থান করছে এমন) তাকে দলে নিতে চাচ্ছে না, সেহেতু এমনটিই মনে হচ্ছে যে, বর্তমানে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্যও এক ধরণের বোঝায় পরিণত হয়েছেন।

Share.
Leave A Reply